গ্রচ্ঠম বিমল কর এ ১৯২৬, কলেজ "স্ট্রিট মাকে-্ট, কলকাতা-৭ ০০০০৭ প্রথম প্রকাশ . জানংয়ার ১১৫৯ প্রজ্ঞা প্রকাণনের পক্ষে অরূপ চট্টোপাধ্যায়, শৈবাল সরকার ও অতনু গাল কর্তৃক এ-১২৫ কলেজ পিট মাকেট। কলকাতা-৭000০ থেকে প্রকাশিত ও নিউ রামক্ু্জ প্রেস, ৬৩এ/২ হার ঘোষ 8), কলকাতা-৬ থেকে মদত । অশ্লীল দাম্ণ কল্যাণশয়েষু আমাদের প্রকাশনাম্ম এই লেখকেন্ন অনন্ানন্ভত বই খড়কুটো গ্রহণ বাঁলকা বধ পার্চয় শরণ অপু যদুবংশ আমরা 1তিন প্রোমিক ও ভবন কুশ লব একদা কুয়াশায় মৃত ও জশীবত ভুবনেশ্বর একা একা অসময় সান্ধ্য দংশন মোহ চ্বী'প স্বপ্নে ওয়ানডার মামা [কিশোর উপন্যাস] কাপাঁলকরা এখনও আছে ঘুঘু নোটক) প্রচ্ছন্ন দরজার সামনে দাঁড়য়ে প্রমথ বলল, “আয় একটু মগ্া করি। মীরা তোকে কখনও দেখে ন। তুই একেবারে সামনে থাক, দরজার সামনে । আম ওপরের [সশড়তে আড়াল মেরে দাঁড়য়ে আঁছ। নতুন লোক দেখে মীরা চমকে যাবে ।” প্রমথর ফোলা-ফোলা গালে ছেলেমানুষের মতন কৌতুক উপচে পড়াছিল। সিপশড়তে এখনও আলো জবলে নি, বেশ ঝাপস। হরে রয়েছে জায়গাটা । বাইরে শে মাঘের মর। আলো। কাঁলং বেলের বোতাম ট্রপল প্রমথ । তার বোতাম টেপার একটা বিশেষ রীতি আছে- প্রথমে একটানা, তারপর ছেড়ে দিয়ে দুবার ছোট ছোট আওয়াজ তোলা। মীরা বুঝতেই পারবে প্রমথ এসেছে। বেল টিপেই প্রমথ তেতলার 1সশড়র দিকে দু ধাপ উঠে গেল। উঠে দেওয়ালে পিঠ দিয়ে দাঁড়িল। সূরপাতি দরক্তার সামনে। সপড়তে দাঁড়িয়েই প্রমথ নীচু গলায় বলল, “তুই কিছ বলাব না।" সুরপতি এই ছেলেমানা'ষর মানে বুঝাঁছল না। শুধু অনুভব করতে পারছিল, প্রমথ বেজার খুশী হয়ে রয়েছে। দুপুর থেকেই সেটা বোঝা যাচ্ছে। স্‌খে শান্তিতে থাকলে মানুষ হয়তো অনেক কিছু বাঁচিয়ে রাখতে পারে। প্রমঘকে দেখে সে-রকম মনে হয়। এখনও তার তাজা উচ্ছ্বাস রয়েছে, আন্তারকতা রয়েছে। ভেতর থেকে দরজা খোলার শব্দ হল। সূরপাঁতি সোজাসাজ তাকাল। দরজা খুলে মীরা যেন প্রমথকেই কিছু বলতে যাচ্ছিল, সুরপাতিকে দেখে বোকার মতন চুপ করে গেল। অবাক চোখে তাঁকয়ে থাকতে থাকতে তার আচমকা খেয়াল হল, বাথরুগ্গ থেকে বেরিয়ে শাঁড়িটাও ভাল করে গায়ে জড়াতে পারে নি. গায়ের শাঁড় অগোছালো, নীচের জামা ভিন্ন কিছ পরা হয় নি, কানের পাশে অল্পস্বজ্প সাবানের ফেনা থাকলেও থাকতে পারে। ঠিক যতটা দরজার মুখোমুখি এসোঁছল মীরা, যেভাবে একটা পাললা হাট করে খুলে দিয়োছল, প্রমথকে না দেখতে পেয়ে, তার বদলে একেবারে অজানা একজনকে দেখে, এবার প্রায় ততটাই 'ীপছিয়ে গেল। এলো শাঁড় টেনে হাত বুক আরও টেকে ফেলার চেষ্টা করছিল। “কাকে খসুজছেন ?” মীরা বলল। সূরপাঁতি কোনো কথা বলল না। প্রমথ বারণ করেছে। মীরা আরও লক্ষ করে সূরপতিকে দেখতে লাগল, যেন এই সন্ধ্যের মুখে প্রচ্ছন্ন -১ ১ যে-লোকটা ভ্রু বেশ পরে তার দরজার সামনে এসে দাঁড়য়েছে, সে চোর" বদমাশ কিনা! মীরার চোখে সন্দেহ এবং বিরান্ত ফুটে উঠোছিল। হয়তো খাঁনকটা আতঙ্কও। সুরপাঁত 'সিপড়র দিকে তাকাল, প্রমথ দেওয়ালে পিঠ দয়ে দয়, বেশ মজা পাচ্ছে। ঘাড় নেড়ে কিসের যেন ইশারা করল। সুরপাত বুঝতে পারল না। মনে হল, প্রমথ তাকে কথা বলতে বলছে। “আম সুরপাতি।” “সুরপাতি! কে সূরপাঁতি £” প্রমথর বন্ধ5।” “উনি এখনও বাঁড় ফেরেন নি।" মরা শত্ত গলায় বলল। বলে দরজার পাললায় হাত 'দাচ্ছল যেন এখান মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দেবে। সূরপাঁত বলল, “ফেরার কথা ।” “্না। মীরা বিরন্ত হয়ে দরজা বন্ধ করতে যাচ্ছিল_ হঠাৎ প্রমথ প্রায় লাফ মেলে 1সড় থেকে নেমে পড়ল। তারপর হোহো হাঁস। হাসতে হাসতে তার ্ঠি নুয়ে গেল। হাতের আ্যাটাচি কেস দুলতে লাগল । সুরপতিকে পেছন থেকে ঠেলে দিয়ে প্রমথ ঘরে মধ্যে ঢুকে পড়ল। মীরা অপ্রস্তুত। কিছুটা যেন রুজ্ট। প্রমথ স্তীর দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলল. “কেমন সারপ্রাইজ দিলাম বলো! বোকা বাঁনয়ে দিয়োছ।” কোনো সন্দেহ নেই মীরা বোকা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই তামাশার কি দরকার ছিল! ছেলেমানুষি করার বয়েস তাদের নেই। আযাটাচি কেসটা সোফার ওপর প্রায় ছুড়ে ফেলে দিয়ে প্রমথ তার মোটা গোলালো গলায় বলল, “আমার বন্ধ সূরপাঁতি। তুমি নিশ্চয় কয়েক শ' বার ওর কথা শুনেছ!” মীরার এবার মনে পড়ল, হ্যাঁনামটা সে শুনেছে । মনে পড়ছে যেন- শুনেছে। তখন মনে পড়ে 'নি। বা মনে পড়লেও বোঝে না? আচমকা কাউকে দেখলে, কিংবা কারুর নাম শুনলে চেন্না মানুষকেও অনেক সময় ধরা যায় না। মীরা আড়ম্টভাবে, গায়ের শাঁড় সম্পর্কে সতর্ক হয়ে, সামান্য হাত তুলে নমস্কার করল । বলল, “ও1” সূরপাঁতও প্রাত-নমস্কার জানাল। “বসূন আপনারা, আমি একটু কাজ সেরে আসাছি।” মারা চলে গেল। প্রমথ গলার টাই খূলছিল। “মীরা একেবারে থ' মেরে গেছে ।” যেন বউকে থ' মারানো এক বিরাট রাঁসকতা- প্রমথ সেইভাবে বলল, হাসিমুখে, মজার গলায়। “বুঝলি সুরপাঁত, যখনই পুরোনো কথাটথা হয়, কলেজ-ফলেজ, ফর্তিফার্তার কথা_ আমাদের সেই ওল্ড ডেজ্‌-_ চালাও পানসি বেলঘাঁরয়া _ তখনকার কথা উঠলেই তোদের কথা বাঁল। তুই, 'ন্রাদব, সেই হাড় হারামজাদা কল্যাণ_তোদের গল্প বাঁল। বলে বলে ব্যাপারটাকে একেবারে 'লাভং করে ফেলেছি। মীরা তোদের নাঁড়নক্ষত্র বলে দিতে পারে।” সূরপাত ঠাট্টার গলায় বলল, "তোর বউ কিন্তু আমার নামটাও চিনল না।” 'আরে না না, ভড়কে গেছে। দরজা খুলে দুম করে চোখের সামনে নিজের কতণর বদলে অন্য পুরুষ দেখলে কোন মেয়েছেলে না ভড়কে যাবে!” প্রমথ হা-হা গলায় হেসে উঠল। সুবপতি হেসেই বলল "তুই বলাছস কি! দরজা খখলে তোর বউ কি শুধু তোকেই দেখে 2” প্রমথ কোট খুলে ফেলল। বলল, 'দবজা খুললেই ধোপা নাপত কাগজঅলা দেখবে বলাছস* আরে না. কভার আলাদা 1সগন্যাল-_” বলে চোখ ।টপে আবার হাঁস। “আরে তুই বোস. বোস. কতক্ষণ দাঁড়য়ে থাকাবি!” সৃবপঁতি কোনাকুনি সোফাটায় বসল। প্রমথ বড় সোফায় বসবার আগে সগারেটের প]াকেট, লাইটার, ওয়ালেট বার করে 'নিল। 'সগারেটের প্যাকেট, লাইটার ছণুড়ে দল সুরপাঁতর দিকে । "সগারেট খা!” সুরপাতি মোটামুটি এই ঘরের চেহারা থেকে প্রমথর অবস্থাটা অনুমান করে নিতে পারাঁছল। আজকালকার মাঝাবী ভদ্রলোকরা যেমন হয় তেমন আর কি. ভাড়াটে ফ্ল্যাট বাড়তে বাস, মধ্যবিত্ত গৃহসক্জা। প্রমথ পিঠ নুইয়ে জতোর ফতে খুলতে খুলতে বলল. “আমার বউকে কেমন দেখলি 2" সুরপাঁতি কোনো জবাব দল না: না দিয়ে 'সগারেট ধরাতে লাগল । 'শক রে পছন্দ হল না?” প্রমথ ঠাট্রা করল। সূরপতি হেসে বলল, “তোর বউ বেশ সৃম্রী।" 'সুন্দরী বলার না বাঁঝ?” প্রমথ এবার সোজা হয়ে বসে বন্ধুর চোখে ' চোখে তাকিয়ে ক্ষুপ্ন হবার ভান করল। সূরপতি হাসল । “বউ নিয়ে তুই খুব সুখী ।” “খ.-ব কি রে, একেবারে কানায় কানায় । দে. প্যাকেটটা ছোড়ি।...আমার মেয়ে কোথায় থাকে তোকে বলোছ না?” “দারজিলিঙে ।” “তা হলে তো ধলেইছি। ঝুনূ দারাঁজলিঙে। আমার এক ভায়রা থাকে ৩ ওখানে, পুলিশের চাকার। তাকে লোক্যাল গাজেনি করে দিয়োছ, হোস্টেলে থাকে। ভালই আছে বুঝাঁল। লেখাপড়াই বল আর এই তোর ডাঁসাঁপ্লন- [ফাঁসাঁপ্লন বল-এসব ভাই এখনও ওই সাহেবব্যাটাদের হাতে রয়েছে খানিকটা। আমাদের ব্যাপারটা হল দমকলের, সব সময়েই আগুন জবলছে আর ঘণ্টা বাজছে।” প্রমথ হাসতে লাগল। “তোর ছেলে কই?" “ছেলের কথা বাঁলস না, ওটার আম নাম 'দিয়োছ স্যাঁটলাইট। আমরা ছু নয়। সে-ব্যাটা কিছুতেই আমাদের কাছে থাকবে না, জন্মের পর থেকে তার 'দিঁদমার ন্যাওটা হয়েছে। ব্যাটাকে এখানে রাখাই যায় না। জোর করে রাখতে গেলেই তার মাকে দুমদাম মারবে, আমার পেট ফাটাবে, ঘরের জানিস- পত্তর ভাঙবে চূরবে। ব্যাটা ডাকাত ভাই। ওটাকেও দারাঁজীলিঙে পাঠিয়ে দেব, একেবারে বাচ্চা-আর-একটূু বড় হোক।” সূরপাঁত সগারেটের ছাই ফেলল, বলল, “তোর এই ব্যাপারটা তা হলে কমাপ্লট হয়ে গেছে 2" “কোন ব্যাপার £" “ছেলেমেয়ে” সূরপাঁতি মূচাঁক হাসল। “ও! বাচ্চাকাচ্চা বলছিস! হ্যাঁ, কমাঁপিলট। ইট'স এনাফ। এক মেয়ে এক ছেলে । বারো বছরে । তুই একটা আাভারেজ করে দেখ... ।” প্রমথ হাসল। সুরপাঁতি পারহাস করে বলল. “আযাভারেজ ভাল । কিন্তু তুই দুটোকেই তো দারজিলিঙে পাঠাঁব। সাহেবী কেতা ধরাব। আমি বলাছলাম_দেশনীয় প্রথায় দেখবার জন্যে আর একটা রাখলে পারাতিস। একটা এক্সপোঁরমেন্ট।” প্রমথ বেজায় জোরে হেসে উঠল। হাঁস থামলে বলল, “না ভাই, আর নয়; যথেম্ট। আমার বউ অত সুজলাস্‌ফলা নয়।" সূরপাতি হেসে ফেলল। প্রমথ তার টাই, কোট. আযাটাচি, এমন কি খুলে রাখা জুতো জোড়াও বাঁ হাতে তুলে নিল। বলল. “তুই বোস স্মরপতি, আঁম ধড়াচড়ো ছেড়ে আঁস। মরাকে একট; ম্যানেজ করতে হবে। খেপে গেছে বোধ হয়।” প্রমথ চলে গেল। যাবার আগে বাঁচত্র ভাঙ্গতে কনুই 'দয়ে আলোর সূইচটা নামিয়ে দল। সূরপাঁতি ঘোলাটে ধরনেব অন্ধকার আর দেখতে পেল না। আলো জবলে ওঠায় এই ঘর স্পল্ট ও প্রখর দেখাল। সূরপাঁতও যেন এক-ধরনের তন্দ্রা থেকে জেগে উঠে এতক্ষণে স্পম্ট করে এই ঘরের চেহারাটা দেখছে। ঘাড় মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সরপতি কয়েক মুহূর্ত সব দেখল । সিগারেটের টুকরোটা ফেলে দিল আ্যাশট্রেতে। ৪ ঘর ?কছ- বড় নয়, আসবাব সে-তুলনায় কিছু বেশন। সোফাটোফা ছাড়াও একটা সোফা-কাম-বেড রয়েছে, গ্লাস কেস, ছোটখাট বাজারী জিনিস সাজানো । ছোট মাপের রোডওগ্রাম, বিষ্টূপুরী ঘোড়া, জয়পুরী ফুলদান, দেওয়ালে দু-একটা বাঁধানো ফোটোর পাশে পেপার পাল্পের মুখোশ । আরও কু টূকিটাক। যে কোন বাঙালী মধ্যাবত্ত ছেলে মাঝারী মাপের আর্থক সচ্ছলতা লাভ করার পর চলাঁতি রুচিটাকে যেভাবে গ্রহণ করবে প্রমথ সেইভাবেই গ্রহণ করেছে । কোনো নতুনত্ব নেই । সুরপাঁত যাঁদ বেলতলায় ভ্রিদিবের বাঁড় যায় তাব বসার ঘরে প্রায় সবই এই একইভাবে সাজানো দেখবে । প্রমথ বলাছিল, 'ভ্রাদব এখন বেলতলায় থাকে। প্রমথ এখন ঠিক কতটা রোজগার করছে জানার দরকার নেই। সূরপাঁতি মোটামূটি অনুমান করতে পারে। এবং বুঝতে পারছে. যাকে চলাঁত কথায় সুখসাচ্ছল্য বলা যায় প্রমথ তা আয়ত্ত করেছে। একাঁদন, যখন প্রমথ কলেজে পড়ত ভর বাবা বেল স্কুলে মাস্টার করতে কবতে হুট করে মারা গেল তখন "চাবীর এমন অবস্থা যে হস্টেলের খরচ /জাঢাতে পারত না। কল্যাণ তাকে কোথাকাব এক বাজরাজড়ার অনাথালয়ে থাকবাব ব্যবস্থা করে দিয়েছিল, ছোকন্‌ পাঁড়ের হোটেলে খেত প্রমথ । বন্ধূবান্ধবরা তাকে নিজেদের জামা- প্যান্ট চঁটিফট দিয়ে দিত। বছর দেড়-দুই প্রমথ খুবই কম্ট করেছিল । 'কল্তু ছেলেটা ভাল ছিল। ভাল মানে হুজহগে. হুলোড়ে, সবল গোছের । প্রমথর বড় গুণ 'ছিল-সে আভমানী ছিল না, সঙ্কোচ কবত না. বন্ধুদের কাছে তার কোনো বকম লঙ্জা ছিল না। সুরপাঁত তখন এতোটা বোঝে নি. তবু বুঝতে পারত দমে যাবার ছেলে প্রমথ নয়। প্রমথ যে দমে যায় 'নি-আজকের অবস্থাই তার প্রমাণ। সে উচ্চাকাঙ্ক্ষণ ছল না। একেবাবে পার্থব গকছু সৃখসুবিধে নাভ কবার বাইরে প্রমথর চোখ যেত বলে মনে হয় না। সবপাঁতর মনে হল. যা পাবার কিংবা প্রত্যাশার__ তাব কিছ বেশশই লাভ কবেছে প্রমথ । অন্তত তাব স্ত্রী। প্রমথর বউ সাত্যই সুনপাঁভকে অবাক করে 'দিয়েছে। খনুটিয়ে দেখলে প্রমথব স্ত্রীকে নিখুত সন্দরী কি বলা যায়? কোথাও খপৃত রয়েছে, যেমন সুরপাঁতর মনে হয়োছল, মহিলার নাক একটু বেশী লম্বা, অত্যন্ত তীক্ষণ দেখায়। এতটা তীক্ষ/তা হয় রুক্ষতা না-হয় অতিরিন্ত সচেতনতার মতন দেখায়। কপাল আরও একট: চওড়া হলে ভাল হত, সরু ছোট কপাল হওয়ায় কেমন একটু অহমিকার ভাব হয়েছে। গলার দিকটা সামান্য মোটা, আরও পাতলা হলে ভাল মানাত। এই রকম ছোট ছোট খত আছে প্রমথর স্ত্ীর। সূরপাতি অল্প সময়ের মধ্যে যা দেখেছে- তাতে তার ওই রকম মনে হয়েছে। & সঙ্গে সঙ্গে, এটাও অনুভব করেছে_ মহিল'ব শরীরের গড়ন পাঁরম্কার, মাথায় মাঝারী, ঈষৎ গা-ভারী, বয়েসে হয়তো, কাঁধ ঘাড় সুন্দর । সুরপাঁতি মেয়েদের মূখ সম্পকে স্পম্ট করে কিছ বোঝে না, মানে সৌন্দর্য ঠিক কোথায় থাকে, চোখে না দৃম্টতে, ঠোঁটের গড়নে না হাঁসতে. কথা বলার সময় গলার স্বরে না বলার ভাঙগতে--তা সে বলতে পারবে না। কিন্ত এর কোথাও, হয়তো সমস্ত জাঁড়িয়ে, কিংবা যে যা চায়--সই গছন্দ মতন জায়গায় প্রাপ্য পেয়ে গেলে তা ভাল লাগে। প্রমথর স্তীর মূখে সুরপাঁতি এই রকম একটা প্রাপ্য পেয়েছে। তার ভাল লেগেছে । প্রমথর পক্ষে এমন বউ পাওয়া ভাগ্য, বড় রকমের ভাগা । এখন আর কোথাও অগোছালো ভাব নেই মীরার । তার চুলের বড় খোঁপা ঘাড়ের 1দকে সামান্য নামানো, মুখ মোলায়েম, উজ্জ্বল ফরসা রঙের কোথাও কোথাও লালচে আভা ফুটেছে, চোখ আরও টানা-টানা লাগছিল। মীরা প্রমথর মতন বড় সোফাটার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। সূরপাঁত ঠিক উঠে দাঁড়াল না, সোজা হয়ে বসল। মীরা বলল, “উন আসছেন.” বলে হাঁসর মুখ করল। সূরপাঁত লক্ষ করল, প্রমথর স্ত্রী প্রথমে যে-শাঁড়টা পরে ছিল, এখন সেটা নেই। উজ্জ্বল হলুদ রঙের শাড়ি পরেছে, কালে। নকশা করা পাড় শাঁড়িটার। গায়ের জামাটাও সোনালন-হলুদ। প্রথম সন্ধার এই জবালানো আলো. যা যথেন্ট উজ্জল. প্রমথর স্ত্রীর ফরসা রঙের ওপর হল:দের আভা ছড়াচ্ছে। আরও ফরসা, ঝকঝকে দেখাচ্ছে ওকে । মারা বসল। বসে দু" মূহূর্ত যেন নিজেকে গুছিয়ে নেবার জান্যে অপেক্ষা করল। তারপর বলল. “আপনার কথা অনেক শুনোছ।” সূরপাঁত কিছু বলল না। মীরা নিজেই আবার বলল, “আপনার বম্ধূর কাণ্ডই ওই রকম। এমন [বিচ্ছিরি ব্যাপার করে।” সুরপাঁতির মনে হল. মীরা তার তখনকার অপ্রস্তুত ভাব, আড়ম্টতা কাঁটয়ে ফেলেছে । বাজে রাঁসকতার জন্যে প্রমথকে নিশ্চয় ছেড়ে দেয় নি, কিছ বলেছে _-এ-সব ক্ষেত্রে মেয়েরা স্বভাবতই যা আড়ালে বলে । মীরা যে অত্যধিক লাজুক নয়, অচেনা পূরুষ মানুষের সঙ্গে কথা বলতে অভ্যস্ত, বেশ সপ্রাতিভভাবে কথা বলছে সুরপাঁতর তাতে সন্দেহ হল না। “আপনি নাকি বেশ কিছু দিন হল কলকাতায় এসেছেন ৮” মীরা বলল, বলে তাঁকয়ে থাকল। সূরপাঁতি মাথা নাড়ল।_-“মাস চার-পাঁচ।” “এতোদিন এসেছেন, কই এ'দের খোঁজ খবর করলেন না কেন?” “ঠিক পেরে উঠি নি," সুরপাতি বলল। মীরা তার পা কাঁপাল, হাটু দুটো জোড়া করল, একটা হাত কোলের ওপর, অন্যটা সোফার ওপর- হাতের আঙুল ছড়ানো, আলতো চাপ দেওয়া । চুড়িগুলো আলগা ঢলঢলে নয়, কব্জির কাছাকাছি আঁট হয়ে রয়েছে। আঙাঁটটাও নজরে পড়ছিল। কালো পাথর। বড়। চৌকো। “না পারার ক ছিল” মীরা বন্ধূপত্রীর সৌজন্য" রেখে বলল, “আপনারা সব এত বন্ধু ছিলেন কলকাতায় এসে খোঁজখবর করবেন না?” সূরপতি একটা গন্ধ পাচ্ছিল। সূগন্ধ। জোরে নিঃ*বাস নিল না, আস্তে আস্তে গন্ধটা টানতে চাইল। “অনেক দিনের কথা” সূরপতি বলল, “দশ- পনেরো বছর পরে ফিরে এসে কাউকে পাওয়া যায় আম ভাবতে পার নি।” মীরা গলার ওপর 1দকে আঁচলের পাড় একট: টানল। “দশ-পনেরো বছর এমন ক! বিশ-পণচশশীন্রশ বছর পরেও মানুষ মানুষকে খদুজে পায় ।” সুরপাঁতি হাসল । শব্দ করে নয়। “পায় 2" মীরার চোখের মাঁণ নড়ল। “বাঃ, পায় না। একই জায়গায়, একই বাঁড়তে লোকে কতকাল থেকে যায়। সুরপতি তর্ক করল না। মারার বাহুর পেলবতা দেখতে লাগল । “আপাঁন এতোকাল বেনারসেই ছিলেন 2" মীরা জিজ্ঞেস করল। 'আপনার বন্ধু বলছিলেন ।" “প্রমথ বেনারসের কথা বলেছে । আমি আরও অন্য অন্য জায়গাতেও ছিলাম ।” “কোথায় কোথায় 2" “পাটনায়, রাঁচিতে : কিছাযাদন মরজাপুরে 1" মীরা এবার পায়ের ওপর পা করে বসল, হাত 'দয়ে শাঁড়র তলার দিকটা ঠিক করল। পা কাঁপানো মীরার স্বভাব। তার পা নাচছিল। “কলকাতায় কোথায় যেন রয়েছেন শুনলাম-_!” “ব্যারাকপুর-গান্ধীঘাট” মীরা গালে টোল ফেলল । তার গালে, বাঁ গালে টোল উঠত হয়তো কোন দিন, এখন ভারা গালে ভাঙা টোল ওঠে। সুরপাঁত বলল, “প্রমথকে আজ হঠাৎ পেয়ে গেলাম। সে-ই পেল আমাকে বলা যায়। কেমন করে চিনতে পারল কে জানে। প্রমথর মেমারি ভাল।” “শুনলাম । আঁফসে দেখা 1” “ওরই আফসে।” ভেতর থেকে প্রমথর গলা শোনা গেল। ভাকছে। মীরা বলল, “আপনি বসুন। ডান আসছেন। আমার চায়ের জল বোধ হয় ফুটে শুকিয়ে গেল ।” মীরা চলে গেল। যাবার সময় ?পঠের আঁচল এমনভাবে টানল যে, সুরপাঁতর মনে হল খুব হালকা ভাব রয়েছে মীরার। সূরপাঁতি বসে থাকল; অন্যমনস্ক। মীরা চলে যাবার পরও তার বসার জায়গায় মীরার একটা কাজ্পনিক আঁস্তত্ব যেন থেকে গেছে, সূরপাঁতি সেইভাবে তাকিয়ে থাকল। নাকের কাছে আর কোনো গন্ধ আচমকা বাতাসে ভেসে আসছে না, তবু সে কখনও কখনও জোরে শবাস টানাছল। সামান্য পরেই প্রমথ এল। অন্য চেহারা । চোখমুখ সতেজ । মাথার চুল আঁচড়ানো। পরনে পাজামা, গায়ে পাঞ্জাবি। বউয়ের একটা মেয়েলী চাদর গায়ে ভাড়ানো। কলকাতায় এখন মরা শত। দুপুরের রোদে তাত ফুটেছে, বিকেলেও শীত বোঝা যায় না। বসন্তের একটু আধটু বাতাস যেন প্রায়ই গায়ে লাগে। “তুই এবার ফ্রেশ হয়ে নে-” প্রমথ বলল, শাক পরাঁব * ধাঁতি না পাজামা ৮" সুরপতি তাকাল । “মানে 2” “জামাটামা ছাড়। বাথরুম খালি । চল... 1" “ব্যাপারটা বুঝতে পারাছি না,” সূরপাতি সাধারণভাবে বলল। প্রমথ আরও দ' পা এগিয়ে এল । প্বাঝার কি আছে! আজ তুই এখানে থাকাব। চল হাতমূখ ধুয়ে এসে জামাটামা ছেড়ে আরাম করে বোস। চা-ফা খাই। তারপর জমিয়ে বসব। তুই আম আর মীরা ।” সুরপাঁত যেন ভেতরে ভেতরে অস্বাস্ত বোধ করল। বলল, "সে কিরে, আম ফিরব না?” প্রমথ মোটেই কানে তুলল না কথাটা । “রেখে দে তোর বাঁড়ি। আজ শালা আমরা জমাব। কত বচ্ছর পরে তোকে ক্যাচ করলাম। বালিত মী সুরপাঁতি, আমার যা আনন্দ হচ্ছে! তোর সঙ্গে দেখা হবে মাইরি আামি ভাবি নি। কোনো ব্যাটা তোর খবর জানত না। আম তো ভাবতাম তুই মরেই গিয়েছিস।" বলে প্রমথ হো-হো করে হাসল। সুরপাত প্রমথর হাঁস শেষ হবার অপেক্ষা করাছল। প্রমথ থামল । কয়েক মূহূর্ত ডুপচাপ। তারপর সুরপতি বলল, “আমি কিন্তু মরেই গিয়েছি প্রমথ ।” “আমায় আজ ছেড়ে দে।” “বাজে বকিস না। তুই আজ থাকবি। আমরা আজ সেলিব্রেট করব, পুরোনো বন্ধুকে ফিরে পাবার হল্লোড়।.. তুই কি খাস» আমাব কাছে ভাল জীন আছে। যাদ হুইস্কি প্রেফার কারস--সাগ্লাই কবতে পাবব।' সূরপাঁত বুকের মধ্যে কোথাও যেন মদ; বেদনা অনুভব করল। 'আজ আমায় যেতে দে। তোর বাড়ি চিনে গেলাম। আবার একাদন আসব।" প্রমথ বন্ধুর এই অসম্মতি আব সহ্য করতে পাবল না। সুরপতির কাছে গিয়ে তার হাত ধরে টেনে ওঠাবাব ভঙ্গি করে দাঁড়াল। “একবার কেন হাজাব বার আসাব। কিন্তু এখন ওঠ, বাথবূম থেকে আয়। চা-ফা খা। আজ আম তোকে ছাড়ছি না।” সুরপতি আবও কিছু বলবে ভাবছিল, দেখল দরজার সামনে মীরা এসে দাঁড়য়েছে। সুরপাঁতকেই দেখাঁছল। স্[রপাঁত উঠে দাঁড়াল। বলল, “বেশ। থাকব।” স্পা দহ মূখে মাছের কচুর; পাকা রুই মাছের পুর, আদালীপশ্যাজ মেশানো । স্বাদটা জিবে জড়ানো ছিল প্রমথর। হাতের ইশারায় তার কাপে আরও খানিকটা চা ঢেলে দিতে বলল স্ত্রীকে। সরপাতিকে বলল, “তুই তা হলে জীবনে করলি কী?" সূরপতি ধারেসূস্থে খাচ্ছিল। সারা দনের পর ঠান্ডা জলে সে অর্ধস্নান করেছে। পরনে প্রমথর ধুতি দু" পাট করে পরা, গায়ে প্রমথরই ধোয়ানো গোঁ্জ, সাদা শাল--সেটাও বন্ধূর। শরীরে যে ক্লান্তি ছিল, ধুলো ময়লার মালিন্য এখন তা খুজে পাওয়া যাবে না। ঠিক রুক্ষতা নয়, রুক্ষতার মতন একটা কষা ভাব চোখ নাক এবং স্নায়কে যেন কিছুটা উগ্র করে রেখেছিল আগে, জবালার অনুভূতি ছিল সামান্য। সুরপাঁতি এখন নিজেকে ঠাণ্ডা, স্বাভাঁবক মনে করছিল। আরাম আর আলস্য লাগছিল । মাঝে মাঝে প্রমথর শালে নেপথাঁলনের গন্ধ উঠছে ফিকে ভাবে। সূরপাঁতি বলল. “কিছু নয়”, বলে পাতলা করে হাসল. মীরাকে দেখল । প্রমথকে বলল, “তোকে দেখে ভালই লাগছে ।” প্রমথ পা দুটো আরও ছড়িয়ে দিল আলস্য করে । “আমাকে ভাল লাগবেই । ভাল লাগার ব্যাপারটা আমি বুঝে নিয়েছি ভাই। আমাদের একজন একাঁজ- িউটিভ ছিল। সত্য মৌলিক, মৌলিকসাহেব বলত : নিজেকে প্রপার ব্যাক- গ্রাউণ্ডের ওপর প্লেস করতে পারলেই বাজারে 'বাঁকয়ে যাবে। গয়নার দোকানে বাও, দেখবে ভেলতেটের ওপর পাথরটাথর রেখে দেখায়। ইমিটেশান আর আসল পাথর-কোনটা কী তৃমি আমি বুঝব না।...আসল কথাটা ওইখানে সুরপাঁতি, গনজেকে প্রপার ব্যাকগ্রাউণ্ডে প্লেস করা" মীরা স্বামীর কাপে দুধ চিনি 'াশরে সুরপাঁতির দিকে তাকাল। “আপনাকেও আর-এক কাপ দিই 2" “দন, পুরো নয়।" “জীবনটাকে আম গুড 'লাভং আযাপ্ড হ্যাঁপ কনজ্যূগ্যাল লাইফের ওপর প্লেস করে দিয়েছি বূঝাঁল, সুরপাতি।" প্রমথ চায়ের কাপ তোলার সময় স্ত্রীর হাঁটুর ওপর হাত দিল একট;. হাসল--“আমার বউই আমার ফ্যুয়েল।” প্রমথ ৯০ মীরা কটাক্ষ করে বলল, “কি যে কথা বলার বাহার তোমার!” "কথাটা মিথ্যে বলেছি! তুমিই যে আমাব-কি বলব_-গ্াইীভিং ফোর্স মানে প্রেরণাট্ট্রেরণা সেটা সুরপাতি বুঝে ফেলেছে । ?করে সুরপাঁত, তৃই এগ্র করাছস 2" সুরপাঁত কিছু বলল না। হাসল। মীরা তার চায়ের কাপ ছোট তেগায়ান ওপর রেখেছে। ও কিছ খাচ্ছে না। শুধু চায়ে চুমুক দিচ্ছে মাঝে মাঝে। মীরার নাকের ওপর দিকে একটা লালচে আঁচিল খুব কালো না দেখানোয় ল'লচেই দেখাচ্ছল। কানের ঘন খয়োর পাথর দুটো সামান্য বড়. মোলায়েম মীরার গালের মসৃ্ণতার সঙ্গে মানিয়ে যাচ্ছিল । মীরা বলল, “আপনার বন্ধুর 'বাচ্ছরি দোষ কি জানেন? বড় কথা বলে" প্রমথ চায়ে চুমুক দিয়েছিল । চট করে ঢৌক গিলে ফেলল । বলল. “বা বা, কথা বলব না। কথা বলেই খেয়ে পরে বেচে আঁছ। কথা বলাই আমার প্রফেসান।” “তুই ক বরাববই তাদের কম্পানীব সেলস প্রমোসান নিম রয়োছিস £' স.বপাতি জিজ্ঞেস করল। “ফর 'দ লাস্ট ফাইভ ইয়ার্স” প্রমথ বলল। “আনে প্রথমে তো আমি ভেরাণ্ডা ভেজেছি। চাকাঁনব বাক্তাব কী টাইট, এক একটা হশ্টারদ। ” ই খার কবা কো প্যান্ট চাঁপয়ে শালা হনুমানের বাচ্চার মতন ছাট" বলতে বলতে প্রমখ মীরার দিকে একবার আঁকয়ে নিল-_-শালা শব্দটা এখানে পছন্দ করবে না মীরা, অবশ্য বছানায় সোহাগ আদবের বাড়াবাঁড়র সময় প্রমথ যে ঠিক কোন গভাঁরতা থেকে মীরাকে অভব্য কথাটগথা বলে ফেলে সে জান না। মীরা আপাত্ত করে না, কিংবা অখুশী হয় ন।। প্রমথর কোনো সন্দেহ নেই, বিছানার জন্যে কছু কু শব্দ আছে যা কানে লাগে না। মহৃতেব মধ্য প্রমথ তাবার কথার খেই ধরতে পারল । "তুই বিশ্বাস করাঁব না সবপাঁভ, এক একটা ইণ্টারভুযু আমার বডি ফ্লুইড শনল' করে দিত। আমি মাঘ মাসে দুবার গঙ্গা সাঁতার দিতে পাবি, কিন্তু ওই ইণ্টারভ্য-_হরিবল। সে যাক গে একবার কপাল ঠুকে এক বিলেতী কম্পানতে আপাঁলকেসান লাগয়ে দিলাম 'দিয়ে মনে মনে ঠিক করে নিলাম-চাকার হোক আর না হোক, এক্বাদুক ডেসপারেট হয়ে ঢুকে পড়ব ডাকাডাকি করলে । গড নোজ-হাউ ইট হ্যাপেন্ড বাট দি [মরাকাল ওয়াজ দেয়ার! লেগে গেল চাকার । পাক্কা দেড়াট বছর ঘোভাব মতন দৌড় কাঁবয়েছে ভাই, ওয়েস্ট বেঙ্গল, বিহার, উীঁড়ষ্যা। শরীর-ফরীর যায় তখন । তবে ব্যাপারটা খে গেছি। ওই চাকার থেকে লাফ মেরে চলে এলাম ডি' বয়তে। ফ্রম দেয়ার আই কেম টু দিস ম্যানারস আণ্ড হ্যারিসন। তখনই বিয়ে করলাম। মেয়েটা হবার পর প্রমোসান। টুব ছিল । বউ হাঁসফাঁস করত। ১৯ অফিসে বললাম, হয় টুর বন্ধ করো নয়ত কেটে পড়ব। কলকাতায় রেখে দিল। [কন্তু ঠেলে দল ডেভালাপমেন্টে। দে--আমার কী! বছর তিন চার ওই ওয়ার্থ- লেস ডপার্টমেন্টে রেখে আবার সেলস প্রমোসানে নিয়ে এল। উইথ এ গুড [ফট ।" মীরা এবার খানিকটা অধৈর্য হয়ে উঠছিল। বলল, “তোমার আঁফসের গলপ থাক।" “কে বলতে চেয়েছে! আমি 2..স্মরপাঁতিকে বলো ।" সূরপাঁত চায়ের কাপ টেনে নিয়েছিল। “আপাঁন ওকে আর আঅফসের কথা বলভে বলবেন না, রাত ফুলিংয় ফেলবে”, মীরা সুরপাঁতির দকে চোখ রেখে কীন্রম মিন্নাতির গলায় বলল। সরপতি হেসে বলল, “প্রমথ অফিস ভালবাসে ।” "ভালবাস বলিস না, ভালবাসা দেখাই,” প্রমথ সিগারেট ধরাল। সূরপাঁতি মীরার মুখেব দিকে তাকাল এক পলক । মীরা বলল, “আমি উঁঠি। রান্না দেখতে হবে।” “তোমার সেই রাধারানীটি কোথায় 2” “বাজারে পাঠিয়েছিলাম। ফিরেছে বোধ হয়।” “আজ আমরা জমাব ভেবোৌছলাম, তম থাকবে না?” “আমার রান্নাঘর কে দেখবে ?” মীরা অভ্যাস মতন কয়েকটা প্লেট চামচ ত্রের একপাশে রাখল । পড়ে থাকল কিছ । প্রমথরা তখনও চা খাচ্ছে। মীরা উগ্তল। রাধা পরে এসে সব গুছিয়ে নিয়ে যাবে। প্রমথ বলল, “খানিকটা পরে তুমি একট; ইয়ের ব্যবস্থা করে দিও। আমরা দুজনে প্রাণের কথা বলব । কি বল সুরপাতি 2" সুরপাঁতি কথার জবাব 'দল না। মীরা চলে যাচ্ছল, প্রমথ আবার বলল, “তুম রান্নাঘরেই লটকে থেকো না ডিয়ার, মাঝে মাঝে এসে আমাদের কম্পানি দিও ।” চলে গেল মরা । প্রমথ একমখ ধোঁয়া সাতাসে উীঁড়য়ে দিল। “নে, সগারেট নে সূরপাঁতি।” সুরপতি চা শেষ করে সিগারেটের প্যাকেট তুলে নিল। কেমন যেন ঘুম ঘুম লাগছে। বোধ হয় এই বিশ্রাম ও পারতৃস্তির জন্যেই। মীরা মাছের কচাারগুলো ভালই করৌছল। স্বামীর জন্যে তার আদর-যত্ত বয়েছে। প্রমথ অফিস থেকে ফিরে এসে ক খাবে, কোনটা পছন্দ করবে মীরা আগে থেকেই বুঝে নেয়। “সূরপাতি?” ৯৭ সিগারেটটা ধারয়ে নিল সূরপাঁতি। “বল।” “তোর কথা শান” প্রমথ সোফার গাষে গ-মাথা হেলিয়ে দল। সূরপাঁতি অন্যমনস্কভাবে সিগারেট খেতে লাগল । নেপথাঁলনের গন্ধট। আবার নাকে আসাঁছিল তার । এই গন্ধটা তার পছন্দ হচ্ছিল না। মীরার জ্ঞামা- কাপড়ে মাখানো সেই সেন্টের গন্ধকে যেন নম্ট করাব জনে; এই গণ্ধ। “আমার কথা কী শুনাব?" সুরপাঁতি বলল। “কী করাল জীবনে ₹" কী করেছে সুরপাঁতি জীবনে * সামান্য ভাবল সুরপতি। জীবন শব্দটা শুনতে ভাল। যেমন জীবনপান্র। জীবনপান্র কথাটাই সুরপাঁতর মনে এল। [কিন্তু এব অর্থ কী£ হা পা মাথাটাথা নিয়ে বেচে থাকা? সকাল, সন্ধো, রাত; দিন. মাস বছর-শুধ্‌ বে'চে থাকা? সুরশাতি অনেককাল বেচে আছে। পশ্যতাল্লিশ বছরের কাছাকাঁছ। যখনই সে ভাববার চেষ্টা করেছে, দেখেছে জীবন বলে তার ?কছু নেই; ফিতের মতন একাঁদকে তার জীবন খুলে: অন্যাদকে গুটিয়ে যাচ্ছে । হয়তো একাঁদন, দ' চাব বছরের মধ্যে ফতে ফুরিয়ে যাবে, কিংবা ছিড়ে যাবে । “কী রে, চুপ কবে আছিস যে" প্রমথ বলল। “কী বলব, ভাবাছ।” “রাখ তোর ভাবনা । কা করলি বল?” “বলার মতন কিছু কার ি।” “তুই কলেজফলেজ ছাড়ার পর মুর্শিদাবাদের 'দকে কোথায় 'গয়েছি'ল না?” "গ্রামে । মাস্টারী করতাম ।" “কেটে পড়ল ?” প্রমথ নতুন করে একটা সিগারেট ধরাল, কুশানটা মাথার পাশে গুজে দিল। “পড়লাম । হেড মাস্টারের বউ আমার বিছানায় মশারিতে আগুন ধারষে দেবার চেম্টা করেছিল ।” প্রমথ প্রায় লাফ মেরে উঠে বসল। পবছানায় আগুন? বাঁলস কী? কেন কেন?” দিকে আম থাকতাম। কাছেই থাকত ইডীনিয়ন বোর্ডের এক বগ্কুবাব আর তার এক বোন। হেডমাস্টারের বউ আমায় আদরযত্র করবার চেষ্টা করত ।” প্রমথ সিগারেটের ধোঁয়া হুস করে ডীঁড়য়ে দিল। ফার্তির গলায় বলল. “বযঝেছি শালা, দ7 দিকে দুই কলাগাছ... সূরপাতি বলল, “দু চারটে জায়গায় চার ছ' মাস করে জল খেয়োছ। ১৩. তারপর বেনারস। আমার এক মাসতৃতো বোনের সঙ্গে বোলপুরে দেখা । সে টেনে নিয়ে গেল বেনারস।” 'বোলপুরে কী করতে গিয়োছাল £" “একজন টেনে নিয়ে গিয়েছিল। কিছু করতে যাই 1ন, বেড়াতে গিয়োছলাম। বেকার মানুষ । ঘরে বেড়াচ্ছিলাম। বেনারসে আমার মাসতুতো বোনটোন থাকত। মেসোমশাই মারা গিয়েছিলেন । মাঁসমা বেচে ছিল। ওদের মোটাম১ চলত। দুই বোন চাকার করে। মাঁসমা একটা [ডসপেনসারির পার্টনার 'ছল। মেসোমশাই ছিলেন ডান্তার-সেই সুবাদে ।” প্রমথ [সগারেট 'নাবয়ে দল। রাধা এসেছে। ্লেট, কাপ গোছগাছ করে নিচ্ছিল। সুরপতি চুপ করে থাকল। দেখল রাধাকে। মাঝবয়সী ঝি। বোধ হয় বিধবা । মিলের শাঁড় পরনে থাকলেও 1সণথ সাদা । রাধা চলে যাবার পর প্রমথ বলল, “মালপত্তর নিয়ে আস কি বল2 তের জীন চলবে. না, হুইস্কি ” সূরপাঁত হাত নাড়ল। “মানে, খাসটাস না ?...সোঁক রে সুরপাঁতি ? তুই... “খেতাম । অনেক খেয়েছি। আর খাই না।” "যা যা, খাই না! শালা, বিবেকানন্দ সাজাছস ১ আজ তুই খাবি। ইউ মাস্ট। না খেলে মেজাজ আসবে না। তোকে পেয়ে যাঁদ মেজাজ না আসে তব শালা কিসের কাঁচকলা হল!” প্রমথ উঠে পড়ল। মদ্যাদ আনবে। সুরপাঁতি সোফায় পিঠ হেলিয়ে দিল। শট্ত লাগছে না। চাদরটা তব বুকের দকে ট্রেনে নিল। সেই নেপথলিনের গন্ধ । চাদরটা নিশ্য় আলমারিতে পড়ে থাকে । কদাঁচিং হয়ত ব্যবহারের প্রয়োজন হয় প্রমথর ৷ ধুতিটাও যেরকম ফরসা, সরপাঁতির ধারণা- প্রমথ ধুতিও বছরে এক আধ 'দিন পরে। প্রমথকে একসময় প্যান্ট পরানোর জন্যে বন্ধুরা সাধ্যসাধনা করত। মফস্বলের ছেলে, রেল স্কুলের মাস্টারের সন্তান, মফস্বলণী স্বভাব ও আচার আচরণ নিয়ে কলকাতায় পড়তে এসৌছল। মলের ধূঁতি পরভ মালকোঁচা মেরে, টুইলের শার্ট। বন্ধুরাই প্রমথকে শহ্‌রে আদব-কায়দায় রপ্ত কারয়েছিল। আজ প্রমথ শহুরে বাতাসে-বাসী এবং ফ্যাকাশে মধাবিত্ত সাহেবিআনায় বেশ মানিয়ে ফেলেছে 'নজেকে। সামান্য চোখ বুজে থাকল সৃরপাঁতি। এখনও তার ঘুম ঘুম লাগছে। এই আরাম না আলস্যের জন্যে কে জানে। চোখ খুলতেই আলোটা চোখে পড়ল। বসার ঘরে প্রমথ টিউব লাইট রাখে 'নি। দেওয়াল গাঁথা আলো. মোমদানের মতন একটা শেড, সাদা কাচ, ১৪ গায়ে নকশা । আলোটা ভাল লাগাছল সুরপাঁতর। ভাল লাগাছল বলেই সূরপাঁতি আলস্যে হাই তুলল। চোখের পাতাও সামান্য বুজে এল। আর আচমকা এক গ্রাম্য স্মৃতির ঝাপটায় সুরপ'তি যেন চোখ বুজে ফেলল । কোনো কিছুই উজ্জ্বল নয় প্রখর নয়, স্তামত আলোয় পুরোনো পটের মতন অস্পম্ট হয়ে একপাশে গড়ে আছে স্মাতি। খড়ের চালা দেওয়া ঘর, দালানের খানিক পাকা, খানিকটা কাঁচা । আমঝোপের দকে ছোট ঘর সুরপাঁতির। আলকাতরা মাখানো দেড় হাতি জানলা মাথ।র দিকে। জানলা খুললেই_আমঝোপ চোখে পড়ে, ঝোপের শেষে রুক্ষ মাঠ। সুরপাঁত জানলা খুলে বসে আছে। আমঝোপের ছায়ার ওপারে রোদ- পোড়া মাঠ. বৈশাখের তপ্ত হাওয়া আসছে ধূলো উীঁড়য়ে। বঞকুবাবুর বোন, যার গায়ের রঙ দেখে সৃরপাঁতর মনে হত -পাকা বেলের রঙের মতন হরিদ্রাভ, সেই বোন_তরুলতা ওই খাঁ খাঁ দুপুরে আমবাগানের 'দকে হেটে আসছে। তরুর বাঁ পার অর্ধেকটা আছে, বাঁকটা নেই । শগ,ংগ্রণ হয়ে যাচ্ছিল বলে কেটে বাদ দিতে হয়েছে ছেলেবেলায় । তরু কাটা পা ?নয়ে ক্লাচে ভর 'দয়ে হে্টে আসছিল । হাটার সময় শরীরের প্রায় সবটাই দুলে উঠছে, ঝাঁক খাচ্ছে। তার এলানো চুল, খাটো শাঁড় আমবাগানের ছায়ায় এসে বাতাসে সামান্য বপর্য্ত হল। বোধ হয় ঘামছিল তরু । দাঁড়যে দাড়িয়ে শাড়ির আঁচল আলগা করে গলা মুখ মুছে নিচ্ছে, হঠাং এই তল্লাটের খেপা কুকুরটা আমবাগানের কোন আড়াল থেকে ছুটে এল। তরু কিছ খেয়াল করার আগেই তার ক্লাচ ছিটকে গেল, কুকুরটা মাঠের দকে, আব বেচারী তবু মাটিতে চং হয়ে পড়ে আছে বিশ্রী ভাবে। সুবপতি যখন ছুটে এসে সামনে দাঁড়াল তখনও তরু মাটিতে শাড়ি এবং সায়ার আড়াল থেকেও তরুর একটা কাটা পা দেখা যাঁচ্ছিল। প্রমথ এসে পড়ল। “তোর জন্যে হুইন্কিই আনলাম.” প্রমথ সেপ্টার টেবিলের ওপর বোতল- টোতল নামাতে লাগল। ঠোঁটে ভাঙা ভাঙা শিস। সুরপাঁতি আমবাগানের ছায়া থেকে 'নমেষে গ্রীণ পার্কে চলে এল। দুপুরেব আলো, শুকনো আমপাতার গন্ধ, বৈশাখের সেই তপ্ত বাতাস - কোথাও কিছ নেই। তব্‌ সূরপাঁত বন্ধুর মুখের দিকে তাকিয়ে যেন অনুভব করল, সিনেমার মেশানো ছাবর মতন আমবাগানেব অস্পম্ট দৃশ্য প্রমথর পেছনে কমশই মাঁলয়ে যাচ্ছে। “মীরা লক্জা পাচ্ছিল,” প্রমথ বলল, “বাঙালী মেয়েদের এই লক্জা-ফঙ্জা আর যাবে না। এক বোতল সোডা আর জলটল "দিয়ে যাবে তাতে লঙ্জাবতণী হয়ে গেল। তোকেই লজ্জা । আমাকে তো সবই এাঁগয়ে দেয়।” ৯৫ -প্রমথ আবার সেই একই ঢঙে শিস দিতে দতে চলে গেল। সূরপাঁতি হুইস্কির বোতল, দুটো গ্লাস অন্যমনস্কভাবে দেখল । কোনো উৎসাহ বোধ করল না। মীরা কোথায়? রান্নাঘরে? নাকি অন্য কোথাও দাঁড়য়ে আছে প্রমথকে কি কিছ এঁগয়ে দিচ্ছে 2 ব্যারাকপুরের বাঁড়র কথা মনে পড়ল সূরঞতির। দরজায় তালা ঝূলছে। তারামণির বুড়ো বেড়ালটা উঠোনের এক কোণে বসে আছে হয়ত। গঙ্গার বাতাসে আধ-মরা বটগাছের দু'-চারটে পাতা ঝরে পড়ছে। প্রমথ ফিরে এল। জলটল এনেছে । সোফায় বসতে বসতে বলল, “মীরা বলছে কি জানস, তোকে পেয়ে আমি নাঁক কাঁছা খোলা হয়ে গিয়েছি।" হাসতে লাগল, বলল আবার, “কাঁছাফাঁচা আমাদের বরাবরই খোলা । কি বল? তোর সেই লে রেসের কথা মনে আছে, সূরশাতি 2 মধুপুরে বেড়াতে গিয়ে আমরা শালা ওই ঠান্ডায় মাঘ মাসে, ল্যাংটা হয়ে রিলে রেস করোছলাম। শিশিরের নিওমোনিয়া হয়ে যাবার জোগাড়” কথার শেষে অগ্রহাস্য হেসে উঠল, প্রমথ । সরপাঁতি মনে করবার চেম্টা করল না। তব্‌ অনেক দূরে যেন গত জন্মের স্মৃতির মতন ঝাপসা কোনো দৃশ্য দেখল যেখানে চন্দ্রালাকে কয়েকজন নগ্ন যুবক দৌড়ে বেড়াচ্ছে। এই জীবন কি তার ছিল? সুরপতি কি ছিল ওর মধ্যে ? প্রমথ হুইস্কি তৈরী করতে লাগল। “তোর অনারে আজ আঁমও হুইীস্কিতে থাকব । নো জীন। লোকে বলে জানে, রেগুলার জীন চালালে ইমপোর্টেন্সি ডেভালাপ করে। দূর শালা_! আগার ও-সব ইয়েফিয়ে নেই।” “না। রোজ নয়। তবে মাঝে মাঝে।” “আযালকোহিক ফ্যাট লেগেছে তোর ।” “ছেড়ে দে।” প্রমথ সরপাঁতির গ্লাসে পৃুরোপ্যার সোডা দিল না। কিছুটা জলও মিশিয়ে দল। “তাহলে তুই শেষ পর্ন্ত বেনারসে গিয়ে ফেসে গেলি 2? স্‌রপতি চোখের ওপর আঙুল চেপে রাখল । কয়েক মূহূর্ত। হাত সাঁরয়ে বলল, “থেকে গেলাম । মেসোমশাই ছিল ডাক্তার । ডিসপেনসারী ছিল। মারা শহুবার পর মাঁসমা অন্য লোককে বসতে দদিক়োছিল। পার্টনারাশপে দোকান ফেলেছে আমায় বাঁসয়ে দিল। ক্যাশে।” সামানাল জায়গায়?” আরাম না লাগত না,” স'রপাঁত বলল. “পয়সা গুনে আমার কী হবে!” চোখ দেখ।” প্রমথ সুরপাঁতিকে গ্লাস এগিয়ে দল। নিজেও নিল। হাত রাখে নি।স্তার অনারে। আফটার সো মোন লং ইয়ার্স তোকে ফিরে পেলাম ৯১৪ সুরপাতি। ফিরে পেলাম কথাটা আমড়াগাছি নয়। রিয়েল, আই মীন ইট্‌। চীয়ার্স!” “চীয়ার্স।” সরপাঁতি হাত টেনে নিল। প্রমথ মনের দিক থেকে এখনও বিশেষ বদলায় নি যেন। সেই পুরোনো সরলতা থেকে গিয়েছে। “বেনারসে আর কী করলি?” প্রমথ গ্লাসে চুমুক দিল। “আমার দুই মাসতুতো বোন ছিল। রমা আর শ্যামা । ডাক নাম- বড়াঁক, ছুটাক। ছুটকিই আমায় বোলপুর থেকে ধরে নিয়ে গিয়োছিল। বড়াক বেনারস হন্দু ইউনিভার্সাটতে চাকার করত, ছুটকি স্কুলে । ওরা আমায় একটা চাকরিতে ঢুকিয়ে দিল।” “সগারেট নে” সুরপাঁতির প্রথম চুমুকটা ছিল ছোট। এবার বড় করে চুমুক 'দিল। অনভ্যাসের জন্যে ভাল লাগল না। “তাহলে বেনারসে ভালই ছিলি? ওখানে বিয়োটয়ে করাল ?” মাথা নাড়ল সূরপাঁতি। “তবে করলি কী?” “করলাম না। বড়কি, ছ্‌টকিও বিয়ে করে নি। বোনরা কেউ বিয়ে করছে না. আমি কেমন করে করি,” সরপাঁতি হালকা করে বলল, যেন এই সহজ যুক্তিটা ছাড়া তার আর কিছু মুখে এল না। পরমূহূর্তে প্রমথর চোখের ঈদকে তাকিয়ে একট দ্রুত সুরপাঁতি বলল, "মাঁসমা মারা গেল। বাড়তে আমরা তিনজন থাকতাম। বেনারসে আমার ধর-বছর ছয় সাত কেটে গেল। খুব একটা ভাল লাগছিল না। বেনারস ছেড়ে পালালাম। ঠিক কোথাও পার্মানেন্টভাবে থাকি নি। পাটনায় বছর দুই ছিলাম, দেওঘরে থেকেছি আরও দু'-চার জায়গায়” “তুই বিয়েটিয়ে সাত্য সাঁত্য করিস নি? তখনও কথাটা এাঁড়য়ে গিয়েছিল 2" সূরপাঁত অন্যমনস্ক ছিল। আরও অন্যমনস্ক হল। প্রমথর দিকে তাকাল না। সিগারেটের ধোঁয়া সূতোর মতন সামনের বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে। “করেছিলাম,” সরপাঁতি আস্তে করে বলল। “করোছলি ? তারপর 2” সুরপতি প্রমথর দিকে তাকাল। “আমার কথা শুনে তোর কোনো লাভ হবে না, প্রমথ । ভাল লাগাৰ মতন কিছু নেই ।” প্রমথ বড় করে একটা চুমুক দিল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে আবার। “হু কৈয়ারস- ফর ভাল লাগা? মন্দ লাগলেও লাগক।” মাথা নাড়ল সুরপাঁতি। “না-; ও-সব কথা ছেড়ে দে। তুই ভাল মনে প্রচ্ছন্ন-২ ১৭ রয়েছিস, আনন্দ পাচ্ছিস। কেন মূড্‌ নষ্ট করাঁব ?” প্রমথ 'সগারেটের টুকরোটা আ্যাশত্রের মধ্যে ফেলে দিল। গন্ধ উঠতে লাগল পোড়া তামাকের। তারপর একেবারেই আচমকা রুক্ষ গলায় বলল, “তুই কী মনে কারস সুরপাঁত১ঃ আম ঘাস খাই? আমার মাথায় গোবর পোরা ১ আনন্দ-টানন্দ আমি বুঝি। দুঃখও বুঝব না ভাবাঁছস ?” “কা দরকার। অন্তত আজকে!” “তুই তা হলে জাবনটাকে নিয়ে দুঃখ করলি 2” “কিছ না -কিছ না,” সুরপাঁত মাথা নাড়ল। মীরার পায়ের শব্দ পাওয়া গেল। হাতে প্লেট। কিছ ভাজাভুজ এনেছে। প্রমথ স্ত্রীর দিকে তাকাল। “আমার ফ্রে্ডকে দেখো । আমি গলগল করে সব বলে যাচ্ছি--যা পেটে আছে উগরে দিচ্ছি আর ও কিছু বলছে না। বলছে--ওর কথা শুনলে আম দুঃখ পাব, মন খারাপ হবে ।......মন খারাপ হয়, হবে। সো হোয়াট 2” মীরা একটু দাঁড়াল। তারপর কোমর নুইয়ে প্লেটটা রেখে দিল সেন্টার টেবিলে । সূরপতি এই প্রথম মীরার ডান হাতের তলার দিকে দীর্ঘ এক রেখা দেখল । মোটা, কালো-কোঁকডানো । সুরপতি বলল, “ওই দাগটা কিসের 2” মীরা তাকাল। প্রথমে বঝতে পারল না। পরে বুঝল । ঠাট্টার গলায় বলল, “আয়ন রেখা ।” সূরপাঁতি ঠোঁট কামড়াল। সামান্য পরে বলল, “বোধ হয় পরমায়21” ৯৮ তিন রান্রের খাওয়াদাওয়া শেষ হবার পর প্রমথ তাব বেচাল অবস্থাটা বুঝতে পারছিল। মাতলামি নয়, কিন্তু নেশার ঝোঁকে সে টোৌবলের কাপড় নস্ট করেছে, [নজের পাঞ্জাবিতে মাংসের দাগফাগ লাঁগয়েছে-_। গায়ের চাদরটাও যাঁচ্ছল। অনর্গল কথা বলার চেষ্টা সর্তেও প্রমথ তার কথার খেই হাঁরয়ে ফেলাছল, হাঁরয়ে ফেলে গ্রামোফোনের ভাঙা রেকর্ডে পিন আটকে যাবার মতন একই কথা পুনরাবৃত্তি করে যাচ্ছিল, হাসছিল, কখনো কখনো ছেলেমানুষের মতন টাঁবল চাপড়াচ্ছিল। এ সবই তার বোধগম্য হবার পব প্রমথ আব দাঁড়াতে সইল না। হুইস্কি জিনিসটা তার ভাল সয় না। ীকংবা সইলেও সে সুর- -তিকে পেয়ে একটু বেশী খেয়ে ফেলেছিল। ঘুমও পাচ্ছল প্রমথর। চোখ গুড়ে আসাঁছল, টাল লাগাঁছল। ঠোঁটেব 'সগাবেটটা ফেলে 'দয়ে প্রমথ বলল, সুবপাঁত, মীরা তোকে 'বছানাটছানা করে 'দচ্ছে, আম শুতে চললাম। দাঁড়াতে পারছি না।” সবপাতি প্রমথর অবস্থাটা বুঝতে পারাছল। বলল, “তুই শুয়ে পড়।” বসার ঘরেই বসে থাকল সূরপাঁতি। মীবা টোবল পাঁরভ্কার করছে। হয়তো আসতে একট দোরই হবে। সগারেটটা ধীরে ধরবে খেতে লাগল সূরপাঁত। এখন রাত কত অনুমান করা যায়। দশ, সোয়া দশ। এমন কছ রাত নয়। শীতের শেষ, মানে কাছাকাছি কোথাও বসন্ত, বাতাসে ফিকে শীতের পরশ থাকলেও এই কলকাতাব হাওয়ায় যেন কিছু এলোমেলো ভাব রয়েছে। ব্যারাকপুরের বাঁড়তে, সুবপাঁতর মনে হল, এখনও শীতের বাতাস আসছে গঙ্গার জলো ঝাপটা নিয়ে। সেখানে দশটা অনেক 'নাঁবড় রাত। তারামাঁণ তাব ঘরে ঘুমিয়ে পড়েছে, যাঁদ না ঘ্াময়ে থাকে-কাবরাজী তেল আর জল মাথার চাঁদতে মেখে ঘূমোবার চেত্টা করছে। হারপদ তার দোকানের ঝাঁপ ফেলেছে, ফেলে মাঠকোটার দোতলায় তাব বউকে 'নয়ে রঙ্গ-তামাশায় মন্ত। হাঁরপদর বউ '"ছলেমানুষ, বছর বিশেকও বয়েস হয় নি, স্বাস্থ্য চমৎকার, খাটিয়ে মেয়ে। মানভূমের মেয়ে বলে তার কথায় নানা রকম টান আছে, 'বাচত্র 'বাঁচন্র শব্দ বলে ফেলে। হরিপদ বারাসতের লোক, বউয়ের কথায় মজা পায়, রগড় করে, মস্করা চালায়। ওরই অন্যাদকে উমাশশণীর ভাঙাচোরা একতলা ঘর। ছেলে বাবলু । বাবলু নাকি বছর পাঁচেক আগে তলপেটে ছি খেয়োছল। ধাক্কাটা ১৯ সামলে নিলেও তার শরীর ভেঙে গিয়েছে; রোগাটে চেহারা, চোখ দুটো জণ্ডিস রোগীর মতন হল_দ, গায়ের চামড়াও খসখসে খাঁড়ওঠা। বাবল? মার তাড়নায় ইলেকাদ্রকের এক দোকান দিয়েছে, দেড় হাতি দোকান, খদ্দেরটদ্দের বড় পায় না। সুরপাঁত নিজের ঘরের কথা ভাববার চেষ্টা করল। অন্ধকার। জানলা- গুলোও বন্ধ। বাসা বিছানা পড়ে আছে। জলের কু'জোটাও সকালে ভরা হয় নি। চায়ের তলানিতে কাপে রঙ ধরে গেছে। এমন সময় সুরপাতি পায়ের শব্দে মুখ তুলে দেখল মীরা এসেছে। প্রমথর জন্যে মীরা বোধ হয় একটু 'বিরন্ত ছিল। তার চোখেমুখে সন্ধ্যের সেই স্বাভাবিক প্রসন্নতা লক্ষ করা যাঁচ্ছল না। চোখ দুটি অন্যমনস্ক, ঈষং রুক্ষ। তবু মীরা স্বাভাবিক হবার ভাব করাছল। “আপনার বিছানা করে দিয়োছি।" সুরপাতি মীরার চোখ দেখাঁছল। বলল, “আমার তাড়া ছিল না। আপাঁন খেয়েছেন ?” মাথা নাড়ল মীরা । “আপাঁন খাওয়াদাওয়া সেরে আসুন। আম বসে আঁছ।" মীরা অস্বাস্তর চোখ করে তাঁকয়ে থাকল। “রাত হয়ে গিয়েছে।” “সাড়ে দশটশ।...আপনি আসন, আমি বসে আছি।” “বসে থাকবেন? বিছানা কিন্তু তোরি।” সূরপাঁতির মনে হল, বসার ঘর থেকে সে না ওঠা পযন্ত মীরা স্বাস্ত পাবে না। কিংবা মীরা কি ভাবছে, সুরপাঁতর এই স্বাভাবকতা কীন্রম ? প্রমথর মতন বিছানায় যাওয়াই তার উচিত? মীরার বুঝি বিশ্বাস হচ্ছে নাঃ সুর- পাতি বলল, “বেশ চলুন ।” প্রমথর এই ফ্ল্যাটটা ভাল। বাড়িও পুরনো নয়। ছোটর মধ্যে ব্যবস্থা প্রায় সবই আছে। ভেতরে মোটামুটি চওড়া কাঁরডোরের বাঁ দিকে প্রমথদের শোবার ঘর, বাথরুম। কাঁরডোরের মুখোম্াখ রান্নাঘর আর স্টোর রূম। ডান দিকের পাযসেজটা সরু. প্যাসেজের মুখেই আর-একটা ঘর. বাড়ীতি প্যাসেজটুকু ছোট ব্যালকানর মতন পড়ে আছে। সুরগাঁত ঘরে এল। বাতি জ্বালানো । সরু খাট একপাশে, যৎসামান্য [কিছু আসবাব_যেমন পুরোনো একটা দেরাজ, গোল মতন টেবিল, বেতের চেয়ার, পায়ে চালানো সেলাই কল। অন্য 'কছ; টদীকটাক পড়ে আছে টুকাণঘে ষে। '. সরপতি বৃলুরী"“আমি দেরি করে ঘুমোই। আপানি খেয়ে আসন, আম বসে আছ” ২০ মারা বিছানার দিকে তাকাল। ধোয়ানো চাদর পেতে বিছানা করে দিয়েছে, বালিশের ওয়াড়ও পাঁরন্কার। পায়ের তলায় কম্বল আর নেটের মাশার রাখা আছে। মারা মশার টাঙয়ে দিয়ে যেতে পারত। ভেবোছল টাঁঙয়ে 'দয়ে যাবে। বাধ্য হয়েই যেন মীরা চলে গেল। সুরপাঁত ঘরের মধ্যে দাঁড়য়ে থাকল সামান্য, তাবপর দু চার পা হাঁটল, গায়চারির মতন। দেওয়ালে প্রমথর মেয়ের ছবি। ছিপাঁছপে গড়ন, চোখা 'চাখা নাক চোখ, মেয়েলী প্যান্ট শার্ট পরে দাঁড়য়ে আছে, হাতে টোৌবল টোনসের ব্যাকেট। প্রমথব কোনো ছাপ মেয়োটর চেহারায়, নেই, মীরাব সামান্য আছে। গুবপাতি একটু লক্ষ করে দেখল। প্রমথর মেয়েকে বেশ ঝরঝরে তরতরে মনে হচ্ছে। আর-একটা ফটো অন্য দেওয়ালে । প্রমথর ছেলের নয়। মীরারও নয়। এক মাহলার। আটপোরে বাঙালণ প্রবীণার। প্রমথর মার হতে পারে। 'বধবার বেশ। মুখাঁটি অনেক বিবর্ণ হয়ে গিয়েছে। বেশ পুরোনো ছাব। যাঁদ প্রমথর £াব হয_ তবে দ দেওয়ালে ঝোলানো ঠাকুমা এবং নাতনীর মধ্যে যে বস্তব এব ববধান থেকে যাচ্ছে তাতে সন্দেহ নেই। ফটো তোলার দোকানে হদবেক [কম ফটো টাঁঙয়ে রাখা হয়, পাশাপাশি, ওপরে নীচে; অত কাছাকাঁছ থাকা সত্তেও বোঝা যায় একের সঙ্গে অন্যেব কোনো সম্পর্ক নেই। সুবপাঁতির মনে হল, প্রমথর মা এবং মেয়ের মধ্যেও কোনো সম্পর্ক নেই। এই দুয়ের মধ্যে য ব্যবধান সেটা কোনো মতেই ঘোচানো যায় না। স্কুল মাস্টারের বিধবা স্ত্রী আন দারাঁজাঁলঙে পড়া প্রমথর মেয়ে দু প্রান্তে দাঁড়য়ে আছে। গোল টোঁবলের ওপর দু চারটে ইংরেজশী ীসনেমার ছাঁবর কাগজ, ফ্যাশানেব স্গজ, কামকস পড়ে ছিল। একটা পেপার ওয়েট চাপা দেওয়া পাঁখর রঙিন হাঁব। বিছানায় এসে বসল সরপাঁতি। ঘরের জানলা বন্ধ। এঁদকে বেশ মশা। দু চারটে মশা হাতে পায়ে বসাঁছল। তাবামাণ সুরপাঁতির জন্যে রুটিট;ট করে রেখে দেয়। সাধারণ কোনো *বকার। দুধটাও ফুটিয়ে রাখে । মাছ মাংস রাঁধতে চায় না, পারেও না। নিতান্ত অরুচি ঠেকলে সুরপাঁতিকে বাজারের হোটেল থেকে মাংসটাংস কিনে নিয়ে যেতে হয়। ইচ্ছে করে না সুরপাঁতর। তার পেট ভরানোর ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহও নেই। আজ তারামণির রান্না নম্ট হল। কাল বুড়ি খচখচ করবে। প্রমঘর আজকের এই সমাদর যে অকীন্রম তাতে কোনো সন্দেহ নেই । কখনো কখনো- অন্তত প্রথমে সৃরপাঁতির মনে হয়োছিল, উচ্ছবাসের ঝোঁকটা কেটে গেলে প্রমথ 'মিইয়ে পড়বে, ঠান্ডা হয়ে যাবে। তখন ভদ্রুতা এবং সৌজন্যের বেশী কিছ পাওয়া যাবে না। কিন্তু প্রমথর উচ্ছাস কাটল না। বরং নেশার ১ ঝোঁকে সেই উচ্ছ্বাস আরও বেড়ে উঠল। অবশ্য একে শুধুই উচ্ছাস বলা ঠিক নয়, আন্তাঁরক আকর্ষণও বলা উীঁচত। হৃদয়ের এই তাপ প্রমথ এখনও রেখেছে। শুধুই কি তাপ রেখেছে প্রমথ? সরপাঁত এখানে কিছুটা সাঁন্দগ্ধ। প্রমথকে কি তাঁপত মনে হয় নাঃ কখনো কখনো, কোনো কোনো কথার প্রমঘকে তাই মনে হচ্ছিল। সুরপতি অন্যমনস্ক হল। বিছানার সাদা নরম চাদরের ওপর ডান হাতটা আস্তে আস্তে ঘষতে লাগল। যেন ছু কোমলতা মসৃণতার স্পর্শ পেতে চাইছিল। আনমনা দাঁষ্টতে মশারর ঈদকে তাকাল। পাট করা মশার পড়ে আছে। শ্যামার অভ্যেস ছিল সুরপাতির পাতা বিছানার চাদর তুলে বাঁলশ সাঁরয়ে আবার সব পাঁরজ্কার করে পেতে দেওয়া । বিছানা পাতা হয়ে গেলে শ্যামা কয়েক ফোঁটা ওঁডকোলন বাঁলশে চাদরে ছাড়িয়ে দত। বলত, ভাল ঘুম হয়। সুরপাঁতির ভাল ঘূম হত না। গন্ধটা তাকে, তার স্নায়ু এবং চেতনাকে কাতর করে রাখত। বাঁলশ উলটে নিত সূরপাঁত। গন্ধটাকে যেন তলায় চেপে রাখার চেম্টা করত। তলা থেকে আরও ভীষণ এক কাতরতা ওপরে উঠে আসত । গ্রাস করত। বালিশ উলটে নিলেই কি হীন্দ্রয়ান্ভূতি চাপা যায়! মীরা এসেছিল। সুরপাঁত যখন তাকাল, মীরা তখন গোল টেবিলটার [দকে। “আমার জন্যে তাড়াহুড়ো করলেন না তো?” সরপাঁতির মুখের অন্য- মনস্ক ভাবটা কেটে গেল। “না, না।” সুরপাত মীরার মুখ দেখাঁছল। স্বামর জন্যে যে 'বিরান্তি ময়লার মতন মীরার চোখেমুখে তখন জমেছিল এখন তা আছে বলে মনে হচ্ছে না। হয়তো মীরা সযত্নে তা সাঁরয়ে ফেলেছে। “আপাঁন বসুন না", সূরপাঁতি বলল। মরা বসব মনে করে আসে নি বোধ হয়, সুরপাঁতির অনুরোধে কিছুটা অবাক হল, ইতস্তত করল । «এগারোটা বাজে--”, মীরা সাধারণভাবে আপান্ত জানাবার চেষ্টা করল। “আপনার অনেক পারশ্রম গেল”, সুরপাঁত বলল, “ক্লান্ত বোধ করছেন ।” “না না” মীরা বলল, “পাঁরশ্রমের কী!” বলতে বলতে যেন তার পারশ্রম হয় নি-সে ক্লান্ত নয়, সুরপাঁতির অনুরোধ মতন বেতের চেয়ারটায় বসল। বেতের চেয়ারটা সাধারণ, হাতল রয়েছে । চেয়ারের ওপর তুলোর গাঁদ। সরপাঁত দু মুহূর্ত চুপ করে থেকে বলল, “প্রমথ ঘুমিয়ে পড়েছে?” ৎ মীরা একদিকে মাথা হেলাল। প্রমথর কথা ওঠায় সামান্য গম্ভীর হল। সুরপতি বলল, “প্রমথ এখনও মাঝে মাঝে ছেলেমানুষ করে ফেলে। ওকে দেখে এই কণ্ঘন্টায় আমার তাই মনে হচ্ছে। আমায় দেখে ও এত হই-হললা করবে আমও ভাবি নি। আজকের ব্যাপারটায় আপাঁন ওকে মাফ করে 'দিন, আমার খাতিরে অল্তত।”৮ সুরপাঁতির কথা বলার মধ্যে যে নরম, সরস অথচ ক্ষমা প্রার্থনার ভাব ছিল _মীবা তা কানে ধরতে পারল। পেরে সঙ্কুচিত হল। বলল, “আম কিছু মনে করি নি।” “করলেও আর মনে রাখবেন না।” “ও বড় একটা এরকম করে না।» সুরপাঁতি লক্ষ করল, মীরা আবার পা নাড়াচ্ছে, হাট দুটো কাঁপছে, শাঁড়ও। শ্যামাও পা কাঁপাত, পায়ের সঙ্গে তার গা কে'পে উঠত, বা সে কাঁপাত। “এটা আমার মেয়ের ঘর”, মীরা বলল, তাকাল চারপাশে, “ছুটিতে এলে থাকে । £ওই ।...শীতের ছটিতে এসেছিল রুমাক। এই তো গেল সবে” “কত বয়েস হল?” “বারো 1” “একলা থাকতে পারে 2” “বেশ পারে। আমার জামাইবাবু রয়েছেন ওখানে ।” সুরপাঁত রুমকির কথায় আর গেল না। বলল, “ছেলে তো এখানে থাকে না।” “না”, মাথা নাড়ল মীরা, “আমার মার কাছে থাকে । ওকে ছাড়া মা থাকতে পারে না, ওরও সেই অবস্থা । বড় আদুরে হয়ে উঠেছে।” সূরপাঁত হাসল। “এভাবে থাকতে আপনাদের খারাপ লাগে না” মীরা পা দুটো জোড়া করে ফেলল। হাঁটুতে হিতে জুড়ে গেল যেন। পাতলা একটা সুতার চাদর গায়ে নিয়েছে মীরা। সুরপাঁতির চোখে চোখে তাকাল। “খারাপ তো লাগেই। লাগলেও উপায় কি!» সূরপাঁত মীরার মধ্যে কেমন এক দ্বিধা লক্ষ করল। যেন খারাপ লাগাটা তেমন দিছু নয়, মীরা খারাপ লাগা সহ্য করতে পারে। কাছে রাখতেই ভয় হয়। মীরাই কথা বলল। “আপনার মশারিটা টাঙিয়ে দিয়ে যাই।” সূরপাঁত তাকাল। “আম টাঙয়ে নেব।” ঘ্৩ “না না, সেকি! আম দিচ্ছি।” “কোনো দরকার নেই। আমি পাঁর। অভ্যেস আছে।” মীরা চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিল। মশারি টাঙাবার জন্যেই যেন. এগিয়ে আসাছল। সরপাঁতির কথায় দাঁড়য়ে থাকল। ক বলবে না-বলবে বুঝতে পারাছল না। সামান্য দাঁড়য়ে আবার দু পা এাগয়ে বিছানার পায়ের দিকে চলে গেল। বন্ধুর স্ত্রী হিসেবে যতটা পরিহাস যোগ্য হবে তার পক্ষে তার মান্লা রেখেই তরল গলায় বলল, “আপাঁন পারেন বেশ করেন। এখানে আপনার পারতে হবে না। এটা মেয়েদের কাজ, তা ছাড়া আপাঁন আমাদের আতাঁথ ।” মশার তুলে নিচ্ছে। লম্বা ফরসা হাত সাদা মশাঁরর ওপর পড়ল। “আপনার হাতের ওই দাগটা কিসের ৮” সুরপাঁত আচমকা প্রশ্ন করল। মীরা মশার ওঠাতে গিয়েও থমকে গেল। সরপাতির চোখে চোখে তাকাল । শনঃ*বাস বন্ধ করে থাকল যেন, তারপর যখন 'নিঃ*বাস ফেলল, আচমকা *বাস ফেলার শব্দ হল। “বললাম না, আয়ুরেখা 1৮ সুরপাঁতি আস্তে আস্তে মাথা নাড়ল। “কেটে গিয়োছল।” “হ্যাঁ” মারা মশারি উঠিয়ে নিল। “কাচে।» “অনেকটা কেটেছিল” সুরপাতি উঠে দাঁড়াল, “আর-একটু হলেই বুড়ো আঙুল চলে যেত, তাই না?” মীরা বিছানার ওপর মশারি ফেলে দিয়ে একটা আগা নিয়ে জানলার 'দকে চলে গেল। যাবার সময় বিভ্রমের চোখে যেন দেখল সরপাঁতকে। চোখ নামাল। মশারর কোণায় ফিতে বাঁধা ছিল। জানলার মাথায় হুক পোঁতা রয়েছে। সুরপতি মীরাকে পেছন থেকে দেখাঁছল। পুরোপুরি পেছন নষ, পাশ থেকেও । মীরার গায়ের চাদর, শাড়ির আঁচল তার কোমরের ভাঁজ কিছুটা ঢেকে রাখলেও সবটা ঢাকতে পারে 'নি। মীরাকে দ্‌' পায়ের আঙ্ছলে ভর ভাঁজ আরও গভীর দেখাল; আলোর একটা অস্পম্ট ছায়া তার তলায়। যেন সরীসৃপের মতন কছু একটা ক্রমশই নীচের 'দকে নেমে যাচ্ছে। “হাতটাই হাঁ হয়ে গয়োছিল”, মীরা ঘুরে দাঁড়াল। একটা খশুট বাঁধা হয়েছে। দ্বিতীয় খুটের জন্যে বিছানার দিকে এাঁগয়ে আসাছল। পায়ের হালকা চঁটিতে শব্দ। “পাঁচ ছটা স্টিচ দিতে হল হাসপাতালে । রন্তে ভাসা- ভাঁস। ওষুধ, ইনজেকশন-_” মীরা বিছানার কাছে এসে "দ্বিতীয় খণুটটা তুলে নিল। “আপনার চোখ সবই দেখতে পায়।” মীরা হাসল। সরপতি হাসল না। বলল, “চোখে পড়ার মতন হয়ে রয়েছে।” “আমি তখন ভেবোছলুম আপাঁন হাত দেখতে পারেন।» ২৪ “বেশ ভেবোছলেন।৮ “বা, আমার দোষ কি! আপাঁন কাশীতে থাকতেন।” “কাশীতে থাকলে লোকে জ্যোতিষ হয় ?” “ক জানি! শুনোছ চর্চা হয় জ্যোতিষের, কাশীতে। লোকে বলে।” মীরা দ্বিতীয় খুটটা নিয়ে দেওয়ালের দিকে চলে গেল। সহরপাঁতর শ্যামাকে মনে পড়ল। মীরা শ্যামার' চেয়ে মাথায় খাটো। শ্যামা ছিল মাথায় লম্বা, হাতও লম্বা লম্বা ছিল। মশার টাঙাবার সময় সে অরুেশে সব জায়গায় হাত পেত, হাতি না পেলে সুরপাঁতিকে কানের চেয়ারটা টেনে [দতে বলত। “আপাঁন আমায় দিলে পারতেন”, সুরপাঁত বলল। মীরা যতটা সম্ভব গোড়ালি উষ্চু করেও নাগাল পাঁচ্ছল না। তাব গাষ্রে চাদর খুলে যাঁচ্ছিল। সুরপাঁতি উঠে গিয়ে মরার পেছনে দাঁড়াল। মীরা তখনও একেবারে হাল ছেড়ে দেয় নি। ছোট করে লাফ মেরে 'ফিতের ফাঁসটা দেওয়ালের হুকে লাঁগযে দেবাব চেম্টা করাছল। সূরপাঁত তার লাফ দেখল। একটা অদৃশ্য ঢেউ যেন সুরপাঁতিব হীন্দ্রয়ে এসে ঘা 'দিল। মীরা পারল না। অনুভব করল সুরপাঁত তার পেছনে । ঘুরে দাঁড়াল। তাবপর হেসে ফেলল । “দন।” সুরপাঁত ফিতেটা নিল। হুকে আটকে দিল। “আম বেন্টে মানৃষ-_” মীরা নিজেকেই 'নজে ঠাট্টা করল। “এ ঘবে একটা ছোট মোড়া ছিল--তার ওপর উঠে টাঁঙয়ে দিতাম। আপনাব বন্ধু সেটা ভেঙেছে । ভেঙে ফেলে দিয়েছে।» “'আপাঁন ঠিকঠিক লম্বা”, সুরপাঁত বলল, “মেষেবা এই বকমই হয়। আরও লম্বা কমই হয়।” মশাবির একটা পাশ বিছানা এবং বিছানার বাইরে ঝুলাছল। মীরা হাত দিয়ে মশার ঠেলে অন্য পাশে এল। সুরপাঁতও। সুরপাঁতই বাঁক দহ" দিকের ফাঁস দেওয়ালের হুকে লাগাতে লাগল। মীবা মশার গুজে দিচ্ছল। মীরা বলল, “রাত্রে আপনার আর কিছু দরকার লাগবে? কম্বল পাষের তলায় রয়েছে।” «আমার জামাটা কি এ-ঘরে ?” “না। ও-ঘরেই পড়ে আছে। এনে 'দাঁচছি। জল রাখব ?” মাথা নাড়ল স্মরপাঁত। মীরা চলে গেল। সরপাঁত কয়েক পলক বিছানার 'দিকে তাকিয়ে থাকল। পারচ্ছম, পরিপাটি সাদা বিছানা। আচমকা তার মনে হল, খানিকটা বড় মাপের মোটা কাচের বাক্সর মতন দেখাচ্ছে বিছানাটা। সূরপাঁতি আর সামান্য পরে ওই বাক্সের মধ্যে শুয়ে থাকবে, চোখ বন্ধ করে। মানুষের নিদ্রা এবং মৃত্যুর ধরনটা প্রায় একই। শ্যামা কখনো বিছানায় সাদা চাদর পেতে দিত না, রঙীঁন ছাপানো চাদর সে পছন্দ করত, বাঁলশের ওয়াড়ও ছিল নকশা করা। বলত, সাদা রঙটা হাসপাতালের, বাঁড়তে সাদা থাকবে কেন? শ্যামা অদ্ভূত অদ্ভুত কথা বলত : বিছানা সাদা রাখলেই পাঁরজ্কার থাকে নাক? সাদা বিছানাও নোঙরা হয়। কাঁ হয় নাঃ সাদা মানে শুদ্ধ নয়। মানুষের বাইরেটা শ্যামা কোনো কালেই গ্রাহ্য করত না। বড়াঁক__ মানে রমা বাইরেটা গ্রাহ্য করত। দুই বোনের মধ্যে আমলটা ছিল এইখানে, চোখে পড়ার মতন। রমা সুরপতিকে পছন্দ করলেও কখনো তার ভেতরটা সরপাঁতিকে বুঝতে দেয় নি। শ্যামা দিয়েছিল। যখন রমার চামড়ার এক অদ্ভুত্ব অসুখ করল--তার মোটামুট ফরসা রঙ নীল হয়ে আসতে লাগল, হাত গলা পিঠ বুকের, তখন রমা তার শরীর ঢেকে রাখার জন্যে এত ব্যস্ত ও সতর্ক থাকত যে. জামাকাপড়ের মধ্যে দিয়ে তাকে আর দেখাই যেত না। শ্যামা এ-সব ব্যাপারে অসতেকোচ 'ছিল। মীরা ফিরে এল। জল এনেছে। সূরপাঁতর জামা-টামাও। জল রেখে মীরা জামা প্যান্ট চেয়ারের ওপর রাখল। “আপাঁন শয়ে পড়ুন, আম যাই”, মীরা বলল। “হ্যাঁ, আসুন। রাত হয়ে গিয়েছে” চলে যাচ্ছিল মীরা । দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়াল হঠাৎ, ঘুরে তাকাল। কিছ7দ বলতে গিয়েও দু মৃহূর্ত চুপ করে থাকল, তারপর বলল. “সকালে ডাকব? না, ডাকব না?” সরপাঁতি মীরার চোখের দিকে তাকিয়ে কি যেন খোঁজার চেষ্টা করল। শেষে বলল, “যাঁদ ঘুময়ে থাক ডাকবেন। বোধ হয় জেগেই থাকব।” মীরা কথা বলল না। চলে গেল। সুরপতি স্থির হয়ে দাঁড়য়ে থাকল। সুইচের শব্দ হল যেন, কার- ডোরের আলো নিবল, দরজার মুখ পর্যন্ত অন্ধকার এসেছে। রাত হয়ে আসার নীরবতা অনুভব করা যাঁচ্ছল, ভাঙাচোরা অস্পস্ট কিছ শব্দ রয়েছে গলিতে । ঘরে-ফিরে-যাওয়া রিকশাওয়ালার গাঁড় টানার শব্দ, কোনো ট্যাকির গলিতে এসে হঠাং থেকে যাওয়া । মারাদের ঘরের দিক থেকে আরও অন্ধ- কার নেমে এল। নিজের ঘরে ঢুকে গেল বোধ হয় মীরা। সূরপাঁতি ঘরের দরজা বন্ধ করল না। ভোঁজয়ে ?দল। বাতি নেবালো। বছানায় শুয়ে অন্ধকারে তাঁকয়ে থাকল সূরপাঁত। কম্বলটা নরম। ৬, গ।য়ে রাখতে ভালই লাগছিল । প্রমথকে বা মীরাকে এ-সময় কল্পনা করতে সমবপতির মন্দ লাগল না। প্রমথ তার গোলগাল চেহারা নিয়ে অঘোরে ঘমোচ্ছে। মীরা স্বামীর পাশে শুয়ে আছে। হয়ত তফাৎ রেখেই। অনেক কাল আগে সুরপাঁতি যখন রাঁচর দিকে কেশবজীর সঙ্গে কাঠের কারবার করে বেড়াচ্ছে, তখন একাঁদন সে বিকেলে বাঁম্ট বাদলার জন্যে গ্রামের এক চেন বাঁড়তে থেকে যেতে বাধ্য হয়েছিল। একটি মাত্র মাঁটর ঘর। বাইরে উচু দাওয়া। একপাশে কাটা কাঠের স্তুপ । দড়ির ছোট খাটিয়ায় সুরপাঁত শুয়ে ছিল, ঘুম আসছিল না। বৃম্টি-বাদলা কেটে গেছে। ঘুটঘুটে রাত। চারদিকে জঙগল আর ভিজে বাতাস অন্ধকার যেন মাখামাঁখ হয়ে এক বিশাল বন)ার মতন সমস্ত ঢেকে ফেলোছল। সরপাঁতি একবার বাইরে 'গয়োছল-_ ফেরবার সময় চোখে পড়ল, হাকিমেব যুবতাঁ বউ কাঁচা কাঠের স্তৃপের আড়ালে দাওয়া ঘে'ষে বসে । হাকিম খড়ের ওপর চট আর কাঁথা পেতে শয়ে। হাকিমেব বউ তার বরেব পাশে বসে কাপড় খুলে আঁচলে ধরে আনা জোনাক ঝেডে দিচ্ছে নীলাভ আলোর বন্দু দু" জনের চাবপাশে জবলছিল, নিবাছল। হাঁকমের বউ দেহাতী গলায় হাসাঁছল। হেসে হেসে হাকিমের গায়ে মিশে যাচ্ছিল। সুরপাঁত ও-রকম দৃশ্য দেখে নি কখনো । সে মুগ্ধ, আভভূত, অসাড় হয়ে দাঁড়িয়ে পড়োছল। তারপর ঘরে ফিরে এসে শুয়ে শুয়ে ভেবেছিল, ওই জোনাকিগুলো তার আর হাকিম দম্পাতির মধ্যে যে ব্যবধান স্ম্ট করেছে তা জন্মান্তরের। মীরা আর প্রমথকে অতটা দূরের মনে হয় না কেন? মীরা আর প্রমথ গদিঅলা বিছানায় শুয়ে থাকে, পাশাপাঁশ। তারা অনেককাল ওইভাবে শুয়ে আছে, আরও দীর্ঘকাল থাকবে; কিন্তু সুবপাতি বুঝতে পেরেছে-ওই শয্যা নিবিড় নয়। প্রমথর জন্যে সুরপাঁতি দুঃখ বোধ করাছল। ১৬ চার সকালে চা খেতে বসে প্রমথ স্দীকে বলল, "সরপাঁতি এখনও ঘুমোচ্ছে ” মীরা চা ঢেলে দিচ্ছিল। শোবার ঘরের গায়ে চওড়া কাঁরডোরের একপাশে খাবার টেবিল। পুবের রোদ এদিকে আসে না। দুপুরের দিকে মাপাজোপা রোদ এসে বড় জানলা ছুয়ে কাচ তাতিয়ে চলে যায়। চায়ে চিনি মেশাতে মেশাতে মীরা বলল, “দেখাঁছ না।” প্রমথ অবাক হল। বিছানা ছেড়ে সোজা বাথরুম, বাথরুম থেকে বোরয়ে চায়ের টোবলে এসে বসেছে । চোখের তলায় এখনও ঘুমের চিহ্ন ফুটে আছে, পাতা দুটো ফোলা ফোলা, মুখ সামান্য ভাঁর, মাথার চুল উসকোখুসকো। চায়ের সঙ্গে টোস্ট এগিয়ে দিল মীরা। বলল, “কোথাও বোঁরয়েছেন বোধ হয়।” প্রমথ অবাক হয়েই বলল, “তোমার সঙ্গে দেখা হয়াঁন 2” মীরা তার নিজের কাপ মূখের কাছে টেনে নল। বলল, “না । সকালে আঁম রাধাকে দরজা খুলে দিতে উঠোছলাম, তখন ও-ঘরের দরজা বন্ধ ছিল দেখোছ। রাধাকে দরঙ্ঞা খলে দিয়ে আবাব আমি বিছানায় গিয়ে শবে পড়ছি।” “রাধাও দেখেনি 2” “ও কি করে দেখবে* রান্নাঘর পারিম্কার করে দুধ আনতে গেল। আজ আবার দুধের গাঁড় আসতে দেরী করেছে। রাধা ফিরে আসার পব আম উঠেছি।” প্রমথ ীবরন্ত হল। মীরা ঘুম থেকে উঠে কোন কোন্‌ কর্তব্য সেরেছে তা জানার কোনো আগ্রহ সে বোধ করল না। বুঝতে পারল, সমরপতি কখন ঘর থেকে বোরয়ে গিয়েছে মীরা খেয়াল করোন। টোস্ট নল না প্রমথ। বিরন্ত গম্ভীর মূখ করে চায়ে চুমুক 'দল। “ও কি নিজের জামাটামা পরে বোঁরয়েছে 2, জিজ্ঞেস করল প্রমথ। “হ্যা, চুপ করে থাকল প্রমথ । আশ্চর্য, কোথায় গেল সুরপাঁত? সাত সকালে কাউকে কিছ না বলে, চা-্টুকু পর্যন্ত না খেয়ে কোথায় চলে গেল? কাছা- কাছি কোথাও ঘুরতে গিয়েছেঃ আশেপাশে বোঁড়য়ে বেড়াচ্ছেঃ মার্নং শ৮ ওয়াক করছে নাকি? কিংবা মীরা দেরী করে উঠেছে দেখে সুরপাঁত চুপ- চাপ সকালে বসে না থেকে বাইরে খাঁনকটা ঘুরেফিরে আসতে গিয়েছে ? “তোমায় কাল কিছু বলেছিল 2” প্রমথ 'জজ্ঞেস করল। “আমায়? কখন?” “আম শুতে চলে গেলাম। তারপর তোমায় কিছু বলোছল £' “্না।” স্লীর চোখের দিকে তাঁকয়ে থাকল প্রথম কয়েক মুহূর্ত তারপর বলল, “স্ট্রেঞজ।" মীরাও গম্ভীর। অগ্রসন্নই মনে হচ্ছিল। সঃরপাঁত না-থাকাব জবাব- দাহ তাকে করতে হবে কেন? প্রমথর সকালের দিকে এলাঁজঁর মতন হয়, নাকের ভেতরে সর্দি সাঁদ ভাব হয়। চুলকোয়, হাঁচি পায়। শীত আর বর্ষায় এটা লেগেই থাকে। দর চাববার হাঁপাঁনর মতন *বাসের কম্টও হয়েছে। নাক চুলকোচ্ছিল বলে প্রমথ বুড়ো আঙুলে নাক ঘষতে লাগল। মীরা চায়ে আরও একটু দুধ মিশিয়ে নিল। কড়া লাগাঁছল। প্রমথব [ঈদকে তাকাল। “শুধু চা খাচ্ছ কেন? প্রমথ হাঁচি সামলাতে পারল না। বার চারেক হাঁচল। গলায় অল্প সার্দ [গিষে জমেছে । জড়ানো স্বরে প্রমথ বলল, “বুঝতে পারছি না, ও চলে গেল নাক £" মীরা এক টূকরো টোস্ট খেতে খেতে বলল, “ীকছ7 না বলেই চলে যাবে ৮" প্রমথ নিজেও নিশ্চিন্ত নয়, সন্দেহের গলায় বলল, “ক জান! যাওয়া উচিত নয়। ...তবে ওর কথা বলা যায় না, যেতেও পারে ।” মীরা আর কথা বাড়াল না। প্রমথ টোস্ট নিল। পুবের ঈদকে তাকাল অন্যমনস্ক চোখে । একেবাবে শেষ প্রান্তে দেওয়াল ঘেষে উষ্চু টুলের ওপর ক্যাকটাসের টব, মাঁটতে পোড়া ইটের চৌকোণ্োে টবের মধ্যে পাতাবাহার, দেওয়ালে একটা বাহারন' কাঠের ফ্রেমে আয়না ঝূলোনো, ঝন্টু তার বিকল এয়ারগানের গলায় ফাঁস বেধে এক কোণে পেরেকে ঝাঁলয়ে রেখে িয়েছে। জুতোটনুতো, সংসারের খুচরো ক; কাজের জানস সবই দেওয়াল ঘে-ষে রাখা রয়েছে। দাঁক্ষণ ঘে*ষে উ“চুতে জানলা । আলো আসছে। এদিকে টোবিল ছুয়ে ফ্রিজ। “কাগজটা কই 2 প্রমথ জিজ্ঞেস করল। “চা খাও; এনে 'দাঁচ্ছ।» প্রমথ চুপ করে থাকল । মশরাই শেষে বলল, “রুমকে আজ চিঠি লিখবে না?” ৯ প্রমথ যেন কথাটা শুনতে পায়ান। তাঁকয়ে থাকল ফাঁকা চোখে । তার- পর বলল, “আজ আঁফসে গিয়ে লিখব ।” “আম সোঁদন লিখোছ। রুমূ তার আলবাম ফেলে গেছে, লিখে দিও ।” প্রমথ হঠাং উঠে পড়ল। শোবার ঘরে চলে গেল। ফিরে এল আবার। সিগারেটের প্যাকেট আর লাইটার এনে টোবলে রাখল। “তোমার মার কাছে কবে যাচ্ছ?” “শনিবার যাব ভাবাঁছ।» “আমার যাওয়া হবে না।” িউিটাদি, “মৃদুল ধরে নিয়ে যাবে। ওর বাবা ফিরে আসছেন।” “সেরে গেছেন ?” “তাই বলাছিল। ভেলোরে ভাল অপারেশান হয়েছে। সঙ্গে মৃদুলের বড় মামা থাকবে।” মীরার চা খাওয়া শেষ হল। উঠে পড়ল সে। প্রমথ সিগারেট ধরাল। সুরপাঁত কোথায় গেল? কিছু না জাঁনয়ে হঠাৎ চলে গেল কেন? এ ধরনের অভদ্রুতা করার মতন মানুষ সূরপাঁত নয়। কোনো জরুরী কাজের কথা মনে পড়েছিল নাকি, সাত সকালেই উঠে চলে গেল! প্রমথ সুরপতির ঠিকানা জানে না, কোথায় থাকে ব্যারাকপুরে তাও নয়, কলকাতাতেও তার কোনো ঠিকানা নেই যেখানে খোঁজ নেওয়া যাবে। প্রমথর রাগই হচ্ছিল। সুরপাঁতি বড় খারাপ কাজ করেছে। প্রমথ তাকে জোন করে ধরে আনল, বাঁড়তে রাখল, আর যাবার সময় কিছ না জানিয়েই চলে গেল সূরপাঁত। মীরা কাগজ এনে 'দিল। “শোনো, একটা কথা ভাবছি” প্রমথ বলল । দাঁড়য়ে থাকল মীরা । “কাল সুরপাঁত একবার বলাঁছল, তার বুকে ব্যথা হয়। হার্টের অসুখ- টসুখ আছে সামান্য । মাঝে মাঝে ওষুধ খায়। আম ভাবাছ, এমন তো হল না, সকালে এ দিকেই কোথাও ঘুরেটুরে বেড়াতে গিয়েছিল-হঠাৎ শরীর খারপ হয়েছে...?” মীরা প্রথমটায় চুপ করে থাকল, তারপর বলল, “হার্টের অসুখ বলছ, ওদিকে কাল বন্ধূকে আপ্যায়ন করতে ছাড়লে না তো?” প্রমথ ঈষৎ কুণ্ঠার সঙ্জো বলল, “ও বেশ কম খেয়েছে । বলছিল, আজ- কাল ছেড়ে 'দয়েছে-_, খায় না। আমই মাপ ছাঁড়য়ে গিয়োছলাম। হুইস্কি, স্পেশ্যালি এই দিশশটা আমার সুট করে না। আমার মনে হচ্ছে, এটা খেলে ৩০ আমার সকালে এলাজর্টাও বেড়ে যায়। নাক ভার্ত হয়ে গ্িয়েছে।” মীরা আর দাঁড়াতে চাইছিল না। বেলা হয়ে যাচ্ছে। প্রমথ এখুনি দাঁড় কামাতে বসবে, স্নানে যাবে। কাজ পড়ে আছে অনেক মণরার। “একবার দেখে আসব নাকি 2” প্রমথ বলল, “পাড়ার মধ্যে 2? “তোমার অফিস নেই ?, “কী করা যায় বলো তো?” “কিছ করতে হবে না। তোমার বন্ধ ছেলেমানুষ নয়। তার যাঁদ কাণ্ড- জ্ঞান, ভদ্রতা, কর্তব্যবোধ না থাকে-তোমার অত ছটফট করবার কি আছে!" মীরা রূঢ় হয়ে বলল। প্রমথ কোনো জবাব দিতে পারল না। স্ত্রীর চোখ থেকে চোখ সাঁরখে [নল। 'সগারেটের মুখে ছাই জমেছে অনেকটা, চায়ের কাপের মধ্যেই ঝেড়ে ফেলে দল । মীরা চলে গেল। সুরপাতির ওপর রাগ হলেও প্রমথ কেমন উৎকণ্ঠা বোধ করছিল । অনুচিত কাজ করেছে সুরপাঁত। মানুষের সঙ্গে খোলামেলা হয়ে মিশতে নেই। দু- হাত বাঁড়য়ে জাঁড়য়ে নেওয়াও বোকাম। আজকাল, প্রমথ লক্ষ করে দেখেছে, বন্ধুবান্ধবরাও রাস্তার লোকের মতন ব্যবহার করে। কোনো শালাই মন থেকে আর বন্ধুত্বটন্ধৃত্ব অনুভব করে না। কাগজ খুলে প্রমথ অসন্তুষ্ট মনে প্রথম খবরটার দিকে চোখ দল। দুপুর বেলায় মীরা চুপ করে শুয়োছিল। চোখ বুজে, পাশ ফিরে। দেওয়ালের দিকে মুখ ফাঁরয়ে শুলে চোখে তেমন আলো লাগে না। আল- মাঁর, ওয়ার্েরোব আরও নানান আসবাবের আড়াল পড়ায় জানলার আলো দেওয়াল পর্যন্ত পেশছতে পারে না। বিকেলের মতন ঘোলাটে, ঝাপসা হয় থাকে এ-পাশটা। মারা যখন দুপুরে ঘুমোবার চেষ্টা করে কিংবা ঘুমের হালকা ঘোরের মধ্যে শুয়ে থাকতে চায়_তখন এইভাবেই পাশ ফিরে দেওয়াল- মুখো হয়ে শুয়ে থাকে, চোখ বৃুজে। মীরা ঘমোচ্ছল না। তার চোখের পাতায় গাঢ় ঘুম নেই, অথচ তন্দ্রাব মতন ফিকে ভাব রয়েছে ঘুমের । রাধা দুপুরের কাজকর্ম সেরে নীচে চলে গিয়েছে মীরা বুঝতে পারছিল। যতক্ষণ রাধা ছিল, রান্নাঘর, ভাড়ার, করিডোর থেকে নানা রকম শব্দ আসাছল। এখন আর সে নেই। নীচে নৃপেনবাবুদের ফ্ল্যাটে রাধার ছোট বোন কাজ করে। ওখানে একফাঁলি বাড়তি ঘর আছে। রাধার বোন থাকে । রাধাও। দুই বোনের ওটাই আস্তানা । মীরার পক্ষে এটা স্ীবধের হয়েছে; হাতের কাছে ঝ; অথচ তাকে সর্বক্ষণের জন্যে থাকার ব্যবস্থা করে 'দতে হয়াঁন। ৩৯ মীরা তন্দ্রার মধ্যেই বুঝতে পেরোছিল--রাধা নীচে যাচ্ছে। বাইরের ঘরের দরজায় গডরেজের দরজা-তালা, ব্যবস্থা করে বাইরে থেকে জোরে টেনে বন্ধ করলে নিজের থেকেই তালা লেগে যায়। শব্দটা শুনোৌছিল মীরা। তারপর আর কোনো সাড়াশব্দ উঠছিল না। একেবারে 'নারাবাঁল বাঁড়। নিস্তব্ধ। প্রায় রোজই দুপুরে মীরা এই- ভাবে শঃয়ে থাকে, কোনো কোনোঁদন ঘুমিয়েও পড়ে। ঘুমিয়ে পড়লে কথা নেই, না ঘুমোলে ফাঁকা বাঁড় তার মনের তলায় আস্তে আস্তে যেন কোনো জাল ছাঁড়য়ে দেয়। মীরা যখন এ-বাঁড়তে প্রথম আসে তখন পশ্চিমের [দকে একটা পুকুর ছিল। পুকুরে মাছ ছাড়া হত। মীরা দেখেছে, বড় জাল নিয়ে জেলেরা জলে নেমে জালটা জলের তলায় ছাড়িয়ে দিত। তারপর যখন গুটিয়ে নিয়ে ডাঙায় উঠত, জলের মধ্যে ছোট ছোট মাছগুলো জ্যান্ত লাফাচ্ছে। সেই পুকুর নেই। দেখতে দেখতে ভরাঁত হয়ে লাহাবাবুদের ফ্ল্যাট বাঁড় হয়েছে, দোকানপাট হয়েছে, সত্যেনডান্তারের 'ডসপেনসার। ভালই হয়েছে। এই শহরে বাঁড়র কাছে পুকুর, ঝোপঝাড়, খাটাল ঘ*ুটে দেবার আয়োজন দেখলে কে না ভাববে জায়গাটা পাড়াগাঁ। বাড়তে কেউ এলে টেলে নাক 1সন্টকোতো। ঠাট্রা করে বলত, শেয়াল ডাকে না রাত্তরে?, এখন এসব কিছুই নেই। চার পাঁচ বছরের মধ্যে এ-পাড়া শহুরে হয়ে উঠছে ষোলো আনা । দিন দন আরও হচ্ছে, হু-হ করে নতুন বাঁড় উঠছে, গলির রাস্তায় পিচ পড়ছে, জলের পাইপ বসছে, লাইটের তার কতদূর পর্যন্ত চলে গিয়েছে । মীরা এখন মাঝে মাঝেই স্বামীকে বলে--তখন যাঁদ খানিকটা জায়গা কিনে রাখতে! জমি-জায়গার খোঁজখবরও আজকাল [নিতে শুরু করেছে তারা । অবশ্য, আজ দুপুরবেলায় শুয়ে শুয়ে এই পাড়া, ঘরবাঁড় কিংবা জাম কেনার কথা মীরা ভাবাছল না। তন্দ্রার মধ্যে সে অনুভব করাঁছল, মনের তলায় একটা জাল যেন ছড়ানো হয়ে গিয়েছিল কখন, এখন সেটা কেউ আস্তে আস্তে টেনে গুটিয়ে নিচ্ছে। মীরা দেখেছে, সে যখনই গকছ ভাবে, মনে হয়-এক একটা ঘটনা, কোনো কোনো স্মৃতি মাথা উপচয়ে আছে। এই রকমই হয়, জীবনের পেছন দিকে ণফরে তাকালে খুঁটিগুলোই চোখে পড়ে, যেন মস্ত কোনো মাঠের ওপর দিয়ে টোলগ্রাফের লাইন চলে গেছে, মীরা তাঁকয়ে আছে. দূর দূর খনট ছাড়া আর ণকছ্‌ চোখে পড়ছে না। এ-রকম একটা খুটি তার দাদু । মানুষটাকে ভাল লাগে না, তবু মনে পড়ে। ভাষণ রাশভারশ রুক্ষ ছিলেন, গোঁড়ামির শেষ 'ছল না, শাসন ছিল প্রচণ্ড, বাঁড়র মেয়ে-বউদের পক্ষে সবই প্রায় নীষদ্ধ ছিল। দাদুকে মীরা ৩২ বেশী দিন দেখোঁন, তবু সেই জাঁদরেল মানুষাঁটর মুখ অস্পম্ট করে মনে আছে। কেন আছে তা মীরা জানে না। হয়ত এই জন্যে যে, ছেলেবেলায় কয়েকটা বছর তাকে দাদুর কাছেই থাকতে হয়োছল। বাবা ঘরজামাই হয়ে থাকত। দাদু মারা যাবার পর সব ওলটপালট হয়ে গেল। মামা-মামীরা দাদুর নিয়মকানুন ভেঙ্চুরে তছনছ করে দিল। মীরারা ততাঁদনে অন্য বাঁড়তে চলে গেছে। বাবা কোনো দিনই *বশুরমাশাইয়ের ওপর খুশী ছিল না, কিন্তু ভয় পেত। যতাঁদন *বশুরমশাই বেচে ছিল--তালতলার বাঁড়র এক মহলে বউ আর ছেলেমেয়ে নিয়ে পড়ে থাকত চোরের মতন। রান্রে ঘরের মধ্যে মাকে যা-তা বলত। ভয় দেখাত, একদিন পালিয়ে যাবে। যখন দাদু মারা গেল, বাবা-মা তালতলার বাঁড় ছেড়ে চলে এল গ্রে স্ট্রঁটে তখন থেকে বাবার অন্য চেহারা । বাবা অকর্মণ্য, অক্ষম 'ছিল না। ব্যবসাপন্রে মাথা ছিল, দাদুর নানা ধরনের কারবার বাবাকে দেখতে শুনতে হত শালাদের সঙ্গে । গ্রে স্ট্রীটে এসে বাবা শবশরবাড়র সঙ্গে সামাজিক সম্পর্ক ছাড়া আর কিছু রাখল না। নিজেই কারবার ফে*“দে বসল, লোহা- লব্কড়ের। কারখানা খুলল বরানগরে। বাবার কথা মনে পড়লে মীরা অন্য রকম একজন মানুষকে দেখতে পায়। বাবাও একটা খুটি, পেছনের 'দিকে মাথা তুলে দাঁড়য়ে আছে। *বশুরমশাইয়ের আমলে যা ঘা সহ্য করতে হয়েছে বাবা যেন তা ভেঙে দেবার জন্যে দশ গুণ জোরে থা মারত। তার ফল হল এই, গ্রে স্ট্রিটের বাঁড়তে সারা দনরাত একটা হল্লা চলতে লাগল। কত লোক আসা-যাওয়া করত, বাবার বন্ধ্‌টম্ধু থেকে কর্মচারী, মা নতুন নতুন বন্ধু পেতে শুরু করলঃ কাঁমনীমাঁস, বনোমাসি, বায়কাঁকমা-আরও কত। বাবার শখ ছিল গানবাজনার, *বশুরের আমলে তালতলার বাঁড়তে বাবার সাধ্য ছিল না_সেতার-টেতার কোলের কাছে টেনে নিয়ে বসে। গ্রে স্ট্রীটে এসে বাবা আর-একবার পুরনো চর্চায় হাত দেবার চেম্টা করোছল, দেখল-_ও আর হবার নয়। নিজে আর সে চেম্টা করত না; বাঁড়তে আর বাইরে আসর বসাত। গানের সঙ্গে আনূষাঁঞ্গকও চলত। রেস ধরেছিল বাবা । ততাঁদনে মীরার আরও এক ভাই হয়েছে। মাঁরাও দেখতে দেখতে তেরো চোদ্দ হয়ে উঠল। বাবার হঠাৎ অসুখ করল, ীলভারের অসুখ । দেড় দু মাস ণবছানায় শুয়ে থাকার পর ভান্তার বলল, হাওয়া বদল করতে । , সমস্ত সংসার গুছিয়ে বাবা চলল দেওঘর। তখন থেকে বাবার অভ্যেস গগয়ে এক-দেড় মাস থেকে আসা । মীরারা এইভাবেই কখনো গিয়েছে ভুবনেশ্বর প্রচ্ছম-৩ ৩৩ কখনো ঘাটশিলা, কখনো মধুপুর । বাবা যে-বছর মারা যায় সেই বছরই গিয়োছিল হাজারবাগ। মীরার তখন ষোল শেষ হয়েছে। সেবার বাবা বেশ অস্মস্থ হয়ে পড়ছিল, মারও শরীর ভাল যাচ্ছিল না। বাড়াবাঁড় শীত সহ্য হবে না বাবার, বুকের শ্লেম্মা সার্দ বাড়তে পারে- এই ভেবে শীতের শেষে তারা হাজারবাগ গেল। মাস দুই থাকার ইচ্ছে নিয়ে। প্রথম দিকটায় বাবার বেশ উপকার হল, মা নিজেও একটু একট করে ঝরঝরে হয়ে আসছিল। এমন সময় মীরাদের বাঁড়তে কলকাতা থেকে মধ- কাকার ছোট শালা নীলেন্দু এল বেড়াতে । শুধু বেড়াতে নয়, বাবার ব্যবসাব কছ কাগজপত্র মধ্কাকা নীলেন্দুর হাত 'দয়ে পাঠিয়ে 1দয়েছিলেন। নঈলেন্দুকে বাঁড়র ছেলের মতন সমাদরে নেওয়া হল; আলাদা ঘর দেওয়া হল তাকে, মীরার পাশেই । মা-বাবা থাকত একটা ঘরে, অন্য ঘরে মীরা তার দুই ভাই- সন্তু আর অন্তুকে নিয়ে থাকত। সন্তু বেশ বড়ববছর তেরো বয়েস, অন্তু বছর আম্টেক। মীরাদের ঘরের পাশে রান্নাঘরে যাবাব ফাঁকা তাষ্গা- টুকুর ওপারে নীলেন্দূকে থাকতে দেওয়া হল। নীলেন্দুর চেহারা ছল তাজা । গায়ের রঙ যাঁদও কালো তবু ?ছপাঁছপে গড়ন, মাথার চুল সামান্য কোঁকড়ানো, লম্বা ধরনের মুখ, জোড়া ভূর7। মোটা ঠোঁট। চোখের পাতাও মোটা ছিল, পুরোপঃর চোখ খুলতে পারত না যেন, হাসলে তার চোখ আধবোজা হয়ে থাকত, দাঁত ঝকঝক করত । কন্তু নীলেন্দুব ওই ছোট চোখেও ধার ছিল, তীক্ষ ছিল তার দৃন্টি। বাড়তে এসেই নীলেন্দ মা-বাবার স্নেহ-ীবশ্বাসের পান্র হয়ে উঠল। যাদবপুরে পড়ত মেকানক্যাল এাঁঞ্জনিয়ারং। তাসের ম্যাঁজক জানত, মাথা নীচু পা উষ্চু করে খাড়া থাকার ভেলাকও তার জানা 'ছিল। মীরা মোটেই জড়সড় হয়ে থাকার মেয়ে ছিল না তখন। ছেলেবেলায় দাদুর বাড়তে থাকার সময় যতরকম জড়তা জন্মেছল গ্রে স্দ্রীটের বাড়িতে এসে সবই সে ভেঙে ফেলোছিল। কিংবা বলা যায়, বাবার কাছে পাওয়া স্বাধীনতায় সে কোনো দকেই আড়ম্ট ?ছল না। বরং তার কোনো ?িকছুই আটকাত না, কথা বলা, বেড়ানো, গল্প করা, হাসাহাঁস, পা গঁটয়ৈ বসে নীলেন্দুর সঙ্গো ক্যারাম খেলা । নীলেন্দু যাব-যাঁচ্ছ করে মাস খানেক থেকে গেল। ওর মধ্যে জল গাঁড়য়ে গেল অনেকটা । মীরা প্রথমটায় বুঝতে পারোন, তার ভেতরে ক যেন একটা ছটফট করছিল। তার তখন সকাল থেকেই মন টানত নীলেন্দুর দিকে, সারাট' দিন। সুযোগ জুটলেই নীলেন্দু ছিল তার সঞ্গঁ। বিকেলে বেড়াতে বোঁরয়ে ৩৪ সায় থাকত। দুজনে কোনোদিন স্টেশনের প্লাটফর্মের বোণতে বসত, কোনো- দিন ছাইগাদা পর্য্ত হেটে যেত প্লাটফর্ম ধরে, কোনোঁদন মাঠে এসে বসত, পাথর কুড়িয়ে ছুড়ত। একাঁদন মীরাকে চাঁটয়ে দিয়ে পরে হাসাবার জন্যে নীলেন্দ কোমরের কাছে কাতুকৃতু দিয়োছল মাঠের রুক্ষ মাটিতে বাঁসয়েই। সোদন মীরা আশেপাশে আর কাউকে দেখোন, শুধু একটা বাতাস গো-গোঁ করে উড়ছিল। গরম পড়ছে। বসন্ত চলছে তখন। 'তার দু-চার দিন পরেই দোল । মাঁরাদের বাঁড়র পাশেই ছিল এক আশ্রম । 'নারবিলি, শান্ত; পাঁরস্কার পাঁরচ্ছন্ন মন্দির আর চাতাল, ঠাকুরঘর আর গুরূ- নার থাকার ঘর। মা প্রায় সন্ধ্যেতেই আশ্রমে গিয়ে বসে থাকত, গল্পটজ্প করত, পুজোআর্চা দেখত। দোলের দিন আশ্রমেব উতসব। এমাঁনতে আশ্রমে দু-চারজনের বেশী 'লাক থাকে না। চেঞ্জাররাও শরতের শেষে চলে গেছে একে একে । বড় বড় বাঁড়গুলো প্রায় ফাঁকাই পড়ে থাকে। কিন্তু আশ্রমের দোলোৎসবের জন্যে 'শছাকাঁছ থেকে কিছ; বাঙালী এসোঁছল, যারা কিনা আশ্রমের কেউ না কেউ। একট বেলার দিকে মাশ্রমে হোলি খেলা শুর হল। একদিকে পুজো- টুজো চলছে। ভোগ চড়েছে। অন্যাদকে হোল খেলা। বুড়োবাঁড়রা রঙ মাখল, সাদা চুলে আবির টকটক করছে, বাবার গাষের পাঞ্জাঁবতে লাল নীল ফিরোজা রঙ, মুখময় আবর। মার মাথা থেকে পা পযন্ত ভিজে। কয়েকাঁট বউ-মেয়ে ছুটোছাঁট করে রঙ খেলছে। মীরাও ছু শুকনো ছল না। এমন সময় কোথা থেকে একদল ছেলে বে-রে করতে কবতে আশ্রমে ঢুকে পড়ল । হাতে রঙের বালাতি, 'পচাঁকার, পকেট ভারত আবির, হাতের রূমালেও। নীলেন্দু আর মীরা তখন আশ্রমের কুয়োতলার সামনে ছুটোছনটি করে রঙ [দওয়া নেওয়া করছে। ছেলের দল আশ্রমে ঢুকতেই মীরারা থমকে গেল। ওরা আবাব শখ করে খোল করতাল এনেছে। খঞ্জান এনেছে। গান গাইছিল গলা ফাটিয়ে, হোলির গান। আশ্রমের ঠাকুরঘর ঘরে এসেই ছেলেগুলো ডাকাতের মতন তেড়ে যাকে ' সামনে পেল তাকেই ধরল। চোবাতে লাগল রঙে আঁবরে ধুলোয় পারার গণুড়োয়। ভূত করে ছাড়তে লাগল। একটা পাতলা চেহারার ছেলে, তামাটে রঙ, বড় বড় চুল, ফিনাফনে ঠোঁট-সর্বাঙজ্গে কোথাও সাদা বলে কিছু নেই, রঙে রঙে 'বাঁচন্র, কোথা থেকে মীরাকে এসে ধরে ফেলল। তারপর কিছ; বুঝতে না 'দয়েই বালাতর শেষ রঙটুকু তার মাথায় ঢেলে 'দিল। মীরা কিছু দেখতে পাচ্ছিল না। চোখ খোলার আগেই শব্দ শনল। নীলেন্দু ছুটে এসে ছেলেটার হাত থেকে বালতি কেড়ে নিয়ে মাথায় মেরেছে। একেবারে আশ্রমের নাঁড় গবছানো রাস্তায় পড়ে গেল ছেলেটা । ৩৫ নীলেন্দু সোঁদন অন্য ছেলেদের হাতে মার' খেয়ে মরত। বড়রা ছুটে এসে বাঁচাল তাকে। মাথায় রন্তু ?নয়ে ছেলেটা গেল হাসপাতালে । আর এমনই কপাল, সেই দিনই সন্ধ্যের দিকে মীরাকেও হাসপাতালে যেতে হল। বাড়তে কেউ ছিল না। মা-বাবা আশ্রমের কীর্তন শুনতে [গয়েছে। নীলেন্দু তাকে এমন একটা অবস্থায় ফেলোছল যে, মীরা একটা আধ-ভাঙা জানলার কাচে হাত রেখে নিজেকে ছাড়াবার চেস্টা করাঁছল। আধ- ভাঙা কাচ ঝনঝন করে ভেঙে বাগানে পড়ল, তলার অর্ধেকটায় মীরার হাত গেল কেটে। কী রন্ত, থামে না। আশ্রম থেকে ছুটে এল সবাই। মীরা প্রায় অজ্ঞান। ওই অবস্থায় তাকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটল লোকে। পরের দিন অনেকটা বেলায় মীরাকে আবার 'নয়ে যেতে হল হাসপাতালে । চুইয়ে চুইয়ে রন্তু পড়ছে, ব্যান্ডেজ ভিজে গেছে। হাসপাতালে ছেলোটকে নতুন করে দেখল মীরা । মাথার ক্ষত দেখাতে এসেছে। যাঁদও তার মাথায় পাট্র বাঁধা । ছেলোট মনরাকে দেখে কিছু বলল না। ম্লান একট হাসল। নীলেন্দু আর থাকল না। দোলের পরের দিনই পালাল। চোরের মতন। হাত নিয়ে মীরা বিছানায় পড়ে থাকল দশ পনেরোটা দিন। সেই ছেলোটর কথা তার মনে পড়ত। কিন্তু তাকে আর কোনোঁদন দেখতে পেল না। কাঁলং বেলের আওয়াজ পেল মীরা । প্রায় যেন ঘুঁময়ে পড়োছল। তন্ময় হয়ে গিয়েছিল। বিশ্রী লাগল আওয়াজটা। উঠতে ইচ্ছে হল না। বিরক্ত লাগল। রাধা নয়। রাধা এভাবে বেল বাজায় না। নীচের ফ্ল্যাটের কেউ? পাড়ার কোনো বউ মেয়ে? আবার বেল বাজাতেই মীরা বিরন্ত মুখে উঠল। শেষ শীতের দুপুর, এখনও সরে যায়ান। অগোছালো শাঁড়: আঁচলটা আলগা করে কাঁধে ফেলে মীরা দরজা খুলতে গেল। | চমঞ্চে উঠোছল যেন মীরা। অবাক। বিশ্বাস হয়েও যেন ব*বাস হাচ্ছল না। সুরপাঁতি দরজার কাছে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে দেখে মীরা সরে গেল। ঘরে এল সুরপাতি। “আপাঁন 2” মরা চোখের পাতা ফেলতে পারাঁছল না। সুরপাঁত বলল. “আবার ফিরে এলাম ।” তত মীরা বলতে যাচ্ছিল, কেন এলেন? বলতে পাবল না। সরপাঁতকে রুক্ষ, শুকনো, রোদে পোড়া, পারশ্রান্ত দেখাচ্ছিল। চোখে নুখে সামান্য ঘাম। সুরপাঁতি নিজেই বলল, “বুকটায় বড় ব্যথা করছিল। "সফরে এলাম। এক গ্লাস জল খাওয়ান।” মীরা দেখল, সুরপাঁত দরজাটা বন্ধ করে 'দিচ্ছে। ৩৭ পাঁচ সুরপতি এমন ভাবে বসে থাকল যেন তার শরীরের সমস্ত শান্ত নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে। সোফার ওপর সমস্ত পিঠ হোলিয়ে দিয়ে মাথা তুলে ছাদের দকে চোখ করে সে বসে থাকল। হাত পা শাথিল। চোখের পাতাও আধ- বোজা। মীরা সুরপাঁতকে জল এনে দিয়েছিল আগেই, পিপাসা মেটোন সুরপাঁতির। আবার জল এনে 'িয়েশঘর থেকে চলে গিয়োছল। একলা বসোঁছল সূরপাতি, ঘরের কোনো দক থেকে সরাসার আলো আসছে না, জানলার কাঠের পাললা ভেজানো, পরদাও টেনে দেওয়া। ছায়া জড়ানো, কোথাও, কোথাও কালচে হয়ে আসা এই স্তব্ধ ঘরে সুরপাঁতিকে নিঃসাড় বসে থাকতে দেখলে মনে হবে যেন মানূষটা ঘুমিয়ে পড়েছে । বা সে মৃত। সুরপাঁতির হাত পা নড়ছিল নাং খুব ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস নিচ্ছিল সে. চোখের পাতাও বুজে আসাঁছল। মীরা কাঁরডোরে খাবার টোৌবলের সামনে চুপ, করে বসে ছিল। এই দুপুর ফুরোতে এখনও কিছু দেরী রয়েছে। দুপুরের পর বকেল। বিকেল শেষ হলে সন্ধ্যের মখে প্রমথ আসবে । সব দিন ঠিক সন্ধ্যের মুখে মুখেও প্রমথ আসে না, কাল যেমন এসোঁছল বন্ধুকে নিয়ে। কোনো কোনোঁদন দেরী করেও ফেরে । প্রমথ কখন ফিরবে বলা যায় না। বাঁড়তে মীরা একা । রাধা ঘরের কাজকর্ম সেরে নীচে গিয়েছে, বিকেলের আগে সে-ও ওপরে আসবে না। রাধাকে নীচে থেকে ডেকে আনা যেতে পারে। কিন্তু কেন? অপ্রসন্ন অথচ অসহায় মুখ করে মীরা বসে থাকল । ভাল লাগাঁছল না। স্পম্ট কোনো ভয় নয়, তব্‌ কোথায় যেন কেমন বিপন্ন বোধ করাঁছল, মাঝে মাঝেই তার নিঃশবাস কিছ দীর্ঘ হয়ে উঠছিল। এ ভাবে বসে থাকা খায় না। সূরপাঁতি বাইরের ঘরে, সে ভেতরে খাবার টোবলে বসে। প্রমথকে একটা ফোন করতে পারলে ভাল হত। মীরাদের ফোন নেই। বছর চার পাঁচ ধরে হাঁ করে বসে থেকেও ফোন পাওয়া গেল না। নৃপেনবাবুদের ফোন আছে। নাঁচে গিয়ে মীরা প্রমথকে অফিসে একটা ফোন করতে পারে। বলতে পারে, 'তোমার বন্ধ ফিরে এসেছে।, কিন্তু প্রমথকে এ কথা জাঁনয়ে কোনো লাভ আছে. প্রমথর দৃশ্চিন্তা দূর হবে। ৩৮ মীরা বেশ বুঝতে পারল, প্রমথর দুশ্চিন্তা দূর করার চেয়েও নিজের বিপনতা যেন তাকে আরও বিব্রত করছে। ফ্রিজের দিক থেকে শব্দ হল। মোটরের ঘিসাঘস শব্দ। "মাহ শব্দর দিকে কান পেতে থাকল মীরা । আচমকা কেমন একটা 'বিরান্ত এল, রাগ। স.রপাঁতির জন্যে এত ভয়ের ক আছে? বসার ঘর থেকেও কোনো সাড়া শব্দ আসছে না। মানুষটা করছে কী চুপ করে বসে আছে? দ্বাময়ে পড়েছে? নাকি বুকের ব্যথা সামলাচ্ছে ? একটা অঘটন ঘাঁটয়ে ফেলবে নাক৮ মারার মামা কাগজ পড়তে পড়তে মারা গিয়েছিল। হার্ট আ্যাটাক। মীরা আর বসে থাকতে পারল না। উঠল। সুরপাঁতি কেমন আচ্ছন্নের মতন বসে ছিল। মীরা দরজার কাছাকাছি দাঁড়য়ে থাকল। অপেক্ষা করল সামান্য, বলল, “শবীর খারাপ লাগছে 22 সৃরপাঁতি কথা বলল না প্রথমে । যেন শুনতে পায়ন। কয়েক মুহূর্ত নড়ে চড়ে বসল । তাকাল । “ভাল লাগছে না।” মীরা কিছু ভাবল। “এখনও ব্যথা রয়েছে?” “আছে।” “কী করবেন »” “কছ্‌ না। ভাবনার কিছু নেই। আমার এ-রকম মাঝে মাঝে হয়।” মীরাব মনে হল, ঘরের জানলাগুলো খুলে দেওয়া উাচত। এত ঝাপসা ভা তার ভাল লাগছে না। 'কছু যেন এই ঘরের মধ্যে ্লমশই ভারী হয়ে আসছে। কিছ একটা ঘটে যেতে পারে যে কোনো মৃহর্তেঅথচ কা যে বোঝা যাচ্ছে না-এই রকম লাগাঁছল। জানলা খুলতে যাচ্ছল মীরা। “জানলাগুলো খুলে দিই 2” সূরপাঁতি বলল, “আমার দরকার নেই।” মীরা দাঁড়াল। দন মুহূর্ত ভাবল। “দুপুর শেষ হয়ে এসেছে।” “আম অনেক ঘুরোছ। রোদে রোদে।” “কোথায় চলে গিয়েছিলেন আপনি 2” মীরা জিজ্ঞেস করল এই প্রথম। «আপনার বন্ধু ঘুম থেকে উঠে দেখতে না পেয়ে রাগ করাছিল; দুশ্চিন্তা করেছে।” সুরপাঁত সোজা হয়ে বসল; মীরার দিকে তাকাল। “প্রমথ আজ নক্তেই চমকে যাবে ।” “চমকে যাবে 2+ “আঁফস থেকে ফিরে এসে দেখবে আঁম ঘরে ।” ৩৯ মীরা খুশী হল না। বলল, “আপনারা দুজনে কি চমকে দেবার খেলা খেলছেন 2” সুরপাঁতি হঠাং হাই তুলল। বাঁ হাত মুখের ওপর রাখল। গা ভেঙে যেন ক্লান্তি কাটাল। বলল, “আমরা খেলাছ না, কেউ খেলাচ্ছে।” মীরা হেখ্য়ালটা গায়ে মাখল না। ঠান্ডা গলায় বলল, “এখন কী কর- বেন? স্নান খাওয়া হয়ান তো?” “নান হয়াঁন; কিছ খেয়েছিলাম ।” সূরপাঁতিকে অবসন্ন দেখাচ্ছিল। কালচে। মাথার চুল ধুলো ভরা । চোখ মুখ বসে যাওয়া । মারা বুঝতে পারল না কী বলা যায়! স্নান করতে বলবে? না খেতে? এই মুহূর্তে ক যে খেতে দেওয়া যায় তাও ঠিক করতে পারছিল না। “তা হলে স্নান করবেন 2৮” মীরা জিজ্ঞেস করল। সূরপতি কিছু ভেবে বলল, “করলে হত। অস্বাস্ত লাগছে ।" মীরা আর দাঁড়াবার দরকার মনে করল না। বলল, “এই অবেলায় ঠাণ্ডা জলে স্নান করতে পারবেন 2” সূরপাতি তাকাল। “বোধ হয় আরাম পাব।” মীরা যেন আপাতত বেচে গেল। এই ঘরের ছায়াচ্ছন্ন, ঠান্ডা, অন্ধকার ভাবটা তার পছন্দ হচ্ছিল না। সূরপাঁতিকে এখানে একলা বাঁসয়ে রাখতেও তার ভয় করছিল। স্নান শেষ করে সুরপাঁত আরাম পাঁচ্ছল। অবসাদ এখন আর সর্বাজ্ে পুরু ধুলোর মতন মাখামাথি হয়ে নেই, শরীরের মধ্যে হালকা করে ছাড়য়ে রয়েছে। চোখ সামান্য জ্বালা করাছল। অনেক কাল ধরেই এই জবালা সহ্য করে আসছে সুরপাঁতি তার দৃম্টিশান্ত ক্ষীণ নয়, তবু চোখের তলায় কেন কারণে অকারণে জবালার ভাব আসে সে জানে না। আজ হয়ত অন্য কারণে এসেছে, রোদে রোদে ঘুরে এই ঠাণ্ডা জলে স্নান করে। গা করল না সুরপাঁতি। সকালে যাবার সময় যেভাবে 'বছানাটা ফেলে গিয়োছল সুরপাঁত সেভাবে আর পড়ে নেই; মশার আর কম্বল ঘরের এক কোণে সাঁরয়ে রাখা, 'বছানার ওপর মোটা ধরণের রঙচঙে চাদর পাতা । অন্য সব-__এই ঘরের আর যা কিছু _ যেমন ছিল, তেমনই আছে। ঘরের জানলাগুলো কেউ খুলে 'দয়ে গিয়েছে। স্নান সেরে এসে সূরপাঁত দেখল, কোথাও কোনো আবছায়া নেই, বাইরে দুপুর ফ্ারয়ে বিকেল নামছে। এখনও শেষ মাঘের স্ব্প রোদ, ম্লান আলো পাশের ঘরবাঁড়র মাথা ডিঙিয়ে চলে যায়নি, ছায়াও নেমেছে পথে কোথাও কোথাও গাঢ় হয়ে। বাতাসে ধূলো উড়াছল, সামান্য ধূসরতাও যেন ৪০ চোখে পড়ে। মীরা চায়ের সঙ্গে কিছ 'মান্ট রেখে গিয়োছল। সুরপাঁত 'মান্ট নিল না। চা নিল। সকালে যাবার সময় সুরপতি ভাবোঁন, সে আবার এই ঘরে রে আসবে কেন এল 2 এক-এক সময় মনে হচ্ছে, সুরপাঁত ঠক নিজের ইচ্ছায় আসো, আসার জন্যে তার সচেতন কোনো ব্যাকুলতা ছিল না, কোনো অজ্ঞাত দুর্বোধ্য কৌতূহলই যেন তাকে টেনে এনেছে। আবার এমনও মনে হচ্ছে, নিজেই ফিরে এসেছে সরপাঁতি, নিজেরই আগ্রহে । মানৃষের স্বেচ্ছায় কিছ করা বা আনচ্ছায়_এর মধ্যে কতটুকু পার্থক্য বোঝা যায় না। অন্তত সূরপাঁতি বুঝতে পারছে না-তার ফিরে আসার মধ্যে নিতান্তই আনচ্ছা আছে ি না। তবু, সূরপতি জানে যে, যখন ভোরবেলায় প্রমথর বাঁড় ছেড়ে চেলে গেল তখন তার মধ্যে কেমন এক নিস্পৃহতা ছিল, প্রমথ বা মীরার জন্যে তার কোনো দুশ্চিন্তা ছিল না। কিন্তু পরে, ক্রমশই সুরপাঁতি অনুভব করতে পারল, কী যেন তাকে পেছনে টানছে । বার বার পেছনে টানলে যেন কেমন লাগে, মনে হয়_কোথাও কিছ ফেলে আসা হয়েছে, কিছু যেন হাঁরমে এসৌছ, এমন কিছ? পড়ে থাকল যা বেখে এলাম। সুবপাঁতিব অবশ্য এই ধরনের কথা পুরোপুরি মনে হচ্ছিল না, কিন্তু সে বার বার, থেকে থেকে পেছনের একটা ঢান অনুভব করাছিল। যতবারই সুরপাঁত মাথা ঝেড়ে মন থেকে এই টানটা ফেলে দেবার চেষ্টা করেছে দেখেছে তাব মন কোনো কাজ করছে না, তার সাধ্য হচ্ছে না-পেহুনেব দিকটা ঝেড়ে ফেলা। বরং সুবপপাতিব মনে হল, তার চোখ যেন মাথার পেছন দিকে চলে গেছে, সে সামনের 'দকে এঁগয়ে গেলেও চোখ পেছনে পড়ে আছে। অনর্থক, অকাবণে কয়েক ঘন্টা ঘোরাঘুঁর করে সুরপাঁতি শিয়ালদায় চলে গেল। ব্যারাকপুব ফিরে যাবার ইচ্ছে। স্টেশনে গিয়েও সূরপাঁত প্লাটফর্মে ঢুকল না। িফ্রেশমেন্ট রুমে ঢুকে কছু খেল। তারপর মাথায় হাত রেখে চুপচাপ বসে থাকল। এই সময় তার বুকে ব্যথাটা খুব মৃদুভাবে বার কয়েক এল গেল। অত গা করল না সে। সুরপাঁত ভাবল, এখন আর ব্যারাকপুরে ফিরে গিয়ে কাজ নেই। বরং প্রমথর অফিসে যাওয়া যাক। তাকে কোনো কিছ না জানিয়ে তার বাঁড় থেকে চলে যাওয়াটা অন্যায় হয়েছে। প্রমথর সঙ্গে দেখা করে সুরপাঁতি আউটরাম থেকে বাস নেবে। বাসেই ব্যারাকপুর 'ফিরবে। প্রমথর কাছে যেতে গিয়েও যাওয়া হল না। অন্যমনস্কভাবে সে ভূল ট্রামে উঠল। ট্রামটা হাওড়া যাচ্ছিল। নিজের ভূল খেয়াল হবার পরেও সুর- পাঁত নামল না। তার বুকের তলায় ব্যথাটা বার বার আসা-যাওয়া করছিল। ৪৯ প্রামের জানলা ঘে*ষে মাথা হেলিয়ে চোখ বুজে চুপ করে বসে থাকল। হাওড়ায় পেশছে আবার ফেরার সময় সুরপাঁতি কেমন ঘোরের মধ্যে পড়ল । যেন ভেতর থেকে লুকোনো জবর এসে তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে । মৃদু একটা কাঁপুনি উঠাঁছল হাত পায়ে, মাথা ভার, বুকের ব্যথাটা আরও তলায় স্থির হয়ে বসে আছে। সুরপাঁতি এমন জায়গায় নেমে পড়ল যেখানে স্তূপীকৃত আবজনা জমে আছে। বাতাসে দূগন্ধি, নোঙরা উড়ছে. রাঁশকৃত মাছ। রোদের মধ্যে দিয়ে হাটতে লাগল। কোথায় সে খেয়াল করল না। মীরা ঘরে এসেছিল। এসে দেখল, সুরপাঁতি জানলার কাছে চেয়ার নিয়ে চুপচাপ বসে আছে। কয়েক মূহূর্ত তাঁকয়ে থাকল মীরা । «“আপাঁন কিছু খেলেন না?” মীরা বলল। সহরপাঁত ঘাড় ঘোরাল, দেখল মীরাকে। মাথা নাড়ল। “না চা পখম্নোছি " মীরা যেন ইতস্তত করল, বলল, “আম ভাবাছলাম আপনাকে 'কছু করে দি-_খাওয়,-দাওয়া করেনান।” সুরপতি হাত নাড়ল। মীরা পা থাকল। রাধাকে ডেকে এনেছে মীরা। ময়দা মাথতে বলেছে। | প্রমথ খুব রাগারাগি করেছে?” সুরপাতি জিজ্ঞেস করল। “করাই তো উঁচিত।” একট; চুপচাপ। সুরপাঁত জানলার বাইরে তাকাল। আবার মূখ 'ফাঁরয়ে মীরার দিকে তাকাল। “আম প্রমথর আঁফসে যাব ভেবোঁছলাম খবর দিতে, যাওয়া হল না।” “কোথায় গিয়োছলেন আপান 2" মীরা বসল না। বলল. “সকালে যাবার আগে আমাদের বলে গেলে পারতেন।” “আপনারা ঘুমোচ্ছিলেন, দরজা বন্ধ ছিল ।...ওই মেয়োট-কাজ করা মেয়োটকেও দেখতে পাইনি ।” মীরা অকারণ তর্ক করল না। সূরপাঁতি আবার বসতে বলল মীরাকে। মীরা দাঁড়য়ে থাকল। সামান্য অপেক্ষা করে সূরপাঁতি বলল, “প্রমথ আমাকে কয়েকটা 'দিন এখানে থেকে যেতে বলেছিল। আপাঁন জানেন 2” মীরা কথার জবাব দিল না। প্রমথ তাকে কিছু বলেনি। দু বন্ধু মিলে ৪২ কন কত গল্প হয়েছে, কী কী কথা হয়েছে, মীরা তা জানে না। জানার সুযোগই হয়নি। খাওয়াদাওয়া শেষ করে প্রমথ বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়েছে, নেশার ঘোরে ঘুময়েছে, মীরার সঙ্গে কথা বলার সময় হল কোথায়; আর আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে বন্ধুকে না দেখতে পেয়ে প্রমথর মন-মেজাজই খারাপ হয়ে গেল তাতে কথাটা তুলবে কখন! তা ছাড়া, যে লোক নেই তার থাকার কথা উঠবে কেন! সুরপাঁতি মীরার মুখ দেখাছল। মশরার নাকের ডগার পাতলা হাড় উচ্চ হয়ে রয়েছে, ঠোঁট অল্প চাপা, দাঁতের ধার দেখা যাঁচ্ছল। একটা সাদা শাঁড় পরনে, কালো পাড়, জারর রেখা রয়েছে। গায়ের জামাটা সাদা, মসৃণ । সুরপাঁত বলল, “কাল রাত্রে আমার একটা কথা বার বার মনে পড়াছল।" মীরা তাকাল। তার দৃম্টি অনেকটা তৰক্ষণ, স্থির। “এ-রকম ঘটনা সব সময়েই ঘটে না, জথচ ঘটে-_”"' সবর্পাতি বলল, "আমাদের এীবনটা কোনো ছকে চলে কি চলে না আম জান না। আননক স্মম মনে হয, চলে। কই, আপাঁন বসুন -1” মারা খাটের গানে 1গয়ে বসল। সবপতি মঁরাকে পাঁরপর্ণ চোখে দেখতে লাগল। সাদ। শাঁড়র ০ন্য মীরার মধ্য আরও বয়স্কের ভাব এসেছে, আরও লাবণ্য। “আম যখন কাল প্রমথর অফিসে যাই তখন একেবারে না জেনে যাইনি । আমাদেন এক পুরোনো বন্ধুর কাছে একটা কাজে গিয়েছিলাম! সে আমায় প্রমথর কথা বলল। আঁফসের ঠিকানা দল। প্রমথকে পাব জেনেই আম তার আঁফসে গয়োছলাম। পেলামও।” সুরপাতি একটু থামল, মীরার পায়ের দিবে তাকাল। কাঁপছে না। স্থির হয়ে আছে। মীরা কেমন ধৈধহাীন হয়ে এআঁকিয়ে আছে তার দিকে । সুরপাঁতি আবার বলল, “কিন্তু প্রমথ যখন আমায় এখানে নিয়ে এল- আম কোনোঁদন কল্পনাও কারাঁন আপনাকে দেখতে পাব।” মীরা যেন কেপে গেল। িঃসাড়। পাথরের মতন বসে থাকল । সুরপাঁত নিজের ঠাণ্ডা কপালে হাত রাখল। মুখ নিচু করল। মেঝের সাদাটে মোজাইকের ওপর কালো পাথরের দানাগুলো যেন চোখের সমস্ত কিছু কালো করে দিচ্ছিল। মীরা গলায় শব্দ পাচ্ছল না। বুকের তলায় কাঁপছে। পায়ের তলাটা বড় ঠাণ্ডা লাগল। নিজেকে কোনো রকমে সামলে নিয়ে মীরা অবাক হবাব ভান করল। “আপনি আমায় আগে দেখেছেন 2” সৃরপাঁত মুখ তুলল। ঘন দৃম্টিতে তাকাল মীরার দকে। “দোঁখাঁন 2” ৪৩ মীরা মাথা নাড়ল। “কেমন করে দেখবেন 2” “কে কাকে কখন দেখেছে জোর করে বলা যায় না যেমন, আবার কখনও কখনও কাউকে দেখলে-_” মীরা অসাহষ্ণু হয়ে কথার মধ্যে বাধা দিল। বলল, “আপনার ভুল হতে পারে।” "হতে প্রারত। প্রথমে আই ভেবৌছলাম।...কন্তু পরে দেখলাম ভূল নয়।" মীরা রূঢ় হবার চেষ্টা করল, “আপনাকে আম আগে দেখান।” সুরপাঁত আহত হল না, নরম গলায় বলল, “বোধ হয় লক্ষ্য করেনাঁন। লক্ষ্য করার মতন আমি ছিলাম না।» মীরা ঠোঁট ভাঁজয়ে দাঁতে চেপে ধরল। তার চোখে রাক্ষতা। “কোথায় দেখেছেন আমাকে 2 সূরপাঁতি শান্তভাবে বলল, “আমার ভূল হতে পারত। হল না_-আপনার হাতের ওই কাটা দাগটার জন্য।” মীরা কিছু বলতে পারল না। সে অবাকও হল না। সুরপাঁত তাকে দেখছে। মীরা তাকাল না। যেন কোনো সর্বনাশ রয়েছে সুরপাঁতির দাম্টতে। মীরার সেই স্তব্ধ ভাবটা কয়েক মুহূর্ত পরেই নম্ট হয়ে গেল। আচমকা একটা আক্রোশ কোথা থেকে লাফ মেরে মাথায় এসে বসল । মীরা কিছু বলতে চাইছিল, পারল না। তার ঠোঁট কাঁপতে লাগল । ৪8 ছয় প্রমথ সন্ধ্যের পর পরই আঁফস থেকে ফিরল। সূরপাঁত ছিল বসার ঘরে। দরজা খুলে দিল। সুরপাঁতিকে দেখে প্রমথ অবাক। এরকম সে আশাই কবোঁন। বলল, 'এ করে, তুই 2” সুরপাঁত সকোতুক মুখ করে বলল, “তোকে চমকে দেব বলে-_" ততক্ষণে প্রথম চমকটা ভেঙে গেছে প্রমথর, কৌতৃহল রয়েছে পুরোমান্রায় ; বলল, “তা 'দয়োছিস। কিন্তু তোর ব্যাপার কী* সকালে উধাও, সন্ধ্যেতে হাঁজর *" কথার জবাব না দিয়ে হাসল সুরপাঁত। হাতের ভার লাঘব করে প্রমথ সোফায় বসে পড়ল, টাই আলগা করতে করতে বলল, “তুই আমায় সকালে যা দুশ্চিন্তায় ফেলেছিলি, কাউকে কিছ: না জানিয়ে কেটে পড়াল। ছেলেমানাষ! আম শালা ভেবে মার, হল কী?" প্রমথ টাইটা খুলে ফেলে পাশে রাখল। “আঁফস থেকে ভাবলাম, হাসপাতাল টাসপাতালে ফোন কার, কি জান গাঁড় চাপা পড়ে মরাল নাক?" সুরপতি হাসতে হাসতেই বলল, “আমায় খুব গালাগাল দিয়েছিস সারাঁদন ?" “দেব না! বাঃ!...তুই এক ভদ্রলোকের বাঁড়তে রাত কাটয়ে ভোর বেলাষ চোরের মতন যাঁদ পালাস তবে শালা তোকে কে না গালাগাল দেবে !...আম আবার ন্রীদদবকে ফোন করলাম : বললাম-সুরপাঁতি কলকাতায় এসেছে, কাল আমার বাঁড়তে রাঁত্তরে ছিল-সকালে বেপাত্তা, ব্যারাকপুরে কোথায় থাকে__ পকচ্ছয জান না, হোয়াট টু ডু? দিব কি বলল জানিস?” সুরপতি শোনার জন্যে অপেক্ষা করতে লাগল। পত্রাদব বলল, পৃঁলসে খবর দিতে । বলল, শালাকে স্মাগলার বলে চালিয়ে দে--প্ুীলস ধরে আনবে । তারপর বেটাকে নিয়ে আয় এখানে চাঁদ মুখটা দোঁখ__» বলে প্রমথ হেসে উঠল। তারপর আবার বলল, “সত্যি সরপতি তুই কত খেলাই খেলতে পারিস! কাঁ হয়োছল তোর?” সুরপাঁত বলল, “কছ_ হয়ান। এমাঁন। তোকে আঁফসে য়ে জানাব ভেবোছলাম, পারাঁন। 'কছ মনে কারস না।” ৪ প্রমথ মাথা নেড়ে বলল, “না না, ব্যাপারটা চেওড়াঁম নয়। আজকাল য্য অবস্থা তাতে সবসময়ই ভাবনা হয়।” সুপপাঁত স্বীকার করে নিল। বলল, “এখন যা, তোর ধড়াচুড়ো ছাড় গে যা। পরে বলব।” প্রমথ এক বসে থাকল। আঁফসফেরার ক্লান্ত, মাঁলন্য। পকেট থেকে 1সগারেতর প্যাকেট লাইটার বের করল। সূরপাতিকে দিল, নিজেও 'নল। “কখন এসোছিল তুই 2” “দুপুরে ।৮ “দুপুরেঃ আম চলে যাবার পর? মীরা আমায় আফসে একটা ফোন করে দিলে পারত... 1” সুরপাঁত বলল, “দুপুরে মানে প্রায় বকেলের দিকে ।” 431৮ প্রমথ আরও কয়েকটা টান 'সগারেট খেয়ে উঠে পড়ল। “বোস তাহলে; আম ফ্রেশ হয়ে নি।» ঘরে এসে প্রমথ দেখল, মীরা খোলা আলমারর সামনে দাঁড়য়ে আছে। কোটটা বিছানার ওপর ফেলে 'দয়ে প্রমথ বলল, “সরপাঁত দুপুরে ফিরেছে 2” মীরা কোনো জবাব দিল না। প্রমথ মীরার ঘাড় পিঠ দেখতে পাচ্ছিল, মুখ নয়। মীরা আলমারর দিকে ঝকে রয়েছে। সামান্য কু'জো হল। কিছ খসজছে। “কী বলল ও?” প্রমথ আবার জজ্ঞেস করল। মীবা এবারও জবাব দিল না। জবাব না 'দয়ে সে তার হাতের কাজ সারল। আলমারি বন্ধ করল। প্রমথ কিছু বুঝতে পারাছল না। মনে হল, মীরা অখুশী। এ সব সময় মীবাকে খুশী মূখে দেখতেই প্রমথ অভ্যস্ত। কখনও সখনও হয়ত তাকে অন্য রকম দেখায়। কিন্তু সে অন্য কারণে। “ক হয়েছে?” প্রমথ আবার জিজ্ঞেস করল, এবার কেমন অসাহফ্ণু। মীরা মুখ 'ফাঁরয়ে দাঁড়াল। বলল, “শকছু নয়।” স্লীর গম্ভীর মুখ দেখাছল প্রমথ । এই গাম্ভীর্য সে পছন্দ করে না। ভয়ও করে। সাংসারিক অশান্তি এড়িয়ে থাকার জন্যে প্রমথ সব সময়ই স্ত্রীর বাধ্য থাকাই ভাল মনে করেছে। মীরার ব্যান্তত্ব বেশ না কম তা 'নয়ে প্রমথ মাথা ঘামানো দরকার মনে করে না। হয়ত মীরার বেশন, প্রমথর কম। প্রথম দিয়েছে। বিরোধের মধ্যে বড় একটা যাবার চেম্টা করেনি। দেখেছে, এখানে সে অক্ষম । ৪৬ প্রমথ কোটটা বিছানা থেকে তুলে নিল। হ্যাঙারে ঝাঁলয়ে রাখবে । “তোমার শরীর খারাপ ?” “গাথা ধরেছে”, মীরা বলল। বলেই কিছু যেন মনে পড়ল, বলল, "আজ- কাল আর বাঁড়তে ?ঝ চাকর রেখে লাভ নেই। সব সময় একটা না একটা ছুতো।” প্রমথ খানিকটা স্বাস্ত পেল। রাধাকে নিয়ে কিছ হয়েছে। “ক হল?” প্রমথ জিজ্ঞেস করল। “ক আবার-! রাধা শিবপুরে চলে গেল; তার ভাশুরপো নাকি মরমর 1” প্রমথ হেসে ফেলল। “কাল তো রবে?” “জান না। বলে গেল ওর বোন কাজ করে দেবে। এখন ওর বোনকে ডাকতে নীচে যাও-! প্রমথ স্ত্রীর সঙ্গে রঙ্গ করার চেষ্টা করল, “যাব নাকি 2” মীরা বরন্ত হল। বলল, “তামাশা করতে হবে না। নাই পেলে সব মাথায় ওঠে। রাধাকে যত তোয়াজ কার সে তত আঁদখোতা করে। গ্যাস ফ্ারয়ে গেছে-বললাম দোকানে খবর দিয়ে যাও-বলল, দোকান বন্ধ হয়ে গেছে।” প্রমথ গায়ের জামাটা খুলতে লাগল। ছাড়িয়ে দাও।» “দাও না, তৃঁমই দাও--। একটা নিয়ে এস আগে তারপর ছাঁড়িয়ো। ঝি চাকরের এখন স্বর্গ! প্রমথ স্বাসত অনুভব করাছিল। মীরার মেজাজ খারাপের ব্যাপারটা আলাদা । রাধাকে নিয়ে। মীরা চলে গেল। প্রমথ বেশবাস খুলতে লাগল। সুরপতি ফিরে এসেছে । প্রমথ ভাবে নি, ও আবার ফিরে আসবে । ভালই করেছে এসে । না এলে একটা দুশ্চিন্তা থেকেই যেত কোথায় গেল, কেন গেল, কী হল? আঁফসেও প্রমথ সূরপাঁতর কথা ভেবেছে । এক সহকমাঁকে কথাটা বলতেই সে উলটো গাইল। বলল; 'দেখদন আবার বাঁড়র কিছু 'নয়ে সরে পড়েছে নাঁক! বন্ধূটন্ধুরাও আজকাল 'রলায়েবল হয় না।” কথাটা শুনে প্রমথ ভীষণ চটে গিয়োছল। কী অক্রেশে লোকজন আজকাল কথা বলে, যে কোনো কথা। বাথরুমে যাবার জন্যে তৈরাঁ হচ্ছে প্রমথ, মীরা আবার ঘরে এল । “তোমার বন্ধুর সঙ্গে কথা হয়েছে ?” মীরা নিজেই জিজ্ঞাসা করল। প্রমথ ক্রু হ্যান্ড এক্সারসাইজের মতন মাথার ওপর দু হাত ডীয়ে ডান পাশ বাঁ পাশে হেলে পড়ছিল, পিঠ আর শিরদাঁড়ার টনটনে ভাবটা কাটাবার চেম্টা আর কি। সোজা হয়ে দাঁড়য়ে বলল, “কই, কিছু বলে 'ন। বলাঁছল, আমার আঁফসে 'গয়ে খবর দেবে ভেবৌছল, যেতে পারোন।৮ ৪৭ মীরা শুনল; কথা বলল না। “বকেলে ফিরেছে 2” প্রমথ জিজ্ঞেস করল। ণ্ঘাড় দেখি নি।” “তাই তো বলল-_!” “তবে তাই ।” প্রথম স্ত্রীর এরকম নস্পৃহতার কারণ বুঝতে পারছিল না। “তুম ওর ওপর চটে রয়েছ মনে হচ্ছে ?” “আমি! কেন?” “তখন 'জজ্ঞেস করলাম, কথার কোনো জবাবই দলে না। এখনও...1” মীরা কিছুটা রুক্ষভাবে বলল, “তোমার বন্ধুর খোঁজ খবর তুমি আমার কাছে জানতে চাইছ কেন; আম কেমন করে জানব, কেন উন সকালে কাউকে কিছু না বলে চলে গেলেন ১ আবার ফিরেই বা এলেন কেন? যা জানার তুমিই জানতে পার।” প্রমথ স্ত্রীর মুখের দিকে কয়েক মুহূর্ত তাঁকয়ে থাকল । স্ত্রীর মুখ সে চেনে, আজ তেরো চোদ্দ বছর এই মুখ সে দেখে আসছে, মীরার মুখের প্রতিটি রেখার সক্ষমতা ও স্থ্লতা তার চেনা। কখনও কখনও স্ত্রীর মুখের 'দকে অকিয়ে প্রমথ বিরক্ত হয়, এমন কি ঘৃণাও করে। এখন প্রমথর ঘৃণা হচ্ছিল। রাধা নয়, মীরার রাগের কারণ সুরপাতি। কিন্তু কেন? সকালেও মীরা সন্তুষ্ট ছিল না। প্রমথ সকালের ব্যাপারটাতে গা দেয় নি, কারণ সে শিজেই রান্রের বেচাল অবস্থাটার জন্যে কুশ্ঠিত ছিল, তার ওপর সুরপাঁতর কাউকে কিছু না বলে চলে যাওয়ার অপরাধটাও তাকে বিরত করছিল। মীরা সেই সকাল থেকেই কিন্তু অসন্তুষ্ট এখনও । প্রমথ ক্ষন হল। বলল, “তুম অত চটে যাচ্ছ কেন? এটা একটা সাধারণ ব্যাপার। এমাঁনই জিজ্ঞেস করাছলাম।” মীরা বলল, “না, আমায় করবে না। তুমি যে তোমার বন্ধূকে থাকতে বলেছ তা কি আমায় জিজ্ঞেস করোছলে ? প্রমথ কেমন অবাক হল। অবাক হল-কেননা সুরপাঁতকে থাকতে বলার ব্যাপারটা কথাপ্রসঙ্গে সে বলেছিল মান্র, কোনো কিছু “স্থির করে নয়। সুরপাঁতি ষে থাকবে তাও তার মনে হয় নি। সুরপাঁতও থাকবে বলে নি। যা নিতান্তই মুখের কথা, বন্ধুতে বন্ধুতে হয়েছে গল্পটজ্পর সময়ে- সেটা মীরাকে বলার কোনো দরকার ছিল কী? তা ছাড়া যাকে রাখার কথা-সেই তো সকাল থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল। প্রমথ বলল, “সরপাঁত তো চলেই 'গ্িয়োছল-_1” মীরা রুক্ষভাবে বলল, “আবার ফিরে এসেছে ।” ৪৮ প্রমথ স্ত্রীর মুখে কেমন যেন কাঠিন্য ও নোঙরাম দেখল। কথার জবাব দিল না। বাথরুমে প্রমথ ওয়াশ বোসনের সামনে চুপ করে দাঁড়য়ে থাকল। হাত মুখের সাবান শ্াকয়ে এল। ছোট জানলার ওপারে অন্ধকার। বাথরুমের আলোটা তেমন জোরালো নয়। পায়ের কাছে প্লাঁস্টকের নীল বালাতর মধ্যে মীরার শাঁড় সায়া পড়ে আছে, তোয়ালে ঝুলছে একপাশে, শাওয়ারটা মাথার ওপব ফণার মত দাঁড়য়ে। প্রমথ একটুও খুশী হচ্ছিল না। খুশী হচ্ছিল না কারণ- মীরা সুরপাঁতকে একেবারেই পছন্দ করছে না। কাল এটা বোঝা যায়ান। আজ বোঝা যাচ্ছে। কেন মীবা সুরপাঁতকে অপছন্দ করছে তাও প্রমথ জানে না। এমন হতে পারে, মীরা ভাবছে-সুবপাঁত তার স্বামীর মাথায় কাঠাল ভাঙতে এসেছে । সুর- গাঁতকে দেখলে মনে হয় না যে সে যথেম্ট পয়সা পকেটে 'নয়ে বেচে আছে। খুবই সাধারণ দেখায়, মামু বেশবাশ, কোথাও কোনো চাকাঁচক্য নেই । রাস্তার ফোরঅলা মনে হবার কোনো কারণ না থাকলেও তাকে যে মোটামুটি দীন দেখায় তাতে কোনো সন্দেহ নেই। মীরা ক ভাবছে সুরপাঁত প্রমথর সাহায্য- প্রার্থি৮ সেই জন্যেই পছন্দ করছে নাঃ সুরপাতি যদি সাহাষ্যপ্রার্থা হত-যা সে নয়-তবু স্বামীর বন্ধুকে এমন অবজ্ঞা করা মীরার উঁচত নয়। এ বাড়তে, কংবা অন্য বাঁড়তে- যেখানে প্রমথরা আগে থাকত- যারা এসেছে এবং থেকেছে তারা সকলেই মীবার লোক, প্রমথর নয়। অনেক ভেবেও প্রমথ মনে করতে পাবে না-একবার মা এসে মাস- খানেক তার কাছে ছিল, আর একবার এক ভাগ্নে এসে দিন চার পাঁচ_এ-ছাড়া প্রমথর আর কেউ কোনোঁদন তার বাঁড়তে এসেছে । মা আর কোনোঁদন তার বাড়তে এসেছে । মা আর কোনোঁদন আসবে না- কারণ মা আব নেই। বাবা আগেই গিয়েছিল প্রমথর নিজের বলতে এক বোন ছিল, সেও বছর পাঁচেক হল মারা গেছে ছেলে হতে 'গিয়ে। বয়েসে দ্বিতীয় বাচ্চা হচ্ছিল, কোথায় কি ঘান্ডগোল হয়ে মারা গেল। ভাঁগননপাঁতির সঙ্গে প্রমঘব কোনো সম্পর্ক নেই, থাকেও বহ্‌দূবে। মীরাকে বিয়ে করার পর থেকে প্রমথ দেখেছে, তাদের বাড়তে যারা এসেছে, থেকেছে- এবং এখনও আসে তারা মীরার লোক। মীরার নিজের বলতে দই ভাই, সন্তু শদল্লীতে--ভাল চাকার বাকার করে; অল্তু দাঁক্ষণে*বরে থাকে। ব্যবসাপত্র করে । মারার মাও ছেলের কাছে দক্ষিণেশ্বরে । মীবার মামাতো ভাই- বোন কয়েকজন আছে। তাদের সঙ্গে সম্পর্কও খুব কম- এক রেখাঁদকে বাদ দিলে। রেখাঁদ মীরার প্রায় সমবয়সী, বছর খানেকের বড়। তার স্বামী প্রচ্ছম-5 ৪৯ মাংশ? দারাঁজালঙে রয়েছে । মীরার সঙ্গে হিমাংশৃদের খুব খাতির । রুমাককে দারাজালঙে 'নয়ে যাবার ব্যাপারে ওদেরই হাত বেশী । রেখাঁদরা কলকাতায় এলে তাদের নিজেদের ছন্লছাড়া বাঁড়তে বড় একটা উঠতে চায় না, মীরার কাছেই ওঠে। তা উঠুক- প্রমথর কোনো আপাতত নেই। রেখে দিয়েছে। যেমন নিরঞ্জন বলে এক ছোকরাকে গত বছরই দশ পনেরো দিন রেখোঁছিল মীরা, ছোকরা নাক ডুয়ার্সের কোন চা-বাগানের আাঁসিসট্যান্ট মাযনে- জার। প্রমথ সবে চিকেন পঞ্স থেকে উঠেছে নিরঞ্জন এল। দারাঁজাঁলংঙের জামাইবাবুর চেনাজানা। মীরাকে তখন সব সময়ই টগবগ দেখাত। এ-ছাড়া কম করেও পাঁচ সাত জনকে মনে করতে পারে প্রমথ- নামধাম সমেত, যারা মীরার আমান্তিত, বন্ধুর আয়, মার অমুকের তমুক, মীরার নিজেরই পাঁরচিত। এদের মধ্যে সকলেই যে উষ্চু দরের লোক তাও নয়, সনেমার গল্প লেখে অমরেশ বলে একজনকেও মীরা দু চারাদন রেখোঁছল। প্রমথ এ-সব নিকে কথা বলতে চাইত না। বিয়ের পর থেকেই মীরা বেশ স্বচ্ছন্দে তার পছন্দসই লোককে বাঁড়তে সমাদরে ডাকত এবং রাখত। তার বাপের বাড়তে নাক এসব ছিল। তা থাকুক। শবশরকে প্রমথ দেখে নি; শুনেছে ভদ্রলোক 'দলদাঁরয়া ছিলেন, মারা যাবার পর ব্যবসাও দাঁরয়ায় ডুবল। মা যখন এসে কাছে ছিল মাসখানেক তখন মীরার সঙ্গে প্রমথর কিছ? কথা কাটাকাট হয়েছে। মীরা শাশুড়ীকে পছন্দ করত না। ভাবত, এ-রকম গেংয়ো, দীন, বর্ণপাঁরচয়হশীন একজন মাঁহলাকে শাশুড়ী বলে মেনে নেওয়াও লজ্জার । মা বেচারী দুঃখী মানূষ, শান্তভাবেই সব 'কছ? দেখে নিয়ে একাঁদন নিজের জায়গায় ফিরে গেল। প্রমথর বড় লেগোছিল। কিন্তু এসব কথা ভেবে কি লাভ? প্রমথ জীবনে অনেকবার ঝাঁক ানয়েছে। কখনও কখনও ঝদাক লেগেও গিয়েছে। চাকারতেই যেমন। সে কোনোদিন এতটা প্রত্যাশা করে নি। ভগবান তাকে 'দয়ে দিয়েছেন_সে হাত পেতে নিয়েছে । বিয়েটাও সেই রকম। আঁফিসের এক মুরুব্বি, বড় মুরুব্বি নয়, তবু মুর্ব্বি-দবাকর চ্যাটার্জ_ঝপ করে একাঁদন প্রমথকে বলল, 'জানা* শোনা একটি মেয়ে আছে- খুবই সন্দরী-বিয়ে করবে £ প্রমথ তখন চাকার নিয়ে ব্যাতব্যস্ত; ছোটাছুটি করতে করতে জীবন যাচ্ছে। বিয়ে করার সাধ থাকলেও পান্নী খোঁজার অবসর ছিল না। কথাটা সে ঠাট্রা গহসেবেই 'নয়েোছিল। মীরাকে দেখার পর প্রমথর বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হল না__ ওই মেয়ের সঙ্গে তার বয়ে হতে পারে । কোনো সন্দেহ নেই- তখন সে মীরার পাশে বেমানান ছিল। আবার মনে মনে প্রমথর টান ছিল সুন্দরীর ওপর । তা বলে এতটা স্ল্দরী সে আশা করে নি। ৫০ প্রমথ এখানেও ঝাঁক নিল। বয়ে হয়ে গেল। বিয়ের পর প্রমথ স্তীর কাছেই সব কিছু সমর্পণ করল । তার ব্যন্তিত্বটুকুও। "সটা আর ফিরে পেল না। সাবানের ফেনা শুকিয়ে চড়চড় করে উঠতেই প্রমথ বোসনের কল খুলে দল। জল বেশ ঠান্ডা । বার বার চোখে ঝাপটা দিতে লাগল। সরপাঁত প্রমথর বন্ধু । যাঁদ প্রমথ তাকে আমল্দণ করে থাকে এ-বাঁড়তে থাকার অধিকার তার আছে। মীরা না করতে পারে না। সংসারে যা ?কছ: হবে সবই কি মরার পছন্দে! প্রমথ ঘাড়ের চারপাশে জল দিতে লাগল। সরপাঁতিকে সে রাখবে। $৯ সাত প্রমথ বলল, “তোর ব্যাপারটা এবার বল।” সূরপাঁতি চুপ করেই থাকল। বন্ধুকে সে অনেকক্ষণ থেকেই লক্ষ করছে. আঁফস থেকে বাঁড় ফেরার পর পর প্রমথকে যেমন দেখাচ্ছিল এখন আর তেমন দেখাচ্ছে না। চোখেমুখে কোথাও ময়লার ভাব নেই । "ক্লান্তির স্পম্ট রেখা- গুলিও মুছে গেছে। ঘরোয়া, চিলেঢালা দেখাচ্ছল তাকে। তবু সুরপাঁতির মনে হচ্ছিল, প্রমথর উৎফল্ল্ল এবং উচ্ছ্বাঁসত ভাবটা যেন সামান্য কম। চা খাওয়া হয়ে গিয়েছিল। প্রমথ খাওয়া-দাওয়া ভালবাসে । মীরা আজ স্বামীর জন্যে তেমন করে কিছ করতে পারোন। প্রমথও যেন পছন্দসই কিছ: পেল না, কিছু খেল_কিছু পড়ে থাকল। চা শেষ করে সিগারেট ধরাল প্রমথ, হাত পা ছড়িয়ে দিল তারপর সর- পাঁতকে বলল, “তোর ব্যাপারটা এবার বল?" সুরপাঁত প্রথমে কোনো জবাব দিল না। পরে বলল, “সকালের কথ, বলাছস ?” মাথা নাঁড়য়ে প্রমথ জানাল, সকালের কথাই সে জানতে চাইছে। সুরপাঁত হাঁসর মূখ করল। “ব্যাপার তেমন ছু নয়। ব্যারাকপুছে ফিরে যাব ভেবোঁছলাম। কাল ফেরা হল না। যে বাঁড়তে থাক সে-বাঁড়ব বাঁড় আবার ভাববে-টাববে। আমার একটা কাজও ছিল বাঁড়তে ।" “বাঃ” প্রমথ আঁভযোগের মুখ করে বলল, “বুড়ি ভাববে-! আর তুই কাউকে কিছু না জাঁনয়ে এ-বাঁড় থেকে চলে গেলে আমরা ভাবব না?" সুরপাঁতি অনেকটা ব্রুটি স্বীকারের মতন করে বলল, “তোরা ঘুমোঁচ্ছাল। তোদের কাজ করার মেয়োটিও বাঁড়তে 'ছিল না। কাউকে দেখতে পেলে নিশ্চয় বলে যেতাম, গ্াঁড়টাও ছিল সকালে ।” প্রমথ খুশী হল না। সূরপাতির এ-ধরনের যুত্তি ছেলেমানুষি ছাড়া কিছু নয়। বলল, “তুই কি আমাকে গাধা ভাবিস ?” সুরপতি হাসল। “কেন?” “ভোর বেলায় ছুটতে ছটতে গিয়ে ব্যারাকপুরের ট্রেন ধরা যাঁদ এতই জরুরি হত--তুই ট্রেন ধরাঁতিস। বলাঁব, ট্রেন মিস করেছিস। আরও তো গাঁড় ছিল, তুই গোল না কেন? কেন তুই দুপুর পর্যন্ত কলকাতায় ঘুরে বেড়াল?” ৬২ সৃরপাঁত জানত, স্বাভাবক এই প্রশ্নগুলো প্রমথ তাকে করতেই পারে। -বাব দেবার মতন কছু তার নেই, যা আছে-প্রমথকে তা বলাও যাবে না। শুধু প্রমথকে কেন_নিজেকেও সূরপাঁতি ঠিক মত বোঝাতে পারাছল না, কেন সে -ফরে এসেছে ১ দুচারটে সাজানো গোছানো কথা সূরপাঁতি ঠিক করে রেখে- ছল, প্রমথকে বলতে পারত--, কিন্তু তাতেও যে বন্ধুকে সন্তুষ্ট করা যেত সূরপাঁতির তা মনে হল না। সামান্য চুপ করে থেকে সুরপাতি কুণ্ঠার গলায় বলল, "তোর কাছে মাফ চাইছি। আমার অন্যায় হয়েছে।» প্রমথ সন্তুষ্ট হল না। সুরপাঁতি যেভাবে তার অন্যায় মেনে নিচ্ছে তাতে তাকে খশচিয়ে কিছু জানতেও তার ইচ্ছে হচ্ছিল না। অথচ তার কৌতূহল থাকল। ছাদের দিকে মদখ তুলে বার দুই সগারেটে টান দিল প্রমথ । মুখ পুরোপুরি না নামিয়েই বলল, “তোর কি এখানে থাকতে কোনো অসাবিধে হয়েছিল কাল?” “না”, সংরপাঁতি বলল, মাথা নাড়ল, “না 1” শ্রসথ মুখ নামাল। বন্ধুর দকে তাকাল। চেখে সামান্য দ্বধা। "আম ভাবাছলাম-আমার কালকের ব্যাপারে মীরা হয়ত তোকে কিছু বলেছে। তুই সঙ্জা পেয়ে পালয়ে গিয়োছিস।” সুরপাঁতি এবারও মাথা নাড়ল। “তোর বউ আমায় কিছু বলোনি।” কথাটা প্রমথ ভাল করে শোনবার আগেই আবার বলল, “মীরা মাতলাম- টালামি পছন্দ করে না। দু চারবার আম বেশ বাড়াবাঁড় করে ফেলোছ। দেখোছ. মীরা বেজায় খেপে গেছে । আসলে কোনো বউই বাড়তে এসব হইহস্ৰ সহ্য করতে পারে না-বৃঝাঁল সূরপাঁতি। এ একেবারে মেয়েদের স্বভাব। তানে হাঁন কাল তেমন ছু কারনি। করোছিঃ মাতলাম করোছলাম ?" সুরপাতি হাসিমুখে বলল, “না, একটু বেশী বকবক করাছলি।" ' এ হলে মীরার মেজাজ খারাপ করার কোনো কারণ থাকতে পাবে না।, বলে প্রমথ চুপ করে গেল হঠাৎ। সিগারেটে টান দিল। তারপর একেবাবে আচমকা সরপাঁতিকে জিজ্ঞেস করল, “মীরা তোকে কিছু বলে নি তো” মান তাৰ কোনো ব্যবহারে তুই... সূরপাঁতি মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, “না, না। তুই অকারণ খদুতখত করছিস।” প্রমথ কয়েক মূহত বন্ধুর দিকে তাঁকয়ে থাকল । সূরপাতিকে ক্ষপ্ন অথবা ব্রত দেখাচ্ছে না। খুশী হল প্রমথ । মীরা সরপাঁতিকে নিশ্চয় এমন কিছ বলে নি বা তার ব্যবহারে এমন কিছুই প্রকাশ পায়নি যাতে সুরপাত ক্ষগ্ন হতে পারে। প্রমথ অনেকটা স্বাস্ত পেল। এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তাব খেয়াল 6৩ হল, সূরপাঁত যাঁদ কোনো কারণে ক্ষন হয়ে থাকে-তবে সে আবার এ-বাঁড়তে ফিরে আসবে কেন? ণসগারেটটা ঠোঁটে ঝুলিয়ে প্রমথ এবার আরাম করে বসল, সোফায় প তুলে। বন্ধুর দিকে তাকিয়ে বলল “তোর বুকে ব্যথার কথা কী বলছি তখন ?” সূরপাঁত বাঁ হাতটা বুকের কাছে আলগোছে তুলে আনল । “দু্পহনে বাথাটা হঠাৎ বেড়ে গিয়েছল। এখন ভাল আঁছ।” “তুই কাল বলাছলি হার্টের একটা গোলমাল আছে !” *ডান্ডাররা তাই মনে করে।” প্রমথ সিগারেটের টুকরোটা আযাশট্রের মধ্যে ফেলে দল। বলল, “কল- “্না।" “দেখানো উচিত ছিল। তুই কলকাতায় এসোঁছস দু তিনমাস। এতো দন কী করছিলি 2” সুরপাঁত বলল, হাঁসমুখেই, “গা কারান ।" “করা উচিত ছিল। আফটার অল হার্টের ব্যাপার। ইন ফ্যাক্ট সকালে যখন তুই বেপাত্তা -আমার তো ভয়ই হচ্ছিল, কোথাও শালা মুখ থুবড়ে পড়ে আছিস কিনা ।” সুরপাঁত প্রমথকে এতোক্ষণে সহজ হয়ে আসতে দেখল। প্রমথ তার স্বভাব মতন চনমনে হয়ে আসছে যেন। প্রমথকে লক্ষ করতে করতে সূরপতি হেসে বলল, “একাদন তো পড়তেই হবে ।” প্রমথ শুনল না। কুশন টেনে নিয়ে সোফাৰ একপাশে রাখল, হেলে বসল। «তুই একজন বড় ডান্তার দেখা ।_স্পশ্যালিস্ট।” একটু থামল, “হার্টের ব্যাপার ফেলে রাখা ভাল নয়। দিস ইজ 'সারআস। আমাদের আঁফসেন একজন আ্যাকান্টটেন্ট, হার্ডাল ফি হবে কি হবে না, আঁফসে বসে কাজ করতে করতে হঠাৎ বলল, শরারটা খারাপ লাগছে। লোকে ভাবল, গ্যাসট্যাস হয়েছে, হাতের কাছে যা পেল খাওয়াল, মানট পনেরো 'বিশের মধ্যেই ফাঁনশ। হাসপাতালেও নিয়ে যাওয়া গেল না।” সূরপাঁত শুনাছল কি শুনাছিল না-বোঝা গেল না। প্রমথ বলল, “আমার ডান্তার আছে, মানে ফ্যাঁমাল 'ফাঁজাশয়ান নয়- এক কাঁলগের মামা*বশূর নাম করা কার্ডওলাঁজস্ট, চল তোকে তাঁর কাছে 'নয়ে যাই, যত্ব করে দেখে দেবেন।” নাকের ডগা চুলকে নিল প্রমথ । “আমার এক- বার, বুঝাঁল সূরপাঁত, বুকের কাছটায় চিনচিনে একটা ব্যথা হচ্ছিল। মীরাকে বাল 'ন। কোঁলগের সঙ্গে চলে গেলাম বুক দেখাতে । ভদ্রলোক বেশ যত ৫৪ করে দেখলেন। তারপর ঠাট্রা করে বুকে এক ঘুষ মেরে বললেন--কিস্যু হঙ্প নি মশাই, আপনার হার্ট ডবল ডেকার বাসের চেয়েও তেজ রয়েছে। যান, খান দান ঘমোন- মজায় থাকুন, সিগারেট একটু কম খাবেন_ মাঝে মাঝে চোরা অম্বল হলে কিছু একটা জ্যান্টাঁসড খেয়ে নেবেন। ব্যাস_তারপর থেকে আমি ফ্রি। কিচ্ছু ভাবি না।” সুরপাঁতি এবার দু হাত দু পাশে ছাঁড়য়ে দিয়ে বসল। প্রমথর মুখ আরও স্বাভাবক হয়ে আসছে। তার মনে হল, প্রমথ কথা বলতে ভালবাসে । কথা বলতে এবং নিজের সঙ্গে লুকোচুর না করে 'নজেকে প্রকাশ করতে তার ভাল লাগে। এ-রকম মনে হওয়া সত্তেও সুরপাঁতির সন্দেহ হল, প্রমথ লুকোচুরি চায় না-_অথচ তাকে করতে হয়। “তুই আমার সঙ্গে চল” প্রমথ বলল। “কী হবে” সূরপাতি গায়ে না মেখে বলল, “ডান্তার দেখালেই ভয় আরও বাড়বে ।” “তুই শালা গেয়ো মানুষের মতন কথা বলাছস। ডান্তার দেখাব না-তো [ক একাঁদন মুখ থুবড়ে পড়ে মরাঁব 2” “যাদ কপালে থাকে_ 1” “তাহলে মর।” প্রমথ বেশ নিশ্চিত গলায় বলল। বলে আবার সিগারেট ধরাল একটা। “তোর হার্টের অসুখটা কত দিনের 2” সুরপাঁতি না ভেবেই বলল, “অনেক দিনের ।” "অনেক দিনের? মানে?” সুরপাঁত প্রমথর দিকে তাকাল। প্রমথ তাকে দেখছে । সুরপাঁত বলল, “বেনারস থেকেই ।” সুরপাঁতির এই উদাসীনতা বা অবহেলা প্রমথর পছন্দ হল না। নিতান্ত নর্বোধ না হলে এমন কাজ কেউ করে না। প্রমথ স্বাভাবক উদ্বেগ এবং [কিছুটা আভভাবকের সতককবাণীর মতন করে বলল, “অনেকাদন ধরে তুই ওটা পুষে রেখোঁছিস ? রাখ, পুষে রাখ; ও যে কী কালসাপ তা তো শালা জান না? যখন ছোবল খাব, বুঝার! সাঁত্য সুরপাঁতি, তুই একটা গাড়োল।” সুরপাঁতি কথা বলল না। তার এই ব্যথাটা পুরোনো । কত পুরোনো বোঝা মূশাকিল। কখনও কখনও সরপাঁতি নিজেই বোঝবার চেষ্টা করেছে, ঠিক কখন থেকে এই ব্যথা তার শুরু হয়েছেঃ নান্ট করে সে কিছুই খংজে পায় নি। জনবনের সমস্ত ব্যথার উৎপ্তি কোথায়, কেমন করে_ মানুষ ক তা খুজে পায়? সুরপাঁতর মনে হয়েছে, আমরা অনেক কিছুর উৎসই খণ্জে পাই না। ব্যাধির নয়, বেদনারও নয়; সখেরও নয় দুঃখেরও নয়। এও এক বহস্য। ৫ তব্দ সুরপাঁতি অনেক হাতড়ে হাতড়ে দু একাট স্মাতিকে উদ্ধার করতে পারে যখন এই ধরনের বা এর কাছাকাছি কোনো ব্যথা সে অনুভব করেছে। যেমন রমা মারা যাবার পর, যেমন শ্যামার কাছ থেকে চোরের মতন পালয়ে আসার পর। রমা মারা যাবার দৃশ্য যেন সৃরপাঁতি আচমকা দেখতে পেল । ঘন কুয়াশার মধ্যে কোনো অস্পষ্ট 'কছ দাঁড়য়ে আছে-এইভাবে সেই স্মাত দূরান্তে দাঁড়য়ে থাকল, কয়েক মুহূর্ত তারপর সহসা স্পম্ট হল। সুরপাঁত দেখল, গোধ্লয়ার সেই দোতলা বাড়ির রমার ঘরে সে দাঁড়য়ে আছে। বাইরের দিকে খোলা দরজা, দরজার গা-লাগানো বারান্দার আগাগোড়া লোহার জাল দিয়ে ঘেরা, কতককালের পুরোনো এক অশ্বথ গাছের ডালপালার একটা পাশ বারান্দার গায়ে এসে পড়েছে । শীতকাল । রোদ উঠেছে সবে। রমা তার ঘরে বিছানায় শুয়ে আছে, কোমর পর্য্ত লেপ ঢাকা, বুকের দিকটা আগোছালো, বালিশের একপাশে মাথা সামান্য হেলে রয়েছে। রমার মুখের প্রায় সবটাই নীল দাগে ভরা, দেখলে মনে হয় কালাঁসটে পড়ে আছে। শ্যামা 'বছানার একপাশে বসে, শুকনো অথচ নিস্পৃহ মুখ । একটা মাছ বার বার রমার মুখের কাছে উড়ে বেড়াচ্ছিল। সুরপতি রমার কাছে কোন অপরাধ করে 'ন। রমা সমরপাঁতিকে কোনোঁদন বুঝতে দেয় নি-তার সমস্ত আবরণের মধ্যে সতক্ভাবে সে কিছু রেখোঁছল ষা সরপাঁতর প্রাপ্য। রমা তার গায়ের চামড়া, হাত পা মুখ সর্বাঙ্গ, ক্রমশ নীল হয়ে আসা, আর সেই বর্ণপারবর্তন গোপন রাখার জন্যে এত বেশী সতর্ক ও বিব্রত থাকত যে তার হৃদয় বা মনের 'দকে সাহস করে নজর দিত না। রমা রঙ নিয়ে বাইরে আসা-না হয় আত্মহত্যা করা। রমা শেষেরটা করোছিল, কেননা নিজের শরীরের এই বাইরের বিকৃতি সে সহ্য করতে পারে 'ন। সুরপাঁত জানে না, সৌদন-সেই শীতের সকালে রমার মুখের দিকে লাগল। আচমকা তার কপালে ঘাম জমাছল, *বাসকম্ট হচ্ছিল। তবু সূর- পাঁত রমার মুখের ওপর থেকে মাছটা তাড়াবার জন্যে দু পা এাঁগয়ে যেতেই শ্যামা বলল, 'তুমি বাইরে গিয়ে দাঁড়াও । সুরপাতি শ্যামার দিকে তাকাল। শ্যামা হাত বাঁড়য়ে লেপটা রমার কোমর থেকে টেনে বুকের কাছে ডীঁঠয়ে 'দাচ্ছল। সুরপাঁত বাইরে এসে দাঁড়াল। বারান্দায়। সারা বারান্দা জাল 'দয়ে ঢাকা। অশ্ব গাছে বাতাস লেগেছে শীতের । দু চারটে শুকনো বিবর্ণ পাতা গভ ঝরে পড়ছে। নশচের রাস্তা 'দয়ে একদল তীঁর্থযাত্রী গঞ্গাস্নানে চলেছে। ধাঙালী। এক বাঁড় ?িবস্তোব্র পাঠ করতে করতে এঁগয়ে যাঁচ্ছিল। সূরপাঁত আকাশের দিকে তাকাবার চেষ্টা করল। অনুভব করল তার বুক “যন ব্যথাধ ভেঙে যাচ্ছে। সে-ব্যথা যে কী প্রবল আর গভনর তা প্রকাশ কবা যায় না। সোঁদন সন্ধ্যেবেলায় শ্যামা সুরপাঁতিকে বলল, "তুম কি এখন বেড়াল ছানাব মতন কেদে বেড়াবে 2, সৃরপতি কথাটা বুঝতে পারে নি; অবাক চোখ করে তাকিয়ে থাকল। শ্যামা বলল, শদাঁদর চিতায় জল দেবার সময় তুম অনেক কে'দেছ। আন কেদে লাভ কী! সুরপাঁতি বলল, 'যাঁদ কাঁদ-তৃমি বুঝবে কি করে?' শ্যামা একটু চুপ করে থেকে বলল, “আমি তোমায় না বুঝলে ভগবানও তোমায় বুঝবে না। তোমায় আমি চান। "দাদ বেচে থাকতেও তুমি তান শোবার ঘরের দরজায় 'গয়ে দাঁড়াতে পার নি। সে তোমায় কোনো দিনই দাঁড়াতে [দিত না। নিজেকে ঢেকে ঢেকেই তাব জীবন কেটেছে । যাকগে, শোনো, দাদ তোমায় কাঁধে করে বয়ে কিংবা হাত ধরে টেনে এ-বাঁড়তে আনে নি। আম তোমায় এনেছিলাম। আম ছাড়া তোমার গাতি ছিল না, নেই ।' সুরপাঁত শ্যামার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল। শ্যামা বরাববই বেপবোয়া, কোনো কিছুই গ্রাহ্য করে না। তাব সবটাই যেন আমত্ব দষে গড়া । শ্যামাকে সোৌদন নিষ্ঠুর, স্বার্থপর, হঈন মনে হয়োছল সুরপাঁতর। ভয়ও পেয়োছল। আরও কিছুদিন পরে শ্যামা যৌদন রমাব শৃন্য খাটে, তাব ফাঁকা ঘবে সূরপাঁতর শয্যা পেতে দিল, আর পাশের ঘরে নিজে থাকল_সোঁদন সুরপাঁত বুঝতে পেরেছিল- শ্যামা সুরপাঁতিকে পাকাপাঁকভাবে দিনে নিতে চাইছে। “আম তো বেশ ছিলাম-_' সুবপাঁতি তার আপাতত জানিযোছল। শ্যামা বলল, তুমি এ ঘরেও বেশ থাকবে । মিছিামাঁছ দোতলার তিন চার্ট ঘর জুড়ে থেকে লাভ ক? সপঁড়র সামনেব 'দকেব ওই দেড়খানা ঘব আম ভাড়া দিয়ে দিয়োছ। 'ভাড়া 'দয়ে দয়েছ» কাকে? 'শ্রীবাস্তবকে। ও ওর কাঁবরাজী ওষুধের মালপন্র রাখবে ।, 'আমায় কিছু বললে না+» ণক হত বলে! দিদি চলে গিয়ে আয় তো বাড়ে নি, কমেছে। সংসার চালাতে পয়সা লাগে । বাড়াত ঘর ফেলে রেখে আমাদেব কি লাভ' এ তবু মাসে মাসে শ'খানেক টাকা আসবে । সুরপাঁত কথা বলতে পারে 'ন। মাঁসমা মারা যাবার পর ডিসপেনসারিব অংশ মেয়েরা বেচে দিয়োছল। দুই রোন আব সুরপতির আয়ে সংসার ৫৭ চলত। রমা মারা যাবার পর থাকল দু'জনের আয়। শ্যামার আয় খারাপ [ছিল না, আর সুরপাঁত কাজ করত গণেশজীর ফার্মে। ভাড়া না দিয়েও দু'জনের চলে যাবার কথা । শ্যামা তবু সামনের দিকটা ছেড়ে দিল, 'দয়ে পাত বুঝতে পারাঁছল, শ্যামার সঙ্গে তার সম্পর্ক বিপজ্জনক অবস্থায় এসে দাঁড়য়েছে। সুরপাঁতি নীতবাগিশ নয়, তার কোনো সংস্কারও ছিল না. শ্যামার সঙ্গে স্থায়ীভাবে জীবন কাটানোয় তার বিবেকও যে কাতর হত তাও নয়, কিন্তু শ্যামার সর্বগ্রাসী কর্তৃত্বের কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে সূরপাঁতির ইচ্ছে ছিল না। শ্যামা এমন এক জাতের মেয়ে যার কাছে ভালবাসার অর্থ ছিল আঁধকার। শ্যামা এখানে অকুণ্ঠ ছিল, অসত্কোচ ছিল। সূরপাঁতির সঙ্গে শ্যামার কখনও কখনও কথা কাটাকাটি হয়েছে, রাগারাগি; সুরপাঁত প্রায় সব সময়েই লক্ষ করেছে_ শ্যামাকে সে কখনও মাথা নিচু করাতে পারে নি। নিজেকে 'জাতিয়ে নেবার সব রকম উপায় শ্যামার জানা ছিল, সুরপাঁতি যা জানত না। বেনারস ছেড়ে পালাবার জন্য সুরপাঁত ব্যস্ত হয়ে পড়ল। শ্যামাকে তখন প্রচণ্ড ভয় হত তার, ভয় আর ভাবনা । শ্যামা সবই ধরতে পেরেছিল। একাঁদন সুরপাঁতিকে বলল. "তুমি এখান থেকে পালাতে চাইছ?, সূরপাঁতি বলল, 'এখানে আমার ভাল লাগছে না।' “তোমার ভাল লাগা 'নয়ে আমার মাথা ব্যথা নেই। তুমি ভেব না, তোমার মতন পুরুষমান্ষকে আটকে রাখার ক্ষমতা আমার নেই। ইচ্ছে করলে ₹তামায় আমি ফ্যাসাদে ফেলতে পাঁর। তুমি আমাদের বাঁড়র অনেক নুন খেয়েছ; আমার কাছে পাও ন_এমন কিছু নেই; তব তুমি এত অকৃতজ্ঞ কেমন করে হলে? সূরপতি লুকোচুরি না করেই বলল, “অকৃতজ্ঞ কেন, তুমি আমায় আরও অনেক কিছ বলতে পার। তবে, একটা কথা বাল- আমায় তোমার পুরুষ- মানুষ করে রেখে তোমার আর লাভ হবে না।, এইভাবে কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে শেষে এমন একটা অবস্থায় এসে দাঁড়াল যখন শ্যামা মাথার ঠিক রাখতে পারল না। তার হাতের কাছে কাচের "লাস ছিল, ছুড়ে মারল সুরপাতকে। সুরপাঁত মুখ বাঁচাবার জন্যে ঘাড় ফেরাতেই গ্লাসটা এসে তার মাথার পিছন 1দকে- পাশ ঘে*ষে লাগল। ভেঙে গেল গ্লাসটা, কাচে মাথা কেটে গেল। মারাত্মক কিছ হয়ান, তবু ডিসপেনসারতে গিয়ে মাথায় ওষুধপন্র দিয়ে আসতে হল। রান্লে সামান্য জবর বাড়ল। মাঝ রাত কিংবা শেষ রাতে ঘুম ৮ ভেঙে জবর এবং বেদনার অস্বস্তির মধ্যে সুরপাতি অনুভব করল, শ্যাম। তাকে শিশুর মতন আঁকড়ে শুয়ে আছে। ঘুমোচ্ছে। শ্যামার মুখের গন্ধ, তার মাথার চুলের রুক্ষ মাটি মাঁট ঘ্রাণ, তার হাতেব প্রবল চাপ, বুকের উষ্ণত। অনুভব করার সময় সৃরপাঁতি আবার সেই ব্যথা অনুভব কবতে পারল। বুকের তলায় ি-যেন মূচড়ে উঠাঁছল, কেমন একটা চোরা বাতাস সমস্ত বুকে পাক খেয়ে যাচ্ছে। ক্রমশই সেই ব্যথা তর হল, অসহ্য হয়ে আসতে লাগল। সুরপাঁতি *বাসকম্ট অনুভব করাছিল। রমা মারা যাবার দিন ঠিক এই বাথ। সে অনুভব কবৌছিল, নাঁক এর কাছাকাঁছ কোনো বাথা-তা বোঝা গেল না। সব ব্যথার অনুভবই বোধ হয় এক নয়, কখনো কখনো তব্‌ একই রকম মনে হয়। শ্যামার আলিঙ্গন সরপাঁতিকে কষ্ট 'দাঁচ্ছল। ওর হাত সারযে দেব৭ সময সুরপাঁভ ঘামতে শুরু কবোছিল। তার কপাল, হাত, বুক ভিজে যাঁচ্ছল। শ্যামা বিরন্ত হয়ে আধো-ঘমে বলল, 'কী হচ্ছে” সুবপাঁত বলল, "আমার কম্ট হচ্ছে, আমায় জঁ়িযো না। পরের দন সকালে সুবপাঁও আবার যখন ডাক্তাবখানায গেল তার মখ্ব ক্ষ৩ ভাল করে দিনের আলোয় দেখতে দেখতে ডাণডাববাব বল:লশ, 'স.৫ পাঁতবাবু খুব শান্তাঁশম্ট ছেলে ছিলেন দেখাঁছ। মাথায় এত বড কাটা দাগ কিসের» মাথা ফাটিয়ে ছিলেন নাকি” সুরপাঁতির মনে পড়ল, দোলের দন একটা ছেলে রঙ্রে বালাতি ভাব মাথাম মেবেছিল। কেটে গগয়োছল অনেকটা । কশদন বেশ ভাঁগয়োছিল। প্রমথ অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে ছিল। সুূরপাঁতি বোবার মতন বাস এও ক ভাবছে, তার মাথায় এল না। অপেক্ষা করতে করতে তাব ধৈষনদুঠীত ঘটল । বরন্ত হয়ে বলল, “করে, তোর হল কাঁ?” সূরপাঁত হুশ ফিবে পেল। নিঃ*বাস ফেলে তাকাল প্রমথব দকে। পকছু বলাছলি?” সূরপাঁতি জিগ্যেস করল। প্রমথ বলল, “তুই কি থেকে থেকে মনছ্ছা যাস নাক? বলাছলাম -পুরো?না বুকের ব্যথা বয়ে নিয়ে কতাঁদন বে*চে থাকাঁব১ ও 'জাঁনস পুষে রাখা ভাল নয়। আমার সঙ্গে চল- ভাল ডান্তার দেখিয়ে দি। ব্যাপারটা বোঝা যানে।” সুরপাতি বিষণ্ন মুখে হাসল । বলল, “সব ব্যাপার খোলাখাঁল বুঝতে নেই, রে। তাতে আরও ীবপদ হয়।” বলে সামান্য থেমে সুরপাঁতি আবার বলল, “শোন, আমাকে কাল একবার ব্যারাকপুর যেতেই হবে। দু দিন বাড়ি ফেরা হল না। আমার বুড়ি ভাবছে--আম বোধ হয় মরেই গেলাম । থানা পূলিসও করতে পারে।” ৫৯ “তুই কাল বিকেলেই আবার চলে আয়।” “এখানে 2” “বাঃ এখানে বই কি! এখানে থাকাব। তোকে কণদন থাকতেই হবে।” প্রমথ জোর 'দয়ে বলল। “পুরোনো বন্ধূবান্ধবকে খবর দি। 'ন্রাদবকে কালই ফোন করব। অনেকাঁদন পরে একটা হুল্লোড় হবে, বুঝাঁল সুরপাঁত। আমরা মরে যাচ্ছ, বুড়ো হয়ে যাঁচ্ছ। মাঝে সাঝে একটা নাড়া লাগা চাই। দেখতে চাই, শালা যৌবন কি ভ্যাঁনশ হয়ে গেল, না, এক আধ ফোঁটা আছে এখনও 1” বলে প্রমথ হাসতে লাগল। ৬০ আট মরাকে আজ আর মশার টাঙাতে হল না: সুবপাঁত নিজেই ট্াঙয়ে নিল। চুপচাপ দাঁড়য়ে থাকা দরুম্টিকটু দেখায় বলেই হয়ত মীরা ঝুলন্ত মশারর ধারগুলো বিছানার পাশে গঃজে 'দীচ্ছল। মীরার কাজ শেষ হলে সুরপাঁতি বলল, “কাল সকালে চা খেয়ে আমি বৌরয়ে যাব। দুপুরে ফিরব না।” তাকাল মীরা। সুরপাঁতি কথা' শেষ করে নি: তার মুখে অসমাপ্ত কথাব বরাতি, আবার কিছু বলবে । কোনো রকম ব্যগ্রতা দেখাল না মীরা তবু তার চোখে সামান্য কৌতূহল থাকল। সুরপাঁত বলল, “যাঁদ ফিরে আস, আসতৈ আসতে সন্ধ্যে হয়ে বাবে।” মীরা অন্যাদকে গেখ ফিরিয়ে নিল। সুরপাঁতর চোখে চোখে তাকাতে তার আর ভাল লাগছে না। অস্বাঁস্ত হচ্ছে। বিকেলের পর থেকে এই মানুষ- টার সঙ্গে মেলামেশা করা বা স্বাভাঁবকভাবে, বন্ধুর স্ত্রী হিসেবে, সাধারণ কথাবাতণ বলাও মীরার পক্ষে অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছে। সারাটা সন্ধ্যে মীবা সরপাঁতিকে এাঁড়য়ে গিয়েছে, খাবার টোবলে যতটা সম্ভব তফাত থাকার চেত্টাই করেছে সে। প্রমথ খাবার টোবলে বন্ধুকে মুখোমুখি বাঁসয়ে স্ত্রীর মন গলা- বার চেষ্টা করেছিল। মারা প্রায় চুপচাপ পাঁরবেশন করে গয়েছে, নিতান্ত প্রয়োজনীয় দু চারটে কথা ছাড়া কিছ বলে নি, আগাগোড়া ওদের সামনে বসে বা দাঁড়য়েও থাকে 'ন। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে দু বন্ধু আর বাইরের ঘরে গেল না। সুরপাঁতির জন্যে ছেড়ে দেওয়া ঘরটায় এসে বসল। গল্পগুজব করতে করতে সিগারেট টানাছিল। মীরা তার হাতের কাজকর্ম গাঁছয়ে খেতে বসল। রাধা না থাকায় সব ছু সারতে তার দৌরই হল খাঁনকটা। প্রমথ হাই তুলতে তুলতে শোবাব ঘরে চলে গেল। আরও খানিকটা পরে মীরা সঃরপতির ঘরে এসেছিল। এসে দেখল, চুপচাপ বসে আছে সুরপাতি। মীরা যেন কাজ সারতে এসেছে এইভাবে মশার টাঙাতে যাচ্ছিল, সুরপাঁতি বসোঁছল, নিজেই উঠে গিয়ে সে মশার টেনে নিল। বলল, আমায় দিন- আমি টাঙাচ্ছি। মশার টাঙানো হয়ে গেছে, মীরার আর দাঁড়য়ে থাকার প্রয়োজন নেই। ৬৯ তবু সুরপাঁতির কথায় সে দাঁড়াল। সুরপাঁতি আবার বলল, “প্রমথ শুয়ে পড়েছে 2” মীরা অন্যদকে আঁকিয়েই মাথা হোঁলয়ে দল সামান্য । "বসুন না”, সুরপাঁতি বেতের চেয়ারটা হাত দিয়ে দেখাল। মাথা নাড়ল মীরা । “রাত হয়ে গেছে।” “খুব রাত নয়, একটু বসুন।” সুরপতি যেন মীরাকে বসাবার জন্যে দু পা এীগয়ে বেতের চেয়ারটা এাঁগয়ে দল । বসবে কি বসবে না করে মীরা দাঁড়য়ে থাকল, সুরপাঁতকে এক পলক দেখল। সুরপাঁতি মৃদ গলায় আবার বলল, “বসুন ।” মীরা বসল। যেন বসতে বাধ্য হল। সুরপাঁতর গলায় এমন এক সর ছল যা মামি অনুরোধ নয়। মীরাকে গভীর চোখে দেখল সুরপাতি। বলল, “আমাকে ভাপাঁনি চিনতে পারবেন এমন আশা আম কার না। ৩ব. ঘটনাটা মনে থাকার মতন। তাই না?” সরপাঁতির বলার ধরন থেকে মনে হাচ্ছল, মীরা তাকে চিনেছে এ- ব্যাপারে সে প্রায় নিঃসন্দেহ। মীরা নর্যস্তাপ থাকল। সুরপতি সামান্য সময় নীরব থাকল । তারপর আচমকা বলল, "ওব কী হল 2” মীরা তাকাল। বুঝতে পারল না। তবু তার চোখে কেমন সন্দেহ। “কার 2” “সেই ছেলেটির 2” মীরা চমকাল না, কিন্তু বিহবল বোধ করল। মুখে ঈষৎ 'ববর্ণতা লক্ষ করা গেলেও তার চোখ দুটি হঠাৎ যেন কেমন অস্থির দেখাল। সুরপাতি অপেক্ষা করে বলল, “আমারও ভাল করে তাকে মনে পড়ছে না, কালো চেহারা, ছপাছপে...৮? মীরা কথার মধ্যে বলল, “আমারও মনে পড়ছে না।» সূরপাঁত হাসল না, স্বাভাবিকভাবেই বলল, “আপনাদের বাঁড়তে ছিল 1” মীরা বিরন্ত বোধ করল। ওই মানুষটা তার ওপর জবরদাঁস্ত করার চেষ্টা নরছে নাঁকঃ কা ভেবেছে সে মীরাকে? মুখ তুলে চোখ রুক্ষ করে মীবা বলল, “আমাদের বাঁড়তে অনেকেই ছিল, অুনকেই থাকত, সকলকে আমাব মনে নেই।” সূরপাঁতি শান্তভাবে বলল, “আমার খুব অবাক লাগছে ।” বলে ম্লান করে হাসল, “আমার মাথার জখমের কথা বাদ দন, 'কন্তু ওর জন্যে আপনার হাত যেভাবে কেটোছল তাতে দু একটা আঙুল নম্ট হয়ে যেতে পারত বরা- ৬২ বরের জন্যে। তব, তাকে মনে নেই আপনার 2৮ নিজের মধ্যে শীত লাগার মতন কাঁপন অনুভব করল মীরা । হাত পায়ে কটা দিচ্ছে না, থরথর করে সে কাঁপছে না, অথচ কেমন এক শহরণ, যা অনেকটা চাপা ভয়ের মতন, লুকোনো জবরের সগ্লাঁনির মতন, মীরাকে বিপন্ন করছিল। কয়েক মুহূর্ত ভাবল মীরা, তারপর যেন কোনো কিছ গ্রাহ্য না করেই বলল, “সব কিছ আমি মনে রাখি না। আমার নিজের দোষেই হাত কেটোছিল।” সূরপাঁত '্থর চোখে মীরাকে দেখাঁছিল। আজ যেন মরা প্রসাধনই করে নি, মাথায় খোঁপা নেই, এলো চুল কোনো রকমে জড়ানো পরনে হাতে- ছাপা হালকা রঙের শাঁড়, নীল ফূলের ছাপ সারা গায়ে ছড়ানো, গলা-বুকেব খানিকটা গরদ রঙের সুতর চাদরে ঢাকা। সুরপাঁতি বলল, “ীনজের দোষে কাটে 'নি।” “আপাঁন জানেন 2৮ «আম জাঁন। আমরা সবই জানতাম। অনেক কথা রটোছল। আমনা ৩খন অনেক 'কছু দেখোছ।” মীরা রেগে উঠছিল। রেগে গিয়ে কিছু বলতেও তার আটকাল। মাথা গরম করে কতটা লাভ হবে বুঝতে না পেরে সে সতর্ক হবার চেটা কবন্ধা। চাপা গলায় বলল, “আম আপনার মাথায় মেরোছলাম নাঁক ০” “না, না।” “তা হলে এ কথা কেন তুলছেন ? “আম আপনার সেই ছেলোঁটর কথা 'জজ্ঞেস করাছ।” 'আপনার ছেলোঁট' কথাটা মীরার কান এড়াল না। রুক্ষস্ববে মীবা বলল, “আম জানি না। আমাদের বাড়তে মে আর আসত না, কলকাতা বাঁড়র কথা বলছি।» “ক যেন নাম ছিল?” «“নীলেন্দু।” সুরপতি অন্যমনস্ক চোখে কিছ ভাবল। হয়ত মনে করার চেষ্টা নরল। তারপর বলল, “নামটা তাই হবে। আপনার সঙ্গে খুব ভাব ছিল ওর।" মীরার আর বসে থাকতে সাহস হাচ্ছল না। সুরপাঁত তাকে কোণঠাসা করে ফেলার চেষ্টা করছে। কেন এমন করছে, ক তার উদ্দেশ্--মীরা কিছ,ই বদঝতে পারছে না। তবে একটা জিনিস সে ধরতে পেরেছে, আজ দূপুরেই নিঃসন্দেহ হয়েছে। সুরপাঁতি বন্ধুর মুখ চেয়ে এ বাঁড়তে ফিরে আসে 'ীন, মীবার জন্যেই এসেছে। কিন্তু কেন? মীরা আর বসে থাকতে চাইল না। প্রমথ আজ নেশাটেশা করে নি। ৬৩ হয়ত সে এখনও ঘুমোয় নি- শুয়ে আছে, অপেক্ষা করছে মশরার। কোনো রকম ভূমিকা না করেই মীরা উঠে পড়ল। বলল, “আমি শতে যাচ্ছি। কাল সকাল সকাল উঠব। আপাঁন চা খেয়ে যেতে পারবেন।” আর দাঁড়াল না মীরা, পলকের জন্যে সুরপাঁতিকে একবার দেখে নিয়েই ঘর ছেড়ে চলে গেল। বাতি 'নাবয়ে বিছনায় শোবার আগেই মীরা বুঝতে পেরোছল, প্রমথ ঘুমোয় নি। শহয়ে পড়ে হালকা লেপটা বুকের কাছাকাছ টেনে নিল। মাথার বাঁলিশটা ঠিক করল। চোখ বুজল না। অন্ধকারে শুয়ে শুয়েই বুক এবং কোমরের বাঁধনগুলো সামান্য আলগা করল। ানজের শরীরকে এই বয়সে হালকা রাখা মুশাঁকল। তবু গড়নের জন্যে এবং ধাতের দরুন মীরা খানিকটা হালকা রাখতে পেরেছে । বছর দুয়েক আগে সে বেশ ফূলতে শুরু করেছিল, সঙ্গে সঙ্গে মাস-হসেবের ওষুধ আর অন্য পাঁচটা ব্যাপারে এমন সাবধান হয়ে গেল যে, বাড়াবাঁড় ধরনের মেদ আর জমতে দল না শরীরে । এখনও মীরা তার সেই খতখঃতে ভাবটা বজায় রেখেছে । যতই সাবধানে থাকুক বয়েসের নিজের একটা উলোনো ভাব আছে-সেই টানে মীরার শরীর নিশ্চয় ছু ভারী। অন্য সময় তেমন না হলেও শোবার সময় মীরা যেন সেটা বুঝতে পারে_অনুভব করতে পারে-তার দামী নীচের জামা আর ব্লাউজের আঁট ভাবটা বক চেপে ধরেছে । কোমরের তলার দিকেও এই রকম একটা অস্বাঁস্ত হয়, পেটের গড়ানো জায়গাটা ভারী লাগে। গিলেঢালা না হয়ে সে শুতে পারে না, ঘ্‌ম আসতে চায় না। নিজেকে গ্াছয়ে নিয়ে শুয়ে পড়ে মীরা ছাদের ?দকে চেয়ে থাকল। এই ঘরের একটা সুবিধে- রাস্তার কোনো আলো ঘরে আসে না। আশপাশের বাঁড়রও নয়। বাত নেবালেই সব অন্ধকার। জানলার কাঠের পাল্লা ভেজানো থাকলে একেবারে থমথমে কালো হয়ে যায় পুরো ঘরটাই। প্রমথ জেগোঁছল বলে একটু নড়াচড়া করল। প্রথমে সোজা হল, তার পর মীরার দকে পাশ ফিরল। তার লেপ আলাদা। ভার লেপ ছাড়া প্রমথর আবার আরাম হয় না। মীরা স্বামীকে ভারী লেপ 'দয়েছে, নিজে হালকা লেপ নিয়েছে। এখনকার এই মরা শশতে প্রমথকে ভারী লেপ টেনে শুতে দেখলে মীরার কেমন গা ঘিনঘিন করে। অন্ধকারে অবশ্যই কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না। শুধু মীরা বুঝতে পার গছল, প্রমথ জেগে আছে। শুয়ে থাকতে থাকতে প্রমথ তার একটা হাত আলতো করে স্বীর গায়ে 'ব্রাখল। আঁফস থেকে ফিরে আসার পর মীরাকে সে খুশী দেখে নি। তার ৬৪ গর সারাক্ষণই যখনই সুযোগ এসেছে প্রমথ স্তীকে নজর করে বঝেছে_ মীরার মেজাজ বিগড়ে রয়েছে । খাবার সময় স্ত্রীকে খানিকটা তোয়াজের চেষ্টা করোছল প্রমথ, কোনো লাভ হয় নি। এখন বিছানায় শুয়ে অন্ধকারে সে স্তীকে বোধ হয় প্রসন্ন করার ভূমিকা করাছল। মীরা চুপচাপ থাকল । স্বামীর হাত টেনেও নিল না, সারয়েও দিল না। প্রমথ কিছুক্ষণ স্ত্রীর মনোভাব বোঝবার চেষ্টা করল। মীরার সঙ্গে এত বছর একই শয্যায় শুয়ে থাকতে থাকতে স্ত্রীর প্রায় প্রত্যেকাট নড়াচড়া ও আচরণের মধ্যে থেকে স্ত্রীর মনের গাত সে বুঝতে পারে। মীরা প্রসন্ন থাকলে একরকম, মারা আগ্রহ থাকলে এক রকম, আঁত-ইচ্ছুক বা একেবারেই আনচ্ছুক থাকলে অন্য রকম এবং মীরা অসন্তুষ্ট ও ক্লূদ্ধ' থাকলে একেবারেই অন্য ধরনের আচরণ করে । যেমন, মীরা যোঁদন স্বামীসঞ্গের জন্যে আঁতারন্ত কাতর থাকে সৌঁদন বিছানায় এসে বসার পর অন্ধকারে সে যে গলার হার খুলে বাঁলশের তলায় রাখছে, মাথার খোঁপা খুলে ফেলছে, শব্দ করছে চুঁড়তে, গায়ের বসনটসন শাথল এবং কিছু কিছ: মুন্ত করছে-শুয়ে শুয়ে প্রমথ তা বুঝতে পারে । এসব সময় মীরা শুয়ে পড়ার আগেই তার মাথার বাঁলশটা খাঁনকটা লঘুভাবে, খানিকটা যেন রাগের ভান করে প্রমথর বালিশের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলে, ফেলেই বেশ শব্দ করে_অগোছালোভাদুব স্বামীর গায়ে গায়ে শুয়ে পড়ে। শুয়েই এমন করে প্রমথর গায়ের ওপর তার ভার উরু সমেত পরো পা তুলে দেয় যে প্রমথ সর্বাঙ্গে নারীসঙ্গের তাপ অনুভ্ক করে। আজ অবশ্য মাঁরা স্বামীসঙ্গ চাইছে না। প্রমথ বুঝতে পারছিল, বেশী রকম বিরন্ত থাকলে মীরা স্বামীর হাত গায়ের ওপর থেকে সাঁরয়ে দিত। অন্তত শব্দ করত 'বরানস্তর_তার পর অন্য- ঈদকে ফিরে শুয়ে পড়ত। আরও একটু অপেক্ষা করে প্রমথ বলল, “রাধা নেই, তোমার ভোগান্তি হল খনব।? মীরা সাড়া দিল না। প্রমথ যেমন মীরাকে ীবছানায় শুয়ে শুয়ে বুঝতে পারে, মীরাও স্বামীকে সেই রকম বোঝে । হয়ত আরও বেশী বোঝে। প্রমথ যে মীরার মন রাখার চেষ্টা করছে, আরও করবে- মীরার বুঝতে বন্দমান্র কম্ট হল না। কিন্তু প্রমথকে 'িয়ে মীরা ভাবাছল না, সুরপাঁতর কথাই ভাবাঁছল। ভাবনা সুরপাতির বলেই মারা এমন' কিছু করাছিল না যাতে স্বামী তাকে বিরন্ত করে। উপেক্ষার মতনই স্বামীর হাত সে গ্রহণ বা বর্জন করল না। দেবে।” প্রমথ ঘরোয়া গলায় বলল। সে বলতে পারত, আমি খবর দিয়ে প্রচ্ছন-৫ ৬৫ দেব। বলল না, কেননা প্রমথ যখন আফস যায় গ্যাসের দোকান খোলে না। মানিক নামের একটা ছেলে আছে পাড়ায়, বেগার খাটে, প্রয়োজনে দু এক টাকা পায়, প্রমথকে খাঁতিরটাঁতর করে। মাঁনককে বলে দলে গ্যাসের দোকানে যাওয়া এবং গ্যাস আনার ব্যবস্থাটা সে করে দিতে পারবে। মীরা তব সাড়াশব্দ করল না। প্রমথ মীরার হাতের আঙুল নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। “সকালের দুধটা রাধার বোনকে আনতে 'দয়ে 1দও”, প্রমথ বলল, যেন মীরার গেরস্থাঁল কাজকর্মের সাবধেগলো সে বলে 'দচ্ছে। মীরা কান করাঁছল না। সুরপাতকে সে এখনও বুঝতে পারছে না। লোকটার মাথায় কী রয়েছে বোঝা মূশীকল। এল, গেল। আবার এল। কাল যাবে; আবার ফিরে আসবে বলেই মনে হচ্ছে মীরার। কেন আসবে : মীরার কাছে কী চায় ও? “তুমি দি ঘমোচ্ছ 2 প্রমথ বলল, সে জানে মীরা ঘুমোয় ?ীন। “না।» “চুপচাপ রয়েছো ?" “এমনি । ঘুম পাচ্ছে।” “দুপুরে আজ শোও নি?” জবাব দিল না মীরা। প্রমথ স্বীকে আরও সোহাগ দেখাবার চেস্টা করছে, হাত ছেড়ে দিয়েছে মীরার, দিয়ে কাঁধের কাছে চাপ 'দচ্ছে। প্রমথর স্পর্শ থেকে মীরা অনুভব করতে পারছিল স্বাভাঁবক কোমলতা প্রকাশের আগ্রহ ছাড়া প্রমথর অন্য 'কছুতে রুচি নেই। অল্পস্সময় চুপচাপ থাকল মীরা । শব্দ করে হাই তুলল। বলল “পরশু দন আম থাকব না।”» “থাকবে না?” “মার কাছে যাব। পরশু শানবার।” প্রমথর মনে পড়ল, শীনবার মীরার দাঁক্ষণে*বর যাবার কথা । মশরার গা ছোট ভাই অন্তু দাক্ষিণে*্বরে থাকে । গ্রে স্ট্রীটের বাঁড় কোন যুগে ছেড়ে, দয়ে ওরা দূচার বছর এখানে ওখানে কাটিয়ে দাক্ষণে*্বরে চলে গেছে। মীরান মার চেম্টায় বাঁড়ঘরও করতে পেরেছে ছোটখাট করে। অন্তু বেশ কাজের ছেলে। সে নাঁক তার বাবার মতন ব্যবসাঁয়ক কাজকর্ম ও বৈষায়ক বদ্ধ পেয়েছে। প্রমথ পছন্দই করে শালাকে। অন্তুর বউ-কজ্পনাও ভাল । দেখতে অপরুপ কিছ; নয়, কিন্তু গুণ মেয়ে; গানটান গেয়ে নাম করেছে, মাঝে মাঝে রোভিয়োতে তার গলা শোনা যায়। অন্তুদের বাচ্চাকাচ্চা হয় নি। একটা গোলমাল রয়েছে কঞ্পনার। বাচ্চা হবার বয়েস পড়ে আছে অনেক; হয়ে ৬৬ যেতেও পারে। মীরার মা যাঁদ নিজের ছোট ছেলের বাচ্চাকাচ্চাকে কাছে সপেত- হয়ত মেয়ের ছেলেকে এভাবে দখল করে রাখত না। “ঝন্টু; একটা বাচ্চাদের সাইকেল চেয়েছিল", প্রমথ বলল, “সাইকেল কাঁধে করে দাঁক্ষিণেশবর যাওয়া ঝামেলার । দেখি, পরে যখন যাব__নিয়ে যাব।” মীরা বল্টুর সাইকেলের জন্যে ব্যস্ত হল না। কথাটা সে অন্য কারণে প্রমঘকে মনে করিয়ে দিতে চাইছিল। মীরা বলল, “আম পরশ দিন সকালের 'দকেই বোরয়ে যাব তুমি আঁফস যাবার পর, রাত্তিরে ফিরতেও পারি, নাও পাঁর। তুমি তো তোমার বন্ধূকে কালই ফিরে আসতে বলেছ!” প্রমথ এবার বুঝতে পারল। তার খেয়ালই ছিল না, শাঁনবার দন মীরার মার কাছে যাবার কথা । সকালে মীরা বলোৌছল। প্রমথ যেতে পারবে না যে তাও জানয়ে 'দিয়েছে। প্রমথ যেন কোনো ভূল করে ফেলেছে এইভাবে বলল, “আমার মনে ছিল ন।।..তা তুমি যাঁদ সকালের 'দকে বোরয়ে যাও রাধা থাকবে ।” “কোথায় রাধা ?” দেখো না, কাল হয়ত এসে পড়তে পারে ।” “যাঁদ না আসে” "যাঁদ না আসে- না আসে-” প্রমথ ভাবতে ভাবতে বলল, “তা হলে 'বপদ। কিন্তু তুমি রাঁত্তরে ফিরবে না কেন?” “মা আসতে দিতে চায় না", মীরা এবার অন্যাদকে পাশ ফিরে গেল, “তুমি ফাবে না। মা বলবে_একলা একলা এতদূর ফিবে যাঁব আবার-_থেকে যা- কাল সকালে যাস।” প্রমথ বলল, “মাকে বলো, বাড়তে রাধা নেই। তুমি সন্ধ্যে নাগ্মাদ ফিরে এস। পারলে ঝন্ট্‌কে নিয়ে এস। সুরপাঁতি একবার দেখুক। আমার একটা ছেলেমেয়েকেও সে দেখে নি।” মীরা বিরন্ত বোধ করল। বলল, “বাজে কথা বলো না তো! তুম নিজে বসে বসে পা নাড়বে_আর আম তোমার বন্ধুকে তোমার ছেলে দেখানোর ভন্যে এতটা পথ বয়ে আনব, আবার ফেরত দয়ে আসব! তোমার শখ থাকে ভুনা নয়ে আস গে যাও?” প্রমথ কিছ বলতে যাঁচ্ছল-মীরা কথা বলতে দিল না। বরং বাগের গলাতেই বলল, সে যদি ফিরতে না পারে একাঁদন প্রমথ কেন তা মেনে নেবে নাঃ এটা নতুন িছ; নয়, এমন অনেক সময়ই হয়েছে-মীরা তার মার কাছে চলে গিয়েছে, রান্নে ফেরোন, প্রমথকে রাধাই দেখাশোনা করেছে, কোনো অসুবিধে তার হয়ান। সূরপাঁত এসে এ-বাড়িতে থাকবে বলে প্রমথর এত ঘ্যানঘ্যান করার দি আছে! মীরার তো ইচ্ছেই নয়, সুরপাতি আসক। ৬৭ এতটা রাত্রে প্রমথ স্তর সঙ্গে কথা কাটাকাটির মধ্যে গেল না। মীরাকে তুষ্ট করতেই চেয়েছিল সে, ফল অন্য রকম হয়ে যাচ্ছে দেখে আর কথা বাড়াল না, সকালের জন্যে ব্যাপারটা তুলে রেখে চোখ ব'জল। মীরা ঘুমলো না। চুপচাপ একইভাবে শয়ে থাকল। রাত বেড়ে যাওয়ায় শত অনুভব করা যাচ্ছে। গলা পর্যন্ত লেপ টেনে পাশ ফিরে মীরা শয়েই থাকল। প্রমথ ঘাঁময়ে পড়েছে । মাঝে মাঝে তার নিঃ*বাসের ভারী শব্দ কানে আসাছল। জীবনে অনেক আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে, আর আশ্চর্য হবার মতন কিছ, ঘটলেই যে মানুষ আকাশ-পাতাল ভাবতে বসে তা নয়। মীরা অন্তত বসব না। সে-স্বভাব তার নয়। তার এই পণ্মান্রশ ছত্রিশ বছরের জীবনে অসংখ্যবার দেখেছে-যা সে কখনও ভাবোন, প্রত্যাশাও করোন তাই ঘটে গেছে। সুর- পাঁতির আবভ্শবে তার আশ্চর্য হবার মতন কোনো কারণ থাকতে পারে না। এমন তো হতেই পারে-এই কলকাতা শহরেই অনেকে আছে যারা ছেলেবেলায় মশরাদের চিনত জানত, আজ এত বছর পরে আবার কোথাও তাদের কারও কারও সঙ্গে মরার দেখা হয়ে গেল! হয়েছে যে তার প্রমাণও মীরার কাছে আহ্ছ। প্রমথর এক আফিসের বন্ধুর বোনের বিয়েতে মীরা তার ছেলেবেলার সঙ্গন চুয়াকে দেখতে পেল, দুজনেই দুজনকে দেখে অবাক। মারাদের তাল- তলার পাশের বাঁড়তে থাকত চুয়ারা। একবার সন্তুর এক বন্ধ মীরাকে 1সনেমা হাউসের মধ্যেই কেমন চমকে দিয়োছল। কাজে কাজেই সুরপাঁতিৰ সঞ্জো দেখা হয়ে যাওয়ায় মীরার সাঁত্য সাঁত্য বিচাঁলত হবার কোনো কারণ থাকতে পারে না। তবু সে বিচালত বোধ করছে! কেন? কাল যখন প্রমথর সঙ্গে সূরপাঁত এ-বাঁড়তে এল মীরা বাস্তাঁবকই তাকে ঘনতে পারোন। স্বামীর বন্ধ বাঁড়তে এসেছে বলে তার অখশী হবার কোনো কারণ ছিল না, সে বন্ধ্দপত্তী হিসেবে প্রমথর পুরনো বন্ধুকে যথাসাধ্য সমাদর দেখাবার চেষ্টাই করোছল। কোনো রকম অস্বাস্ত সে বোধ করোন। এমন দি সূরপাঁত যখন মীরার হাতের কাটা দাগটা প্রথম লক্ষ করল, লক্ষ করে গজজ্ঞেস করল-_ওই দাগটা গকসের 2_তখনও মশা সহজ এবং স্বাভা- বক ছিল। সে বুঝতেই পারেনি সুরপাঁত এই কাটা দাগটার রহস্য জানে। িন্তু কাল রারে, সুরপতির ঘরে যখন মারা মশারি টাঙাতে গেল, তখন সূরপাত আবার যখন হাতের দাগটার কথা তুলল এবং বলে দিল__কাচে কেটে- ছিল হাতটা_-বুড়ো আঙুলটাই উড়ে যেতে পারত-তখন থেকেই মীরার কেমন সন্দেহ হল লোকটার ওপর। কেমন করে ও জানল? কেমন করে 2 কাল রাত্রে মীরার ভাল ঘুম হয়ান। স্বামীর ওপর সে নিশ্চয় খানিকটা ৬৮ বিরন্ত ছিল, বন্ধুকে কাছে পেয়ে একরাশ মদ গিলে বেহায়াপনা করা তার ভাল লাগোন; তার ওপর মীরা যখন শুতে এল-তখন তার মাথায় ওই চিন্তাটা ঢুকে গেছে_সুরপাঁত কে? কেমন করে সে জানল, মীরার হাত কাচে কেট গিয়োছল? তার জীবনের এই ঘটনা কে তাকে জানাল » সুরগাঁতর যে সব গল্প, মানে স্বামীর পুরনো অন্তরঙ্গ বন্ধূদের যে সব গল্পটলপ সে শনেছে-তার সহ্গে মাঁলয়ে মালয়ে সে সুরপাঁতকে খোজ- বার চেষ্টা করল। দু' জনে ঘরে বসে যেসব গল্প করাঁছল কাল-তার কোনো কোনো কথা যা মীরার কানে গেছে তাও খুজে খুজে দেখবার চেষ্টা করল। আব তাব সন্দেহ হল, এই মানুষটাই সেই ছেল যাকে নীলেন্দ আর একট? হলেই হয়ত খুন করে ফেলত। মীঁবা বেশ বুঝতে পারল, বাবার স্বাস্থ্যের জন্যে সপারবারে তারা যখন হাঙ্জাঁববাগে গিয়েছিল তাদের ভাড়াটে বাঁড়র কাছাকাছ সুরপাঁতিরা থাকভ। বাড়টার কী নাম ছিল তা অবশ্য মনে নেই মরাব__তবে 'লক্ষমীনিবাস' কিংবা জন্নাদভবন' এই রকম কিছ একটা ছল। ছোট ধবনেব একতলা বাঁডি, পুবানো ঢব,.বাঁড়র বাইরে সাধাঁসিধে চুনকাম করা। একটা কুয়া ছিল সামনে । অল্প একট; জাযগায় দু-চারটে গাছগাছাল। বাঁড়র কেউ বোধ হয় হাসপাতালে কম্পাউণ্ডার ছিল। মীবা "নিশ্চয় এখানে সুরপাঁতিকে দেখেছে । রাস্তায়, বাজাবে, স্টেশনের স্লাটফর্মে। কিন্তু সেই দেখা না-দেখার মতন। তাতে কোনো কৌতূহল ছিল না, আগ্রহ ছিল না। তা ছাড়া মীরা অন্যকে লক্ষ করার চেয়ে নজেকে লক্ষ কবা- নোতেই ব্যস্ত থাকতো । এই সময় তার জীবনে নীলেন্দ, এসে গেল। নীলেন্দুর সঙ্গে মীরা যে ধরনের ঘোরাফেরা, হাসিগল্প, ঘনিষ্ঠতা শর কবোঁছল তাতে আর কোন ছেলে তাব 'দকে তাকাচ্ছে তা দেখাব বা তাকে নিষে ভাবার কিছ ছিল' না। কিন্তু "সই দোলেব দিন যা ঘটে গেল ভারপর মারা ানজেকে নিয়েও যেমন ছটফট করেছে_সেই রকম ওই ছেলেটির জন্যও তার খারাপ লাগত। "অঘটন ঘটার পরের দন হাসপাতালে সে ছেলোটকে দেখোঁছল, মাথায় বান্ডেজ। তারপব আর দেখোঁন। জহর, জবালা, ব্যথা, হাতে ব্যান্ডেজ নিয়ে শৃষে থাকতে থাকতে এক-এক সময় ছেলেটির কথা তার মনে পড়ত। বেচারী সত্য সাঁত্য কোনো বড় দোষ করোন; ওই দোল খেলার হজুগে না হয় রঙের বালাতব খানিকটা মীরার গায়ে মাথায় ঢেলে 'দিয়োছল-_-তা বলে নীলেন্দু তাকে পশৃূর মতন মারতে ফাবেঃ আর একট; বেকায়দায় লাগলে ছেলেটা হয়ত মরেই যেত। এমন খনে রাগ মানুষেব থাকা উচিত নয়। কবে, কোন যুগে ঘটে গেছে তা মনে রাখা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। ৬৯ মীরারও মনে ছিল না। জাবনে অনেক কিছ চাপা পড়ে যায়, যা পুরনো তা তলায় জমতে জমতে কখন যেন এত গভনরে হাঁরয়ে যায়-যা আর উদ্ধার করা যায় না। মীরা তার সদ্য যৌবনের এই ঘটনা_-যখন তার মধ্যে চণ্চলতা ছিল, কোতৃহল ও লোভ ছিল,._যৌবনের বিশৃঙ্খলতা ছিল তার কথা ভুলেই [গয়েছিল। কে বলত পারে, যাঁদ না সকালে নীলেন্দু ওই রকম একটা "বিশ্রী ঘটনা ঘটাত__ঙা হলে হয়ত নীলেন্দু সোঁদন মীরার কাছ থেকে তার প্রাপ্য পেয়ে যেত। কিন্তু সকালের ঘটনার পর মীরার মন অন্য রকম হয়ে পড়ে- [ছিল। নলেন্দুকে তার ভাল লাগাঁছল না। নিজেকেই কেমন অপরাধী লাগ- [ছিল। আর এই অবস্থায় নীলেন্দু যখন তাকে জোর করে আধকার করতে চাইছিল--মীরা প্রাণপণে বাধা দিতে িয়োছল। তাতেই তার হাত কাটল কাচের ভাঙা শাসতে। খুবই আশ্চর্যের কথা_সুরপাঁতিই শুধু নয় মাঁরাও সৌদন আহত হয়ে- ছিল। একজন সকালে-_ অন্য জন সন্ধ্যায়। একজন নিছক কৌতুকের খেলা খেলতে গিয়ে অন্যজন নিজেকে রক্ষা করতে গয়ে। অঙ্কের হিসেবে দু' জনের আঘাতকে মেলানো যায় না। অথচ কোথায় যেন মিল আছে। কার্য কারণের সম্পর্ক থেকে যাচ্ছে। সূরপাঁতি এতকাল পরে ফিরে আসবে কে জানত? সে এসেছে। মীরার কাছে তার পাঁরচয় এখন আর অজ্ঞাত নয়। যাও বা সন্দেহ ছিল মীরার, সমস্ত সন্দেহ সুরপাঁত দূর করে দিয়েছে । হ্যাঁএই সেই মানুষ যে কতকাল আগে মীরার জন্যেই আহত হয়োছিল॥ মরার কোনো দোষ ছিল না। নেই। তবু সুরপাঁত কেন তাকে উৎংকঁণ্ঠিত করছে? কেন তাকে বিরন্ত ও ভীত করছে? মীরা নিজের বিচলিত ভাব অনুভব করতে পারলেও বুঝতে পারাছিল না, সূরপতি কেন চলে' গিয়েছিলঃ কেনই বা ফিরে এল? কি জন্যেই লা অতীতকে মনে কাঁরয়ে দল? ৭0 লয় সদরপাঁত জানলাব কাছে বেতের চেয়ার টেনে বসোৌঁছল। কোলের ওপব একটা বই। প্রমথ কোনো কালেই বইটইয়ের তেমন ভন্ত ছিল না। আজও নয়। তবু নিতান্তই সময় কাটাবার জন্যে কিংবা সে যে একেবারেই মূখ্য, মেঠো নয় সেটা প্রমাণ করতে কখনো সখনো দু চারটে বই চৌরাঙ্গপাড়া থেকে কিনে আনে। তার আঁফসের বন্ধূবান্ধবরাও যেসব তাতালো বই পড়ে হাঁস তামাশা করে নিজেদের মধ্যে, হাত বদলাতে বদলাতে তার কোনো কোনোটা প্রমথব কাছে চলে আসে । আঁফস যাবার সময় প্রমথ দূ তিনটে বই বন্ধ্র কাছে ফেলে 'গয়োছল। “মীরা থাকবে না, আমারও 'ফরতে দেরী হবে, আঁফসের একাঁট ছেলের বাবা আসছে ভেলোর থেকে অপারেশনের পর- সে ধরে নিয়ে যাবে, তুই একা একা বোর ছিল করাঁব_ বইগুলো পড়ে থাকল- সময় কাটাস।» দুপুরটা কেটে গেছে সূরপাঁতির। 'িকেলও কাটল। শীত ফারয়ে এসেছে, বসন্তের এই এল-এই এল ভাব, বেলার এই শেষ দিকটা ক্রমশই দীর্ঘ হয়ে আসছে, নয়ত এতোক্ষণে অন্ধকার হয়ে যাবার কথা। সারপাঁত জানলার বাইরে মরা ধূসর আলো দেখাঁছল, কোথাও কাক ডাকছে, অবেলার ডাক, চড়ুইগ্‌লোও ফর ফর করে উড়ে পালিয়ে যাঁচ্ছল। এমন সময় কলিং বেলের শব্দ হল। রাধা রয়েছে বাঁড়তে। কাজকর্ম করছে। সুরপাঁতি উঠল না। একটু পরেই মীরার গলা পেল সুরপাঁত। রাধার সঙ্গে কথা বলছে। ঘড় ঘোরাল সূরপাঁতি। মীরার আজ ফেরার কথা নয়, দক্ষিণেশবর থেকে ফিরবে না-এই রকমই কথা ছিল। তা হলে ফিরে এসেছে! পায়ের শব্দ পেল সরপাঁত। মীরা আসছে। ঘরে এসে দাঁড়াল মীরা । সুরপাঁতকে দেখল। সূরপাঁত ঘুরে বসল। “আপনি ফিরে এলেন ?” মীরা অপ্রাতত হল না; বলল, “আমার ভাই মাকে নিয়ে বেলড় যাচ্ছে। বাঁড় সূদ্ধ সবাই । রাঁত্তরে ফিরবে । আমায় ষেতে বলছিল। কে যায়! ফরে এলাম ।” সূরপাঁত যেন কৌতুকের গলায় বলল, ধধর্মকর্মে আপনার মতি নেই 2” ০৯ “ধর্মকর্ম! ও, আপাঁন বেলুড় মঠের কথা বলছেন? মা-রা মঠে যাচ্ছে না; বেলদড়ে অন্তুর বড়শালা থাকে, তার বড় মেয়েকে দেখতে আসবে ।” সুরপাঁত বুঝতে পারল। প্রমথ আঁফসে বোরয়ে যাবার প্রায় সঙ্গে সেই মরা চলে গ্িয়োছল, আর ফিরল এই সন্ধ্যের মুখে । এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত ছোটাছুট' করে মীরাকে খাঁনকটা শুকনো দেখাচ্ছে। ঠিক শশীতও নেই, বরং দৃপরের দিকটা গরমই লাগে, রোদের তেজও প্রখর হয়েছে, এই সময়টা বাসেট্রামে ঘোরাঘ্ারতে এমাঁনতেই ক্লান্তি আসার কথা। মীরা হয়ত সেই জন্যেই সামান্য ক্লান্ত, মাথার চুল উসকোখসকো, কপালে কানে আলগা চুল জড়িয়ে রয়েছে, মূখে সামান্য ঘাম। তবু মীরাকে গোমড়া, িরন্ত দেখাচ্ছে না, সকালেও যা দেখাঁচ্ছিল। প্রমথ ফেরে নি” সুরপাঁতি বলল। কথার কথা, না বললেও চলত, তবু বলল। মরা বলল, “ফিরতে রাত হবে। মৃদুল বলে এক বন্ধ আছে আঁফসের, তার বাবাকে আনতে যাবে ।” সুরপাঁত মাথা নাড়ল একট; সে শুনেছে। মীরা বলল, “আপাঁন বসন, আমি আসাছ।...চা খেয়েছেন ?” “খেয়োছি। রাধা দিয়েছে ।” মীরা আর কথা বলল না। তার চোখের ভাবে বোঝাল, সে পরে আসছে। সুরপাঁত আবার জানলার দিকে ঘরে বসল। আলো আরও ধূসর হয়ে গিয়েছে, অন্ধকার মিশে যাচ্ছে পাতলা করে, এ-পাড়ায় এখনও সব রাস্তায় পিচ পড়োন, খোয়ার ধুলো মেশানো বাতাসে রুক্ষ গন্ধ, কোথাও একটু গুমেট ভাব উঠছে, আকাশে মেঘ জমেছে কনা বোঝার উপায় নেই, টুকরো আকাশ- টুকু যা চোখে পড়ে তার কোথাও কোন মেঘ নেই, সন্ধ্যের ময়লাটুকুই ধা' জমে আসছে। ব্যারাকপুরে সূরপাঁতর বাঁড়র আশেপাশে পোড়া মাঠের অভাব নেই, গাছপালাও যথেন্ট, ডোবা পুকুর সামনে, কাঁচা নদর্মার পাঁক থেকেও গন্ধও ওঠে। তব্দ সরপতি সেখানে ঘরে বসে' জানলার বাইরে তাকালে আকাশ দেখতে পায়, একটা বিরাট বট হাত পণ্টাশ দূরে, পৃবে একটা শিমূল গাছ। সুরত যে হুট করে দু রাঁত্র বাঁড় ফিরল না তাতে তার বাঁড়উলী বাঁড় তারামণি খুব চটে গিয়েছিল। লেখাপড়া শেখা ভদ্দরলোকের এ কেমন ব্যবহারঃ বাঁড়র ভয় হাচ্ছল, সুরপতি বুঝি রেল লাইনে কাটা পড়েছে। এ লাইনে হরদম মানুষ কাটা পড়ে। ডোঁল প্যাসেঞ্জাঁরর এই বপদ। যতক্ষণ না ঘরের মানুষ ঘরে ফিরে আসছে ততক্ষণ বাঁড়র লোকের শান্তি নেই। বাঁড় গিয়ে হরিপদকে ধরল; তার কেমন আঁস্থর লাগাঁছল। হরিপদ কোনো উপায় ৭২ ধাতলাতে পারল না। এত বড় শহর আর শহরতলতে কে কোথায় হাঁরয়ে যাচ্ছে-সে কেমন করে বলবে । উমাশশনর ছেলে বাবলুর এক রান্তর ইলেক- দ্রকের দোকানেও গেল তারামাণ। বাবল, নিজে পেটে ছুরি খাবার পর থেকে ধরেই নিয়েছে, কে কবে কোথায় কাকে ফাঁসিয়ে 'দচ্ছে_ থানা পুঁলসেও বলতে পারবে না। উমাশশী অবশ্য সান্ত্বনা দিয়ে বলোছল, সূরপাঁতর মতন ফোয়ান মদ্দ মানুষ কি আর সহজেই হারয়ে যাবে! সে আসবে। সুরপাঁত ফিরে গিয়ে তারামাঁণকে নশ্ন্ত করল। বলল, এক পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়াতেই এই বিপদ । সে ছাড়ল না। ব্যরাকপুর থেকে এবার আসবার সময় সূরপাঁতি একটা কিট ব্যাগ গুছিযে এনেছে, তাবামাণকে বলে এসেছে ভাবনা না কবতে, দন কষেক পরে সে ফিরবে। ব্যারাকপুরের চিন্তাটা সরপাঁতর এখন আর নেই। পাঁচ সাত দন প্রমথ বাড়তে থেকে গেলেও কেউ ভাববে না। কল্তু সুরপাঁতি নিজেই জানে না, সে কাঁদন এ-বাড়তে থাকবে। ছায়া ক্মশই গাঢ় হনয় আসতে লাগল, ঘবের দেওয়াল থেকেও যেন অন্ধকার নামছে। মীরার কথাই মনে আসাছল সূরপাঁতর। দক্ষণেশবর থেকে আজ তার ফেরার কথা নয়। সকালেও প্রমথ চায়ের টেবলে মীরাকে বোঝাবার চেণ্টা করছিল। মীরা বোঝে নি। সাধারণ গাহ্স্থ্য সৌজন্যের দক থেকে মীবাব অবশ্য ফিরে আসাই উচিত, িন্তু মীরা সে-সৌজন্য দেখাতে রাজা হয়ান। সুরপাঁত এ-বাঁড়তে রয়েছে এটা স্পম্ট উপেক্ষা করা যায় না বলেই মীরা ওপব ওপব একটা পোশাকী ভদ্রতা বজায় রেখে যাঁচ্ছিল। সূরপাঁতিকে সে পছন্দ করছে না। তার বিন্দমান্র ইচ্ছে নয় সুরপতি এ-বাঁড়তে থাকুক। মীরার আচরণ থেকে সবই স্পম্ট করে বুঝাঁছল সুরপাঁত। আজ দক্ষিণে*বর থেকে না এলে মীরা স্বামীব বন্ধু প্রাত তার উপেক্ষা আরও খোলাখ্াাীল বোঝাতে পারত। মীরা তো তাই ভেবোছল। ঠিকও করোছিল। তাহলে ফিবে এল কৈন, সুরপাঁতি এটাও লক্ষ করেছে, মশরা বাঁড়তে ফিরে এসে এমন ভাবে তাব খোঁজ নিতে এল যেন এটা তার কর্তব্য। স্বামীর বন্ধুর প্রাত- আতাঁথব প্রাত- মীরা কি কর্তব্যপরায়ণ হয়ে উঠল? সুরপাতি মনে মনে অবাক হচ্ছিল । অন্ধকাব হয়ে আসছে দেখে সুরপাঁত উঠে পড়ে বাত জ্বাঁলয়ে দিল। মীরার গলা পাওয়া যাচ্ছে আবার। কথা বলছে রাধার সঙ্গে । কেমন যেন হালকা গলা। সামান্য চণ্চল। আর খানিকটা পর মারা এল। বলল, “চা আনছি। এ ঘরেই বসবেন ৭৩ না, বাইরে 2” এ ঘরে কোনো অস্দীবধে বোধ করাছল না সুরপাঁতি, তবু একই ঘরে প্রায় সারাটা দিন বসে থাকার একঘেয়োৌমর চেয়ে বাইরের ঘরটাই পছন্দ হল; বলল, “বাইরের ঘরেই যাই।” “আসুন। এই ঘরটার জানলাগুলো বরং ভোঁজয়ে দিক রাধা । মশা ঢুকছে।” “আমই দিচ্ছি" লঘ: গলায় সুরপাঁতি বলল। মীরা চলে গেল। সূরপাঁতি জানলাগুলো ভোঁজয়ে দিয়ে তার সগারেট দেশলাইয়ের জন্যে 1বছানার 'দকে তাকাল। বসার ঘরে এসে সূরপাঁতি বসল না, পায়চাঁর করার মতন সামান্য ঘোরা- ফেরা করল। জানলার কাছে 'গয়ে দাঁড়াল, সরে 'ীগয়ে বিষ্ট;পুরী ঘোড়। দেখল, রেডিয়োগ্রামের মাথার ওপর বাঁসয়ে রাখা মোষের শিংয়ের এক-পা- তোলা বকটা হাতে তুলে নিয়ে আবার রেখে দিল। মীরা এল। নিজেই ছোট ট্রের ওপর চা চান দুধ বয়ে নয়ে এসেছে। একটা ছোট প্লেটে কিছু নোনতা "বাঁস্কট। সুরপাঁত বসল। মীরাকে দেখল। মীরা বাইরে থেকে ঘুরে এসে গা ধূয়েছে, চুলটুল পাঁরিজ্কার করে নিয়েছে । শাঁড় জামা পালটে তাকে সতেজ দেখাঁচ্ছিল। মাথায় খোঁপা নেই, লম্বা বেণী ঝুলছে । চোখ মুখ ধবধবে, পাউডার থাকলেও চোখে পড়ছে না, চোখে কাজল, কপালে সবুজ টিপ। কাচ সবুজ শাঁড়র রঙের সঙ্গে মাঁলয়ে টিপ পরেছে। মীরা কোমর নুইয়ে চা ঢালছিল। সরপাঁতি কৌতূহলের সঙ্গে মীরাকে লক্ষ করাঁছল। আজ সকালেও মীরাকে এ-রকম ঘরোয়া দেখায় ?ীন। “নন, চা নিন-” মীরা সুরপাঁতকে চায়ের কাপ এঁগয়ে দল যত্র করে। “বাস্কিট রয়েছে ।” চা নিল স:রপাঁতি। মীরা নিজের চায়ে দুধ চান মেশাতে লাগল । সূরপাঁত কোনো কথা বলল না। মীরাকে গভীর করে দেখাঁছল। শাঁড়র আঁচলটা এমন করে নামানো যে মীরার পুরো হাতই দেখা যাচ্ছে। লম্বা, ভরন্ত হাত; পুষ্ট অথচ মসৃণ। গায়ের লোমকৃপগনলোও ঈষৎ সোনালী রোমে ভরা, মীরার রোম সামান্য ঘন ও দীর্ঘ। সোজা হয়ে বসল মীরা । তাকাল। দুজনে ঠিক মুখোম্দাখ হয়ে বসে নেই, সামান্য পাশ হয়ে বসেছে । মীরা ছোট সোফায়, সুরপাতি বড়টায়। “বাঁস্কট নান”, মরা আবার বলল । সুরপাঁত দুটো "বাঁস্কট ানিল। মীরা চায়ৈর কাপ মুখের কাছে তুলল না, ৭8 বকের কাছে এনে অন্যমনস্ক চোখে মেঝের দিকে তাকিয়ে থাকল । কিছুক্ষণ কেউ কোনো কথা বলল না, সুরপাঁত 'বাঁস্কট মুখে রেখে চাষে টুমূক দিল। তাকাল মীরা । তার চোখের দৃষ্টি হঠাং কেমন সতর্ক হয়ে উঠল। সুরপাঁতকে লক্ষ করতে লাগল সাবধানে । প্রমঘর ফিরতে ফিরতে কত রাত হবেঃ সুরপাঁতি 1জজ্ঞরেস করণ। দ জনে চুপচাপ বসে থাকার অস্বস্তি কাটাবার জন্যেই। “কেমন করে বলব রাত হবে মনে হয়। মৃদ্‌লেব বাবাকে বাঁড় পেশছে দিয়েই কি ফিরবে! গল্পটজ্প করবে ।” সুরপাঁত আস্তে আস্তে চা খেতে লাগল । মীরা যত্র করে ঢা করেছে। এই যত্ব এবং সদালাপের পেছনে মীরার কী উদ্দেশ্য আছে বোঝা যাচ্ছে না। ও কি সুরপাঁতর জন্যে ফিরে এসেছে? আতিথ্যের দায়ত্ব পালন করতে £ নাক অন্য কারণে? “আপনার ছেলের খবর কী১" সূরপাঁতি সামান্য হেসে জন্তেস কক্ল। “ভালই আছে।” “আপনারা গেলে আসতে চায় না৮” “কোথায় চায়! বরং আমাদের দেখলে মাথা খাবাপ হলো যাশ হে লব, ঢাখাকয়ে থাকে ।" সুরপাঁত এবার আরও স্পম্ট করে হাসল। "“এরপব তো আপনাশদও সঙ্গে ওর আর বাঁনবনাও হবে না।” “এখনই হচ্ছে না তো পরে!” সুরপতি নিজের কথা ভাবল। সে পিতৃহন ছিল না। তার বাবা হ্া্া গিয়েছেন সূরপাঁতির কৈশোর-শেষে। বাবা বেচে থাকতেও সুরপাতি কাঝাস কাছে মানুষ, কাকা আর কাঁকমা। মা বাবা অনেকটা দরে থাকতেন। মধ্য- প্রদেশে । ঠাকুমা থাকত কাকার কাছে। সূরপাঁত বাবা-মাকে ভাল কবে চিনতেই পারল না। কাকা-কাকিমাই তার সব ছিল। বাবা মারা যাব।র ৭ম মা কাকার সংসারে এসেছিল। কাকার বাঁড়তে নানা রকম অশান্তি কনে 'বাঁকুড়ায় মার গুরুদেবের আশ্রমে চলে গেল। সেখানেই মারা যায়। মীরা হঠাৎ কথা বলল। “আপনাদের বাঁড়টার কী নাম ছিল?" “বাঁড়? কোন বাঁড়?” «ও! ..ওটা আমাদের বাঁড় নয়। আমার এক আত্মীয়ের বাঁড়। আমরা মাঝে মাঝে বেড়াতে যেতাম। থাকতাম ।” “হাসপাতালের এক কম্পাউন্ডার থাকতেন না ওই বাড়তে 2” ৭৫ একট থেমে হেসে হেসেই আবার বলল, “আপনার তো সবই মনে আছে।" মীরা তাঁকয়ে থাকল। সুরপাঁত তাকে ঠাট্টা করছে নাকি? “সব নেই, একট আধটু আছে--” মীরা বলল, “লোকে বলত কম্পাউণ্ডারের বাঁড়। হাস- পাতালেও দেখোঁছ। দু একবার আমাদের বাঁড়তে এসেছেন। বাবার কাছে।? সুরপাঁত চায়ের কাপ রেখে দিল! “মনে করতে চাইলে অনেক কিছ: মনে পড়ে” সুরপাঁতি হালকা করে বলল, “আমার মনে আছে। আপনার বাবাকেও। ভাল কথা, আপনার মা কেমন আছেন১ ভাইরা?” মীরা বুঝতে পারল সুরপাঁত তাকে আঁবশবাস করছে। রাগ করার কাবণ থাকলেও মীরা রাগ করল না। সে ভেবে দেখেছে, এখানে রাগ করে লাভ নেই। সূরপাঁতির মাতগাঁত সে বুঝতে পারছে না- লোকটাকে নজরে রাহাই ভাল। মরা বলল, “ওরা ভালই আছে। অন্তুকে আপনার মনে আছে 2” স.রপাঁত একটু চুপ করে থেকে বলল, “আপনার দুই ভাই ছিল মনে আছে। তখন দু' জনেই ছোট ছিল। কথাবার্তাও বলেছি। 1কন্তু এখন দেখলে! চিনতে পারব না।” বলে অন্যমনস্কভাবে তাঁকয়ে থাকল। সামান্য সময় কোনো সাড়া দিল না কেউ। শেষে সরপাঁতিই আবার বলল, “আপনাদের বাঁড়র কথা আম প্রমথর মুখে শুনলাম, নয়ত কে অন্তু তাও বুঝতাম লা।" মীরা হাসর ভান করে বলল, “তা হলে একটা কথা বাল?” 'বলন।” বলব কি বলব না'করে অনেকটা কৌতুকের সুরে, খাঁনকটা সচেতনভাবেই মীরা বলল, “শুধু আমাকেই মনে আছে-এ কেমন করে হল 2” সরপাঁত হাসল নাং গম্ভঁরও হল না। মরার চোখে চোখে তাকিয়ে থাকল কয়েক মুহূর্ত। মীরা উজ্জ্বল অথচ সন্দেহের চোখে তাকে দেখছে। প্রশ্নটা তাকে খুশী করেছে, সুরপতি বলল, “স্মৃতি ওই রকমই ।" মীরা বিস্ময়ের চোখ করল। বলল, “ক রকম ?” “কেউ কেউ কোনো কারণে মনে থেকে যায়। কোনো মান্ষ, কোনো ঘটনা । মনকে যা নাড়া দিয়ে যায় তাও মনে থাকে । আপনার জীবনেও এ-রকম নশ্চয় আছে-যা মনে রেখেছেন।” সরপাঁত পকেট হাতড়ে গসগারেট বাব করল। দেশলাই। “তখনকার কথাই ধরুন, আমাকে আপনার মনে নেই বলছিলেন। সেই ছেলোঁট নীলেন্দুর কথা 1কন্তু আপনার মনে আছে। কেন আছে?” মীরা এ-রকম জবাব প্রত্যাশা করোন। চমবাল না, অথচ 'বপন্ন বোধ করল। সুরপাঁত ঘুরে ফিরে নীলেন্দুর কথা কেন তুলছে; অসহায়ের মতন চোখ করে তাকিয়ে থাকল। কা বলবে মাথায় আসছিল না। ঢোঁক গলে মীরা বলল, “আম কন্তু একবারও বাঁলাঁন সোঁদনকার ঘটনাটা আমাব শ৬ মনে নেই, আম বলোৌছলাম-_আপনাকে আমার মনে পড়ছে না।” বলেই যেন আরও [ব*বাসযোগ্য করার জন্যে এক মুহূর্ত থেমে বলল, “আপাঁনই বলদন-আম ক ?কছু জানতাম! দুম করে "বিশ্রী কাণ্ডটা ঘটে গেল। তখনও আমার মুখ বেয়ে রঙ গাঁড়য়ে পড়ছে । চোখে কিছ দেখতে পাচ্ছ না।" সুরপাঁতি ?সগারেটটা ধারয়ে নিল। “ঘটনাটা যত বড় ছিল আম তত বড় ছিলুম না।” মীরা কথা বলল না। মানুষ এক-একটা সময় কেমন 'বিশ্ত্রী ভয় পেয়ে যায়। মীরা সুরপাঁতিকে যেন ভয়ই পাচ্ছে। কেন পাচ্ছে তা সে জানে না। মীরার মনে হল, সরাসাঁর সুরপাঁতিকে কথাটা জিজ্ঞেস করে, আপানি এখানে কেন এসেছেন? কা মনে করে থেকে যাচ্ছেন? মনের এই ব্যাকুলতা মীরা চেপে রাখল । আজ দাঁক্ষণে*বরে মার কাছে যাবার সময়ও মীরা ভেবোছল সে ফিরে আসবে না। প্রমথর ওপর রাগই শুধু নয়, স্বামীর কাছে সে দেখাতে চাইছিল__সুরপাঁতিকে বাড়িতে রাখাব জন্যে সে মোটেই সন্তুষ্ট নয়। স্বামীর বন্ধু বলেই মীরাকে সর্কক্ষণ তটস্থ থাকতে হবে নাক? দাক্ষণেশ্বর পেশছে মীরার মন কিন্তু জেদী থাকল না। মীরা যাঁদ বাঁড় না ফেরে তা হলে আরও কাঁ হতে পারে ধারণা করতে আতঙ্ক হল । প্রমথকে মোটেই বিশ্বাস নেই তার। বউ বাঁড় নেই দেখে বন্ধুকে নিয়ে মদ 'গিলবে। এমনিতেই যার প্রাণের কথা কলের জলের মতন মুখ খুললেই গাঁড়য়ে পড়ে _মদ খেলে তার কত যে প্রাণের কথা পুরোনো বন্ধুর কাছে উথলে পড়বে তার কি শেষ আছে। মরা জানে প্রমথর কোথায় কোথায় কোন ব্যথা লাঁকয়ে আছে। সমস্ত ব্যথাই তার-স্ত্রীর প্রাত আঁভমান নয়; আরও চাপা ব্যথা আছে যা প্রমথ প্রকাশ করে না। পুরোনো বন্ধুকে ফাঁকা বাড়তে পেয়ে মদেব ঝোকে যাঁদ সব বলতে শুরু করে প্রমথ সেটা যে কত বিশ্রী হবে মীরাই জানে । তা ছাড়া এমনও হতে পারে_ বন্ধুর দুঃখে গলে গিয়ে কিংবা শয়তান করে সুরপাঁত প্রমথকে মীরার সেই নীলেন্দুর ব্যাপারটা বলে দিতে পারে। মীরা দাঁক্ষণেশ্বরে যাবার সময়, সেখানে পেশছে_এই সব এলোমেলো কথা ভাবতে ভাবতে রীতিমত আঁস্থর হয়ে পড়োছল। মার সংগ দেখা করার ব্যাপারটা ছিল মামীলঃ ওই একট খোঁজ খবর করা, ঝল্টুকে দেখে আসা, অন্তু বাঁড় থাকলে' তার আর তার বউয়ের সঙ্গে সামান্য গল্পটল্প করা। নীরা কোনো প্রয়োজনের জন্যে মার কাছে যায়ন। ফিরে আসতেও তার আটকাবার কথা নয়। প্রমথর ওপর রাগ করে মীরা দীক্ষণেশবরে থাকার কথা বলেছিল, ভেবে দেখল--থাকার চেয়ে না-থাকা ভাল। থাকলে ক্ষাতিই হতে পারে। ৭৫. আসবার সময় মীরা এটা ঠিকই করে নিয়োছিল, সরপাঁতি কী মতলব 'নয়ে এসেছে তা যখন জানাই যাচ্ছে না-_তখন বোকার মতন আগ বাঁড়য়ে লোকটার সঙ্গে মন কষাকাঁষ করে লাভ নেই। বরং মীরা খাঁনকটা আলগা হবে; আলগা আর চালাক। সরপাঁতি যাঁদ ভেবে থাকে সে বেশী বাঁদ্ধমান, তবে ভূল করেছে। মীরা একটা পরুষমানূষকে বশে আনতে পারবে না? সুরপাতর সিগারেট নিবে গিয়েছিল। আবার জবালাল। মীরা হঠাৎ খুব হালকা হয়ে গেল। হি; দুটো ধীরে ধীরে নাড়াতে লাগল। পিঠ আরও এলয়ে দিল। যেন কত বড় হাঁসর কথা 'জজ্ঞেস করছে-__ এমন গলায় বলল, “আপনার সঙ্গে আম মোটেই ঝগড়া করাঁছ না। যাই গনে করুন আপাঁন, আমার সোদন কোনো দোষ ছিল না।” সুরপাঁতি মীরার চোখে চোখে তাঁকয়ে মাথা নাড়ল। “আম জ্ান-_ আপনার দোষ ছিল না।” “যাঁদ দোষ থাকত-আপনাকে মনে থাকতে পারত হয়ত।” “আমায় মনে না থাকার জন্যে আপনাকে আম দৃষাঁছ না।” "আমার তাই মনে হচ্ছে।” “না না, ওটা ভুল।” মীরা অন্য দিকে চোখ সাঁরয়ে নিল। “তা হলে তো কথাই থাকে না।” সূরপাঁতি কোনো জবাব দিল না। বসে থাকতে থাকতে মারা কোলের দিকে কাপড়টা ঠিক করল। ত্র লম্বা বেণী বকের দিকে টেনে নিল আলগোছে। আড় চোখে বার দুই সুর- পাতর মুখ দেখল। 'আচ্ছা--" মীরা হঠাৎ বলল, “আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে আপন কি বরাবর এ-রকম বাউণ্ডুলে হয়ে কাটাচ্ছেন! আপনার বন্ধুর কাছে শ*নলাম _আপনার স্রী রয়েছেন। আপাঁন ঘর সংসার করেন না?” সমরপাঁত অন্যমনস্ক ছিল। একট যেন অবাক চোখে তাকাল। “আমান ্তী “আছেন তো,” মারা বলল। সূরপাঁত সচেতন হল। মীরার চোখের তলায় কৌতূহল না সতর্কতা, সৈ কি কথার মোড় ঘোরাবার চেষ্টা করছে? সরপাঁত বুঝতে পারল না। বলল, “আমার স্ত্রঁর কথা কে বলল, প্রমথ 2” “আর কে বলবে!" সুরপাঁত মীরার চোখ থেকে চোখ সাঁরয়ে নিল না। কিন্তু তার দাঁন্ট অন্যমনস্ক উদাস হয়ে এল মীরার মুখের ওপর, যেন মীরাকে আড়াল করে বকুলের মূখ ফুটে উঠাঁছল। 'িগারেটটা ফেলে দল সূরপাঁতি, নিজের সঙ্গে ৭৮ নিজেই কথা বলছে' এমন গলায় বলল, “প্রমথ আমায় জিজ্ঞেস করাছল, আম বয়ে করোছ না! বলে ছিলাম-হ্যাঁ। আমার স্ত্রীর কথা সে আর কিছু গানে না।” . মীরা স্বামীর কাছেও ওইট.কু শনেছেঃ সুরপাতির স্তী ছিল। কল্তু সেই স্ত্রী কোথায়, বেচে আছে না মারা গেছে, সংসার নিয়ে জাঁড়য়ে রয়েছে কনা_সে সব সুরপাঁতি কিছু বলোন। “আপাঁন তো বলতে চান না,” মীরা বলল। "আপনার বন্ধু বলে, নিজের কথা আপানি কছুই বলতে চান না।” সুরপাঁত মীরার দিকে আর তাকাচ্ছিল না। বকুলকে ভাবছিল। শ্যামার কাছে যাঁদ সুরপ্পাতি নিজেকে ছেড়ে দত তার ভাগ্যে কী হত সে দোনে। শ্যামাদাস হয়ে থাকতে হত কাশীতে, গোধ য়া বাঁড়তে জীবনটা কেটে যেত। সরপাঁত নিজেকে বাঁচাবার জন্যে বেনারস ছেড়ে পালয়ে গেল একাঁদন। কাশীতে থাকার সময় তার এক বন্ধু জুটেছিল িবিধারীলাল। পাটনায় কাজকারবার করত। সুরপাঁত এসে গারধারীকে ধরল, ছু রোজ- গারপাতি করতে হবে। সরপাঁতির নিজের সামান্য সণয় ছিল, 'গাঁরধারী তাকে কিছু খণ দিল। 'দয়ে রাঁচির দিকে কাণের কারবারে লাগিয়ে দিল। সরপাঁতির ধারণা ছিল না--তার পাঁরশ্রম ক্ষমতা এবং একাগ্রতা এত বেশনী। 'াঠের কারবারে সুরপাঁতি দেখতে দেখতে চমৎকার মাঁনয়ে গেল। বন, জঙ্গল, দদন, কাঠুরে, রেল-ইয়ার্ডে কাঠের স্তূপ মজৃত করা, ওয়াগন বাাঁকং_সুব- পাতি সারা দিন ওই নিয়ে থাকত। এই সময় একাদন বকুলের সঙ্গে তার আলাপ। চামড়াব কারবার হেম মণ্ডলের বোন। বকুলের মধ্যে কেমন একটা বন্যতা ছিল, তার গায়েব রঙ ছিল তামাটে, ডন ছিল সমর্থ পারপুজ্ট। হেম মন্ডলের ভাঙা দর্গর মতন বাঁড়টার ,কাথায় চামড়া সেদ্ধ হচ্ছে, কোথায় কত চামড়া গৃদোম হচ্ছে_-এসব ছিল তার শখদর্পণে। হেম মণ্ডল বেশীর ভাগ সময়টা বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়াত তার “ড়ো আলসোসয়ানের মতন মটরবাইক নিয়ে। মাথায় সোলার হ্যাট, খাঁক জামা আর হাফ প্যান্ট, পায়ে বুট জুতো । চোখে গগলস। গলায় একটা রুপোর ক্রশ ঝূলত। বকুলের সঙ্গে সুরপাঁতির প্রেম-ভালোবাসা হয়ান। একাঁদন হেম মণ্ডল বকুলকে চামড়া সেদ্ধ করার ঘরে পুরে রেখোঁছল যে কারণে সেটা অবশ্য সর- পতি জানে না। কিন্তু যে মুহূর্তে ঘরের দরজা খোলা পেল বকুল সেই মৃহূর্তে সোজা সুরপাঁতর বাঁড়তে গিয়ে হাঁজর। বিয়েটা বকুলই করতে চেয়োছল। হেম মণ্ডলের কাছে তার জীবনটা চামড়াসেদ্ধর মতন বছরের পর বছর শুধু সেদ্ধই হচ্ছে। একদিন না একদিন ৭৯ সে ওকে খুন করে ফেলত। যেমন শয়তান লোক হেম মণ্ডল তার সাজাও পেয়েছে সেই রকম। ভগবান তার বউকে কুম্ঠ দিয়েছে। বাঁড়র একপাশে পড়ে থাকে তার বউ। হেম মণ্ডলের সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটর মধ্যে যাবার ইচ্ছে ছিল না সুরপাঁতির। খেস্টানদের সঙ্গে খুনোখাঁন করারও তার আগ্রহ ছিল না। একটা মাঝামাঁঝ রফ। করে সরপাতি বকুলকে বিয়ে করে ফেলল। কেন করল তাও বুঝল না। তার তখন মনে হয়োছিল, একাঁট মেয়ের সাহচর্য তার প্রয়োজন। শ্যামা সুর- পাঁতকে এমন একটা নেশা ও অভ্যাসের দাস করে ফেলোছল যে স্‌রপাঁত কখনও কখনও তার জন্যে বড় ব্যাকুলতা বোধ করত। নেশা সুরপতির ছিল, কিন্তু নারীসঙ্গ ছিল না। বকুলকে বিয়ে করার পর সুরপাঁত তার কাঠগোলা, তার বাসাবাঁড় অনেকটা তফাতে সাঁরয়ে নিয়ে 'গিয়ৌোছল। বকুলকে 'নয়ে কিছ সুখশান্তি পাবার চেম্টাও করোছল সরপাঁত। মীরা অধৈর্য হয়ে উঠাঁছল। সূরপাঁতি বোবার মতন বসে আছে দেখে আবার বলল, “আপনার স্ত্রী কোথায় 2 সূরপাঁত কেমন অর্থহীন চোখে তাকাল। মীরা বুকের কাছ থেকে বেণীটা আবার পিঠের 'দকে সাঁরয়ে দল। বলল, “কছুই বলছেন না?” “কী বলব!” 'নিঃ*বাস ফেলল সরপাঁত। “আপনার স্তীর কথাই বলুন।” «আমার স্তী কোথায় আম জান না। বেচে আছে, না মারা গেছে তাও নয়।” মীরা চোখের পলক ফেলতে পারল না। কী বলছে সূরপাঁতি। মীরাৰ 1বশবাস হল না। বলল, “ক বলছেন? [নিজের স্ত্রী কোথায় তা জানেন না-- তাই কি হয়!” সূরপতি চুপ করে থেকে বলল, “জানলে বলতুম। জান না।...তা ছাড়া এটাও তো হয়, আমরা একজন আরেকজনের হাতের কাছে থাঁক-_-তবু জান না. কে কোথায় আছে।” মীরা সুরপাতির এই হেখ্মাঁলি বুঝতে পারল না, কিন্তু তার বুকের মধ্যে ধক করে উঠল। ৮০ দশ রাধার সাড়া পেয়ে মারা উঠল। ঘরে নয়, বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল রাধা । মরা কিছু বলল না, বাইরে চলে গেল। সুরপাত রাধার গলা শুনল। মীরার। অস্পম্ট কথা । ততক্ষণে সে আবার অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছে । রাধা ঘরে এসে চায়ের সরঞ্জাম গুছিয়ে নিয়ে চলে যাঁচ্ছিল। সুরপাঁত দেখল, মনোযোগ দিল না। মাথা তুলে ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকল- ফাঁকা দৃষ্টি। অনেক দূর দিয়ে মাঠ-ছঃয়ে ধুলো উড়ে গেলে যেমন দেখায় সেই রকম দেখাচ্ছিল নিজেকে আর বকুলকে। বকুল যে কোথায় সুরপাঁত জানে না। সাঁত্যই তার জানা নেই। কোনো আগ্রহও সে বোধ করে না। বকুল তার স্ত্রী-এটা বোধ হয় ঠিক কথা নয়। এক সময় বকুল তার স্ত্রী হয়েছিল এইমান্র। মানুষের জীবনের সব কিছু হিসেব মিলিয়ে হয় না, অনেক' কিছ? ঘটে যেটা হিসেবের বাইরে । হেম মণ্ডলের বাঁড়র বকুলকে বিয়ে করাও সেই রকম ঘটনা। সুরপাঁত গনজের আগ্রহে বকুলকে য়ে করতে যায় নি। 'নজেই এসোছল বকুল। প্রেম- ভালোবাসার কোনো ঘটনা ঘটে নি। হেম মণ্ডলের হাত থেকে বাঁচবার তাগিদে বকুল এসে আশ্রয় চেয়েছিল সুরপাঁতির কাছে। সুরপাঁতিরও তখন ছন্নছাড়া অবস্থা । কাঠের কারবারে গলা ডুবিয়ে বসে আছে; প্রচন্ড পাঁরশ্রম, ছোটাছাট, বিশঙ্খল জীবন, গ্যাস্রাইাটস--শরার স্বাস্থ্য ভেঙে যাচ্ছল। 1দনান্তে নিয়ত মদ্যপান আর উৎকণ্ঠা-জড়ানো নিদ্রা, এই ছিল তার জীবনযাপন। কোনো সন্দেহ নেই সূরপাঁতির ভাগ্য গড়ে উঠাঁছল কারবারী মানুষ হিসেবে । বকুলকে 'সূরপাঁতর প্রয়োজন ছিল ঘরোয়া কারণে; আর কোনো কোনো দন রান্রে_ যখন শ্যামার কাছ থেকে পাওয়া তার সেই প্রবল কামনা ওকে কাতর করত। বকুল ঘরোয়া প্রয়োজনে অচল ছিল। হেম মন্ডলের বাঁড়তে আজীবন যে- জ্ঞান ছিল না। বকুল ছিল ষোলো আনা অমাঁজতি আশিক্ষিত। তার শালী- নতা ছিল না, আচরণ ছিল রুক্ষ। বন্য ধরনের, গোঁয়ার, নিরোধ এই নারাঁ সূরপাঁতর সাঁঙানী হবার উপযুস্ত ছিল না। সুরপাঁত এটাও অনুভব করে- ছল, স্ত্রী হিসেবে তাকে শয্যার্সাঞনী করাও 'বিরীস্তকর। বকুল জানত না, প্রচ্ছম-৬ ৮১ সেখনেও একঢা রুাচরক্ষা রয়েছে। কুকুর বেড়ালের মতন মানুষের আচরণ নয়। কোনো মানুষকেই কারও বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। বকুল শ্যামার বিকল্প নয়। শ্যামা যা দিত তার মধ্যে শুধু শ্যামার দেহ ছিল না; ভালবাসাও ছিল। কিন্তু এই ভালবাসা এত বেশন স্বার্থপর, সর্বগ্রাসী, আত্মময় যে সুরপাঁতির পক্ষে তা স্বীকার করে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়োছল। আঁধিকার-বোধকে শ্যামা ভালবাসা মনে করত। বকুলের কোনো বোধই ছিল না, ভদ্র জীবনেরও নয়। বছরখানেকের মধ্যে বকুল সুরপাঁতিকে উত্যন্ত করে ফেলল । ভান্ত দাস বলে একটা লোককে ?দয়ে হেম মণ্ডলের চামড়ার গুদোমে আগুন লাগিয়ে দিল। তাই নিয়ে থানা প্লিস । বকুল সুরপাঁতর কাঠগোলার লোকদের কুংঁসতভাবে গালিগালাজ করত, প্রাতবেশশদের সঙ্গে অশান্তি বাঁধিয়ে রাখত। শেষ পর্যন্ত একাঁদন বকুল সুরপাঁতিকে ছু একটা খারাপ নেশার জিনিস খাইয়ে হাজার কয়েক টাকা 'নয়ে পালিয়ে গেল। ভান্ত দাসও উধাও । সুরপাতি নিশ্চিন্ত হল। বকুলের জন্যে দুঃখবেদনার কোনো কারণ 'ছিল না। সে বাঁচল। একেবারে সাধারণ মামল সুখ-শান্তি বা সাংসারক তাঁপ্ত পেলেও কথা ছিল না। বকুল কিছ; দেয়ান। এই সময় শ্যামার একটা চিঠি এল। কেমন করে যে শ্যামা সরপাতির খোঁজ পেল বোঝা মৃশাঁকল। বোধ হয় 'গারধারীর কাছে। অবশ্য তখন সূরপাঁত আর 'গাঁরধারীর মধ্যে বন্ধৃত্বপূর্ণ চিঠি লেখালোখ ছাড়া অন্য সম্পর্ক ছিল না। শ্যামা সুরপাঁতিকে বেনারসে যেতে লিখেছিল একবার। কোনো জবাব দেয়ান সুরপাঁত চাঠর। মাসখানেক পরে শ্যামার দ্বিতীয় চাঠ এল। সে সুরপাঁতর কাছে আসতে চেয়েছে। সুরপাঁত ভয় পেয়ে গেল। শ্যামাকে বিশ্বাস নেই। সে এসে পড়তে পারে। সুরপাঁতি এবার 'াঠর জবাব দল। লখল, তুম এস না। আম কাঠের কারবারে মোটা লোকসান খেয়োছি। এই কারবার তুলে অন্য কোথাও যাবার ইচ্ছে। পারলে আমিই একবার বেনারসে আসব। ' শ্যামা আর কোনো চিঠি দেয় নি। সরপাঁতি ভয়ে ভয়ে থাকল মাস কয়েক। কাঠের কারবারে বাস্তাবকই তেমন কোনো লোকসান সূরপাঁত দেয় নি। কিন্তু তার আর ভাল লাগাঁছল না। কারবারী মানুষ হবার জন্যে সে জল্মায় ন। শুধু নিজের কর্মক্ষমতা এবং যোগ্যতা যেন যাচাই করে নিতে চেয়োছিল। একাঁদন কাঠের কারবার বেচে দয়ে সুরপাঁত রাঁচর সীমানা ছেড়ে পালাল। ৮ বকুলকে নয়ে স্রপাত আর কোনোদন মাথা ঘামায়ান। মীরা ঘরে এসোছিল। মীরা আর রাধা । সুরপাঁত আকাল। রাধার কাজকর্ম শেষ হয়েছে। সে চলে যাচ্ছে। রাধা চলে যাবার পর মীরা দরজা বন্ধ করে ফিরে এসে বসল। সংর- পাঁতকে দেখতে লাগল । সমরপাঁত বলল, “প্রমথর কী হল? মীরা বলল. 'শফরবে। কোথায় বসে আড্ডা 'দচ্ছে! এখনও আটটা বাজে নি।” সুরপাঁত মরার চোখমুখ লক্ষ করল। মীরা গম্ভীর নয়, তবু খানিকটা যেন চান্তিত। কিছ; সময় চুপচাপ । দুজনেই । মীরা হঠাং বলল, “ওর অনেক বন্ধু- বান্ধবকেই দেখলাম । আপান কেমন আলাদা 1” সরপাঁতির মূখে মূদ্€ হাসি এল। “অনেক মানে দ্‌-তিনজনকে দেখেছেন, যারা কলকাতায় থাকে ।” “না, তা কেন হবে! '্রিদববাবাকংবা অমলবাবুকে প্রায়ই দেখি। ব্রাদববাবু মাঝে মাঝে আসেন। বাইরে থাকেন রবাঁনবাবয তিনিও এলাহাবাদ থেকে একবার এসোছিলেন।” ন্রাদৰ কাল আসতে পারে।” 'আফ্ডা জমাতে 2৮ মারা হেসে বলল। “হ্যাঁ। প্রমথকে বলেছিল আমায় নিয়ে ওর বাড়তে যেভে। প্রমথ সকালে বাজী নয়। একটা নেমন্তন্ন ফসকে গেল।” মীরা মনে মনে লঘৃতা চাইছিল। সরপাঁতকে য়ে সে কোন দক থেকে খেলবে, বুঝতে পারছিল না। এটা ঠিক প্রাতপক্ষের সত্গে বেষারৌয বা দ্বন্দ নয়, কন্তু একটা লোক তার তার সংসারে এসে তাকেই বোকা করে যাবে, তাকে উীদ্বশ্ন করবে মীরার এটা পছন্দ হচ্ছিল না। জুরপাঁত কেন এ-বাঁড়তে থেকে যেতে চাইছে তাকে বুঝতে হবে। আড়াআড়ি করে, বিরান্ত দেখিয়ে 'কংবা নিস্পৃহ থেকে সেটা হবে না। বরং একট খোলাখুলি মনে মেশামেশি ভাল। হালকা ভাবটাই দরকার এখন। মীরা আড় চোখে সূরপতিকে দেখতে দেখতে বলল, “আমার নিন্দে করছেন ?” «“কেন?" “আমি নেমন্তন্ন খাওয়াতে পারছি না।” সুরপতি হাত তুলে বলল, “রাম রাম, ও-কথা বললে পাপ হবে। আপনার ৮৩ ৬ $ আতথ্য চমংকার।” ঠাট্টা করছেন 2” সরপাঁত হেসে ফেলল। মীরা তার হাতের চুঁড় নিয়ে নাড়াচাড়া করাছিল, সামান্য চণ্ণল, পা কাঁপাচ্ছে, কনুইয়ের চারপাশে খয়েরী ভাব। সুরপাঁত বলল, “বন্ধর বাড়তে এসে এর চেয়ে বেশ খাতির আর কি পাওয়া যায় ? মীরা বুঝতে পারল, সুরপাঁতি বন্ধুকে 'নয়ে ঠাট্টা করছে না, কিন্তু তার কথার মধ্যে লুকোনো একটা খোঁচা যেন মীরার জন্যে রয়েছে। মীরা বলল, “সে আপনি জানেন! আমি আপনাকে কই আর খাতির করতে পারাছি।” সুরপাঁতর কপালের কাছটায় একটা শিরা কেমন দপদপ করে উঠল। পিঠের 1দকে টান লাগছে। সামান্য ঝুকে বসল। সোফায় হাত ছড়াতেই 1সগারেটের গ্যাকেটটা আঙুলে ছোঁয়া লাগল। মীরার ঠোঁট দাতি নাকের দঈর্ঘতা লক্ষ করতে করতে সুরপাঁত বলল, “খাতির না হয় কমই করলেন, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, আপাঁন আমার ওপর 'বরন্তু।” মারা আশা করোন, এমন স্পন্ট করে সুরপাতি কথাটা বলে দেবে। বিব্রত হয়ে মীরা সুরপাঁতর চোখের দিকে তাকাল। কিছু যেন অনুভব করল বুকের কাছে। জ্বালা না ভয়? চোখ সাঁরয়ে নিয়ে অন্য দিকে তাকাল । িনজেকে লঃকোবার ক্ষীণ চেম্টা করল মীরা। “কেমন করে বুঝলেন?" “আমি ছেলেমানুষ নই।” মীরা তার ডান হাতটা হাঁটুর ওপর চেপে ধরল। বিহ্বল বোধ করল সামান্য। “আপাঁন যাঁদ সবই বুঝে থাকেন তা হলে ওটাও বূঝেছেন।” সুরপতি বলল, “অনুমান করতে পারছি।” “তবে আর কি!” “অনুমান সব সময় সাঁত্য হয় না।” মীরার ইচ্ছে করাছল না সুরপাঁতির দিকে তকায়। তবু তাকাল। সন্দেহের চোখেই। “আপনার অনুমানটাই শান ।” সূরপাঁত সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিল না। চোখ বন্ধ করল। খুলল । তারপব বলল, “আপনার সন্দেহ হচ্ছে, আম আপনার কোনো ক্ষাত করে যাব।” মীরা যেন এ-রকম সন্দেহ করোঁন- বিস্ময়কর ভান করে বলল, “ক্ষাত * [কিসের ক্ষাত £" সরপাঁতি মরার ভান লক্ষ করল। পক্ষাতিটা আপনার 'কসের- সে আপাঁন জানেন। আপাঁন ভাবছেন-আম সেই পুরনো ব্যাপারটা প্রমথর কানে তুলে দেব?” মীরা অসন্তুন্ট হল? বিরন্ত। “বার বার আপাঁন কেন ওই কথাটা তুলছেন -আঁম বুঝতে পারাছ না। নীলেন্দ আমার কেউ ছিল না। কোন ছেলে- ৮9 বেলায় কার সঙ্গে আমার ভাব ছিল সেই কথাটা আপনার বন্ধুকে বলে দিলে আমার যে কী ক্ষত হবে-আ'ম বুঝতে পারাছ না।” সুরপতি মীরার বিরান্ত ও ক্রোধ লক্ষ করাছল। বলল, “আপনার ক্ষাত না হলেই ভাল। আমার সেটা উদ্দেশ্যও নয়।” “তা হলে?” “আমার কী উদ্দেশ্য জানতে চাইছেন ?” 'হ্যাঁ।” সুবপাতি কয়েক পলক মরার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, “ছোট করে সেটা বলা যাবে না, যায় না। আম যোদন সকালে আপনাদের বাঁড় ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম, সোঁদনও প্রথমে ব্ণাঝাঁন কেন আমি এ-বাঁড়তে 'ফবে আসব! আমায় পিছু-টানে কে টানাছল তাও বুঝতে পারাঁন।” মীরা কেমন এক অস্বা্ত বোধ করাছল। মনে হচ্ছিল উঠে চলে যায়। অথচ উঠতেও পারাঁছল না। ঘবের চারপাশ থেকে এক গুমোট নেমে এসেছে। ফাঁকা বাঁড়। রাধাও কোথাও নেই। সূবপাঁতও যেন কোথাও চণ্ুল হয়ে উঠেছে। মীঁবা বলল, 'আপাঁন কি বুঝেছেন আম জান না। আমার কোনো [পিছুটান নেই।” “থাকার কথা নয়। আমাকে আপাঁন দেখেনান বলেছেন। চিনতেন না।॥ ' আপনারই বা কেন থাকবে £” সুবপাঁত শন্য চোখে মীরার দকে তাঁকয়ে থাকল। চোখ ওঠাতেই শেডেব ছায়া চোখে পড়ল দেওয়ালে । ফুলের ভাঁটর মতন একটা দাগ ধরেছে আবছা । [নাজেকেই কেমন অসহায় বোধ করাছল সুরপাতি। কেন পিছুটান থাকে মান্‌ষেব, কেন থাকবে এ-কথা কি বলা যায়? পেছনের দিকে তাকাতেই সুরপাঁতির মনে হল, কে যেন এক প্যাকেট তাস খুলে ছুড়ে দিয়েছে, ছড়ানো ছিটোনো সেই তাসের মতন স্মাতির নানা জায়- গায় তর, রমা, শ্যামা, বকুল। এর মধ্যে মীরা নেই। মীরা ছিল না। কিন্তু এসেছে । বা এমনও হতে পারে মীরা ছিল, বরাবরই ছল, প্রকাশ্যে নয়, প্রচ্ছনে । সবপাঁত বলল, “আপনার সঙ্গে আমার একটা তফাত বয়েছে।” “তফাত !» "আমি আপনার নীলেন্দুর কাছে মার খেয়োছিলাম_” সুরপাঁতি ম্লান হেসে বলল, “আপাঁন আমাদের হাতে নিশ্চয় আঘাত পাননি ।” মীরা কিছ; ঘলতে যাচ্ছিল, কাঁলং বেলের শব্দ হল। তাকাল মীরা সরপাঁতর দিকে, তারপর উঠে পড়ল দরজা খুলে দিতে। ৮৫ দরজা খুলতেই প্রমথ । প্রমথ মীরাকে দেখে অবাক। সুরপাঁতিকেও দেখল। দু জনের মুখ এত গম্ভীর থমথমে কেন? “তুমি 2 প্রমথ স্ত্রীর দিকে তাকাল। “দাক্ষিণে*্বর যাণাঁন ?” “গয়োছলাম। সন্ধেবেলা ফিরে এসৌছ।” “ফরে এসেছ! কেন? এই না বলোছলে ফিরবে না।" “ফরে এলাম। ওরা বেলুড় যাচ্ছে।" 41৮ প্রমথ এসে সুরপতির কাছাকাছি বসে পড়ল । “করে কি খবর ?" “তোর এত দেরী হল?” “আমার দেরী নয়, ওদেরই দেরী । মৃদুলের বাবাকে বাঁড় পেশছে দিতেই দেরী হয়ে গেল।” মীরা জিজ্ঞেস করল, “কেমন দেখলে ?” “এখন ভালই দেখাচ্ছিল ।” “তোমার সঙ্গে কথাটথা বললেন 2, “বললেন। তবে বুড়ো মানষ। টায়ার্ড হয়ে পড়েছেন খুব ।” মীরা চলে গেল। যাকার সময় সূরপাঁতিকে আড় চোখে দেখে 'িনল। প্রমথ সিগারেটের প্যাকেট বার করে 'নয়েছে। সোফার মধ্যে ডুবে গিয়ে পা ছড়িয়ে বসে আরাম করছিল। সুরপাঁতিকে 'সগারেট দল, নিজেও ধরাল। “তোর খবর বল”- প্রমথ বলল বন্ধূকে, “সারাঁদন কী করাল?” “শুয়ে বসে কাটিয়ে দিলাম ।” “বেশ করেছিস। আম তোর জন্যেই ভাবাছলাম। আরও আগে ফিরে আসা যেত-_কিন্তু গাঁড়-ফাঁড় যা লেট করল!...যাক গে, দেবী তো এসেই গিয়েছিল তোকে একেবারে একা একা থাকতে হয়ান।» প্রমথ রাঁসকতা করল । সূরপতি হাঁস-হাঁস মুখ করল। প্রমথ সোফায় বসে বসেই পা তুলল, নামাল; হাত মাথার ওপর ওঠাল আবার নামিয়ে নিল, ঘাড়টা ঘোরাল, সোজা করল। “আমার একটা বাতের টেণ্ডেন্সি হচ্ছে বুঝাঁল সুরপাঁতি, কখনও পা টনটন করছে-_ কখনও কাঁধ বাথা করছে... । মাইরি, এভাবে চললে বেতো ঘোড়া হয়ে যাব ।” সুরপাঁতি হেসে বলল, “তোর বাত হবে না। তুই বেশ আ্যাকাঁটভ্‌।” মাথা নাড়ল প্রমথ । চোখে কৌতুক । বলল, “আযাকাঁটভ কোথায় রে, প্যাঁসভ। একেবারে প্যাঁসভ হয়ে গিয়োছ। ঘর সংসার তো করাল না, করলে বুঝাঁতিস।” সমরপাঁতি হেসে ফেলল । প্রমথ এবার উঠে পড়ার ভাব করল। বলল, “শোন, আজ আমার আচার্ধর ৮৬ সঙ্গে কথা হয়েছে। আমি তোর কথা বলোছি। তোদের মৌশনারির ব্যাপার- ট্যাপার আম বুঝ না, ভাই। একাঁদন-_নেকসট উইকেই তুই দেখা কর আচার্যর আঁফসে। কিছ হয়ে যেতে পারে।” সূরপতি মাথা হেলাল; দেখা করবে। উঠে পড়ে প্রমথ বলল, “তবে তোর ওই ব্যারাকপরে থাকলে ছু হবে না আসা-যাওয়া করতে করতেই মরে যাব। কলকাতায় চলে আয়। কাজ কারবার করতে হলে কলকাতায় থাকতে হবে। তুই আয়, আম বরং এই পাড়ায় একটা ছোট বাঁড়টাঁড় খুজে দি। এখানে থেকে যা, দুই বন্ধু মিলে ফার্ ক্লাস গেজাব।...আরে- বলতে ভুলে গোঁছ। 'ন্রাদব কাল সকালে ঠিকই আসছে। ও বলাছল- একটা প্রোগ্রাম করবে। মাথায় শালার দারুণ দারুণ বাঁদ্ধ খেলে ।” প্রমথ হাসতে হাসতে চলে গেল। সূরপাঁতি সিগারেটের টুকরোটা ছাইদানে ফেলে দিয়ে ক্লান্ত ভাঙ্গতে বসে থাকল। খাবার টোবলে বসে প্রমথ মীরাকে বলল, “কাল সকালে ন্রদিব আসবে। সে একটা প্ল্যান ঠাওরেছে।” মীরা টোবলের এক ধারে বসেছিল। সূরপাঁত প্রমথর মুখোমুখি । মীরা খাওয়া দাওয়া দেখাছল। মীরা বলল, “কা প্ল্যান 2” প্রমথ খেতে খেতে বলল, “ন্রাদব বলাছল, ওদের যে পুরোনো বাঁড়টা পলতার কাছে পড়ে আছে, সেখানে গিয়ে একাঁদন হই-হই করা ।” “'পকনিক 2” মীরা শুধলো। “থাঁনকটা 'পিকাঁনক, খাঁনকটা গেটটুগেদার।...বুঝাঁল সুরপাঁতি-, প্রমথ সবপাঁতির দিকে তাকাল, ত্রাদব খখজেপেতে ছ" সাত জনকে যোগাড় করেছে। সব আমাদের সেই পুরোনো পাপী। শিশিরকে পেয়েছে, অমল রয়েছে, কৃষকেও ধরেছে, জগবন্ধুকেও। আসছে বুধবার কিসের একটা ছাট আছে-_ বুধবার না হলে পরের রাববার। সবাই যে যার বউ 'নয়ে পলতা যাবে। নো বাচ্চাকাচ্চা। 'স্্রক্টীল ফর হাফ-ওক্স। সেখানে আমরা একটা হুল্লোড জমাব।। খাব দাব, নাচব, গাইব...» বলতে বলতে প্রমথ হেসে উঠল। মীরা বলল, “এটা ক 'িকাঁনকের সময়? গরম পড়ে গেল।” “গাঁজতে বলছে বসন্তকাল ।” প্রমথ জবাব 'দল ঠাট্টা করে। “বসন্তকাল!” মীরা ভুরু কোঁচকাল। সুরপাঁত হেসে বলল, “তোরা 'ি বসল্তোংসব করতে যাঁব £” বাঁ হাতে টেবিল চাপড়ে প্রমথ বলল, “একজ্যান্তীল। তুই কি মনে করছিস ৮৭ আমাদের বয়েস হয়েছে বলে বসন্ত থাকবে না। দেখাব, কৃফর বউ কেমন দারুণ গান গাইবে-আয় রে বসন্ত তোর কিরণমাখা পাখা মেলে-” বলতে বলতে প্রমথ তার দু হাত কাঁধের দু, পাশে ছাঁড়য়ে পাখা মেলার ভাঁঙ্গ করল। সূরপাঁত জোরে হেসে উঠল । “প্রমথ, তুই গানের লাইন মুখস্ত রাখাঁছস কিরে?" প্রমথ মীরাকে দেখাল। “ও"র কল্যাণে। ওই যেরেকর্ডফেকর্ড চালায়। শুনেছি।” “আপাঁনও গানটান গান? সুরপাঁত মীরাকে জিজ্ঞেস করল। “না”, মাথা নাড়ল মীরা । প্রমথ বাধা দিয়ে স্তীর দিকে তআকাল। “এই, মিথ্যে কথা বলো না। তুমি গান গাও। তুমি আবার বসন্তকে রোদনভরা বানিয়ে দাও।» সুরপাঁতি জোরে হেসে উঠল। মীরা কেমন অপ্রস্তুতের মতন বলল, “ক করব বলো, তোমার কৃষ্ণর বউ যাঁদ পাখা মেলে আমায় রোদন করতেই হবে ।” সুরপতি হো হো করে হসে উঠল। প্রমথও। সুরপাঁতি বলল, “চমৎকার বলেছেন ।” প্রমথ স্তীর দিকে তাকিয়ে চোখ ছোট করল, কৌতুক করে বলল, “তোমার এই চমৎকার ব্যাপারটার জন্যেই তোমায় এত ভাল লাগে। এখন তোমায় চমৎকার দেখাচ্ছে।» মীরা স্বামীর চোখ দেখে ক বুঝল কে জানে, অন্য কথায় চলে গেল। 'শন্রদিববাবু কালকে আসুন আম বলব ওসব হবে না।” «কেন ?” “এই গরমে কেউ পিকানক করে না।” “পলতার সেই বাশানবাড়ি তুমি দেখোনি। গঙ্গার ধারে। গাছের ছায়ায় ঠান্ডা। কত রকম গাছ। পটাপট ডাব খাবে। গরম তুমি বুঝতেই পারবে না।” মীরা বলল, “এ ছাড়া আরও একটা কথা আছে।” “কা?” “তোমরা সবাই বউ 'নয়ে যাবে_” বলে মীরা সুরপাঁতর দিকে চোখ দেখাল। “উন ক নিয়ে যাবেন 2৮ সুরপাঁত মীরাকে দেখছিল । প্রমথ একটু ভেবে বলল, “সুরপাঁতর কেস আলাদা । ওর খাঁতরেই এই হইরই। আমরা ওকে এটুকু 'প্রীভলেজ দেব। তাছাড়া ও তো বয়ে করে- [ছিল। ব্যাচেলার নয়। ওতেই হবে ।” বলে একটু থেমে প্রমথ আচমকা রাসকতা করে বলল, “সরপাঁতির এনাফ্‌ চান্স থাকল-_কাউকে চুজ্‌ করে নিতে পারে” সূরপাঁতি জলের গ্লাস টেনে 'নয়ে মুখে, তুলল। ৮৮ এগারো সকালে ত্রিদিব এসে হাঁজর। প্রমথ সহর্ষে বন্ধুকে অভ্যর্থনা করল, “আয়, আয়।” বলে সুরপাঁতর দকে হাত দেখাল, “হয়ার ইজ দ্যাট স্মাগলার।” ্রাদব নাটকাঁয় ঢঙে সুরপাঁতিকে দেখাঁছল। কোমরে হাত দিয়ে, ভূরু কুচকে । তার চোখ এবং মুখের হাঁস দেখলেই বোঝা যায় সব জেনেশুনেও সে একটু মজা করছে। সহরপাঁত হাসিমুখে বসৌছল। দেখাঁছল '্রাদবকে। সেই কোঁকড়ানো চুল, মাঝখানে পথ, চোখা নাক, থুতাঁনব কাছটায় টোল খাওয়া । ন্রাদব এীগয়ে এসে দু-হাত বাঁড়য়ে দল, “ওঠো সখা, তোমায় আলঙ্গন কার।" প্রমথ হাসাছল। সুরপাঁতি কেমন সঙ্কোচ বোধ কবল । উবে কি উঠবে না _ঠিক করতে পারাছল না। ত্রিদিব এবার ধমক মেরে বলল, “ওঠ শালা-ভদ্রতা জানিস না।» বলে টান মেরে সুরপাঁতিকে উঠিয়ে নিল। কোলাকুলি নয়, বন্ধুকে দুহাতে বুকের মধ্যে জাপটে ধরে ব্রাদব বলল, “কলকাতা তোকে ওয়েলকাম করছে সরপাঁতি, আমরা তোকে সাদরে অভ্যর্থনা করছি। পাপণর সংখ্যা আরও একটা বাড়ল।” সুরপতি বন্ধুত্বের এই উত্তাপ অনুভব করল। সমস্ত মন এ-সময় ছেলে- মানুষের মতন হয়ে যায়, দুর্বল, ভাবপ্রবণ। তব্রিদবের কাঁধের কাছে আস্তে আস্তে চাপড় মেরে সুরপাতি বলল, “তোকে চিনতে কোনো কষ্ট হয় না। চেহারাটা রেখোঁছিস ঠিক।” সূরপাত বসল। 'ব্রদিবও। 'ন্রীদব বলল, “চেহারা না রাখলে মরে যাব যে! আমার ক প্রমথর চাকরি 2 চেম্বারে বসে এয়ারকুলারের হাওয়া খেয়ে দিন কাটে! আমরা কুলিকাবারির কাজ কার, সকাল দুপুর ঝড়-বৃষ্টরোদ বলে দিছু নেই দাদা, কাজ করো তলব নাও ।” দিব ইলেকাট্রক সাপ্লাইয়ে কাজ করে। যতটা বলল ততটা নিশ্যয় করে না, কিন্তু অকে বারে বাইরে ঘুরতে হয় বইকি। প্রমথ বলল, “আমি বেটা হাওয়া খাই? একবার গিয়ে বোস না চেয়ারে-_ ৮৯ আরাম বূঝাঁব!” “তোর পদরো চেহারা আরামের । দু-তিন ই্ি পুরু ফ্যাট জমিয়ে ফেলে- ছিস। তুই সুখী লোক প্রমথ, তোর বাইরে আরাম, ঘরেও আরাম।” '্লিদব চোখ টিপে হাসতে লাগল । “আরাম হারাম হ্যায় ।” সুরপাঁত হাসল । প্রমথও। ন্রিদব পকেট থেকে দামী সিগারেটের প্যাকেট বের করে সংরপাঁতকে দিল, “তোর জন্যে নিয়ে এলাম। নে, ধরা ।” [তিন বন্ধু সিগারেট ধরিয়ে নিল। প্রমথ বলল, “দাঁড়া, মীরাকে খবর 'দি।” ন্রিদিব বলল, “আম সকালে খেয়ে বেরোহীন; হোভ ছু দিতে বল বউকে ।” প্রমথ মীরাকে খবর দিতে উঠে গেল। ত্রিদিব সিগারেট টানতে টানতে সুরপাঁতকে দেখাছিল। “তোর চেহারা বেশ পালটে গেছে রে সুরপাঁতি; সেই চনচনে কাঁচ কেন্টঠাকুরের মতন চেহারা কই রে, এখন তোকে দেখলে বুড়ো বুড়ো দেখায়। চুলটুলও পেকেছে নাঁক ? সুরপাঁতি হাসতে হাসতে বলল, “বয়েসটা কি আর কচি থাকার মতন। নাক তোর মতন স্পোর্টসম্যান ছিলাম আমরা ।......এখনও ওসব শখ আছে তোর?” “না,» মাথা নাড়ল 'ত্রাদব, “খেলার বয়েস কবে পার করে 'দিয়োছ। ওই বছরে দু-চার দন মাঠে যাই। দেখতে । এখন ভাই সংসারের খেলা খেলাছি। বউয়ের জাঁতাকলে জাঁবন যাচ্ছে ।...যবাক গে, তোর খবরটবর বল। এতোকাল পরে কলকাতায় ফিরে এীল কেন? কাঁ করাঁছস-টরাছিস £...প্রমথর সঙ্গে ফোনে কথা হচ্ছিল। ও যে কি বলে আম মাথামুণ্ডু বুঝতে পাঁর না। প্রমথ কখনও বাঁচি করে ছেড়ে দেবে ।” সূরপাঁতির ভাল লাগাঁছল। সে ভাবোন, পুরোনো বন্ধ্দের মধ্যেও এখনও এমন সহ্ৃদয়তা রয়েছে। প্রমথকে ব্যাতিক্রম মনে হয়োছল। '্রিদিবও কিন্তু আন্তারক। অবশ্য 'ব্রিদব বরাবরই এই রকম ছিল-হইচই করে থাকত, রগুড়ে, সিনেমার লাইনে দাঁড়ালে হাত-পা চালাত। সেই জীঁবনীশান্ত, এখনও ফুরিয়ে যায়নি ওর। ত্রদিব বলল, “তুই নাক চার পাঁচ মাস হল কলকাতায় এসোঁছস ?” “ওই রকম। কলকাতায় সপ্তাহ দুই ছিলাম, তারপর ব্যারাকপদরে চলে গিয়েছি।” ৪০ “কী করছিস ব্যারাকপুরে ?” “বশেষ কিছ; নয়। প্রথমে ভেবোছলাম, ছোট মতন একটা কারখানা করব কাপালংয়ের। দেখলাম ও হবে না। ভালও লাগল না। এক ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ হল, দমদমে কিছ ছোটখাট মেশনারর কাজ করে। তাঁর সঙ্জো লেগে পড়লাম ।" “তুই জানিস এসব 2?” “অলপস্বল্প জান। পেট চালাবার জন্যে কত কি শিখতে হয়েছে।” “পেট চলছে তোর 2” সুরপাত হাসল। “কোনো রকমে ।” সিগারেটে লম্বা করে টান দিল ন্রিদব। একন্তু তুই যখন কলকাতায় ফিরেই এলি- আমাদের খোঁজ খবর করাল না কেন আগেই 2” সরপাতি একট চুপ করে থেকে বলল, “করব করব ভাবাঁছলাম, সাবধে হাঁচ্ছল না। ভা ছাড়া এত বড় কলকাতা শহরে তোরা কে কোথায় আঁছস জানব ক করে" বলে সূরপাতি সামান্য অন্যমনস্ক হয়ে থাকল, তারপর বলল, “তুই খোজখবরেব কথা বলছিস! জানিস, আমি একদিন খুজে খংজে হেমন্তর বাড় গেলাম, সেই তোর 'দনেন্দ্র স্ট্রটে। ওদের াজেদেব বাঁড়, ভেবেছিলাম -পেয়ে যাব। গিয়ে শুনলাম, হেমন্ত মারা গেছে সাত আট বছর আগেই। কী অসুখ করোছল।" ত্রাদব মাথা নাড়ল আস্তে করে; বলল, “হেমন্তর মারা যাবার খবর আমরাও পরে পেয়োছ। খুব স্যাড। ডবল বি সি এস-এ বসে উত্তরে শিয়ে- [ছিল। ভাল চাকার করাছল। জশ্ডিস-মণ্ডিস কী হল; টরটমেন্টের গোল- মাল। ছেলেটা মরে গেল।” সবপাঁত নিঃমবাস ফেলল। সিগারেট 'নাবয়ে রেখে বলল, “তারপর থেকে কারও খোজ করতে ভয় করত। কার বাঁড় গিয়ে, কার খোঁজ করতে গিয়ে কঈ দেখব-, তার চেয়ে খোঁজ না করাই ভাল। একাঁদন এক আঁফসে আনলের সঞ্জে দেখা, আমাদের মন্মথর 'পিসতুতো ভাই, জ্ানআর ছিল। আঁনল আমাকে ' প্রমথর কথা বলল। ওদের কেমন একটা আঁফসে আঁফসে কানেকশন আছে। সেই খবর পেয়ে প্রমথর কাছে গিয়োছিলাম, নয়ত সাহসই হত না ।” 'ত্রাদব বলল, “কথাটা ঠিকই বলেছিস। খবর-টবর 'নতে সাঁত্যই ভয় কবে। আদকাল পুরোনো কারও খবর নিতে গিয়ে শুনাব, অমুকে মারা গেছে, তমুকে কাটা পড়েছে, কেউ সুইসাইড করেছে ।” বলে ্রাদিব লম্বা টান মারল সগা- রেটে, মুখ দিয়ে শব্দ করে ধোঁয়া ছাড়ল, তারপর বলল, “তবু আবার এরই সধ্যে আমরা তো বে'চেও থাঁক। আম ভাল-মন্দ, সুখ-দুঃখের হসেবটা ভাই ফিফাঁট ফিফটি করে নিয়েছি।” ৯ ৯, সূরপাঁত এই সাধারণ কথাটা অস্বীকার করতে পারল না। সংসারে যেন সাত্য সত্যিই এ-রকম একটা হিসেব আছে, দ্‌ঃখ-সুখের। “তা তোর খবর-টবর কী?” সুরপাঁতি জজ্ঞেস করল, “তোদের সেই হরিহর ছন্র আছে?” “না, মাথা নাড়ল ত্রিদিব, “আজকাল ছি আর ও-সব টেকে? জ্যাঠা- মশাইরা বাঁড় ভাগাভাঁগ করে আলাদা হয়ে গেল। আমরাও দেখলাম মেরে- কেটে এক পুরুষের পর আবার ভাইয়ে ভাইয়ে লাগবে। দাদা বলল, সম্পান্ত নিয়ে মন কষাকাঁষ করে লাভ নেই, এক বাঁড়তে যে যার অংশ ঠিক করে ?ন। দাদা দোতলা নিল, তেতলা আমার, আর নীচে দোকান-টোকান ভাড়া আছে ।? সূরপাঁত হেসে বলল, “তোরা ভাই রাজারাজড়ার ফ্যামাল।» '্রাদব মুখভাঁঙ্গ করে বলল, “রাজা না গজা শালা । রাজাদের ট্যাকে এখন তে্তুলাবাঁচি।” একটু চুপ করে থেকে তরাদবই জিজ্ঞেস করল, “তোর তো বাবা 'ছিল না। সেই কাকা-কাঁকর খবর কী 2» "দুজনেই গত। কাক আগে। মা তো ধর্ম করতে গিয়েই স্বর্গে গেল!” তুই এতোকাল করছিলি কী? অধর্ম?” নব্রিদিব রহস্য করে বলল । প্রমথ ফিরে এল। তিন বন্ধৃতে িছুক্ষণ সাধারণ দু-চারটে কথার পর প্রমথ বলল, '"শন্রাদব তুই শিশিরাটাশিরকে ধরতে পেরোছিস 2” ঘাড় হেলালো ন্রাদব। ঘ্ধরোছি। সব বেটাকেই ধরোছ। দু-একজনকে মিস করছি। জানস সূরপাতি, একেই বলে বয়েস। আমাদের সেই হারাধনের দশাঁট ছেলের মধ্যে সাকুল্যে পাঁচ-ছ'জনের ট্রেস পাওয়া যায়, বাঁকগুলো 'মাসং। মাসং মানে শুধু বেপাত্তাই নয়, আর ভিড়তে চায় না। সেই চাচাকে তোর মনে আছে-_চারু চাটুজ্যে-আমরা বলতাম চাচা, সে এমন বিগ বস্‌, হোটেলে খানাপিনা সারে-খগ্লেনে দিল্লি মাদরাজ করে বেড়ায় তার বউ মাল টানে। এরা আর আমাদের মতন হোঁজপোঁজদের সঙ্গে মিশতে চায় না।” গ্রমথ কান চুলকোতে চুলকোতে বলল, পীন্রাদব, সুরপাঁতিকে বলাছ কল- কাতায় চলে আসতে ।৮ ৃ লে আয়-চলে আয়, ন্রিদব বলল, “চারপাশের যা অবস্থা তাতে আমরা লোনি হয়ে যাচ্ছি। ঠিক আমাদের মেজাজের মানুষ আর পাঁব না, আজকালকার ছেলেছোকরাদের দেখোঁছস-বব্‌-করা চুলে গিতে বাঁধে মাহীর, ঠোঁটে 'লপাস্টক লাগায়_» প্রমথরা হো-হো করে হেসে উঠল। 'ত্রদিব বলল, “হেসো না দাদা, এই সব ছেলের রোওয়াব দেখেছ! পাড়ার মোড়ে মোটর বাইক নিয়ে দল করে দাঁড়িয়ে থাকবে, তুমি যাঁদ চোখমুখ নামিয়ে ৭ গাড়ায় না ঢোকো তোমায় আওয়াজ মারবে। এরা সব জআ্যান্টিএস্টাবাঁলশমেল্ট। কালীপুজো, দুর্গাপুজো, সাংস্কতিক উৎসব করে বেচে আছে ।...থাকুক ওরা । আমরা যে এখন দিনে দিনে মুছে যাঁচ্ছ_তা ভাই বুঝতে পাঁর।” সুরপাঁতি বলল, “সব জায়গাতেই এই, তবু এরা ভাল, অন্য অন্য জায়গায় যা দেখা যায়__1” “যাকৃগে দেখা । আমি সোজা ব্যাপারটা বুঝে 'নিয়োছ-বাইশ থেকে পঁচিশ পযন্তি এই সব চলবে-তারপর আর চুলে ফিতে বাঁধতে হবে না, টাকে তেল ঘষতে হবে,” ত্রিদিব বলল । মীরা এল। নিজেই জলখাবার বয়ে এনেছে। ভ্রিদব বেশ উৎসাহের সঙ্গে বলল, “প্রমথকে এই জন্যেই আম বালি, তোর গৃহসুখের অন্ত নেই। কোন কোন পদার্থ আছে ভাই 2" মাঁরাকে খাবার হাতে দাঁড়য়ে থাকতে দেখে প্রমথ সেন্টার টোৌবলটা টেনে দপ্ল। মীরার মুখে ঘরোয়া হাঁস। খাবার নামিয়ে রাখল সে। প্রমথ হেসে বলল, “ন্রদিব, মীরা আজ তোর সঙ্গে লড়ে যাবে।” “কেন? আমার অপরাধ ?» ভ্রাদব মীরার দিকে তাকাল না, খাবার দেখ ছিল। “এটা কী? লম্বা লম্বা?” “খেয়ে দেখনন-_ 1" মীরা মুচকি হেসে বলল। “তা তো নিশ্চয় দেখব! কিন্তু জিনিসটা কাঁ?” প্রমথ বলল, পফশ ফিঙ্গার ।” “শফশের আবার 'ফিত্গার হল কবে।” বলে মীরার দিকে মজার চো:খ তাকাল, “তুম কি রান্নার স্কুলে এসব 'শখতে যাও নাক?” মীরা হেসে বলল, “যাই। প্রণ্ণাতকে এবার থেকে য়ে যাব।” প্রণাত 'ন্রাদবের স্ত্রীর নাম। নভ্রাদব একটা প্লেট উঠিয়ে নিষে বলল, “তাই যাও, তবু দুটো ফিঙ্গার খাওয়া যাবে।” একটা অট্রহাস্য উঠল। মীরা এবাব বলল, “ওটা ফিশ ফিঙ্গার নয়, অন্য (জানিস, খেয়ে দেখুন ।” প্রমথ সরপাঁতিকে বলল, “নে ।" সুরপাঁত মীরার দিকে তাকাল, “আমায় কাময়ে 'দিন।” প্রমথ বলল, “মানে! সকালে তো কিছ খাইনি, ভ্রাদবের জন্যে ওয়েট করাছলাম। খেয়ে ফেল।” সুরপাঁত মাথা নাড়ল। “না রে, আম পারব না।” ত্রাদব হাত বাঁড়য়ে কিছ তুলে নিল। “নে, তোর ভার লাঘব করলাম ।” মীরা বলল, “চা নিয়ে আনি ।” সকালের জলখাবার হিসেবে আয়োজন মন্দ 'ছিল না। ফে্টানো ডিমে ০৩ ভাজা পাঁউরাটর সর সরু টুকরো, ফুলকাঁপর বড়া, কড়াইশট সেদ্ধ, 'মাঁম্ট। ন্রাদব খেতে খেতে বলল, “যাই বাঁলস প্রমথ, তোর বউয়ের হাতযশ আছে। ফাইন করেছে ।» দু-পাঁচটা আরও কথার পর মীরা এল। খাবার জল আর চা এনেছে। চা তৈরী করেই এনেছে এবার। চা রেখে মীরা বসল। ন্রিদব বলল, “তুমি খাবে না?” “খাব পরে।” “চা খাও।» 'রাধা আনছে ।» সুরপাঁত একবার মীরাকে দেখল। সকালের বাসী চেহারা মীরার। পরনে ছাপা শাঁড়, গায়ে সাদা জামা, চুলের বিন্ীন আলগা, মাথার চারপাশে উড়ো- চুল, মুখ পাঁরতকার-কোনো রকম চকচকে ভাব নেই, মসৃণ চামড়ার মধ্যেও কেমন যেন দানা-দানা ভাব এসেছে- বয়েসের না শুজ্কতার বোঝা যায় না। কাল রাত থেকেই মীরা যেন নিজেকে পালটে ফেলেছে । আজ সকালেও স্‌রপাঁতি লক্ষ করেছে, মীরা তার সঙ্গে হালকা হবার চেম্টা করছে খুব। ঠাট্টা তামাশাও করাছিল। মীনা *গ্রাদবকে বলল, “আপাঁন নাক এই গরমে আমাদের সেদ্ধ কবে মারবার প্ল্যান করেছেন ? 'ন্রাদব খেতে খেতে তাকাল । “আম ক মানুষখেকো জীব, ভাই ?" “তা হলে পিকাঁনক করার ব্দাদ্ধ মাথায় এল কেন?” ভ্রদিব খাবার ব্যাপারেই মনোযোগ দিল বোশ। বলল, “একটা পিকনিক কবায় দোষ কা?” “এই গরমে 2" “কোথায় গরম! দুপুরে খানিকটা চড়া লাগে, নয়ত এমনিতে তো ভালই । মাইল্ড শীত রয়েছে। চমৎকার ওয়েদার।» মশরা মাথা নেড়ে বলল, “এ-সময়ে পিকাঁনক করে না। দুপুরে হাঁসফাঁস করতে হবে।” | মাথা নেড়ে ত্রাদব বলল, “কছ_ করতে হবে না। তুমি যত না হাঁসফাঁস করবে তার চেয়ে বেশী করবে আমার 'িন্নী, শিশিরের বউ...। তোমার চেহারা তো ভাই ফুলকো নয়।” প্রমথ হাসাছল। সুরপাঁতি মজা পাচ্ছিল, কথা বলছিল না। রাধা এসে চা দিয়ে গেল মীরাকে। মীরা বলল, “আপাঁন যাই বলুন, এতগুলো লোক যাবে_তাদের খাওয়া- ৭৪ দাওয়া ঝাঁরুঝামেলা সেটা তো মেয়েদেরই সামলাতে হবে। আমাদের দিকে কে তাকাচ্ছে ?” ন্রাদব অবাক হবার ভান করে বলল, “সে ক, আমরা! আমরা সব সময়েই তোমাদের দিকে আঁকয়ে আছ।» প্রমথ জোরে হেসে উঠল। মীরা বলল, “ঠাট্টা নয়। আমার মোটেই ইচ্ছে করছে না।” “তা কি করে হয়! খুজে খুজে সব কটাকে ধরোছি। সবাই রাজী হয়েছে।. রান্নাবান্নার জন্যে ঠাকুর 'নয়ে যাব।” মীরা চা খেতে খেতে সূরপাঁতির দিকে আড়চোখে তাকাল। চোখ 'ফাঁরয়ে নিয়ে বলল, “পলতা ছাড়া আর জায়গা নেই |” প্রমথ বলল, পন্রাদবদের পলতার বাঁড়তে আমরা এক-আধবার আগে গয়োছি। পুরনো বাগানবাঁড়। প্রচুর গাছপালা। গঙ্গার গায়ে বাঁড়। ভেরী [িসেন্ট।” রদ বলল, “বাগানবাঁড়টা এখন পোড়ো বাঁড় হয়ে পড়ে আছে। বেচে দেবার ব্যবস্থা চলাছল। প্রায় ফাইন্যাল। এখন একবার ঘরে আসা যেত।” ত্রিদিব এবার জল খেল, আবার মীরাকে বলল, “আম তোমায় বলাছ, কোনো অস্যাবধে হবে না। শাশর একটা স্টেশন ওয়াগ্রন দেবে, আসা-যাওয়ার কোনো ঝামেলা নেই। আবে, খাওয়া-দাওয়া নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছ কেন ওটা ীনমিত্ত- মান্র। আসাঁল কিছুতেই সবাইকে একসঙ্গে করা যাচ্ছে না। এই একটা সুযোগ । সবাই রাজশ হয়েছে। এর পর এ কাজে ফেসে থাকবে, ও বলবে__ বউযের শরীর খারাপ, মেয়ের পরীক্ষা । আমাদের মতন ছাপোষা মানদ্ষদেব বায়নাক্কা কম নাকি!” মীবা কোনো জবাব দিল না। সুরপাঁতি বলল, “কবে হচ্ছে 1” “বুধবার 1” মীরা মাথা নাড়ল। “বুধবার না।” “কেন ।” মরা ভ্রিদিবের চোখে চোখে তাকিয়ে অন্যাদকে মুখ ফিরিয়ে নিল। কা বলবে» একটু ভেবে 'নয়ে মীরা বলল, “হপ্তার মাঝমাধ্যখানে আবার কেন”” '্রীদব বলল, “শদনটা সকলের সুট করে গেছে । একবার পিছোলে আবার কোন বায়নাক্কা এসে জুটবে।” মরা খাঁনকটা খত খত গলায় সম্মাত দিয়ে বলল, “ক জানি; সবাই যাঁদ রাজী হয় আম মাঝের থেকে না করি কেন! আমায় তো দুষবেন।” খাওয়া হয়ে এসোছল 'ন্রাদবের। জল খেল। চায়ের কাপ টেনে নিয়ে ৯৫ বলল, “বুধবারই ফাইন্যাল।” প্রমথ চা খেতে খেতে বলল, “প্রোগ্রামটা একটু বল।” ন্রিদিব সুরপাঁতর দিকে তাকাল। “তোকে এত. খাঁতর কেউ দেখায় 'ন সরপাঁত। ভেবে দেখ, তোর জন্যে আমরা সবাই ঠ্যাং তুলে নেচে উঠাঁছ।” সুরপাঁত হেসে ফেলে বলল, “আম কে?" “তুই আমাদের সুরপাঁত। ওল্ড ফ্রেন্ড। হারাধন আ্যান্ড সনস্‌-এর বড় ছেলে। হারাধনের দশাঁট ছেলে ঘোরে পাড়াময়-একটি কোথায় হারয়ে গেল রইলো বাঁক নয়...। তুই হারিয়ে গিয়োছাল-_হঠাৎ আবার ফিরে এসোছস হারাধন প্রাপ্তি হল।” প্রমথ হো হো করে হেসে উঠল। মীরাও যেন সমস্ত কিছু ভুলে জোরে হেসে ফেলল। প্রমথর হাসি আর থামাছল না। বলল, “ন্রাদব তুই দারুণ-!” সুরপাঁতও হাসাছল। ভ্রিদব সিগারেট চাইল। “ব্যাপারটা আর 'িছুই নয়” সুরপাঁতির দিকে আকয়ে ত্রিদিব বলল, “আমরা এখনও বে*চে আছ; পুরোনো কজন বন্ধদ- বান্ধব; কিন্তু যে যার খাঁচায় বন্দী হয়ে গোছ। ইচ্ছে থাকলেও আর যোগা- যোগ হয় না, মেলামেশা করা যায় না। সেই কবে। একবার_ বছর পাঁচেক আগে সবাই মিট করোছিলাম। তখন সবাই বলোছল--প্রত্যেক বছরে একাঁদন করে আমরা কর্তা-গিন্নীরা এইভাবে একসঙ্গে বসব। ওটা মুখের কথাই হয়ে থাকল। মাঝে মাঝে চাগাড় দেয়, শেষ পর্যন্ত হয় না। এবারে সুর- পাঁতর খবর দিতেই 'শাঁশর বলল, তাহলে একাঁদন সবাইকে ডাক। তখন আমার মনে হল, একটা লাঁগয়ে দি। সুরপাঁত তুই 'নামত্তমান্র_আসলে সবাই মিলে পুরোনো দিনে ফিরে যেতে চাইছি। অবশ্য পুরোনোয় আর কত ফেরা যায়।” প্রমথ বলল, “প্রোগ্রামটা বল। আমার গিন্নীকে শোনা ।” [সগারেটে টান মেরে ত্রীদব বলল, “আমরা কোনো ছেলেপুলে নিয়ে যাচ্ছি না। ছেলেপুলে থাকলেই ট্রাবল। এক বেটা মাথা ফাটাবে, একটা গঙ্গার দকে ছুটবে, এ চেণ্চাবে_-ও কাঁদবে । তা ছাড়া গতবারেই দেখোঁছলাম-কৃষ্ণ আর তার বউ বড় লোনাঁল ফিল করে। ওদের কাচ্চাবাচ্চা নেই। আর ভাই বলতে কি, ছেলেমেয়ে থাকলে বাধো বাধো থাকতে হয়। কোথায় একট; ইয়ে করব- সেখানেও যাঁদ সামলে থাকতে হয়- ভাল লাগে না।” মীরা বলল, “সকাল থেকেই কি আপনাদের হুজুগ চলবে 2” “না, একেবারে প্রাতঃকাল থেকে নয়। আমরা জাস্ট আটটায় স্টার্ট করব। গাঁছয়ে গরাছয়ে পলতা পেশছতে ন'্টা, কি সোয়া ন'টা বাজবে-” 'ত্রাদব ৪৬ কেমন ভাবে পলতায় পেশছোনো হবে, কে কোথা থেকে উঠবে তার বিবরণ দিতে লাগল। শহনলে মনে হবে কারও অন্য কিছ করার নেই, শুধু একবার পলতা পেশীছতে পারলেই হল। প্রমথ চায়ের কাপ নামিয়ে রেখে সিগারেট ধরাল, বলল, “তোর ম্যানে- জ্ারতে আমার ভীষণ ফেইথ; বাজার-হাটের জন্যে কাকে 'িয়োছিস ? শাশিরকে ?” ত্রিদিব বলল, “আবার কাকে! বাজারের লাইনে শিশির টপ” মীরা এবার উঠব উঠব ভাবাঁছল। পলতায় যাবার ইচ্ছে তার বড় একটা [ছল না। প্রমথর বন্ধুবান্ধব বা তাদের বউদের মীরা তেমন পছন্দও করে না। তারাও মীরাকে যে পছন্দ করে তাও নয়। মীরা জানে তার কোথায় কি বদ- নাম রয়েছে। তবু সৌজন্য বা ভদ্রতার জন্যে সামাজিক সম্পকর্টা রাখতে হয়। / 'ত্রাদবের স্তীকেও মীরার ভাল লাগে না। পলতা যাবার আগ্রহ বোধ না করলেও মরা পরে ভেবে দেখেছে, সে হাতের কাছে এমন ছুতো পাচ্ছে না, বড় ছতো যাতে আপান্ত তুলতে পারে। বরং তুচ্ছ কোনো কারণ দোঁখয়ে আপত্তি তুললে বিশ্রী একটা ব্যাপার হবে। তার চেয়ে যা হচ্ছে হোক। মীরা উঠতে যাঁচ্ছল, প্রমথ বলল, “তুমি কালকের কথাটা বললে না?” তাকাল মীরা, “কী 2” “তুমি বলেছিলে-আমরা সবাই জোড় বেধে যাচ্ছি-সুরপাঁত বে-জোড়। ও কেমন করে এর মধ্যে ঢোকে?” প্রমথ মজা করে বলল। মীরা একটু যেন অপ্রস্তুত বোধ করল। '্রাদবের দিকে তাকাল, তারপর বাঁকা চোখে দেখল সুরপাঁতিকে। “নাঁত্য, এটা উচিত নয়।” ব্রাদব দৃ মূহূর্ত চুপ করে থেকে বলল. “তাতে কি হয়েছে! আমরা হন্দুর ছেলে, যা থাকে না তার নাম করে দেওয়ালে একটা টপ দলেই যথেম্ট। সরপাঁতি তুই দেওয়ালে একটা টিপ দিয়ে বেরোস।" প্রমথ হেসে উঠল। মীরা চলে যাবার জন্যে পা বাড়াচ্ছিল_হঠাৎ শুনল 'ত্রাদব বলছে, “সর- পাত তোর সেই-সেই ছি যেন একটা ব্যাপার হয়োছল-প্রেমট্রেম। তখন বলাতিস। সেটার কি হল?” মীরা ঘুরে দাঁড়য়ে তাকাল। প্রমথ সিগারেট খাচ্ছে আপন মনে। 'ন্নাদব সুরপাঁতর দকে তাঁকয়ে। সরপাঁত মৃদ্‌ হেসে বলল, পকছুই হল না।» মীরা আর দাঁড়াল না। ্রচ্ছন্ন-৭ ৯৭ বারো দুপ;রে প্রমথ কাগজ পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়োছল। কাগজটা বিছানার পায়ের দকে খানিকটা চটকানো অবস্থায় পড়ে আছে। মীরা ঘরে ঢুকে দেখল, প্রমথ বেশ পাঁরতৃপ্ত অবস্থায় ঘুমোচ্ছে। আগের বার মীরা যখন ঘরে এসেছিল, দেখেছে, প্রমথ সোজা হয়ে শুয়ে ছিল, ঘুমোচ্ছিল-কিন্তু তার শবাস-প্রশ্বাসের কোনো শব্দ হাঁচ্ছল না। এবারে এসে দেখল, প্রমথ পাশ ফিরে হাত পা ছড়িয়ে ঘুূমোচ্ছে, নাক ডাকার একটা শব্দও হচ্ছে। দরজাটা ভোঁজয়ে দিল মীরা । এমানতে দৃপুরে দরজা ভেজানোর দরকার করে না, প্রমথ বাঁড়তে থাকলেও নয়। এ-সময় বাঁড় ফাঁকা, রাধা নীচে চলে যায়, শোবার ঘরের দরজা খোলা থাকল কি থাকল না তাতে কিছুই আসে যায় না। আজ রাধা এখন নেই, কিন্তু সুরপাঁত রয়েছে। মীরা প্রথমে দরজা ভেজিয়েছিল, তারপর একটু অপেক্ষা করে 1ছটাঁকাঁন তুলে দল। জানলার দিক থেকে তেমন আলো আসছে না। সকালের পর থেকেই রোদ ঘোলাটে হয়ে গিয়েছিল; ব্লমে সেটা মেঘলা মেঘলা রঙ নিয়েছে। আকাশে কোথাও মেঘ জমেছে, বিকেল পর্যন্ত থাকবে কনা কে জানে! মেঘলা মেশানো আলো এবং জানলার পরদার জন্যে ঘর এই দুপুরে খাঁনকটা ঝাপসা দেখা- চ্ছল। মারা দরজার ছিটাঁকনি তুলে একবার জানলার কাছে দাঁড়াল_-তারপর সরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এল। এই সময়টায় মীরার বড় বেশী ঠোঁট কাটে, চড়চড় করে ঠোঁটের আগা । মাঝে মাঝেই ক্লীম দিতে হয়। হাতের আঙলেব ভগাগ্‌লোও ওই রকম অবস্থা দাঁড়ায়, খসখস করে, খাঁড় ওঠে, পাতলা পাতলা ছাল উঠে আসে। ঘামাচির মতন দানা হয় আঙুলের ডগায়। মীরা ঠোঁটে ক্লীম দল। আঙুল 'দয়ে ঘষল। তারপর খাঁনকটা ব্লীম হাতের তাল্দ্বতে 'নয়ে দুহাত ঘষতে ঘষতে বিছানায় এল। প্রমথ একটু জোরে, যেন দম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল-_ এইভাবে শবাস টেনে আবার স্বাভাবিকভাবে ঘদমোতে লাগল। বিছানায় বসে মীরা প্রথমে হাতে ক্রীম মাথা শেষ করল, করে হাত দুটো মুখের চামড়ায় ঘষে নিল। বালিশ গুছিয়ে শোবার সময় মাথার চুলগুলো খাটের মাথার দিকে সাঁরয়ে রাখল। শ্যাম্পু করা চুল এতোক্ষণে শনকিয়ে ৯৮ গিয়েছে। তবু ছড়িয়েই রাখল। শোবার সঙ্গে সঙ্গে মীরা স্থির হতে পারে না। তার কতকগুলো মেয়েলশ অভ্যেস আছেঃ কান চুলকোবে, চুঁড় নাড়াচাড়া করবে, সেফটিপিন হাতে থাকলে দাত খুটবে, একবার জামার বোতাম আলগা করবে, হাই তুলবে-এই সব। মীরা কড়ে আঙুল 'দয়ে কান চুলকোতে চুলকোতে ঈষং ছলছলে চোখে স্বামীর দকে তাকাল একবার। প্রমথ ওপাশ ফিরে শুয়ে আছে। কিছুক্ষণ নিজের শরীর নিয়ে ব্যস্ত থাকার পর মীরা অন্যাদকে পাশ ফিরল, দেওয়ালের দিকে । হাই তুলল িঠে শব্দ করে। চোখ বুজল। কয়েক নবহূর্ত পরে আবার তাকাল। দেওয়ালের দিকে ছায়া বেশ ধূসর, কোথাও কোথাও কালচে দেখাচ্ছে। প্রমথ বেশ ঘুমোচ্ছে। মীরা দুপুরের ঘুমের অভ্যেসটা অনেক দিন ধবে কাটাবার চেম্টা কবছে। শরীর যখন মোটা হয়ে যাচ্ছল তখন থেকেই। ভাত আর ঘুম দুটোই মোটা হয়ে যাবার পক্ষে যথেম্ট_এই রকম সে শুনত। দ*পধবে এক পেট ভাত খেয়ে পান চিবোতে িবোতে ঘ্াময়ে পড়ে বিকেলে হাই তুলতে তুলতে ওঠা বাঙালী মেয়েদের স্বভাব। এতেই নাক চার্ব বোড়ে যায়। কথাটা শোনাব পর থেকে মীরা ঘুমটা তাড়াবার চেষ্টা করতে লাগল। আজকাল মীরা দুপুরে বড় একটা ঘুমোতে পারে না-এক একদিন অবশ্য ঘময়ে পড়ে। না ঘুমোলে চুপ করে শুয়ে থাকে, বই পড়ে, কিংবা আরও 1কছু করে। আজ দুপুরটা গুমোট। গরম লাগছে। আকাশে মেঘ হবার জন্যই বোধ হয়। এই সময়ে এক-আধ দন বাঁষ্ট হয়, ঝোড়ো ভাব ওঠে। এ বছরে প্রচণ্ড শতের সময় একাঁদন বাঁষ্ট হয়োছল-তারপর আব জলটল হয় ন। মীরার ক্লীম মাখা হাত সামান্য ঘামছিল, বুকের কাছটাও। পাখা চালানোর সময এটা নয--নয়ত সে পাখা চালাত। এই রকম গরমে বুধবার দিন পলতা যেতে হবে ভেবে 'বিরান্তই লাগাঁছল। তার সামান্যও ইচ্ছে নেই পলতা যাবাব। তা ছাড়া তখন তার শরীরটাও ভাল থাকার কথা নয়। প্রমথদের এই হললা- ,বাঁজ তার ভাল লাগে না। আগের বারও মীরা দেখেছে, শেষ পর্যন্ত ফেরার সময় যে যতই গদগদ হোক-_সারাটা দন মেয়েরা কেমন যে যার নিজের ছেলে- মেয়ে, নিজের নিজের গল্প, নিজেদের মরাঁজ নিয়েই ব্যস্ত ছিল 'বেশী। সব- 'চয়ে বিশ্রী লেগেছিল মীরার, প্রমথর বন্ধুবান্ধবের বউরা তাকে কোনো সময়েই পছন্দ করে নি। দু-চারটে এমন কথা বলোছিল যাতে বেশ ন্ট £ [গয়োছিল মীরা । প্রণাতর চেয়েও ছন্দা ঠোঁট কাটা। প্রণাতির ওপর ওপর ভালমানাঁষ ৷ ভেতরে বশ্বানন্দা। সুলতা আর কাঁকনের তো রেষারেষ-কার বর কতবাব ৭১৪১ প্লেনে দিল্লি যায় তাই নিয়ে। হাত চটচট করাছিল বলে মীরা দুহাত আবার ঘষতে লাগল। ব্লুম আর ঘাম মিশে গেল চামড়ার তলায়। ঠিক এই সময়, আঙুলের ডগাগুলো আরও মোলায়েম করতে গিয়ে হঠাৎ মীরা নিজের হাতের দিকে তাকাল । সেই 'বশ্রী কাটা দাগটা তার নজরে পড়ল। কিছ;ক্ষণ দাগটা দেখল মীরা । খ৫াটয়ে খ৫টয়ে। আর ঠিক তখনই তার মনে হল সকাল থেকে সে যেন খাঁনকটা উসখুস করছে। কেন? মান্ষের এক একটা ধারণার কোনো মানে হয় না। কোনো কোনে কৌতূহল এমন আচমকা দেখা দেয়-যার কোনো মাথামনন্ডু নেই। ন্রিদবদের চা জলখাবার খাইয়ে মীরা যখন অন্য অন্য কাজে ব্যস্ত হল-__ ধোপাকে কাপড়-টাপড় 'দাচ্ছল তখন একবার সে হঠাং হেসেও ফেলোছিল। হেসে ফেলোছিল--ত্রীদবের মুখে সূরপাঁতির প্রেম করার কথা শূনে। সুর পাঁত প্রেম করেছিল? তারপর আবার, মীরা যখন নিজের শোবার ঘরে কিছু খুচরো কাজ সার- [ছিল-তখনও হঠাৎ ওই কথাটা মনে পড়ল। ব্রাদব ক বন্ধুর সঙ্গে ঠাটা করছিল? তামাশাঃ সুরপতি ষে প্রেম করতে না পারে তা নয়, কিন্তু কাব সঙ্গে করল? মীরা হালকা মনেই ভেবোছিল-যাঁদ বা সুরপাঁত কোনো প্রেম করেই থাকে_ সেটা ওই রকমই- ছেলেমেয়েরা যেমন করে হরদম। তেমন কিছ; নয়__হলে প্রমথ জানত। প্রমথর কাছে মীরা সুরপাতর যত কথা শুনেছে তার মধ্যে প্রেমন্্রেমের কথা তো ছিল না। স্নান করার সময়_ মীরা যখন অত্যন্ত শীতল, পাঁরচ্ছন্ন হয়ে গা মুছছে, শ্যাম্পুর গন্ধ সাবানের গন্ধ পাতলাভাবে বাথরুমের মধ্যে ছাঁড়য়ে আছে, মাথার চুল তোয়ালেতে মুছতে মুছতে মীরার আবার সুরপাতির প্রেমের কথা মনে পড়ল। আর এই সময় একটা মজার কথা- একেবারেই য্যান্তহীনভাবে তার মাথায় এল। আচ্ছা, এমন যাঁদ হয়--সুরপাতি তার বন্ধুদের কাছে হাজারবাগের সেই দোলের [দনের গল্প বলে থাকে? মানে, সুরপাঁত হয়ত বলোছিল- একটা মেয়ের সঙ্গে, আ'ম প্রেম করতে িয়েছিল:ম ভাই, 'কল্তু নিজের মাথা ফাটানো ছাড়া কছু্‌ই হল না। এতটা বাড়াবাঁড় কল্পনার কোনো অর্থ হয় না। মশরাও এই অর্থহীন কজপনাকে %।। শিক্ষণ মাথায় রাখল না। হালকা মনে াজেই মনে মনে হেসে 1চন্তাটা ডীঁড়য়ে 'দিল। উঁড়য়ে দিল. তবু পুরোপুরি উড়ে গেল না। বাথরুমের জানলার ঘষা কাচের দিকে চোখ রেখে মীরা যেন কোনো দত্ধেয় রহস্যকে খোঁজবার চেষ্টা ৯১০০ করছিল। পায়ের তলায় ঠাণ্ডা, গায়ের চামড়ায় সুগন্ধ, চোখের পাতায় আর্দুতা। দরের কোনো দৃশ্য যেন রুমাগত দূরাস্ত হয়ে যাচ্ছে। তারপর আরও দিন ঘন্টা কাটতে চলল। প্রমথ আর সূরপাঁত যখন খেতে বসৌছল--তখনও একবার সুরপাঁতির দিকে তাঁকয়ে মীরার সেই কথাটা মনে পড়োৌছল। মুখে না হলেও মনে মনে মীরা সূরপাঁতর দিকে তাঁকযয়ে হাঁসর ছলে বলোছলঃ আপনারও প্রেম ছিল; কার সঙ্গে? আর এখন, দুপুরে, স্বামীর পাশে শুয়ে মীরার হঠাৎ আবার সেই একই কথা মনে পড়ল। মনে পড়ার পর, মীরা নিজেই যেন বেশ রন্তু হল। তার হল কাঁঃ বার বার এই তুচ্ছ, বাজে কথাটা কেন তার মনে পড়ছেই এই কৌতূহল তার কেন2 একটা উড়ো চুল যাঁদ মূখে গলায় কোথাও কোনো বকমে আটকে যায় ভা হলে যে রকম অস্বাস্ত হয়, বার বার মানুষ সেটা ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করে মীরা যেন সেই রকম করছে। সরপাঁতির প্রেমের কথাটা তার কাছে এ রকম অস্বাস্তদায়ক কেন হবে 2 মীরা তার হাতের কাটা দাগটা 'নাঁবম্টভাবে দেখল। দেখে মনে করবার চেষ্টা করল, সরপাঁতিকে সে কি সাঁত্য সাঁত্যই কোনোঁদন নজর করে দেখেছে তখল2 লক্ষ করেছে? কোনোদিন কি সাধারণ আলাপও হয়োছিল £ মানুষ সমস্ত কিছু মনে রাখতে পারে না। মীরা ভেবে দেখল, হাজার- বাগের কিছু কিছ কথা যেমন তার মনে আছে-_অনেক ছুই আবার মনে নেই। যেমন, তাদের বাঁড়তে যে লোকটা কাজ করত তাকে মনে নেই, উলটো [দকের বাঁড়টার কী রঙ 'ছিল-_ফটকটা কেমন ছিল মনে পড়ে না মীরার। হাজার ভাবলেও মীরা মনে করতে পারবে না_স্টেশনের প্লাটফর্মে যেখানে অতবার বেড়াতে গিয়েছে সেখানে ক'টা গাছ ছিল? একটা কৃষ্ণচূড়ার কথাই শুধু তার মনে আছে। মীরা নিজের জীবনের, তার বাল্য থেকে আজ পযন্ত _এই পণ্মান্রশ ছাত্রশ বছরের জীবনের কত 'কি ভুলে গেছে আর হাজারবাগের কথা খধটনাট মনে রাখবে? তাই কি সম্ভব ? সরপাঁতিকে মীরা মনে করতে পারছিল না। চোখ বুজে শুয়ে থাকল। মনে মনে হাতড়াল-কিছুতেই মনে পড়ল না। অথচ মারা ভেবে দেখল, সুরত যৌদন এ বাঁড়তে এল, এবং পরের দিন সকালে কাউকে ক না জানিয়ে চলে গেল--সোঁদন সে দুপুরে হাজারিবাগের কথা ভাবছিল। কেন ভাবাছল ? মীরার মনে হল, সে ভাবনাটা স্বাভাবক 'ছিল। সুরপাতিই তাকে তার হাতের কাটাটার কথা মনে কাঁরয়ে দিয়েছিল। যাঁদ কেউ আচমকা কিছু মনে করিয়ে দেয়--যার মধ্যে জীবনের কিছ রয়ে গেছে_কোনো ঘটনা-যা দ£ঃখের _যার মধ্যে যন্ত্রণা ও গ্লাঁন জড়িয়ে রয়েছে-তবে সে ঘটনার কথা মনে না ১০১ করে উপায় কি! প্রমথ শব্দ করে *বাস নিল আবার। মীরা ঘাড় ঘ্ারয়ে একবার স্বামীকে দেখবার চেষ্টা করল। সোজা হয়ে শুয়েছে প্রমথ । ডান হাতটা মাথার ওপর তুলে 'দিয়েছে। লোকটা ঘুমোতেও পারে। মীরার বিরান্তই হল। দন দিন যত বেঢপ চেহারা করছে-ততই তার ঘুম বাড়ছে। সাত্য, প্রমথ কি কোনোদন আয়নায় তার চেহারা দেখে বুঝতে পারে না-এইভাবে ফুলতে শুরু করলে আর দু'চার বছর পরে একটা গোলগাল মাড়োয়ারী-মার্কা চেহারা হবে তার। আসলে প্রমথ দিন দিন কেমন ভাঁড়ের মতন হয়ে যাচ্ছে। খাওয়া-দাওয়া, আঁফস ঘুম. বউ নিয়ে বাজে আঁদখ্যেতা ছাড়া কিছু জানে না। এক ধরনের শোথল্য নেমে এসেছে তার শরার-স্বাস্থ্য, মনে। মীরার এক এক সময় সাঁত্যই মনে হয়, এই লোকটার সঙ্গে তার বিয়ের কোনো মানে হয় না। হয়ত 'বিয়েটাও হতও না_যাঁদ বাবা বেচে থাকত, যাঁদ বাবা মারা যাবার পর সংসারে হাজার রকম ঝঞ্ধাট না জূটত। বাবা মারা গিয়ে সংসারে এমন বেনো জল ঢুকে পড়ল যে, মা কিছুই সামলাতে পারাছল না। মাথার ওপর তেমন কোনো যোগ্য আঁভভাবকও ছিল না। যার ফলে তখন মার কাছাকাছি যে সব কাছাকাঁছ সম্পকেরি আত্মীয়স্বজন-বাবার বন্ধুবান্ধব ছিল--তারা যা বলল-মা তাতেই রাজী হয়ে গেল। বাদাঁবচার করলো না। প্রমথ কোনো দিক থেকেই মীরার স্বামী হবার উপয্ন্ত নয়। প্রমথ তার চাওয়ার বেশী পেয়ে গিয়েছে। কিন্তু মীরা যা পেয়েছে তা তার পছন্দের অনেক নীচে। মীরার হঠাৎ কেমন মাথা গরম হয়ে গেল। কে চেয়েছিল প্রমথকে বিয়ে করতে ? মীরা চায় নি। তার পছন্দ জেনে কেউ তার বয়েও দেয় ন। হাতের কাছে প্রমথ জুটে গিয়োছিল-_পান্র হিসেবে তার গুণ বলতে মোটামুটি একটা ভাল চাকরি বই আর কোনো জলস নেই; বনেদিআনা নেই, তীশক্ষতা বলো, ব্যত্তত্ব বলো_কিছু নেই । পুরুষমানুষ কেমন হবে মীরা বলতে চায় না কিন্তু বুঝতে পারে প্রমথ ডালভাতের মতন সাদামাটা । অবশ্য, মীরা প্রমথর সাদামাটা সরল স্বভাবকে নিন্দে করছে না। কিন্তু কোনো মানুষ যাঁদ হাবা, গোবা সাদামাটা হয়_তাকেই ভালবাসতে হবে এমন কোনো কথা আছে? যাঁদ তাই হত তবে হাবাগোবারাই মেয়েদের একমাত্র কাম্য পুরুষ হত। শুয়ে থাকতে ভাল লাগাছল না মরার। বড় গুমোট লার্গাছল। চার- দিক কেমন ভেপসে যাচ্ছে। কে জানে আজ ঝড় বৃষ্টি হবে কিনা! যাঁদ হয় হোক। আবার একট; ঠাণ্ডা পড়ুক। মীরা যেন মনে মনে কোনো রকম আরাম চাইছিল। এই গৃমোট আর তার ভাল লাগছে না। শেষ পর্যন্ত মীরা বিছানায় উঠে বসল। প্রমথ তখনও ঘুমোচ্ছে। পুরু ৯০২ পুরু ঠোঁট ফাঁক হয়ে রয়েছে, পান খেয়েছিল প্রমথ- ঠোঁট আর দাঁতে পানের লালঠে ছোপ শুকিয়ে খয়েরী দেখাচ্ছে । মোটা মোটা দুটো হাত এখন পেটের ওপর। লোমে ভার্ত। আঙাটর পাথরটা মাছের 'পাত্তর মতন দেখাচ্ছিল । মীরা বিছানা থেকে নেমে পড়ল। রান্নে আবার সেই বিছানাতেই শুয়ে মীরা স্বামীকে বলল, “আমার যাঁদ শরীর ভাল না থাকে আমি 'কন্তু পলতা যেতে পারব না।” প্রমথ দুপুরে যথেষ্ট ঘুমিয়েছিল। এত তাড়াতাঁড় তার ঘুমিয়ে পড়াব কথা নয়। মীরা সবেই বিছানায় এসে শুয়েছে। প্রমথ বলল, “শরীর খারাপ হবে কেন?" বলেই তার কিছ খেয়াল হল, আবার বলল. “তোমার ব্যাপারটা আমি বাঁঝ না। একবার যাঁদ মাথায় কিছু ঢুকলো-কার বাবার সাধ্য তোমায় বোঝায়।» মীরা বলল, “তোমার এই নাচানাঁচও আমার মাথায় আসে না। এখন পলতায় গিয়ে হইচই করার কী আছে ১” “কী আবার থাকবে_ আমরা ক পলতা থেকে গঙ্গা জল আনতে যাচ্ছি? এমন অদ্ভূত অদ্ভুত কথা বলো তুমি! হাজার বাব শুনছ, পুরোনো বন্ধ বান্ধব মিলে একবেলা গালগল্প মজা করতে যাচ্ছি-তবু সেই এক কথা ।” মীরা মাথা গরম করল না। সে ঠিক করে 'নয়েছিল--প্রমথর সঙ্গে আজ ঝগড়াঝাট, রাগারাগি করবে না। স্বামী চটে যাচ্ছে দেখে মীরা প্রথমে একটু চুপ করে থাকল । তারপর বলল, “তোমার মতন বোকা আর আঁম দোখ নি” ". “কেন?” “আগের বারের কথা ভেবে দেখো । তোমার বন্ধুর বউরা আগাগোড়া যে যার কোলে ঝোল টানতে ব্যস্ত থাকল। ছন্দার কী রাগ ।” প্রমথ বলল, “ও রকম এস্ট আধটু হয়। মেয়েরা কবে রাগারাগি করল তা নিও কেউ মাথা ঘামায় না। তুমি মন্দটা দেখছ ভালটা দেখছ না। আমরা সবাই খুব এনজয় করেছিলাম ।” , “আম কার ন।” “কেন ০ প্রমথ স্তীর দিকে তাকাল। “তা কিন্তু তখন মনে হয়নি।” “তোমার তো হবে না। তুমি কোন্‌ দিন চোখ চেয়ে দেখতে শিখলে ৮” প্রমথ কেমন ধাঁধায় পড়ল। বলল, “কেন, কা হয়োছিল”” মীবা পুরোনো কথায় গেল না। খানিকটা যেন আভমানের গলায় বলল, “তোমার বন্ধুর বউরা আমায় পছন্দ করে না। তারা আমায় কী বলে জানো না?» প্রমথ চুপ করে থাকল। মীীরাকে 'িয়ে বাইরে কিছ ক; দুর্নাম আছে। ৯০৩ সে সব দ্ুর্নামের কথা ভাবতে বসলে নিশ্চয় খারাপ লাগবে । বিশেষ করে_ যখন মীরার পরুষঘে'ষা স্বভাবের কথা কানে যায়। প্রমথ স্তীর এ-ব্যাপারটা জানে। কখনও কখনও দাঁজিংয়ের সেই জামাইবাবুর ব্যাপারে প্রমথ রাঁতি- মত ক্ষণ হয়েছে। হয়ে দেখেছে- অশান্তি ছাড়া সংসারে আর কিছ হয়নি। কিন্তু কোথায় কে কী বলল তা নিয়ে মাথা ঘামাতে বসলে সংসারে বাঁচ যায় না। প্রমথ বলল, “কাকে কান নিয়ে গেল শুনে তুমি কাকের পেছনে ছুটবে নাক! আসলে তোমায় ওরা হংসে করে।» “তাই বা কেন করবে ?% “বাঃ, তুমি দেখতে ভাল। সন্দরী। এই বয়েসেও তোমার এমন খাসা চেহারা । তোমার মেয়ে দাজাীলঙে পড়ে। ছেলেকে তোমার মা মানুষ করছে। হাঁড়কুড়ি সংসার সামলাতে সামলাতে তোমার হাঁড়র হাল হচ্ছে না। তা ছাড়া তোমার কোনো দায়দায়ত্ব নেই। অন্যরা হাজার রকম ঝঞ্জাট সামলে মরছে। তোমায় হিংসে করবে না। আম যাঁদ মেয়ে হতাম, আমও করতাম 1" মরা এই প্রসঙ্গটা আর বাড়াতে চাইল না। বাড়াতে গেলে এমন সব কথা উঠবে_যা একেবারেই নোঙরা। অন্ধকারে ছাদের দিকে চেয়ে চেয়ে মীরা খানিকক্ষণ শুয়ে থাকল। তারপব স্বামীর দিকে পাশ ফিরল। হাত ছাঁড়য়ে দল। বলল. “আমি মাঝে মাঝে কী ভাব জানো?» প্রমথ গায়ের ওপর স্তীর হাত অনুভব করতে করতে বলল, “কী ভাব 2" “ভাব তোমার মতন মানুষের বিয়ে করা উচিত ছিল না। বন্ধুবান্ধব নিয়ে থাকলেই পারতে 1” প্রমথ প্রথমে কথা বলল না। তারপর হালকা গলায় বলল, “তুম আমাব জীবনের কতটুকু আর জান? আজ দু পায়ে খাড়া হয়ে গিয়োছ-_নিজেকে তালেবর মনে করতে পারি। কিন্তু আমার_ এই কলকাতাতেই-কলেজে পড়ার সময় এমন দন গেছে যখন বন্ধুরা যা না আমায় সবাই মলে দেখত, আমি মরে যেতাম। আমার খাওয়া পরা থাকা-সবই ওই বন্ধুদের দয়ায় হয়েছে। তুমি জানো, ওই সুরপাঁতি আমার পরীক্ষার ফিজ জমা দিয়েছে, আমার যখন, একবার টাইফয়েড হল-_সুরপতি আমায় হাসপাতালে ভার্ত করে রোজ দেখা- শোনা করত। কৃতজ্ঞতা বলে একটা 'জানস আছে. মীরা । আমার আছে। কৃতজ্ঞতা ছাড়াও বন্ধ্দের জন্যে আমার ভালবাসা আছে। ওরা আমায় সে যাই বলূক, যা খুশি মনে করুক-আ'ম ওদের ভালবাস ।” মীরা স্বামীর গলার স্বরে ছেলেমানুষির আবেগ অনুভব করল। যেন আদরই করছে- এমনভাবে স্বামীর গায়ে হাত বুলোতে বুলোতে বলল, “তোমার সুরপাতির গঞ্গ তো অনেক শুনলাম। কিন্তু ওই কথাটা তো ১০৪ বললে না।” “কন 2, পত্রাদববাব যা বলাছলেন ?” “কী বলাছল?” “বারে, শুনলে না। ীত্রদিববাব বলছিলেন না যে, তোমার সূরপাঁতি কোথায় প্রেম করত?" প্রমথ একটু ভাবল। তারপর হেসে ফেলে বলল. “দর-ন্রাদিব ঠাট্টা কর ছিল। কলেজে পড়ার সময় আমরা তখন ইয়াং। পাড়ার ছাদে একটা মেয়েকে দন দেখলেই আমরা তাকে লাভার বাঁনয়ে ফেলতুম। হাঁস তামাশা আর কি! প্রেম করত অমল ।” “তুমি করতে না তো” মীরা স্বামীব গায়ে চিমাট কাটল আস্তে করে। “পাগল। আমার সংত্গ প্রেম করতে কাব বয়ে গেছে।” “যাক রক্ষে।” প্রমথ স্বীর দিকে পাশ 'ফিবে হাতটা বাঁড়য়ে দিল। রলেও আমার আপাত্ত ছিল না-” মীরা হেসে বলল, “সবাই তো করে। না বুঝেই” “ওটা প্রেম নয়।” “নয়?” “ছেলেমান্ষাঁ! কত বন্ধূকেই তো দেখলাম--।” “আবার এক আধজন অন্যরকমও হয়।» “তা হয়। আমার এসব মাথায় তেমন ঢোকে না।” মীরা ঠোঁটের ডগায় দাঁত চেপে থাকল। তারপর বলল, “আম মনে কবে ছিলাম, কে জানে তোমার সুরপাঁতি হয়তো সেই প্রেমেব জন্যে ঘর সংসারই করল না। বিষে করেও বউয়ের সঙ্গে থাকল না।” প্রমথ সামান্য চুপ করে থেকে বলল, "ীনজেব ব্যাপার-মানে এই দশ পনেরো বছরের প্রাইভেট লাইফ সম্পর্কে সুরপাঁতি কিছু বলে না। একেবাবে সাইলেন্ট। তবে_ওই যে প্রেমের কথাটা ন্রিদিব বলছিল-আমার সেটা মনেও নেই। শুধ্‌ মনে আছে-_-বাইরে কোথায় যেন একটা মেয়েকে সে কী চোখেই যেন দেখোঁছল। একবার দোলের দিন মেয়েটার গায়ে রঙ দয়ৌছল- এ রকম একটা গল্প বলত। ঠাট্রাই করত বোধ হয়। সুরপতি তখন কিন্তু দেখতে বেশ ছিল। টানা টানা চোখ, ঝাঁকড়া চুল, ভীষণ মোলায়েম মুখ। শালাকে কাঁব কাব দেখাত. .1৮ মীরা স্বামীর গায়ের ওপর তার হাতটা ফেলে রাখল। কিন্তু সমস্ত হাত যেন হঠাৎ অসাড় হয়ে আসছিল। ১০৫ তেরো মীরার ঘুম ভেঙে গেল। ভাঙা ঘুম জোড়া দেবার জন্যে সে কিছুক্ষণ ছে'ড়াছে'ড়া তন্দ্রার মধ্যে শুয়ে থাকল, স্থির হয়েই, যেন যে কোনো মৃহূর্তে আবার ঘুমিয়ে পড়বে । শুয়ে থাকলেও ঘোলাটে চেতনা আর নাবড় হয়ে আসছিল না। বরং মীরা অনুভব করাছল-_সে ক্রমশই জেগে উঠছে। এ-সব সময় শারীরিক অস্বাস্ত বোধ করে উঠে পড়া প্রায় অভ্যাসের মতর্ন হয়ে পড়েছে। মীরা উঠে পড়ল। মশার তুলে মাটিতে পা নামাল। শত রয়েছে। চাদর নিল না মীরা। অগোছালা আঁচল গায়ে জাঁড়যে বাঁত জবালল। সমস্ত ঘরটা যেন ঘূম এবং ঠান্ডার মধ্যে ডুবে রয়েছে। ছিটাকিনি খুলে বাইরে আসতেই শীতের ঝাপটা গায়ে লাগল। ভোর হয়ানি। হয়ে আসছে। রান্রের শেষ অন্ধকারের মধ্যে ভোরের পাতলা ফরসা ভাব মেশানো। মীরা শীত সামলাতে সামলাতে বাথরুমে চলে গেল। বাথরুম থেকে ফেরার সময় মীরা আর একবার চারপাশে তাকাল। এই ঘোলাটে ভোরে সবই ঝাপসা অস্পম্ট করে চোখে পড়ে। এখনও কোথাও একটা কাক ডাকছে না; সবই 'নঃসাড়; শুধু ভোরের কনকনে ঠান্ডা সর্বাঙ্গ কাম্পত করাছল। হঠাৎ মীরার নজরে পড়ল, সুরপাঁতর ঘরের দরজা খোলা । থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল সে, ঘাড় 'ফরিয়ে ভাল করে তাকাল। দরজা পুরোপুরি খোলা নয়, একটা পাট খুলে আছে খানিকটা, ঘরে বাতি জবলছে না। মীরা কিছু বুঝতে পারল না। মুহূর্তের জন্যে তার বকের মধ্যে চমক লাগল । সুরপাঁতির ঘরের দরজা খোলা কেন? সে কি জেগে উঠেছে? আবার কি পালিয়ে গেল নাঁকঃ এখনও ভাল করে ভোর হল না, কাক ডাকল না, কোথাও কোনো সাড়াশব্দ নেই_এ-সময় কোথায় যাবে সুরপাঁত! মীরার, [বশবাস হচ্ছিল না, আবার সন্দেহও জাগাঁছল। নিজের ঘরের দিকে না 'গয়ে সে সুরপাঁতির ঘরের দিকেই পা বাড়াল। খোলা দরজা "দিয়ে মুখ বাড়াল মীরা। ঘরের মধ্যে রান্রের অন্ধকার এখনও এমন করে জমে আছে যে মশাঁরর মধ্যে কিছ দেখা যায় না। তবু চোখে পড়ল, সরপাঁত বিছানায় শুয়ে আছে। ফিরে আসার জন্যে ঘুরে দাঁড়াতে গিয়েও মীরার মনে হল. মানুষটা সাত্য সাঁত্য বিছানায় আছে কি না দেখে যাই। কখনও কখনও ঘুমের চোখে বড় ১০৬ ভুল হয়। যেন নিাশ্চন্ত হবার জন্যে 'নঃশব্দে মীরা ঘরে! ঢুকল, বাতি জবালতে গিয়েও জবালাল না. মশারর পাশে এসে দাঁড়াল। সরপাঁত ঘুমোচ্ছে। বুক পর্যন্ত কম্বল ঢাকা, ছাদমূখো হয়ে শুয়ে আছে। স্বস্তির মতন নিঃ*বাস ফেলে মীরা সরে এল। আর দাঁড়াল না। শীত করছে। এই অসাড়, শান্ত প্রত্যষের কোনো গভীর থেকে যেন কেমন এক বিস্ময় ও দ্বিধা জেগে উঠাঁছল। বেদনাও। ঘরে এসে মীরা বাতি নেবাল। শীতে তার গায়ে কাঁটা ফুটছে । বিছানাষ ফিরে এসে হালকা লেপটা গলা পর্যন্ত টেনে নিল। শীতের কাঁপন এবং গায়ের কাঁটা মিলিয়ে যাবার পর মীরা চোখ বুজে শুয়ে থাকতে থাকতে আবার ঘুমিয়ে পড়ার চেষ্টা করল। ঘুম আসাছল না। সূরপাঁতির ঘরের দরজা কেন খোলা ছিল মীরা কিছুতেই বুঝতে পারাঁছল না। সুরপাতি কি কিছুক্ষণ আগে ঘুম ভেঙে জেগে উঠে বাইরে এসোছল : 'ফয়ে [গিয়ে শুয়ে পড়ার সময় দরজা বন্ধ করতে ভুলে গেছে; ও কি বিছানায় এখনও চুপ করে শুয়ে আছে* ঘুমের ভান করেই দেখল, মীবা তার ঘবে এসেছিল ? সাঁত্যই এ বড় আশ্চর্যের! একটা লোক দরজা খুলে কেমন করে ঘ.মোয় এ কি সরপাঁতির অভ্যাস না ভুল? এর আগে আর দু-একাঁদন,. সুরপাঁত এ- বাঁড়তে থাকার সময়, মীরা কিছু লক্ষ করেনি। করোনি কারণ সে এভাবে জেগে ওঠোন, বাইরেও আসোন। যাঁদ বা জেগে থাকে, মীরার খেয়াল আসছে না, সে সুরপাঁতির ঘর লক্ষ করেছে কিনা! করার কারণ ছিল না। হয়ত এই- ভাবেই মানূষটা শুয়ে থাকে । দরজা খুলেই। হতে পারে এ তর অভাস। কিংবা এমনও হতে পারে-সূরপাঁত দরজাটা খুলেই রেখেছে, বরাবর খুলেই রাখে। কিন্তু কেন? সুরপাঁত কেন তার শোবার ঘরের দরজা খুলে রাখে ভাবতে গয়ে মীরার সন্দেহ হল, সুরপাঁতি কি তাকে প্রত্যাশা করে ীনতা এই প্রত্যাশা করে যাচ্ছে? মীরার প্রত্যাশা; সে কি জেগেও থাকে 2 মরা বড় করে *বাস ফেলার সময় মুখ হাঁ করল; সার। রাতের কোনো গন্ধ যেন শ্বাসের বাতাসের সঙ্গে তার নাকে লাগল ফিকে ভাবে। আর আচমকা__খুবই আচমকা- হারানো কোনো জিনিস-যা মনে মনে খজেও মীরা পাঁচ্ছল না, না পেয়ে অস্বাঁস্ত বোধ করাছল--সেই জিনিসটা পেয়ে গেল। মীরার মনে পড়ে গেল, সে স্বগন দেখাঁছল, দেখতে দেখতে স্বপ্নটা ভীতিকর হয়ে ওঠায় তার ঘুম ভেঙে গিয়েছিল । স্বপ্নটা মীরা এতোক্ষণে মনে করতে পারল। প্রথমে এলোমেলো, খাপ- ছাড়াভাবে কিছ কিছু মনে এলেও সেই বিশৃঙ্খল ছবিগুলো পরে মোটামুটি ৯০৭ গুছিয়ে আসছিল। মীরাও যেন প্রাণপণে সেটা গোছাবার চেম্টা করছিল। মীরা দেখলঃ সে কোথাও কোনো সিমেন্ট বাঁধানো উ্ডু বেদীতে বসে আছে। সামান্য তফাতে একটা কুয়ো, আশেপাশে বাগান। চারাঁদকে তাকাতেই 7স বুঝতে পারল, হাজারিবাগের সেই আশ্রমের বাগানে সে বসে আছে। ঠাকুরের মান্দর আন্র তার মস্ত পরিচ্ছন্ন চাতালও চোখে পড়ল মীরার। হঠাৎ বাতাসে কিছু উড়ে এসে চোখে পড়ল, ধুলোবালি কিংবা আর-কিছু। মীরা চোখ বন্ধ করে শাঁড়র আঁচল দিয়ে চোখ পাঁর্কার করাছল_ এমন সময় সরপাঁত কাছে এসে দাঁড়াল। এ সুরপাঁত-কী আশ্চর্য, তার অচেনা নয়, বরং বড় বেশী পাঁরচিত। মশরা চোখে দেখতে পাচ্ছিল না, কিন্তু সুরপাঁতিকে বুঝতে পারাছল। সৃরপাঁত বলল, জল দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলতে । মীরা উঠল। কুয়োর কাছে এসে সুরপাঁতি জল তুলে দল, মীরা জলের ঝাপটা 'দয়ে চোখ পার্কার করল। সারা মুখ িদ্জে গেল। আঁচলে মুখ মুছে মীরা যখন তাকাল--তখনও তার চোখের পাতা ভিজে রয়েছে। কান্না সদ্য সদ্য শুকিষে আসার পর যেমন লাগে সেই রকম লাগছিল। মীরা সুরপাঁতর 'দকে তাকাল। হাসল। দুজনে কুয়োতলা ছেড়ে বাগানের পিছন দিকে চলে গেল। গাছ- শীছালর তলায় ছায়া জমে আছে। কিছু শুকনো পাতা একপাশে জড় করা । গাছতলায় পাথরের বড় বড় টুকরো পড়েছিল। মীরা বসল । সুরপাঁত মাঁটিতে। একটা পাখি পাতাঝোপের মাথার ওপর একদণ্ড্র বসে হঠাৎ সেই শুকনো পাতার স্তৃপের মধ্যে ঝাঁপ খেল। পাখিটাকে আর দেখা গেল না। মীরা খুব অবাক. স্‌রপাঁতও। দুজনে তাড়াতাঁড় জমানো শুকনো পাতাগুলোকে সাঁরযে দেবার পর দেখল, পাঁখটা আবার উড়ে গেল। দর জনে হাসতে লাগল।.. ঠিক এর পরই মণরা দেখল, সে স্টেশনের প্লাটফর্মে বসে আছে মাথা বাঁচয়ে, ব্টি পড়ছে । একটা ট্রেন আসাছল। মীরা ঘন ঘন ওভারব্রিজের দক তাকাচ্ছে, কিছু লোকজন 'সিশঁড় দিয়ে নেমে আসছে, মাথায় ছাতা, হাতে বোঁচকাবনূচাঁক। মশরা বড় আঁস্থর হয়ে পড়াছিল। ট্রেনটা এল, দাঁড়াল। আবার চলে গেল। গাঁড় চলে যাবার পর মীরা দেখল, সুরপাঁত ওভারাব্রজের সণড় দিয়ে নেমে আসছে । সুরপাঁত কাছে আসতেই মরা মুখ ঘুরিয়ে নিল। ?নরে বাঁষ্টর মধ্যে সোজা হেটে অন্য দিকে চলে গেল ।...এর পর- মারা ঠাওর করতে পারল না, কোথায় ব্যাপারটা ঘটেছে-_কিন্তু দেখল সুরপাঁত কোনো বাঁড়র বাগানের মধ্যে দাঁড়য়ে আছে। চারপাশে একটা আনন্দের হই-হল্লা, কতক- গৃলো ছেলে নেচে নেচে খোল বাজাচ্ছে, হঠাৎ ফাগ উড়তে লাগল, িচাঁকারর রঙ ছিটিয়ে পড়তে লাগল। সূরপাঁত হাসতে হাসতে মীরার দকে এগয়ে আরসছিল। মরার গায়ে কে রঙ মারল, আবির ছঃড়ল। মারা তার জামার মধ্যে থেকে আবর বের করে সুরপাঁতর মাথায় মাঁখয়ে দিল। তার পরই ৯০৮ দেখল-_সুরপাঁতর মাথা চুইয়ে, কান, কপাল গাঁড়য়ে রস্ত পড়ছে। মুখ, গলা, ঘাড় বেয়ে রন্তু পড়তে পড়তে জামা ভিজে গেল সূরপাঁতির। মীরা এত রক্ত দেখোঁন, সে দিশেহারা হয়ে, ভয় পেয়ে সুরপাঁতিকে কুয়োতলায় নিয়ে যেতে ঢাইছিল, জল ঢেলে দেবে মাথায়। সুরপাঁত ততক্ষণে দু হাতে মুখ ঢেকে মাঢতে বসে পড়েছে। স্বপ্নটা এইখানে ভেঙে গিয়েছিল। মীরা তখন এতই ভীতাত যে দিশেহারা হয়ে ছুটে পালিয়ে যাবার সময় তার ঘুম ভেঙে গেল। স্বপ্নের ভীত তখনও তাকে আঁধকার করে আছে। কয়েক মুহূর্ত পরে মীরা তার জাগরণের মধ্যে অনুভব করল, সরপাঁতি বাস্তাঁবকই রন্তপাতে মরে যাচ্ছে না, সে অন্যত্র শুয়ে আছে--ঘুমোচ্ছে। মীরা দুঃস্বপ্ন দেখাছল। স্বাস্তর নিঃ*বাস ফেলে সে আবার ঘুমোবার চেম্টা করাছল। কন্তু ঘুম এল না। মীরা এই স্বপ্নকে এবার মনে করতে পারল। মনে কবে খুশী হল ন।। ভোর রান্রের এই দুঃস্বপ্ন তাকে কি-এক বেদনা এবং অস্বাস্তে শ্রিয়মাণ করে রাখল। আরও একট পরে প্রথম কাকেব ডাক শুনল মীরা । ভোর হয়ে এল। [বিছানায় সামান্য সময় শুয়ে থেকে মীরা উঠে পড়ল । ঘরের মধ্যে এখনও তেমন কবে কিছু বোঝা যাচ্ছে না। এবার একটা চাদর নিল: গায়ে জাঁড়য়ে বাইরে এল। একেবারে সাদা সকাল। বৃন্টির জলের মতন সাদা । কাক, চড়ুই জেগে উঠেছে। কনকনে ভাবটা মূখে নাকে লাগাঁছল। মীরা এই সকালটাকে হঠাং যেন নতুন করে কাছে পেল। মাথায় কানে চাদর আাঁড়য়ে খাবারের টোঁবলের সামনে এসে বসল। সূরপাঁতির ঘর এখান থেকে দেখা যায়। মীরা দেখল। দরজা সেইভাবে খোলা রয়েছে। স্বপ্নের 'ছন্নাবাচ্ছন্ন দশ্য ভেসে গেল আবার। কেন এই স্বপ্ন দেখল গীরা-সে জানে না। কখনও কখনও এই স্বপ্নের কোথাও কোথাও কিছু [হিল যা মীরাব ভাল লাগাঁছল, আবার কোথাও কোথাও বড় দুঃখ ছিল। মীরা মাপাতত স্বপ্নটা ভূলে যাবার চেষ্টা করাছিল। এ-রকম স্বপ্ন মানুষ কেন দেখে। কোনো ছুই এর সত্য নয়। সুরপাঁতির সত্গে কোনো ঘাঁনম্ঠতাই মীরার হয় ন। কোনো শত্রুতার সম্পর্কও ছিল না। ফরসা আরও যেন ঝকঝকে হয়ে উঠছে। রাস্তায় দু-চারটে গলা শোনা যায়। ভোরের বাতাস বুনো ফুলের মতন গন্ধ বয়ে আনাছল। টেবিলে কনুই রেখে গালে হাত দিয়ে বসে থাকল মীরা । নিজের জীবনের কথা মীরা ভাবতে চাইছিল না, তবু খাপছাড়াভাবে তার [ছু কিছ মনে পড়াছল। আজ যেখানে সে পেশছে গিয়েছে এখান থেকে ১০৯ ফিরে যাবার উপায় নেই । এখন সে প্রমথর বউ। প্রমথর বউ হয়ে তার কোন্‌ সুখশান্তি জুটেছে মীরা জানে না। তার দুটি সন্তান। রুমাক িংবা ঝল্ট;র জন্যে মীরার আলাদা কোনো আকর্ষণ নেই, যেন মেয়েছেলে হিসেবে সে দুবার গভধারণ করোছিল, অনেকটা নিয়ম মতন, অনেকটা অভ্যাসবশে; এই সংসারে দট সন্তানের জল্মদান ছাড়া সে বিশেষ কিছু করেনি। .লালন-পালন মা করেছে। রূমাঁক কাছে নেই, মেয়ের সঙ্গে মীরার সম্পক্টা দায়ের মতন, মেয়েকে মানুষ করার জন্যে মাসে মাসে টাকা পাঠানো, আর হপ্তায় হপ্তায় চিঠি লেখা ছাড়া আর ছু করার নেই। রুমাঁক কলকাতায় এলে মীরাকে অনেক সময় ৩টস্থ থাকতে হয়। কলকাতা তার ভাল লাগে না, মার ওপর মৈরের টান নেই। মীরা বেশ বুঝতে পারে, আরও দু-চার বছর পরে রাম মার কোনো রকম তোয়ান্কা করবে না। র্ামর 'নজের মধ্যে এমন একটা স্বভাব গড়ে উঠছে যাতে মীরার সঙ্গে কোনো বন্ধন সে চাইবে না। ঝন্টু যে শেষ পর্ন্তি কী হয়ে উঠবে তাও মীরা জানে না। ছেলেপুলে থাকা ভাল ক মন্দ তা ?নয়ে এখন আর মঈরার মাথা ঘামাবার কিছু নেই। তার তো রয়েছে। মীরা মোটেই মনে করে না, ছেলেপুলেকে [নয়ে জাঁড়িয়ে-জাপটে থাকলেই তার জাঁবনের সমস্ত সাধ-আশা মিটে যাবে। সাধ-আশা বলে মীরার ছু ছিল ক ছিল না-সে কথা আলাদা। তবে এই যে জাঁবন- প্রমথর বউ হওয়া, রুমি আর ঝন্টুর মা হওয়া-এতে মীরার সাধ-আশা মেটোন। নিজের এই 'বরান্ততে মীরা তেমন খুশী হল না। ভোরবেলায় কেন যে এ-সব চন্তা করছে তাও বুঝল না। প্রমথ আঁফস চলে গিয়েছে। রাধাকে বাজারে পাঠিয়ে মীরা সুরপাতির ঘরে এল। চিঠি লখাঁছল সুরপাতি, কলম সাঁরয়ে রেখে মুখ তুলে তাকাল। মীরা বসল না। সুরপাতর দিকে একবার তাকিয়ে জানলার রোদ দেখতে দেখতে বলল, “চা খাবেন?” “হলে হয়-” সুরপাঁতি বলল, "কটা বাজল ?” “সাড়ে নটা বোধ হয়।” মঈরা ঘরের রোদ-আলো ভরা ঝকঝকে চেহারাটা দেখতে লাগল। চায়ের জল সে বাঁসয়ে এসেছে। প্রমথ আঁফিস চলে যাবার পর মীরার নিজেরই অভে)স চা খাওয়া-সকালের দেড় দূ ঘন্টা ব্যস্ততায় কাটে। স্বামী আঁফস চলে যাবার পর হঠাৎ যেন সব হালকা লাগে। তখন আলস্য করে কিছরক্ষণ বসে থাকতে, নিজের মতন করে একা বসে বসে চা খেতে ভালই লাগে মীরার। ১১৯০ “আপনার ?কিছু কাচাকুচি করার রয়েছে?» মীরা জিজ্ঞেস করল। “না, “থাকলে 'দয়ে দেবেন। রাধা একট. বাজার গয়েছে। ফিরে এসে কাচতে বসবে।” সুরপাঁত কিছু বলল না। মীরাও আর ঘরে দাঁড়য়ে থাকল না। একটা কথা বাল বাল করেও বলঠে পারল না সে। অথচ সকাল থেকেই ভাবছে, বলব। বলতে গিয়েও 'ি মনে করে বলতে পারোন। দু কাপ চা তৈরী করে ঘরে ঢুকে মীরা দেখল সরপাতর চিঠি লেখা শেষ হয়ে গেছে। চায়ের কাপ বাঁড়য়ে দিয়ে মীরা বলল, “কাল ক আপাঁন দরজা বন্ধ করতে ভুলে রঃ আকাল সুরপতি। মাথা নাড়ল। “না ।” “না”” মীরা অবাক চোখ করে সুরপাঁতিকে দেখাছল। “না ক_আম যে সকালবেলায় দেখলাম আপনার ঘরের দরজা খোলা ।” সুরপাঁত হাঁসির চোখে তআকাল। “আম দরজা বন্ধ করে শুই 'নি। ভেজানো ছিল। হয়ত বাতাসে খুলে গিয়োছিল।" মীরা ক বলবে বুঝতে পারল না। বিচিত্র মানুষ তো, দবজা খুলে শুয়ে থাকে। একটু পরে বলল, “আশ্চর্য !? কেন?” 'দবতা খুলে লোকে রাত্রে শুয়ে থাকে শাানান। .আমাব তো শয়ই হযে [গয়েছিল,ভাবলাম, আবার বুঝি পালালেন!” মীরা শেষের দিকে কৌতুকেব গলা করে বলল। সঃরপ্মৃত চা খেতে খেতে বলল, “না বলে আর পালাব না। আপনাদের দশ্চন্তা বাঁড়য়ে একবার বড় অপরাধী হয়োছি।” মীরা বিছানাব দিকে সরে গিয়ে বসল তার দাঁন্ট চণ্চল, চোখের তলা বড বেশী ব্যাকুলতা রয়েছে । সুরপাঁতিকে মীরা কিছু বুঝতে 'দতে চায় না। .. যেন নিছকই স্বাভাঁবক কৌতুহলবশেই মারা জানতে চাইছে--এইভাবে বলল, “আপাঁন বরাবরই দরজা ভোঁজয়ে শোন? বন্ধ করেন না?” নূরপাতি মীরার ঈদকে তাকাল। তার মনে হল, সকালের মীরাকেই আরও বেশী ভাল লাগে দেখতে । মীরার কোনো সঙ্জা থাকে না এ-সময়, কোনো ঢাকচিক্য নয়, সকালের শাঁড়, কেমন একটা বাসী চোখ মুখ, শুকনো চুলের রুক্ষতা, সমস্ত কছ7মাঁলয়ে ঘরোয়া চেহারা । মীরাকে সেই রকমই দেখাঁচ্ছল, সাদা খোলের শাড়, হাল্কা রঙের কয়েকন্টা ফুল-ছাপ: মাথার বিন্দান খুলে পড়েছে, গায়ের চামড়ায় কোনোরকম আদ্রতা নেই। মীরাকে সরপাঁতি কয়েক মুহূর্ত দেখল। বলল, “আগে ওইরকম অভ্যাস ছিল।” বলার সময় শ্যামাকে মনে পড়ল সূরপাঁতর। শ্যামা কোনোঁদন তাকে দরজা বন্ধ করতে দেয় নি। মাঁসমা বে*চে থাকার সময় নয়, মারা যাবার পরও নয়। রমাও যখন ছিল না, শ্যামা সুরপাঁতকে নিজের পাশের ঘরে টেনে আনল, তখনও নয়। “আপনার তাহলে চোর-ছ্যাঁচড়ের ভয় নেই 2” মীরা হাঁস মুখে বলল, মনে মনে অন্যরকম ভাবছিল। «এখানে কিসের ভয় 2» সুরপাঁত জবাবে বলল। “ও কথা বলবেন না। কলকাতা শহরে সবই হয়--” মীরা আরেক চুমুক চা খেল। “ফ্ল্যাট বাঁড়তে চুঁর-চামার আরও বেশী ।” “আমার কা চুরি করবে-” সুরপাঁতিও হেসে জবাব দিল, “কছু নেই। আপনাদের এই ঘরের কু চুর করলে আলাদা কথা ।” মীরা কথা বলল না। বছানার পায়ের দকে তাকাল। আবার জানলার [দকে। একটা কালো রঙের পোকা উড়ে এসোছল। ঘরের মধ্যে উড়াছল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাতাস গরম হয়ে আসছে, রোদটাও ক্রমশ ঝকঝকে হয়ে গেছে। বেশীক্ষণ তাকানো যায় না। স:রপাঁতকে বিশ্বাস হচ্ছে না মীরার। সাঁত্যই ?ক দরজা খুলে শোওয়া তার অভ্যাসঃ নাক সে মিথ্যে কথা বলছে। সূরপতি ?ক প্রত্যাশায় থাকে না? একেবারে চুপচাপ কিছু সময় কেটে গেল। হঠাত মীরা সুরপাঁতির দিকে তাকাল। বলল, “আচ্ছা, আপনার সঙ্গে ক আমার-মানে আমাদের বাঁড়র কারুর তখন ভাবসাব হয়োছল 2” _সুরপতি তখনও চা খাচ্ছল। কোনো রকম ব্যস্ততা দেখাল না। 'সগা- রেট ধরাল। বলল, “না, তেমন আলাপ কারও সঙ্গে হয় ন। আপনার বাবা কখনও কখনও হাটে-বাজারে কথা বলতেন। আর ভাইদের সঙ্গে মুখ চেনা ছিল ।” “আমও অনেক ভাবলাম, মনে পড়ল না”, মীরা বলল; বলার পর তার স্বপ্নের কথা মনে পড়ল। সুরপাঁত অজ্প সময় চুপ করে থাকল, তারপর বলল, ,আপাঁন আমায় চোখেও দেখেন নি- এটা কিন্তু ঠিক নয়।” “দেখোঁছ 2” "প্রায় পাশের বাঁড়তে 'ছিলাম__না-দেখার কোনো কারণ নেই।» “ক জান, মনেই পড়ছে না।৮ সুরপাঁতি আস্তে করে সিগারেট টানল। ধোঁয়া গিলল। মদ হেসে বলল, “মনে যখন পড়ছে না-তখন মনে করার চেষ্টা করছেন কেন?” ১৯ সাধারণ কথা, তবু মীরা কেমন "অপ্রস্তুত বোধ করল। সূরপাঁতর দিকে তাকিয়েই আবার চোখ সাঁরয়ে নিল। আড়ম্টভাবে বলল, “না-না-তা নয়। আমার কেমন খারাপ লাগছে । আপ্পনি আমায় এত চেনেন অথচ আম চিনতে পারছি না। কী অন্যায় কথা!” আস্তে গলায় সুরপাঁতি বলল, “এত খারাপ লাগার কি আছে ?” মীরা তাকাল। কা বলবে? অনেক কিছুই তো বলতে ইচ্ছে করে। জানতে ইচ্ছে করে, সাঁত্যই দি আপাঁন তখন আমার প্রেমে পড়োছিলেন 2 কই. আম তো 'িন্দুবিসর্গ জানতে পার নি। কেন পার 'নঃ কোথায় লাকয়ে থাকতেন আপাঁন? আমাকেই বা কেন ভালবাসলেন?ঃ কা ছিলাম আম? দোলের দিন কি আপাঁন আমাকে, শুধু আমাকেই রঙ 'দিতে এসৌছিলেন ? সাঁত্য, ব*বাস করূন-সোঁদন ওই ঘটনার পর আম কতবার আপনার কথা ভেবোছ। জান না আপনাকে, তবু ভেবোছ। আমার যে কী মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল-__কত বিশ্রী লেগোছল আপনাকে আজ কেমন করে বোঝাব। আমারও ছাই-তখনকার কথা কি মনে আছে। নিজে হাত কেটে বিছানায় শুয়ে আঁছ। প্রথম কাঁদন কী ভাঁষণ জবর। বেহুশ হয়ে পড়ে থাকতাম । তাবপর যখন সেবে উঠ্তৈ লাগলাম--আপনার কথা আমার মাঝে মাঝেই মনে পড়ত। আপনাব মাথা কাটল, আমার হাত। কিন্তু দুটো ঘটনাই এমনভাবে ঘটল যার দায় যন আমার । মা বাবাকে ছু জিজ্ঞেস করতে পারতাম না। লজ্জা করত। জিজ্ঞেস করতে গেলেই সেই বজ্জাত নীলেন্দুর কথা এসে পড়বে । তবু সল্ভুকে আম জিজ্ঞেস করেছি চুপিচুপি । সন্ভু বলত, ভাল আছেন আপাঁন। আমি যখন হাত সামলে উঠ্লাম_তখন আর আপাঁন নেই। চলে গেছেন। মীরা চুপ করে থাকতে থাকতে আড়ম্ট বোধ করল। তারপর বলল, শনজেকে দোষী দোষাঁ মনে হচ্ছে।” সুবপাঁতি বলল, “কেন মনে করছেন! দোষের কথা মনে করাতে আম আঁস ন।” “তা হলে" মীরা হঠাৎ বলল। বলেই বুঝতে পারল, তাব গলার £ববে কেমন এক আকুলতা প্রকাশ পেয়েছে । তা ছাড়া-_ এই প্রশ্নে তো কোনা অর্থ হয় না। মীরা যেন স্পম্ট করে বাঁঝয়ে দিল, সুরপাঁতি তারই' জন্যে এসেছে । নিজের বোকামি আরও অপ্রস্তুত করল। সুরপাঁত হেসে বলল, “তা হলে কিছু নয়।” পকছ নয় 2” “কী হতে পারে বলুন। প্রমথ আমায় জোর করে তার বাঁড়তে ধরে এনে- ছিল। বলেছিল, চল, দেখাব চল কেমন আরামে আছি কত সুখে । আসলে বন্ধুকে মানুষ যেভাবে বাঁড়তে ধরে আনে সেইভাবেই ধরে এনোছিল। এখানে প্রচ্ছন্ন -৮ ১১৯১৩ এসে আপনাকে দেখলাম। দেখার কথা নয়। তব দেখলাম ।” মীরার মুখ ময়লা হয়ে আসছিল। ব্যঙ্গের গলায় বলল, “আমাদের সুখ কেমন দেখলেন ?« “দেখলাম ।” “কেমন 2 চুপ করে থেকে সুরপাঁতি বলল, “জীবনে সুখ যে কী আম বুঝতে পাঁব না। সুখ যে মানুষ পায় তাও জোর করে বলতে পারি না। আপনারা নিজেরাই জানেন কে কতটা সখ পেয়েছেন ।” মীরা বসে থাকল। একেবারেই অন্যমনস্ক। [কিছুক্ষণ পরে উঠে দাঁড়াল হঠাৎ, বলল, “আপাঁন স্পম্ট করে কথা বলতে শেখেন নি।...আঁম যাই।৮ মীরা চায়ের কাপ কুঁড়য়ে নিয়ে চলে যাঁচ্ছল; যেতে যেতে আচমকা বলল, “রান্তিরে দরজা বন্ধ করেই শোবেন। খোলা দেখলে অস্বস্তি হয়।” চোদ্দ শেষ পযন্তি সুরপাঁত উঠে পড়ল। তার র্লান্ত লাগাঁছল। বারান্দা থেকে মে গঙ্গার দিকে এাগয়ে গেল। রোদের চেহারাটা পাঁরছ্কার নয়, যেন ধুলোয় ভবা রোদ গঙ্গার জলের ওপর ছাঁড়য়ে রয়েছে; চাপা, ময়লা দেখাঁচ্ছল। আকাশ- টাও ঘোলাটে। সুরপাতি গাছতলায় বসল। এখন পুরোপ্যীর দুপুর নয়, অথচ বেলা অনেকটা গাঁড়য়ে গিয়েছে । সকালের দিকে নটা নাগাদ তারা পলতায় পেপে গিয়োছল, অন্যরা একে একে এসে জ্‌উলো দশটা সোয়া দশটার মধ্যে। তখন থেকে এতটা বেলা পর্যদ্তি গল্পগুজব আড্ডা চলাছল। অনেককাল পরে সূরপাঁতি পুরোনো বন্ধুদের দেখল। কাউকে কাউকে এার করে দেখলে চেনা যায় এখনও, কাউকে যায় না। জগবন্ধুকে চেনার উপায় নেই, কৃষকেও নয়। দুজনে দুরকম চেহারা করে ফেলেছে; জগবন্ধু ভীষণ মোটা হয়ে গিয়েছে, হাঁসফাঁস করে সর্রক্ষণ, মাথায় টাক পড়েছে। কৃষ্ণকে দেখলে মনে হয়, বয়সটা আরও পাঁচ-সাত বছর বাঁড়য়ে ফেলেছে, ভাঙা শরীর স্বাস্থ্য, খাঁড়ওঠা ফ্যাকাশে চেহারা, মাথার চুল প্রায় সবই সাদা হয়ে এল। শিশির আর ন্রাদৰ তবু পুরোনো কাণামোর অনেকটা ধরে রাখতে পেরেছে এখনও । দঃজনেই মোটামুটি জীবন্ত। অমলকে দেখলে মনে হবে, ওকালাতিতে বেচারীর পশার বাড়ল না দেখে যত রাজ্যের বিরান্ত আর হতাশা (নয়ে কেমন খতখধতে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বধূদের দ্বীর সঙ্গেও সুরপতির আলাপ হল। 'ত্রাদবের স্ত্রী প্রণ্ণাতকে চতুব, বাঁদ্ধমতীঁ বলে মনে হল সুরপাতির। শিশিরের বউ সরয্‌ খোলামেলা ঘরোয়া গিল্নীবান্নি মানূষ॥ 'শাঁশরের সঙ্গে মানানসই । জগবন্ধূর স্্রী শোভাকে জগবন্ধূর পাশে মানায় না; বেচারী রোগাসোগা বেনটেখাটো মহিলা, সম্রী মখ। জগবন্ধূ নিজেই রাঁসকতা করে বলল--আমার সাইড্‌ কার ভাই, টেনে নয়ে যেতে হয়।' কৃষ্র স্ত্রী ছন্দা পাতলা চেহারার মেয়ে, গায়ের রঙ ময়লা, বড় বড় চোখ ছাড়া মুখের অন্য কোনো লাবণ্য নেই। কথা একটু বেশীই বলে। গলাটি বেশ সুরেলা ছন্দার। কেতকাঁ_-অমলের স্ত্রী-মোটা- মূটি শান্ত গোছের মানুষ। স্বামীর জন্যে সর্বদাই শশব্যস্ত। গুরপাঁত বুঝতে পারাছল, যা পুরোনো-যার আর কোনো জের নেই ১১৫ তাকে হঠাৎ ফিরে পাওয়া যায় না। বন্ধুদের প্রথম দিককার উচ্ছ্বাস কিংবা খুশী তেমন কিছ; স্থায়ী হল না। সকলে প্রমথ নয়। ভ্রিদিব কিংবা শিশিরও নয়। পুরোনো দিনের কিছু গল্পগুজবের পর যে যার নিজের আঁফস, বড় সাহেব, মাইনে, কোথায় কে জাম কনছে কি দরে এই সব গল্প নিয়ে পড়ল। সেই সব গল্প শেষ হতে না হতে ডান্তার ওষুধের গঞ্প। কিছুক্ষণ রাজ- নীত। তারপরই কলকাতার ভিড়-ভাড়াক্কা, জলের কম্ট, রাস্তা খোঁড়াখদাড়র কথা। ত্রাদব কাজের মানুষ । লুকিয়ে হুহীস্কি এনোছিল। আড়ালে 1গয়ে দ্‌- 1তনজনে খাঁনকটা খেয়ে এল। সুরপাঁতি এক সময় অনুভব করল, সমস্ত কিছুর মধ্যে কেমন কান্তি এসে গেছে। প্রথম দিকে যে তাপ ছিল তার আঁচ মরে গগয়েছে, গিয়ে ছাই গড়ে আসছে। এই রকমই হয়, দীর্ঘক্ষণ কিছু টেনে নিয়ে যাবার বয়েস কিংবা মন হয়ত আর নেই। গাছতলায় ছায়ায় বসে সুরপাঁতি গঙ্গার ওপর ছড়ানো ঘোলাটে রোদের দিকে ভাঁকয়ে থাকল। মাঝে মাঝে বাতাস আসছিল দমকা। তবু এক গুমোট যেন চারপাশে ধীরে ধীরে জমে উঠোছল। হাতের িসগারেটটা ফেলে দেবার পর পায়ের শব্দ শুনে ঘাড় ফেরাল সূরপাতি। মীরা এাগয়ে আসাঁছল। কাছে এসে মীরা দাঁড়াল। “আপাঁন এখানে 2" সুরপাঁত একটু হাসল। “বসে আছ।” মীরা দাঁড়িয়েই থাকল, গঙ্গার দিকে তাকাল, আকাশ দেখল । “কেমন লাগছে 2” ও “মন্দ নয়”, সুরপাঁতি বলল, “ক'টা বাজল ₹” মীরা হাতের ঘাঁড় দেখল। “একটা বেজে গেছে । কেমন গরম লাগছে না 2" মাথা নাড়ল সূরপাঁত। “গুমোট হয়ে আছে।” “কাঁদনই মাঝে মাঝে এই রকম হচ্ছে” মীরা যেন আর দাঁড়য়ে থাকতে না পেরে অনাদকে বসল। “এবার খেতে যেতে হবে। হয়ে এসেছে সব।" সূরপাতি মীরাকে দেখতে লাগল। ছাপা িল্কের শাঁড় পরেছে মীরা, চন্দন রঙের জমির ওপন্ন লাল কালোর ফোঁটা, গায়ের ভামাটা লাল সমস্ভ বাহুই অনাবৃত। মাথায় ভাঙা খোঁপা । মীরাকে দেখতে দেখতে সুরপাঁতিব মনে হল, আগেও হয়েছে, প্রমথর স্ত্রীভাগ্য সবচেয়ে ভাল। কোনো সন্দেহ নেই, বন্ধুদের স্তীর মধ্যে মীরাই যথার্থ সুন্দরী; শরীর এবং বয়েসকে এক- মাত্র মশরাই ধরে রাখতে পেরেছে। ১৯৩ 'আপাঁন আগে কখনও এখানে আসেন নি?” মীরা যেন অন্য কোনো কথা খঃজে না পেয়ে জিজ্ঞেস করল। “না,” সংরপাঁত বলল, “আগে গল্প শুনৌছ, আসান” "আপনার বন্ধুরা অনেকে এসেছে ।” 'শন্রাদবের কাছাকাঁছ যারা ছিল-কলকাতাতেই-তারা আসতে পারে। আমি থাকলামই না।” মীরা পা গুটিয়ে বসল। তার একপাশে ঘাস আর শুকনো পাতা। কপালে চুল এসে পড়ছে। "আগে একবার আমরা ডায়মন্ড হারবারের দিকে গিয়েছিলাম”, মঈরা বলল, “শশতকালে। সেবার দল আবও বড ছিল। আনও অনেকে এসোছলেন। বাচ্চাকাচ্চাও ছিল ।” “তবে তো খুবই হই-হুল্লোড় হয়োছিল।” মীবা তাকাল। চুপ করে থাকল দু মৃহূর্ত, তারপর বলল, “সাঁত্য কথা বলব-?” সূরপাঁত তাকিয়ে থাকল। "আমার একেবারেই ভাল লাগে নি” স্পন্ট গলায় মীরা বলল। “এদেব এই হুজুগ আমার ভাল লাগে না। কাঁ হয় এসব হুজহগে মেতে 2” সুরপতি বলল, “কছু নয় হয়ত, তব একট: আনন্দ...” “কত আনন্দ তা আম জাঁনি-_” মীরা বিরন্তুভাবে বলল, “আপনার বন্ধন [তন বোকা আর হূজগেদের কিছ হয় হয়ত_বাকীদের কিছু হয় না। গখানে এসে পরচর্চঠা, পবানন্দা, কে কার চেয়ে বেশী রোজগার করছে-তাব [ল্পই হয়।” সূরপাঁত মশরাকে লক্ষ করাছল। পলতায় আসার কোনো উৎসাহ মীরাৰ ছল না। 'নতান্ত দায়ে পড়ে এসেছে । এসেও কোনো দিকে গা দিচ্ছে না। এই িস্পৃহতা এবং তিন্ততা মীরার কেন_ স্ঃরপাতি খানিকটা অনুমান করতে পারছে । মশরাকে কেউ অন্তরঞ্গভাবে গ্রহণ করে না। মীরাও কাউকে পছন্দ চরে না। সুবপাঁত হালকাভাবে হেসে বলল, “হয়ত আপনার কথাই ঠিক। কি আব চববেন-_. ভাল লাগিয়ে নিন।” মণরা দুহাতে কপালের চুল সরাল। তাকাল সরপাঁতির দকে, কেমন যেন বষম্ন হতাশ চোখে, বলল, “ভাল লাগয়েই এতোকাল কাটল। আর ভাল বাগে না।” মুখ 'ফারয়ে নিল মীরা, মাথা নীচু করে ঘাসের দিকে তাকিয়ে [কল। তার গলার স্বর গভীর 'নিঃশবাসের মতন শোনাল, অস্পম্ট অথচ মান্তারক। ৯১৭ কথা বলল না সূরপাঁতি। বলা যায় না। গঙ্গার বাতাস এল দমকা । গাছের পাতার শব্দ হল। বাঁঝ মেঘ এসেছে আকাশে ভেসে যাচ্ছে-_ গাছের ছায়া আরও একট; নিবিড় হল, দূরের ঘোলাটে রোদ ক্রমশই ছায়ায় জাঁড়য়ে যেতে লাগল। আপন মনে কটা পাঁখ কোথাও ডেকে যাচ্ছিল। কাঠবেড়ালি নেমেছে পেয়ারাতলায়। মীরাই আবার কথা বলল, সুরপাঁতর দিকে সরাসার তাঁকয়ে, আচমকা । “একটা কথা বলুন তো সাঁত্য করে, এই যে এরা আপনাকে নিয়ে এল--আপনার পুরোনো বন্ধুরা, এরা কি আপনাকে দেখে সবাই আহনাদে গলে গেছে 2” সূরপাঁত বিব্রত বোধ করল। বলল, “গজ্পটজ্প তো হল। একটা কর্থা ক জানেন_ সকলের কাছে সব কিছু চাওয়া যায় না। আমায় নিয়ে সবাই আহমাদ করবে এটা আমি আশা কাঁর না। সকলেই কি আর প্রমথ!” মীরা বলল, “অত ঘ্ণারয়ে বলার কি আছে, সোজা বলুন-আপনারও ভাল লাগছে না।” সূরপাঁত অস্বাঁকার করল না। বলল, “লাগছে না।» মীরা কয়েক পলক তাকিয়ে থাকল। তার চোখ যেন বলল, তা হলে আছি কেন এখানে ঃ তারপর নিঃ*বাস ফেলে বলল, “যত সময় যাবে ততই দেখ- বেন আরও খারাপ লাগছে। এদের সঙ্গে বেশঈক্ষণ ভাল লাগে না।” চুপ করে থাকল সূরপাতি। আরও একটু বসে মীরা উঠে পড়ল। ঘাস, মাঁটি, শুকনো পাতা লেগেছে শাঁড়তে। নীচু হয়ে হাত ?দয়ে ময়লা ঝাড়ল। তারপর আচমকা বলল, “বাগানটা মস্ত বড়। ওপাশে গঙ্গার দিকটা দেখতে বেশ লাগছে; কেমন বেকে গেছে দেখেছেন। দুপূরে একবার দেখে আসব, কি বলেন?” সুরপাঁত কিছু বলার আগেই মীরা পা বাড়াল। কয়েক পা এগিয়ে ঘাড় ঘাঁরয়ে বলল, “আসূন--খাবার ডাক পড়বে এখ্ানি।৮ মীরা চলে গেল বাগানের মধ্যে দিয়ে। সূরপতি তাকিয়ে তাঁকয়ে দেখল । অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছিল। তরুকে মনে পড়ল। কতাঁদন, কত অসংখ্যবার সরপাঁত তরুকে বাগান দিয়ে বাঁড়র দিকে চলে যেতে দেখেছে । দুটো ক্লাচ ভর দিয়ে এক-পা কাটা তরু কত কম্ট করে চলে যেত। প্রত্যেকবার পা ফেলার সময় তাকে ক্লাচ টানতে হত, পিঠ দুলে উঠত, কোমরের তলার 'দিকটা' ভেঙে- চুরে বেকে কেমন বীভৎস হয়ে যেত। মীরা স্বচ্ছন্দে চলে গেল, কোথাও কোনো জড়তা নেই, সামান্য পা টেনে টেনে সন্দর ভাঁঙ্গ করে হেটে চলে গেল। কেন একজন বিকৃত হয় অন্যজন সন্দর ? তরূরও একটা সৌন্দর্য ছিল। কেমন সৌন্দর্য বোঝানো মুশাঁকল। হয়ত দীনতার সোন্দর্য, ব্যথার সৌন্দর্য। মেটে রঙের চেহারা, সরার মতন মৃখ. ১১৮ সুপুষ্ট হাত পিঠ; স্বাভাবিক শন্ত বকক। তরু তার চেহারায়' টানত না। তার বিষণ্ন মুখ, সরল নির্বেধ চোখ, করুণ দাাঁষ্ট সুরপাঁতকে টানত। তরুর ভাব- সাব দেখলে মনে হত, নিজেকে সামান্য নৈবেদ্যের মতন সমর্পণ করলেই সে কৃতার্থ হবে। সুরপাঁত তরুর জন্যে বেদনা বোধ করত। তরুর সঙ্গে সুরপাঁত প্রেমের সম্পর্ক পাতায় নি। সহানূভতি ও মমতার চোখেই সে দেখত তরুকে। তর কী বুঝত সুরপাঁত জানে না। তরু যোৌদন বৈশাখের তপ্ত দুপুরে খেপা কুকুরের ধাক্কা খেয়ে আম- বাগানের মধ্যে পড়ে গেল, সুরপাতি ছ;টে তার কাছে গিয়ে দাঁড়য়োছল। তরুর একটা ক্রাচ হাত কয়েক দূরে ছিটকে গেছে, অন্যটা মাথার দিকে; কোমরের দিকে কাপড় এলোমেলো হয়ে উঠে গেছে, কাটা পায়ের দকে কোনো আবরণই নেই, উরুর খানিকটা বোরয়ে আছে। তামাটে রঙের বিকৃত এক মাংসের স্তৃপ। সুরপাঁত দ মুহূর্ত তাঁকয়োছল। অগোছালো আলগা কাপড়, কাটা উরূর মধ্য দিয়ে নারী-অঙ্গের যে অন্ধকার দেখোছল সূরপাঁত-সেই অন্ধকাবে বভংসতা ও 'বকৃতির আঘাত ছাড়া অন্য কিছ ছিল না। সুরপাঁত মুখ ফিরিয়ে গঙ্গার দিকে তাকাল । মেঘের ছায়া মাঝ-বরাবর নদী পেরিয়ে চলে গেছে, এ-পারে আবার সেই ঘোলাটে মরা রোদ ফুটল। জ.ট মালের নৌকোটোৌকো যাচ্ছে বোধ হয়। গাছের পাতা আর কাঁপছে না, শব্দ নেই । পাঁখরাও যেন এই গাঢ় গুমোট দুপুরে হঠাৎ সব থেমে গেছে। অদ্ভুত এক স্তব্ধতা চাবপাশে। সূরপতি হঠাং অনুভব করল, তর; যেন এখনও কোথাও দাঁড়য়ে তাকে দেখছে। সুরপাঁতি তাড়াতাঁড় উঠে পড়ল । বড় হল ঘরে পুরুষেরা সকলেই শুয়েছিল। মেয়েরা অন্য ঘরে। খাওয়া- দাওয়ার পব পান চিবোতে চিবোতে, িসগারেট টানতে টানতে গল্পগুজব হয়ে- ছিল কিছুক্ষণ। জগবন্ধু হাঁসফাঁস করতে করতে ঘ্দাময়ে পড়ল। কৃষ্ণর তন্দ্রা আসাঁছল। ঝিমূনি ধরে গিয়েছে সকলের । প্রমথ একটা পুরোনো বই যোগাড় করল কোথা থেকে, মাথা রেখে শঃয়ে পড়ল। তারপর নাক ডাকতে লাগল। , সুরপাঁতি হাত-পা ছাঁড়য়ে শুয়েছিল একপাশে। বন্ধ্দের আব কোনো গলা পাওয়া যাচ্ছে না; কেউ ঘুমিয়ে পড়েছে, কেউ বা তন্দ্রাচ্ছন্ন, কারুর বা নাক ডাকাছল। এক সময় উঠে পড়ল সুরপাঁত। বাইরে এল। দুপুর ফ্রয়ে আসার মতন। রোদ একেবারেই ধুলোর রঙ ধরেছে, আলোয় মেঘলার ছায়া মেশানো । জল তেম্টা পাচ্ছিল। কাছাকাঁছ কাউকে দেখতে পেল না। বারান্দা দিয়ে নীচে নেমে এল সুরপাঁতি। '্রাদিবদের এই বাগানবাঁড় [বিশাল ছু নয়। তবু বড়। দু পুরুষ আগে পয়সা খরচ করে বাগানবাঁড় ৯৯৯১ বানানোর আর্ক সচ্ছলতা ও আভিজাত্য ন্রিদিবদের ছিল। এখন এই বাঁড়র জীর্ণ দশার মতনই তাদের অবস্থা । তবু কিছ্‌ তো রয়েছে। সুরপাঁত বাঁড়র চারপাশে ঘুরে বেড়াল না, বাগানের দিকে চলে গেল। কলাবাগানের কাছে 'টিউবওয়েল। বাগানের মালীকেও চোখে পড়ছে না। 1টউবওয়েলের হাতল ওঠানামার শব্দেও কাউকে দেখা গেল না। সুরপাঁতি প্রায় ষখন হতাশ হয়ে ফিরে যাবে ভাবছে ঠাকুরকে দেখতে পেল। ডাকল । জল খেয়ে বাগানের মধ্যে চলে গেল সরপাঁতি। ব্রাদবদের এই বাগান- বাঁড়তে বাগানের অংশটাই বেশী । অজন্্র গাছ। আমগাছই বেশী, কিছু অন্য অন্য ফলের- জাম, পেয়ারা, লিচুর । জঙ্গলও কম নয়। আগাছায় ভরে আছে। হয়ত কোনোকালে সাজানো ফুৃলবাগান ছিল। এখন ভাঙা ইটের কেয়াবি, প্রচুর ঘাস, কয়েকটা কলাফুল আর সামান্য জবা বই াবশেষ কিছ চোখে পড়ে না। ঝাউয়ের গা জাঁড়য়ে বুনো লতা উঠেছে। সুরপাঁত বাগানের মধ্যে দিয়ে অলসভাবে আর খানিকটা এাঁগয়ে প্রায় ফটকের কাছে চলে গেল। দাঁড়াল দু দণ্ড, একটা সিগারেট ধরাল. তারপর আবার ফিরতে লাগল। ফিরে আসার সময় মীরাকে দেখতে পেল। বারান্দায় দাঁড়য়ে আছে। সুরপাঁতিকে দেখামান্র মীরা হাতের ইশারায় গঙ্গার দিকটা দেখাল। যেন জানতে চাইল--সুরপাঁতি কোন দিকে যাচ্ছে! সুরপতি একটু দাঁড়িয়ে গাছ- পালার ছায়া 'দয়ে হঁটিতে লাগল সোজা । মেঘলা ক্রমশই যেন ঘন হয়ে আসাঁছল। সমস্ত ছায়াই কালচে হয়ে উঠছে। রোদ নেই, আলো একেবারেই ময়লা । কয়েকটা কাক চিল মাথার ওপর উড়ছে। আদিগন্ত আকাশ থমথমে । নারকোল গাছের মাথাও কাঁপছে না। সূরপাঁত দাঁড়য়ে থাকতে থাকতেই মরা এল। বলল, “আপাঁন তাহলে ঘুমোন নি?” মাথা নাড়ল সুরপাঁত। “না. আমার ঘুম কম।” “দুপুরে আমিও শুতে পার না” মীরা বলল, “অভ্যেস নেই।” সৃরপাঁত কিছু বলল না। মীরা বলল, ণ্চলুন, আমরা গঞ্গার গাঁদকটায় কোথাও গিয়ে বাঁস। রোদ তো নেই।” সামনের দিকে তাকালো সূরপাঁত। গঙ্গার ডান হাত গাছপালা রয়েছে। ভাঙা কোনো মান্দর। বলল, “লুন। একট; গর্তটর্ত থাকতে পারে, লাফাতে হবে।” মীরা হটিতে লাগল। “বিকেল হয়ে গেছে 'কল্তু।” গ্ঘাঁড়টা ফেলে এসোছ। ক'টা বাজল ?” ৯২২০ গ্চার।+ “চার 2...এরা ফিরবে কখন 2” “জানি না। সন্ধ্যের মুখে ।? “অবস্থাটা কিন্তু ভাল নয়। ঝড়বৃম্টি হতে পারে।” “হলে ভাল, যা গুমোট।” কখনও কথা বলতে বলতে, কখনও একেবারে চুপচাপ দুজনে হাঁটতে লাগল। বাগান শেষ, ভাঙা পাঁচিল। পাঁচিলের পাশ 'দয়ে পথ পাওয়া গেল, সামান্য এগিয়ে খাদ মতন, মাটি আর বাল, ভাঙা কলাঁস পড়ে আছে। মীরার অস্দাবধে হল না। গঙ্গার পাড় ঘেষে মস্ত পাকুড়গাছ, নিম। সুরপাঁতি বলল, “এখানে বসবেন?” মীরা চারপাশ তাঁকয়ে দেখল। গাছের ছায়া বড় শনাঁবড়। চোরকাঁটায় মাঠ ভরে আছে। শালিখ নেমেছে মাঠে । বলল, “এখানেই বাঁস।” মীরাই আগে বসল। সূরপাঁতি বলল, “এখন ভাটা চলেছে। জল দেখছেন?” মীরা জল দেখতে লাগল । পাড় থেকে বেশ একটু তফাতে জল। সামনেটায় কাদা থিকাথক করছে। জলমাটির গন্ধ উঠছিল। নদণর ঠাণ্ডা বাতাস রয়েছে মৃদু। সূরপাঁত বসৌছল। "ন্রাদবদের বাগানবাঁড়টা অন্তত দেড়শো দশ” গজ । চুপচাপ খাঁনকটা সময় কেটে গেল। শেষে মীরা বলল, “আম আজ কদনই একটা কথা ভাবছি--” বলে আবার চুপ করে গেল। সূরপাঁতি তাকাল। মীরাকেও কেমন বিষ দেখাচ্ছে। আকাশের মেঘলা, ময়লা ছায়ার জন্যে কনা বোঝা যাচ্ছে না। এই রকমই দেখাচ্ছে মীরাকে আজ সারাদিন। হয়ত গতকালও দেখাচ্ছিল । | মীরা সূরপাতির চোখে চোখে তাকাল । হঠাৎ বলল, “আমায় কটা কথা বলবেন ?” সুরপতি মীরার চোখে কেমন এক অসাঁহফতা দেখল। কী কথা?” “বলছি। তার আগে একটা কথা আপনাকে বলি”, মীরা জোরে নিঃ*বাস ণনল, সামান্য যেন উত্তোজত, বলল, “আম ছেলেমানূষ নই, আপাঁনও নন। আপাঁন এ ছেলেমানুষ কেন করছেন ? সূরপাতি অবাক হল। তাকিয়ে থাকল। বলল, “ছেলেমানাঁষি 2” “তা ছাড়া আর কি!” “কেন 2৯ মীরা আঁচলের প্রান্ত কোমরে গজল, ডান হাতে কপালের চুল সরাল। ১২১ “তা ছাড়া আর কি! সেই কবে আপাঁন আমাকে দেখোঁছিলেন, আপনার সঞ্চে আমার ভাবসাব হয়ান, আলাপও নয়__-আপনাকে আমি চিনতেও পারাছি না। তবু কেন আপাঁন--” সুরপাঁতির চোখে চোখ পড়তেই মীরা থেমে গেল। সূরপাঁত কেমন এক দৃম্টিতে তাকিয়ে 'ছিল- তন্ময়, গভীর, বিষন্ন । মীরা ঠিক বুঝতে পারল না। কিন্তু কথা বলতেও পারল না। অনেকক্ষণ সুরপাঁত কথা বলল না, পরে বলল, “আমায় নিয়ে আপাঁন বড় [বরত বোধ করছেন। অশাল্ততে পড়েছেন।» “হ্যাঁ”, স্পম্ট করেই মরা বলল, “আপনার এইভাবে থেকে যাবার আম কোনো মানে খদুজে পাচ্ছি না। আপনি বড় আশ্চর্য মানৃষ!...ছেলেবেলায় আপনার কাকে ভাল লেগোঁছল-সে-গল্প তখন আপানি আপনার বন্ধ্দের কাছে করেছেন শুনলাম। কিন্তু এখন আর সে-গল্প মানায় না। মানায়-? আপাঁন বলুন 2” সুরপাঁত জবাব দিল না। অপেক্ষা করে মীরা বলল, “সে-গল্পও যেমন মানায় না, সেই রকম নীলেন্দুর সঙ্গে আমার ভাবসাব ছিল এ-গল্পটা আপনার বন্ধুকে জানিয়ে আপাঁন আমার কোন্‌ ক্ষতি করবেন! আপনার বন্ধুকে আমি গ্রাহ্য কার না। সে অনেক বেশী পেয়েছে। আম কিছুই পাইনি” সুরপাঁতি বলল, “প্রমথ আমার বন্ধু। ও আমায় ভালবাসে । একমান্র ও। আম ওর খানিকটা নিশ্চয় ব্ঝতে পাঁরি। নীলেন্দুর গল্প আর্মি ওকে কেন বলব! বলেই বা কোন লাভ হবে। প্রমথও তো আপনাকে চেনে” মীরা ঘাড় ফেরাল। ভূর কোঁচকাল। “মানে?” সরপাঁতি বলল, “কথাটা আপনাদের । আপনারাই বুঝবেন। স্বামী-্কী হয়ে জীবন কাটালেই মানুষ সুখন হয় না।” মীরা কগ বলবে বূঝে উঠতে পারাছল না। বলল, “আপাঁন কি আমাদের সুখী করতে এসেছেন ?” “না।” “তাহলে কেন এসেছেন? আমায় দেখতে ? ছেলেমান্ীষ করতে 2” “হয়ত তাই। আপনাকেই দেখতে এসোছ।” মশরা নিঃ*বাস বন্ধ করে সুরপাঁতির দিকে তাকিয়ে থাকল । কয়েক মূহত যেন কেমন চেতনার কোনো অজ্ঞাত গভীরে ডুবে গেল। ঘৃর্ণির মতন অতাঁতের কয়েকটা স্মৃতি পাক খেল, পাক খেয়ে শুকনো পাতা যেমন উড়ে যায়_কোথায় হাঁরয়ে গেল। মীরা আবার যখন সচেতন হ'ল, অনুভব করল- চারপাশের গৃমোট গরম' বাতাস তার নাকে চোখে লাগছে। সুরপাঁতর দিকে তাকাতে পারল না মীরা। নদীর দিকে তাকাল। জলের ওপর ছায়া আরও কালো ৯২২ হয়ে এসেছে কখন। মীরার হঠাৎ কেমন কষ্ট এল বুকে, যেন এই কষ্টে হৃদয় ভেঙে যায়, কোনো হাহাকার গুমরে ওঠে । সর্বাত্গে এমন এক অনুভূতি এল. মনে হল, কোনো আবেগে সে কেপে উঠছে। চোখ ফিরিয়ে মীরা বলল, “আমায় দেখার কী আছে বল্‌ন। আমি তো--” সুরপাঁতি বলল, “কী আছে সেটা আমিও খনুক্তেছি।” “মছেমিছি খজেছেন।” "আপনিও খজেছেন।” “আম?” মীরা সুরপাতির দিকে তাকাল। সুরপাঁত বলল, “যাঁদ না খজবেন-_তবে কেন কাল রান্নে আপাঁন আমাব ঘরে গিয়োছিলেন 2” মীরার মুখ বিবর্ণ হল, চোখের পাতা পড়ল না গলাও যেন শৃাঁকয়ে গেল। নিস্তব্ধ, নিঃসাড় হয়ে বসে থাকল। অনেক পরে মীরা বলল, “আপাঁন কি জেগে ছিলেন ৮" “হ্যাঁ” “মাঝরাতেও 2” পছলাম 1” শীরা কিছু বলতে পারল না। গত রান্রেও সে যেন বোনো আচ্ছানন ঘোরে সুরপাঁতির ঘরে গিয়োছিল। দরজা খুলেই রেখোঁছল সূরপাঁতি। মরা অন্ধকারে চোরের মতন সরপাঁতর ছানার সামনে গিয়ে দাঁড়য়েছিল িছ-- ক্ষণ। ভেবেছিল সুরপাঁত ঘুমিয়ে আছে। মীরার যখন কান্না এল আচমকা, ফসুপিষে ওঠার মতন শব্দ হল গলায়, সে আর দাঁড়ায় নি। চলে এসৌছল। বারান্দায় বসে একা একা- শীতের মধ্যরাত্রে মীরা কে'দৌছল। কেন কেদে- [ছল সে জানে না। মীরা দু হাতে মুখ ঢেকে মাথা নীচু করে বসে থাকল। সুরপাঁতও বসে থাকল। নদীর জলের ছায়ান দিকে তাকিয়ে। হঠাং আকাশের ঈদকে চোখ পড়ল। হু হু করে কালো মেঘ ভেসে আসছে। দমকা বাতাস 'দল। মাঠ-ঘাট বাগান নদ থেকে যেন কোনো ভরষণ ঝড ছে আসছে। পসুরপাঁতি বলল, ণ্ঝড় আসছে ।” মীরা উঠল না, বসে থাকল। আচমকা গ্‌মোট যেন সিসের মতন ভারী হল। সূরপাতি ঘামতে লাগল । তারপরই ঝড়ের বাতাস এল । ধুলো মাঁট পাতা উড়ে আসতে লাগল বৃন্টর গন্ধ নিয়ে! ১২৩ সুরপতি বলল, “উঠুন। ঝড় এসে গেছে। বৃষ্টিও আসছে।” মীরা উঠল। বাগানবাড়র কাছাকাছিও পেশছনো গেল না। বৃষ্টি এসে গেল। প্রায় ছুটতে ছুটতে ভাঙা মাঁন্দর মতন জায়গাটায় ?গয়ে দাঁড়াল দুজনে । মীরা হাঁপাঁচ্ছল, সুরপাঁত হাঁ করে *বাস টানছিল। ঝড়ে মাখামাখ হয়ে গেছে দুজনেই । বৃন্টর জল মীরার মাথা ভাঁজয়ে দিয়েছে, কাপড়চোপড়ও । সনর- পাতও শুকনো নয়। মীরা বলল, “কী জোর বৃষ্ট নামল।” সূরপাঁত দেখল, চারপাশ কালো করে প্রবল বাঁষ্ট নেমেছে। ৯৯৪ পনেরো দরজা খুলে ঘরের আলো জহালল মশীরা; সুরপাঁতির দিকে তাকাল। বলল, “জামা কাপড় ছেড়ে নিন তাড়াতাড়ি” সুরপাতি মীরাকে দেখাছল। প্রায় সর্বাঙ্ঞই' ভেজা মীরার। বলল, “আপনি 2” “আপাঁন আগে সেবে নন, আমার একটু দেরী হবে বাথরুমে ।" বলে মীরা আর দাঁড়াল না, বাইরে বন্ধ দরজার 'দকে একবার তাঁকয়ে ভেতরে চলে গেল। নিজের ঘবে এল সুরপাঁতি, আলো জবালল। জানলাগুলো সকাল থেকেই বন্ধ। দরজাও বন্ধ ছিল। ঘরের মধ্যে সারাদনের বদ্ধ বাতাসের গন্ধ ও গুমোট। সূরপাতি দুটো জানলা খুলে দিল। ঠান্ডা ভিজে বাতাস এল হু হু করে। এঁদকে বুঝি এবার বৃষ্টি আসার পালা । মেঘ ডাকছে। সুরপতি শুকনো পাজামা, গোঁঞ্জ নিয়ে বাথরুমে চলে গেল। মুখ হাত ধুয়ে, মাথা গা মুছে পোশাক বদলাবার সময় সুরপাঁতির সেই একই রকম পুরোনো অস্বাস্ত হচ্ছিল। এই তিন চার ঘন্টার মধ্যে কিছ যেন একটা ঘটে গেছে, পলতার বাগানবাঁড়তে যে ঝড়-বাঁন্ট এসৌছিল--সর পাত বুঝতে পারছে না-সেই দূর্োগ কোথাও কিছু ঘটিয়ে দিয়ে গেছে কিনা, কিন্তু তার অস্বাস্ত হচ্ছিল। কোনো মানুষের পক্ষেই জানা সম্ভব নয়, একঢা ঝড় আচমকা উঠে এলে কতক্ষণ চলবে, আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামলেও কতক্ষণ তা স্থায়ী হবে। সুরপাঁত হিসেব করে সাঁঠক বলতে পারবে না- কতক্ষণ টানা ঝড় বৃন্টি চলোৌছিল। ঘন্টাখানেক কি তার বেশীও হতে পারে। কখনও ঝড় িকছুটা কমেছে, বৃম্টি বেড়েছে, কখনও বৃন্টি কমেছে, ঝড় বেড়েছে। শেষ বিকেলেই সব ঘনঘোর হয়ে গেল। কাঠ কয়লার আঁচড়ে আঁকা ছাবর মতন আকাশ, জল, মাটি, গাছপালা । সব কালো হয়ে বৃন্টিতে একাকার হয়ে যাচ্ছিল, ঝড়ে গাছপালা তছনছ হচ্ছিল। বিদ্যুৎ চমক আর বন্রপাত মীরাকে এত ভীতার্ত করাছল যে সেই ছোট ভাঙা মন্দিরের চাতালে মীরা প্রায় সবরক্ষণ সূরপাঁতিকে আঁকড়ে ধরে রাখাছল। মীরা আর সূরপাঁতি যখন মন্দির থেকে বেরিয়ে এল তখনও গড় গাঁড় বাঁন্ট পড়ছে, বাতাস দিচ্ছে দমকা, দু জনেই ঝড়ে জলে ভিজে গিয়েছে, বাগানে ৯২৫ জলকাদা, ঝিণঝ ডাকছে, মাথার ওপর 'দিয়ে কালো মেঘ ভেসে যাচ্ছে হুহ্‌ করে। বাগান বাঁড়র বারান্দায় প্রমথরা সকলে দাঁড়য়ে ছিল, উদ্বেগ আর আশঙকা নয়ে; মেয়েরাও ব্যস্ত, উৎকণ্ঠ। 'বিরন্ত। সুরপাঁতিরা সামনে আসতেই প্রমথরা তাদের দেখল। প্রায় সর্বাঙ্াীসও এই দুটি মানষকে আগ্রহ, কোতূহল, বিস্ময়, সাঁন্দশ্ধ চোখে সকলেই কেমন লক্ষ করতে লাগল। চাপা ধিক্কার ও বিদ্রুপও যে না ছিল এমন নয়। মীরাকেই যেন আরও নজর করে দেখাঁছল সকলে । মীরার পিঠের দিক যাঁদ বা সামান্য কম ভিজেছে সামনের দিকটা ভিজে সপসপ করাছল, শাড়ি জামা গায়ে লেপট্ে রয়েছে, জল পড়ছে পায়ের 'দিকে। প্রমথ একবার চারাদকে তাঁকয়ে নিয়ে মরার চোখে চোখে তাকাল । তার- পর সুরপাঁতিকে বলল, “কী ব্যাপার? সুরপাঁত বলল, 'গঙ্গার দিকে বেড়াচ্ছিলাম, হঠাৎ ঝড়বৃন্টি এসে গেল।' প্রমথ কিছু বলতে যাঁচ্ছল, থেমে গেল। মেয়েরা বারান্দার খাঁনকটা ভেতর দিকে দাঁড়য়ে আছে। পুরোনো একটা লণ্ঠন জবলছিল দোর গোড়ায়। থমথমে ভাব জমে উঠেছে । মশরার দিকে আর কেউ সরাসার তাকাচ্ছিল না। অবস্থাটা অস্বাস্তদায়ক। 1শাঁশরই কথা বলল, 'তোরা আমাদের ভীষণ ঘাবড়ে দিয়োছালি। যে-রকম ঝড় জল! চেঁচয়ে চেশচয়ে গলা ভেঙে গেল আমার । শুনতে পাস নি?" মাথা নাড়ল সুরপাঁত। “আমরা মাথা বাঁচাতে ওাঁদকে একটা ভাঙা ইটের 'বেশ করেছিলি। তাড়াতাঁড় নে; স্টার্ট করব। এখন একটু [ঢিলে রয়েছে, আবার কখন ঝে"পে আসবে । শাশিরের বউ মীরাকে গা-মাথা মুছে নিতে বলল। একট, পরেই বাগ্যনবাড় ছেড়ে বোৌরয়ে পড়ল সবাই। প্রমথ আর ন্রাদৰ গাঁড়তে এল না। তারা জগবন্ধূদের সঙ্গে স্টেশন যাবে, অমলও রয়েহে, ওঁদক দিয়ে ফরবে। বেশীর ভাগ ক্লেয়েরাই শাশিরের সঙ্গে গাঁড়তে ফিরে" যাবে। সেটাই সুবিধের। ফেরার পথে গাঁড়তে ড্রাইভারের পাশে শাশির আর সূরপাঁতি। পেছনে নীরা, প্রীতি, ছন্দা, শিশিরের বউ আর কছু ধোওয়া-মোছা বাসন। শশাশর যেন কোনো অস্বাভাঁবক আবহাওয়া হালকা করার জন্যে এলো- মেলো কথা বলছিল : কখনও মজার কথা বলার চেষ্টা করছিল, কখনও কোনো পুরোনো গল্প বলাছল, মেয়েদের সঙ্গে স্তীর সঙ্গে ঠাট্রা তামাশার কথা বলাছল। সরপাঁত প্রায় চুপচাপ। তার শত করাছল। পেছনে মেয়েরাও ১২৬ বড় কথা বলছে না। মীরা কেমন জেদীর মতন বসে, কথাও বলছে না, গ্রাহ্যও করছে না কাউকে। কলকাতায় পেশছবার পথে চারাঁদকের অবস্থা দেখে মনে হল, অজকের ঝড়বাঁম্টর আয়োজনটা সামান্য ছিল না। কোথাও বাঁস্ট হয়েছে, কোথাও হয়নি-_আঁধ উড়ে গিয়ে এই সন্ধ্যের মুখে সব ঘোলাটে করে রেখেছে, বাতাসে ধুলো জমে আছে। মেঘ রয়েছে আকাশ জুড়ে। সোঁদা গন্ধ 'দচ্ছে কোথাও কোথাও । কলকাতায় পেশছে বোঝা গেল, এঁদকেও ঝড়বৃষ্ট আসতে পারে। মীরাদের বাঁড়র কাছে নাঁময়ে 'শাঁশর চলে যাবার পর সুরপাঁতি দেখল, এঁদকের আকাশও ঘটা করে সেজেছে । বিদ্যুৎ চমকাচ্ছল ক্ষণে ক্ষণে । রাস্তার বাতগুলো যে কোনো মুহূর্তে নিবে যেতে পারে। [সপড় দিয়ে ওঠার সময় মীরা বলল, “আপনার শীত করছে? সুরপাঁতি শীতটা সামলে, নিয়োছল, বলল, 'না। আপাঁনই বেশী [ভিজেছেন।' “একাদন তো-! কা হয়েছে! মীরা আর ছু বলল না। রাধাকেও ডাকল না নীচে থেকে । ঘরেব চাঁব খুলল । সুরপতি ঘরে একলাই বসেছিল। এাঁদকে এখনও জোর বৃন্ট নামে 'ন। ঝিরাঝরে এক পশলা বৃন্টির পর থেমে গেছে। ধুলোর গন্ধও আর ছল না। দুরান্ত কোনো বাঁষ্টর ভিজে বাতাস বয়ে আসাঁছল। সামান্য গা [সিরাঁসব করে ওঠায় জানলা বন্ধ করে দিল সুরপাতি। মাথাটা ধরে উঠছে। আরও খাঁনকটা পরে মীরা এল। মাথার চুল এলো, ?পঠের দিকে ছড়ানো । একেবারে সাদা শাঁড় পরেছে, সদ্য পাট ভাঙা, কালো পাড়। গায়ের জামাটাও সাদা। মুখ চোখ পাঁরচ্কার, ধবধবে, কোনো প্রসাধন নেই। কেমন একটা আদ্র স্নিগ্ধ ভাব তাকে জাঁড়য়ে রয়েছে। চা করে এনোঁছল মীবা। দুজনের জন্যেই। বলল, “নন, চা খান_, বুকেলে তো চা খেতে পান নি। শুধুই, ভিজেছেন।” মীরার গলার স্বর সামান্য ভাঙা শোনাল। ঠাণ্ডা লেগেছে বোধ হয়। সুরপাঁতি চা নিল। বলল, “আবার কি স্নান করলেন ?» “না! আবার-!” মীরা বাঁ হাতে মাথার ছড়ানো চুল কাঁধের পাশ থেকে সরাল। গলায় শব্দ করল- ঠাণ্ডায় গলা জবালা করছে। টাগরার কাছে শব্দ হল। সুরপাঁতি চায়ে চুমুক 'দয়ে আরাম পেল। মাথাটা ধরে আসছে। হয়ত চায়ের পর ছেড়ে যাবে। ১২৭ মীরাও চা খেতে লাগল। সে বছানায় বসেছে। “এদকেও ভাল বৃম্টি হবে” সুরপাঁত অন্যমনস্কভাবে বলল। মীরা এমন করে চোখ তুলল যেন বৃন্টি সে দেখেই এসেছে। খ*জে পেতে সূরপাঁত ঘরে সিগারেটের প্যাকেট পেয়েছিল একটা । গোটা পাঁচেক রয়েছে এখনও । িসগারেট ধরাল। “ক'টা বাজল এখন ?” “প্রায় আট ।” প্রমথ ফিরতে রাত করলে ভিজবে।” “বলল তো" পরে ফিরবে । বন্ধ্দের সঞ্জো রয়েছে ।” মীরা উদাসীন গলায় বলল । [সগারেটের ধোঁয়া চোখে লেগেছিল সুরপাঁতির, ডান চোখের পাতা বুজে এল, ছলছল করল সামান্য। প্রমথ কী অসন্তুষ্ট হয়েছে; বড় গম্ভীর দেখা- চ্ছল তাকে । কথাও বলে গন বড় একটা। মীরা না সুরপাঁতি-কার ওপর সে রন্তু; না দুজনের ওপরেই; সুরপাঁতর আবার বাগানবাঁড়র সেই দৃশ্য মনে পড়ল। অস্বাস্ত বোধ করল সে। মীরা জিব আর টাগরায় শব্দ করে গলা চুলকোলো। তারপর তাড়া- তাঁড় চায়ের কাপ সরিয়ে রেখে বার কয় জোরে জোরে হাচিল। বৃষ্টির শব্দ শোনা গেল আচমকা, ঠিক যেন অজন্ত্র গাছের পাতা বাতাসের দমকায় কেপে উঠল শব্দ করে। মীরা নিজেকে সামলে নিয়ে হেসে বলল, “ঠাণ্ডাই লেগে গেল বোধ হয়।...এ-বয়েসে ভেজাভাঁজর শাক্তি..। দিন আপনার কাপটা দন-চা আরও রয়েছে; 'ানয়ে আস ।” সূরপাঁত চায়ের কাপ এগিয়ে দেবার আগেই মরা উঠে দাঁড়াল। এঁদকেও বৃষ্টি নামল। শেষ শীতের এই ঝড় জল অল্প শীত এনেছে। রাত্রে হয়ত ঠান্ডা বাড়বে। সুরপাঁত কান পেতে জানলায় বৃষ্টির ঝাপটা শনতে শুনতে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ল। আজকের 'বিকেলটা কে কোথায় সাঁজয়ে রেখোছল- কেমন করে এসে গেল আচমকা কে জানে! মাঝে মাঝে সূরপাঁতর মনে হয়, কে যেন-যাকে দেখা যায় না. বোঝা যায় না_সেই মান্ষটা সমস্ত কিছ; সাঁজয়ে রাখে জীবনের । আজও রেখোঁছল। নয়ত কেমন করে মীরা আর সুরপাঁত মান্দরে দাঁড়য়ে এক তুমুল ঝড়বাম্টতে 1ভজে এল। ইটের ভাঙা মান্দরটা নিতান্তই ছোট, ওটা মান্দর ছিল না, অন্য 1কছ তাও বলা মুশাকল। ইটের স্তূপ বললেও বলা যায়। মাথার ওপর সামান্য আচ্ছাদন ছিল এই যা রক্ষে। মীরা, যাকে সুরপাঁত প্রমথর বউ ণসেবে আজ কাঁদন নিত্যই দেখছে-সেই মীরাকে তখন বোঝা যাচ্ছিল না। কিছ একটা হয়োছিল মীরার, দুর্ধোগের ভীতি শুধু নয়, যে বিহবলতা ১২৮ মানুষকে বোধহীন করে-তেমন িছু। সুরপাঁত অনুভব করাছল- মরা যেন কোনো গভীর সান্নধ্যের জন্যে ব্যাকুল হয়ে পড়াঁছল। এই ব্যাকুলতার জন্যেই কনা-যার 'কছু অবাঁশষ্ট মীরার চোখে মূখে লেগে ছিল- প্রমথর চোখে পড়েছে। সুরপাতি বুঝতে পারছে না, প্রমথ তার স্ত্রীর সিম্তবাস এবং চোখমুখের চেহারা দেখে কিছু সন্দেহ করেছে কনা! অন্যদের দ্ম্টও সূরপাঁতর পছন্দ হয়াঁন। চা নিয়ে মীরা আবার এল। সহরপাঁতি কপালে হাত রেখে চোখ বুজে বসে ছিল। পায়ের শব্দে মুখ তুলল। চা দিয়ে মীরা সামনেই দাঁড়য়ে থাকল সামান্য, তারপর বিছানায় গিয়ে বসল। বলল, “কী ভাবছেন 2” মীরা গায়ে চাদর নিয়েছে এবার। “না, কি আর...» “অত ভাবনার কিছু নেই", মীরা কেমন উপেক্ষার গলায় বলল। নজের জন্যেও আবার চা এনেছে। বৃম্টর শব্দ শুনতে শুনতে সুরপাতি বলল, “প্রমথ আবার বৃম্টিব মধে] পড়ল।” মীরা সুরপাঁতকে লক্ষ করছিল; বলল, “আপনাব দুশ্চিন্তা বন্ধুকে [নয়ে, না অন্য কিছু 2৮ সুরপাঁতি মীরার গলার চাপা বিদ্রুপ এবং ঈষৎ ঝাঝ বুঝতে পারল। বলল, “প্রমথ বোধ হয় অসন্তুষ্ট হয়েছে।” “কেন হবে?” মীরা শন্ত স্পম্ট গলায় বলল, “বাড়তে যে তার বউকে চাঁব্বশ ঘন্টা বন্ধুর কাছে ছেড়ে রেখে যেতে পাবে বাইরে এক দু ঘন্টা সে বউকে বন্ধূব সঙ্গে মিশতে দিতে পারে না?” সুরপতি চুপ করেই থাকল। অপেক্ষা করে মীরা বলল, “আপনার বন্ধুকে নয়ে মাথা ঘামাত হবে না। আম ওসব গ্রাহ্য কার না।” সুরপাঁত নীরব। , বৃম্টির শব্দ ছাড়া সারা বাড়তে অন্য কোনো সাড়াশব্দ নেই। কেমন নীরবতা অন্তঃন্রোতের মতন বয়ে যাঁচ্ছিল। সুবপাঁতি আর মীরাকে প্রায় বাচ্ছন্ন করে ফেলছিল। কছ্ু সময় কেউ কোনো কথা বলল না, মীবাই প্রথমে অধৈর্য হল. বিছানার ওপর বাঁ হাত বেখে চাদরে হাত বোলাতে বোলাতে নিজের ভাঙা ছায়া দেখল, মুখ 'ফারয়ে নিল, তাকাল সুবপাঁতিব দকে। সুরপাঁত নিঃসাড় বসে আছে। বৃম্টির সেই একই রকম শব্দ। মীরা যেন সহসা কোনো ঘোর থেকে জেগে উঠল। হাতের কাপ নামিষে রেখে গলায় শব্দ করল। বলল, “একটা কথা আজ ীজজ্ঞেস কার। করব ?” প্রচ্ছন্ন -৯ ৯২৯) সুরপাঁত সচেতন হল না পুরোপ্যীর, অনমনস্কভাবেই বলল, “বলুন?” মীরা কোলের ওপর হাত জড় করল। পা কেপে উঠল সামান্য। বলল, “সেই কবে কী ঘটোছল, আমার কাছে তো কেমন ছেলেমানুষিই মনে হচ্ছে, সেই জের কি আপাঁন এখনও সাঁত্য সাঁত্য টেনে নিয়ে যাচ্ছেন ?” সুরপাঁতি মীরার চোখের তারায় চোখ রেখে নির্বাক থাকল। পরে বলল, “আমরা কে ষে কোন্‌ জেরটা টেনে নিয়ে যাই, জান না।” “ও কি কথা হল কোনো?” “কেন টহ মীরা কোনো রকম অপ্রস্তুত বোধ না করে বলল, “আমায় কবে ভাল লেগোঁছল আপনার সেটা মনে রেখে আপাঁন জীবন কাটাবেন এ আম 'বিশবাস কার না।” “ঁব*বাস করার কথাও নয়।” “তবে?” “আমার জীবনের দু একটা টুকরো কথা হয়ত আপাঁন জানেন, তা থেকে কেমন করে বুঝবেন...” মীরা কথার মধ্যে বাধা দিয়ে বলল, “আপনার কথাই বলুন, শান ।” “কন হবে বলে!” “আপাঁন নাক বন্ধুকেও কিছু বলতে চান না। কেন?” “বলার কিছু নেই”, সুরপতি ম্লান হেসে বলল, “মামুল মানুষ । পেটের ধাল্ধায় নানা জায়গায় ঘুরে বোঁড়য়োছ। কখনো দু পয়সা বেশী রোজ- গার হয়েছে খেটেখুটে। কখনও কম। এইভাবেই কেটে গেছে।” “আপনার পেট চালানোর গল্প তো আঁম জানতে চাইাঁছ না-_-” মীরা বলল, “খাওয়া-পরার গল্প শুনে আমার কা হবে!” “তবে 2” মীরা একটু চুপ করে থেকে বলল, “বলব?” “বলুন 2” “আপনার ভালবাসার কথাই বলুন-৮ মীরা যেন সামান্য লঘু গলা বলল । পাঁরহাস-ছলে। সুরপাতি কোনো রকম অস্বস্তি প্রকাশ করল না। মীরাকে দেখতে দেখতে বলল, “সে-গল্পও বলার মতন নয়।» “কেন ?? “আমি নিজেই বুঝলাম না।” “ক বুঝলেন না? ভালবাসা কাকে বলে-?” মীরা ঠোট টিপে হাসল। “তা ঠিক, কাকেই বা বলে,” সৃরপাঁতি বলল। ৯৩০ মীরা যেন গলা পর্য্ত কোনো কথা টেনে এনোছল, নাঁময়ে ফেলল; সুরপাতকে পরিজ্কার চোখে দেখতে লাগল। শেষে বলল, “আজ দুপুরে আপান অন্য কথা বলেছেন।" মুখের হাঁস মুছে গেল মীরার। “কোন কথা 2১ “আপান বলোছিলেন, আমায় দেখতে এসোঁছিলেন।” সুরপাঁত কথা বলল না। মীরার দিকে চোখ নেই। মাথার চুল টানল, চোখ বন্ধ করল, মুখের ওপর হাত বুলিয়ে নিল। যেন ক্লান্ত লাগছে এই- ভাবে একটা 'সগারেট ধরাল। মীরা অধৈর্য হয়ে বলল, “বলুন।” সুরপাঁতি মীরার 'দকে তাকাল। বলল, “আপনাকে ঠিক দেখতে আঁসাঁন। এখানে হঠাৎ এসে পড়ে দেখোঁছ। না দেখারই কথা, তবু দেখলাম ।” “দেখে কাঁ মনে হল 24 এক মুখ ধোঁয়া টেনে নিল সুরপাঁতি। বুকে গলায় লাগল। পরে বলল, “আমার মতনই।” অবাক চোখে চেয়ে চেয়ে মীরা বলল, “আপনার মতনই! মানে?” “একই রকম। কোনো একটা অভাব নিয়ে আমাদের কেটে গেল।” সুর- পাতি মৃদু, এলোমেলো গলায় বলল, “প্রমথ আপনার ভালবাসার মানুষ নয়।” মাথা নাড়ল মীরা । “না, এরা কেউ আমার ভালবাসার লোক নয়।” “নীলেন্দুও ছিল না,” সূরপাতি বলল, “আমিও নয়।» মীরা স্থির চোখে য়ে থাকল। সুরপ্পাতি বলল, “কাল রাত্রে আপাঁন আমার ঘরে এসেছিলেন আম জানি।” বলে দরদ্রার দিক তাকাল, চুপ করে থাকল কয়েক দণ্ড, আবার বলল, “এ- বাঁড়তৈ আসার পর থেকে আমার কেমন মনে হয়েছিল একাঁদন না একাঁদন আপাঁন আসতে পারেন। কেন মনে হয়েছিল 'জজ্ঞেস করবেন না। হয়োছল। হয়ত 'ানজের সঙ্গে আমি বাজ লড়াঁছলাম। দরজা খুলে রেখে শোবার অভ্যেস এখন আর আমার নেই। আগে ছিল। শ্যামা আমায় দরজা বন্ধ করে শুতে দত না।” সুরপাঁত যেন 'কছ? ভেবে ইচ্ছে করেই শ্যামার নামটা বলল । মীরা কৌতূহল ও আগ্রহের চোখে সুরপঁতিকে দেখল। “শ্যামা আপনার স্তী?” “না; বোন। মাসতৃতো বোন। বেনারসে থাকত ।» মীরা যেন দ্বিধা বোধ করাছল, বুঝতে পারাঁছল না, শ্যামা কেন সুর- পাঁতিকে দরজা বন্ধ করে শুতে দিত না। সূরপাঁতর বুকের অসৃখের জন্যে? ভয় পেত? “শুতে দিত না কেন? অসুখের জন্যে 2” মাথা নাড়ল সূরপাতি। “অসুখ ঠিক নয়; তবু বলতে পারেন অসুখ 1৮ ১৩১ সুরপাঁত বুঝতে পারল না-হঠাং কেন সে কথা বলার সময় সহজ বোধ করছে। নিজের কথা বলতে তার আর অনাগ্রহ নেই, দ্বিধা নেই; বরং কোনো তাড়নায় বা ইচ্ছায় সে যেন স্বেচ্ছায় সমস্ত কথাই বলতে চায়। 'সিগারেটটা আঙ্লে রেখেই সুরপাতি বলল, “আমরা অনেকেই একটা অসুখ নিয়ে বেচে থাঁক। কোনো না কোনো রকমের । শ্যামারও ছিল। আমারও! রমাও তো অসুখ নিয়ে ছিল। তরু” মীরা ভীষণ অবাক হয়ে যাচ্ছিল। শ্যামা, রমা, তরু...এরা কারা? সুর- পাঁত কাদের কথা বলছে? কিসের সম্পর্ক তার এদের সঙ্গে? চোখের ভুরু ঘন হয়ে এল মীরার, জোড়া ভুরু কুচকে এল, দৃষ্ট তীক্ষ হল। বলল, “এরাও কি আপনার বোন ?” সুরপাতি বলল, “রমা শ্যামার বড় বোন। তরু গ্রামের মেয়ে। আম [কিছাদন মর্শদাবাদের দিকে স্কুল মাস্টার করেছিলাম। তরু আমার বাঁড়র কাছেই থাকত। একটা পা ছিল না। কাটা 'ছিল।” মীরা কেমন অপ্রসন্ন হল। তার চোখ মুখ গম্ভীর। বলল, “আপনার স্তী কে?” “এরা কেউ নয়। আমার স্ত্রীর নাম ছিল বকুল।” মীরা দু মুহূর্ত চুপ করে থেকে বলল, “অনেক মেয়েকেই তো আপাঁন তা হলে িনতেন।” মীরার গলার স্বরে ধার ছিল, হয়ত বদ্ুুপও। িগারেটটা ফেলে দিল সুরপাঁত। হঠাং নেশা হয়ে গেলে যেমন হয়, সমরপাঁত কেমন একটা ঝোঁক ও অদ্ভূত আবেগ বোধ করতে লাগল। বলল, “আপাঁন আমার কাছে ভালবাসার গল্প শুনতে চেয়োছলেন, আমার জাবনের। এরা কেউ আমার পুরোপাীর ভালবাসার মানুষ নয়, তবু এরা ছিল, জীবনে এসোছল। যেমন নীলেন্দুরা কিংবা প্রমথ আপনার এসেছে।” মীরার চোখমূখ গরম হয়ে উঠল হঠাং। সূরপাঁত কি তাকে অপমান করছে£ চোখের মধ্যে জালা জবালা করে উঠল । “এরা তবে আপনার আধা- আধি ভালবাসার মানুষ 2” “বোধ হয় সকলে তাও নয়” সৃরপঁতি বলল। “তরু ছিল গ্রাম্য, সরল, সাধারণ। তার কাছে মায়া-যত্র ছিল। কিন্তু মেয়েদের শরীরের কোনো কোনো খত পুরুষমানুষ পছন্দ করে না। তরুর একটা পা কাটা ছিল, কোমর থেকে ঝুলত। বেচারী তরু । কিন্তু পা-কাটা মেয়ে নিয়ে জীবন কাটানো যায় না।” বলতে বলতে সুরপাঁতি চোখ বন্ধ করল । সেই বৈশাখ দুপুরের আমবাগানের ছাঁব যেন তার চোখের সামনে খুলে পড়ল। কোনো সন্দেহ নেই সূরপাঁত সোঁদন তরুর নগ্ন প্রত্যঙ্জের, পুরুষের পক্ষে যা মোহের এবং প্রয়োজনের-_ তার কাছাকাছি এই বিকাতি বীভৎসতা সহ্য করতে পারেনি । তার ঘৃণা হয়ে- ১৩৭ ছিল। তরুর কোনো দোষ নেই। কন্তু এই বীভংসতাকে উপেক্ষা করে সুর- পাঁত তরুকে 'নত্য শয্যাসাঁঙ্গনী করতে পারত না। সুরপাঁত বলল, “তরুর ছিল পা-কাটা; আর রমার ছিল অন্য অসুখ। তার কী হয়োছল জান না_অমন ধবধবে ফরসা রঙ ধীরে ধীরে নীল দাগে ভরে উঠাছল। কালশিটে পড়ে যেমন নীল থেকে কালো হয়ে আসে সেই রকম। হাত পা গলা মুখ দাগে দাগে ভরে গেল। রমা চেয়োছল দাগগুলো ঢেকে রাখবে । রমা তার শরীর মন সবই ঢেকে রাখতে চেয়েছিল। নিজেকে আড়াল করার লুকিয়ে রাখার এই প্রাণপণ চেম্টা তাকে কই বা দল। রমাকে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করতে হল। ও আমায় কোনোদন ছু বুঝতে দেয়ন। আমায় হয়ত ভালবাসত। বাঁঝাঁন। যাঁদ বা বুঝতে দিত তবু [ক জান...” মীরা বলল, “আপনি ভালবাসতে পারতেন না। শরীরের খঃতের জন্যে” “না, রমার অসুখ শুধু গায়ের চামড়ায় নয়; মনেরও ।” “মনেরও গো “ওর কোনো প্রকাশ ছিল না। জীবনের কোথাও কোনো প্রকাশ থাকবে না_ সুখের নয়_দৃঃখের নয়, ভালবাসার নয়, ঘৃণার নয়_তেমন মানুষ নিয়ে আঁম কী করব! সাংসারক জীবন শুধু নয়_ মানুষের সমস্ত অনুভব যেখানে শুধু চাপাই থাকে তাকে জীবন বলে না।” মীরা শুনছিল। বৃম্টির শব্দ কখন বন্ধ হয়ে গেছে। বাতাসের ঝাপটা লাগাঁছল বারান্দার দিকে। শব্দটা শোনা যাচ্ছল। মীরা বলল, “আর শ্যামা 2” সূরপাঁত চেয়ারে পিঠ এঁলয়ে দিল। মাথার ওপর হাত তুলল; ছাদের [দকে চেয়ে থাকল। কিছুক্ষণ একইভাবে বসে থেকে হাত নামাল, মাথা সোজা করে মীরার দিকে তাকাল। বলল. “শ্যামা আমার স্ত্রী হতে চেয়েছিল।” মরা কেমন অবাক হল। “বোন না!” “মাসতুতো বোনকে বিয়ে করতে আমার বাধত না। শ্যামারও নয়। তার কাছে অনেক কিছুর কোনো দাম ছিল না। চলাতি নীতিটশীতি, সংস্কার, নিষেধ সে মানত না। ও ছিল আশ্চর্য রকমের স্বেচ্ছাচারী। শরীর মন কোনো ণকছতেই তার খদুতখদুতেপনা ছিল না। 'নজেকে ছাড়া শ্যামা অন্য ছু গ্রাহ্য করত না।” বলতে বলতে সুরপাঁতি থামল । মীরা দেখছিল, একটা মানুষ কেমন বদলে যায়। এই সুরপাঁত প্রথম যোঁদন এসোছল সোঁদন তাকে দেখে একরকম মনে হয়েছিল মীরার। পরের [দন আর-এক রকম। তারপর মান্র চার পাঁচটা দিনের মধ্যে সুরপাঁত কত বদলে গেল। মানুষটা যে বদলাল তা নয়, মীরা ওকে যত বেশী করে চিনছে, ১৩৩ দেখছে_লোকটার কোনো তল পাওয়া যাচ্ছে না। এখন আবার গরম লাগায় গায়ের চাদর আলগা করে দিল মীরা। সুরপাতি শ্যামার কথা ভাবাছল। শ্যামার কোনো ছুই ভুলে যাবার নয়; সুরপতি শ্যামার প্রার সবটাই চিনোৌছল। নজের স্পৃহা, আকাঙ্ক্ষা, বাসনা; নিজের প্রয়োজন ও জেদ- শ্যামাকে এমন একটা চেহারা দয়োছল যে সৃরপাঁতির মনে হত, শ্যামা কোনো ভয়ংকর যাদুকরীর মতন দাঁড়য়ে আছে। সুরপাতি ওকে ভয় পেত। মীরা কেমন অদ্ভূত গলায় বলল, “শ্যামা ?িছু মানত না বলেই আপাঁন বুঝি মানলেন 2” মাথা নেড়ে সুরপাঁতি বলল, “না, তা নয়। শ্যামা হাতের মুঠো খুলে তার বাইরের সমস্তই দিতে পারত--কন্তু ভেতরে সে অন্যরকম ছল । শ্যামা ভাবত, তার পছন্দের পুরুষমানুষ তার কেনা হয়ে থাকবে, তার খেয়লের চাকর । ও ছিল ভীষণ স্বার্থপর, আত্মসূখী, নিষ্ঠুর। শ্যামা আমায় সমস্ত দিক থেকে গ্রাস করতে চেয়োছল।"” সুরপাঁতি বলতে বলতে কাতর ও বপন হল। থেনে গেল। শেষে দীর্ঘ করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “আম পালয়ে এলাম।” মীরা স্থির হয়ে বসে থাকল। মনে মনে যেন শ্যামার একটা চেহারা গড়ে নেবার চেম্টা করছিল। অজ্পক্ষণ কোনো কথা বলল না মীরা, পরে জিজ্ঞেস করল, “আর আপনার স্তী 2 সূরপাতি বলল, “ঘটনাচক্রে বকুল আমার স্ত্রী হয়েছিল। প্রেম ভালবাসা পছন্দের কোনো ব্যাপার নেই। রাঁচিতে হেম মণ্ডলের চামড়ার কারবারে বকুল চামড়ার গুদোম দেখত। হেম মন্ডলের হাত থেকে বাঁচবার জন্যে সে আমার কাছে এসোছল। বুনো ধরনের মেয়েমানুষ। বছর দেড়েক ছিল-তাতেই আমি আতিষ্ঠ হয়ে উঠোছলাম। আমার কাঠের কারবার ডুবতে বসেছিল। শেষ পর্যন্ত একদিন হাজার কয়েক টাকা চুরি করে সে পালাল। আম বাঁচিলাম ।” মীরা কিছক্ষণ সুরপাঁতির মুখের দিকে অপলকে চেয়ে থাকল, তারপর মুখ ফেরাল। দেওয়ালে রুমাঁকর ছবি, এখান থেকে দেখা যায় না ছাঁবটা হালকা রঙের একটা ক্যালেপ্ডার সামান্য তফাতে। কেমন করে যেন কয়েকটা অচিড় লেগেছে দেওয়ালে । বাইরে বৃষ্টি নেই। কোনো শব্দ শোনা যাচ্ছে না। এখনও বাতাস রয়েছে ঝোড়ো । নিঃ*বাস ফেলল মীরা বড় করে। সুরপাঁত যা বলল, এ কী তার ভালবাসার গল্প? যাঁদ ভালবাসার গ্প হয় তবে মানুষটা কোথাও দাঁড়াল না কেন? কেন ঘর-সংসার করে বসল না? পরেই মীরার মনে হল, ঘর-সংসার করে বসলেই 'কি সুখ শান্তি উড়ে এসে জূড়ে বসে? মীরা তো কবেই এই সংসার নিয়ে বসেছে। কিন্তু কেন ১৩৪. সে তৃপ্তি পায় নাঃ কেন তার জাঁবন এমন 'বস্বাদ ? 'দন কেটে যাচ্ছে অবশ্য। প্রমথ তার কাছে অভ্যাসের মতন, কতব্যের মতন। প্রমথ তাকে যথার্থ কোনো আনন্দ দিতে পারে না। কে জানে প্রমথ যাঁদ তার পছন্দের মানুষ হত হয়ত মীরা এরকম হত না। দারাঁজাঁলঙের জামাইবাবু, কিংবা এর ওর সঙ্গে যেরকম মেশামেশি ছিল মীরার, তাতে সে দেখেছে- প্রমথ প্রায় প্রত্যেকের তুলনায় ভোঁতা, ম্যাড়মেড়ে সাধারণ । প্রমথ বউ নিয়ে আঁদখ্যেতা করতে পারে, লোকের কাছে তার বরাতজোরে পাওয়া সুন্দরী স্ত্রী দৌখয়ে ডগমগ হতে পারে, জের বাঁড়র দায়-দায়ত্ব মীরার কাঁধে চাপিয়ে হালকা নিশ্চিন্ত হতে পারে, কিন্তু প্রমথ বোঝে না-বা জানেই না-তার বউ এতে কৃতকৃতার্থ হয় না। মীরা এমন ?িকছু চেয়োছিল--যা তার কাছে: সত্য হবে। হল কই? মীরা যেন অনেক দিনের চাপা কোনো বেদনাকে বুকের ওপর ভেসে উঠতে অনন্ভব করল। করে 'নঃ*বাস ফেলল দীর্ঘ করে। বড় বষগ্ন, ক্ষব্ধ, মালন দেখাচ্ছিল তার মুখ। িকসের অস্বাস্তবশে কিংবা অন্যমনস্কতার দরুণ চাদরটা খুলে ফেলল । সুরপাতি অন্যমনস্কভাবে আবার সিগারেট ধরাল। হয়ত ভেতরে ভেতরে কোথাও তার স্নায়ু অবসাদে শাথিল হয়ে আসাঁছল। দীর্ঘ সময় দুজনেই নীরব। যেন কোনো দূরত্ব যা পরস্পরকে বিচ্ছিন্ন কবে রেখোঁছল ক্রমশই ওা ঘ.চে যাচ্ছে, পরস্পরের কছান্াাছ হয়ে আসছে। মীবা হঠাং বলল, “আপাঁন বড় বেশী খুতখঠতে। এত খুতখতে হলে সংসারে |বছু পাওয়া যায় না।" সরপাঁত মীরার ?দকে আকয়ে বলল, “বেধ হয় তই।...আম নিজেই মাঝে মাঝে ভাব এত খদভখ*ত করে কবা লাভ হল?” “করলেন কেন £? মুখের কাছে ধোঁয়ার ঝাপসা কেটে যাবার পর সুরপাঁতি বলল, “কী জান; আম আমার চোখ ও মনের পছন্দ মতন কাউকে খুজোছলাম। শুনলে হয়ত ভাববেন_ ছেলেমানাঁষ কথা বলাছ। তানয়। আম বোধ হয় নিজের রুঁচ- মতন সেই কবে_ আমার প্রথম যৌবনে, সোন্দর্য ও ভালবাসা খসুজেছিলাম । টুকরো টুকরো করে কিছ পেতে চাইন। কাজ চালাবার মতন করে কোনো মেয়েকে পাওয়া আমার সইতো না।” “এতে লাভ কী হলঃ কিছুই তো পেলেন না।” “কপাল মন্দ” সুরপাতি ম্লান করে হাসল। মীরা কিছু ভাবছিল। বলল, “আপাঁন কি সাঁতিই আমায় ভালবেসৌছিলেন ?” সুরপাঁত মশরার চোখের তারার ?দকে, সেই ব্যাকুল অথচ 'বষগ্ দৃষ্টির ১৯৩ দিকে তাঁকয়ে বলল,“কেউ জোর করে ভালবাসার কথা বলতে পারে না। বে! হয় বেসোছলাম।” কি যেন মীরার সর্বাঞ্গে রোমান জাগাল। সিরাঁসর করে উঠল। বুঝে তলায় কেমন গলে যাঁচ্ছল তার সমস্ত অনুভূতি । মীরা বলল, “আমি &ে বাস নি।” “তবু আপাঁন আমার ঘরে মাঝরাতে আসেন!” মীরা এবার আর চমকে উঠল না; অবাকও হল না। বুকের মধ্যে চাপা। *শবাস ছাঁড়য়ে পড়তে লাগল। কম্ট হল। সামান্য সময় যেন সেই কষ্টটা সামলাবার জন্যে মুখ নীচ করে থাকল। মীরা বুঝতে পারল না।_কেন সে সুরপতির ঘরে গিয়েছিল কাল? আগের দিন শেষ রাতে ঘুম ভেঙে উঠে আসা এক কথা। ঘরে £করে যাবার সময় সুরপাঁতির ঘরের দরজা খোলা দেখে তার কৌতূহল ও দন্ীশ্ন্তা হয়োছিল। কন্তু কাল মাঝরাতে কেন িয়োছল মীরাঃ কেন চোরের মতন সূরপাঁতর বিছানার পাশে দাঁড়য়ে ছিল? কেন এক দুবোধ্য বেদনায় সে গুমরে কেদে উঠেছিল পাছে সুরপতির ঘুম ভেঙে যায়--পালিয়ে এসে বারান্দায় বসে কেদেছে! কেন এমন হল? মীরা কী খবজতে, কাকে দেখতে এত সন্তর্পণে সূরপাঁতির ঘরে ঢুকেছিল ? স্তব্ধ, নিঃসাড় ঘরে মীরা মুখ নীচু করে বসে থাকল। সুরপাতিও নীরব । খুবই আচমকা এই স্তব্ধতা ভেঙে কলিং বেল বেজে উঠল। মরা চমকে উঠেছিল। বেল বাজছে তো বাজছেই। বিলশ্ত্রী, ককর্শ, বীভংসভাবে বেলটা বাজতে লাগল। মীরা উঠল। বিরন্ত হয়েছে ভীষণ। প্রমথ ফিরেছে। সুরপাঁতি ঘরে বসেই বুঝতে পারল প্রমথ ফিরে এল। দরজা বন্ধর শব্দ ক যেন বলল প্রমথ, শোনা গেল না। প্রমথ বসার ঘর থেকে প্যাসেজে এসেই সুরপাঁতির ঘরের দিকে আসছে; পায়ের শব্দ পেল সুরপাঁতি। প্রমথ ঘর এল। মাথার চুল উসকোখুসকো জলেঝড়ে উদদ্রান্ত যত না তার বেশশ তাকে অস্বাভাঁবক দেখাঁচ্ছল। অনেকটা মদ খেয়েছে। চোখ লালখ পাতাগুলো ফুলে উঠেছে। মুখ টসটস করাছল। পায়ে জোর নেই, টলছে। হেশচকি তুলাছল। প্রমথ ঘরের চৌকাট পোঁরয়ে দু পা এসে দাঁড়াল। সুরপাঁতিকে দেখতে লাগল। সূরপাঁত প্রমথর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারল, কিসের যেন প্রচণ্ড আক্রোশ; ঘৃণা, 'তন্ততা "নিয়ে প্রমথ দাঁড়য়ে আছে। প্রমথ একবার 'বছানার 'দকে তাকাল। মীরার গায়ের চাদর পড়ে আছে। ১৩৬ সূরপাঁতি বলল, “তোর এত দেরী হল?” প্রমথ কথা বলল না। মাথা নাড়তে লাগল। কাচের গ্লাসে ভরাঁত করে জল এনে মীরা প্রমথর পাশে দাঁড়াল। “নাও ।» প্রমথ মুখ ফিরিয়ে দেখল মশীরাকে। জল 'নল। মদের গন্ধ বুঝ সহ্য হচ্ছিল না মীরার, প্রমথর পাশ থেকে সরে দু পা এগিয়ে এল। হে“চাঁক তুলল প্রমথ। জল খেল সামান্য। তারপর সুরপাঁতর দিকে তাকিয়ে হঠাৎ চিৎকার করে বলল, “তুই শালা আমার বউকে-” বলতে না বলতে, জড়ানো কথার মধ্যেই প্রমথ হাত তুলল। টলে যাঁচ্ছল প্রমথ। ক্ষিপ্ত, হিংস্রভাবে হাত তুলে একেবারেই আচমকা হাতের গ্লাস ছংড়ে মারল সুরপাঁতিকে। সরপাঁতি চোখমুখ বাঁচাবার জন্যে মুখ নামিয়ে 'নয়েছিল। গ্লাসটা তার মাথায় এসে লাগল। আওয়াজ হল ঠক্‌ করে, জোরে। কাচের টুকরো আর জল ছড়িয়ে পড়ল সুরপাঁতির চারপাশে । মীরা শুধু সুরপাঁতর অস্ফুট যন্ত্রণার স্বর শুনতে পেল। এত আচমকা, অপ্রত্যাশিতভাবে ঘটনাটা ঘটে গেল যে সে একেবারেই বিম্‌ঢ়, 'নর্বাক। প্রমথ খেপার মতন মাতাল গলায় চেশচয়ে চেশচয়ে বলল, “শালা স্কাউন্ড্রেল, বদমাশ, শুয়ারের বাচ্চা। তোকে বন্ধু বলে ঘরে এনোছলাম। তুইও শালা ওই হারামজাদা মাগীটার সঙ্গে..ছি ছি ছি_আমার মুখ দেখাবার ণকছু থাকল না, ছি গছ।” প্রমথ কিছ: গ্রাহ্য করল না, চে'চাতে চেশ্চাতে টলতে টলতে বাইরে চলে গেল। সরপাঁতি মাথা থেকে হাত নামাল। হাতময় রন্ত। মীরা নিজেকে কোনো রকমে সামলে নিয়েছিল। দ্রুত পায়ে কাছে এসে দাঁড়াল। সরপাঁতির হাতে রন্ত। কানের পাশ 'দিয়ে রন্তু গাঁড়য়ে পড়তে শব করেছে। 1িবহহল, ভীত হয়ে মীরা তাড়াতাঁড় সৃরপাঁতর মাথা ধরে ফেলল । যল্রণায় কেমন নীল হয়ে গেছে সুরপাঁতির মুখ । চোখ বন্ধ করে আছে। তার কোলের ওপর, চেয়ারে, পায়ের কাছে ভাঙা কাচের টুকরো । মীরা শিউরে উঠল। প্রায় কেদে ফেলে বলল, “ইস-স, মাথাটা গেছে ।” বলতে বলতে দিশেহারা হয়ে বাইরে ছটে গেল। সুরপতি হাতটা আবার মাথায় তুলল। নামাল। দেখল তার কপাল বেয়ে গাঁড়য়ে রন্তু পড়ছে, গালে নেমে এল। কানের পাশ 'দিয়ে গড়ানো রন্তু ঘাড়ের দকে নামছে। ১৩৭ ততক্ষণে মীরা আবার এসে গেছে। জল আর কাপড়ের টুকরো নিয়ে, তুলো নিয়ে। “দাঁড়ান, দাঁড়ান আম দেখাঁছ-” মীরা সূরপাঁতর মাথার চুল সাঁরয়ে সারয়ে আঘাতটা খজছিল। রন্তে চুল জাঁড়য়ে গেছে, জলে ভেজা মাথা। বড় বেশী রন্ত পড়াঁছিল। মীরা সুরপাঁতিকে বলল, “একটু উঠহন, নীচে নেমে বসুন ।৮ মাটিতে বসাল। সূরপাঁতি চোখ বন্ধ করে বসে থাকল। যন্ত্রণা যেন স্নায় থেকে আরও কোনো গভীরে ছড়িয়ে যাঁচ্ছিল। মীরা মাথা ধুইয়ে দিচ্ছিল, রন্ত পাঁরজ্কার করাছল। সরপতির কপাল, কান, গলা, হাত পাঁরজ্কার করে দিতে দিতে মরা থরথর করে কাঁপাঁছল, ' কাঁদীছিল। হঠাৎ মীরার মনে পড়ল, মাত্র পরশু সে স্বপ্ন দেখেছে, সুরপাঁতব মাথায় সে আবির মাখিয়ে দিয়েছিল, অথচ আবিরের লাল নয়__ মাথা চ*ইয়ে,, কান, কপাল গাঁড়য়ে শুধু রন্তই পড়াছল। সূরপাতর মুখ, গলা বেয়ে বন্ত পড়তে পড়তে জামা ভিজে গেল। মীরা এত রন্ত দেখে নি। সে 'দশেহারা হয়ে ভয় পেয়ে সুরপাঁতিকে কুয়োতলায় 'নয়ে যেতে চাইছিল। জল ঢেলে পরিহ্কার করে দেবে। স্বপ্নটা সেখানেই ভেঙে গগয়োছল। ভূয় পেয়েছিল মীরা । কে জানত সেই স্বপ্ন মাত্র দ্বাদন পরেই এমন করে সত্য হয়ে দেখা দেবে । মীরা স্বপ্নে ঘত ব্যাকুল, বিভ্রান্ত হয়োছল-_ এখন তার চেয়ে বেশী বিমূঢড় ও কাতর বোধ করছে। মীরা জানে না, কোন গভাঁরমত দুঃখ ও হাহাকার বুকে 'নয়ে আজ সে এত যত্র করে, নিজেরই দেওয়া কোনো আঘাতের মতন সুরপাঁতর এ আঘাতকে শশ্রুষা করছে। সুরপতি দুর্বল গলায় বলল, “ছেড়ে দন। আম বরং কোনো ডান্তার' খানাই যাই ।» “না। এখনও রন্তু বন্ধ হয় নি।” “হয়ে যাবে।” বলে যন্ত্রণা চাপার শব্দ করল সুরপতি মুখে । বলল, “আমার এমনই কপাল-একই জায়গায় বার বার লাগছে।” সূরপাঁতির মনে হাঁচছিল- সেই প্রথম যৌবনে ঠিক ওই জায়গায় নীলেন্দু তাকে মেরোছিল পাঁরণত যৌবনে শ্যামাও রেগে গিয়ে কাচের গ্লাস ছংড়ে তাকে ওই জায়গ' টাতেই আঘাত করেছিল। আর আজ প্রমথ মারল। প্রতিবার একই জায়গায় কেন এই আঘাতঃ কেন এই রন্তপাত?ঃ মীরা এক হাতে কাটা জায়গায় একরাশ তুলো প্রাণপণ শীন্ততে চেপে ৯৩৮