লীল্লন্বলেলন্ত্ হাললম্থাসা প্রথম পর্ব [ * 8110) 1 £ 2৪81 '013- ২ রি ৫ 038 ৪ নি কত আনা খচ ভ্ীপ্রশ্মথ চৌ্ুল্লী ক্যালকাটা পাব্লিশাস্ণ কলেজ খ্রী্ট মার্কেট প্রকাশক-_ শ্রীবারিদকান্তি বন্থু শ্রশরচ্চন্দ্র গুহ, বি-এ ১ ০ ০ 8 মানি, 2 প ৯ ক ও ্ 1 থা সপ & 4 রি রর & চা ৫ শী রশ 1 রি (হাঁস ঝি হালখাতা আজ *'ল। বৈশাখ । নুতন বৎসরের প্রথম দিন অপর /শের অর জাতের পক্ষে আনন্দ উত্সবের দিন। কিন্ত | রাসেটিন চিনি শুধু হালখাতায়। ব্ছরকার দিনে আমরা হু বৎসরের দেনাপাওন। লাভলোকসানের হিসেব নিকেশ করি, ইন খাতা |লি, এবং তার প্রথম পাতার পুরাণো খাতার জের বসে, পর বৎসর যায়, আবার বংসর আসে, কিন্ত মদের হন খাতায় কিছু নতুন লাভের কথা থাকে না। পরা এক হালখাতা থেকে আর এক হালখাতায় শুধু লোক- নর ঘরট। বাড়িয়ে চলেছি। এ ভাবে আর কিছুদিন চল্লে থে আন দর জাতকে দেউলে হ'তে হবে, সে বিষয়ে সন্দেহ 8৮ নেই। লাভের দিকে শূন্য ও লোকসানের দিকে অঙ্ক ক্রমে বেড়ে | নু তবে আমরা ব্যবসা গুটিয়ে নিইনে কেন? কারণ ভবের টি দোকানপাট কেউ স্বেচ্ছায় তোলে-না, তার উপর আবার 0 আছে। লোকে বলে আশা না মলে যায় না। | . আমরা স্বজাতি সম্বন্ধেযে একেবারেই উদাসীন, তা নম্বর! কেলি বৎসর, জাতি হিসেবে কায়স্থ বড় কি বৈদ্য বড়, এই নিয়ে অকটা তর্ক ওঠে। যেহেতু আমর! অপরের তুলনায় সং. পইনেদেই ছোট, সেইজন্য আমাদের নিজোগের মধ্যে কে ছে বড, এ নিয়ে বিবাদবিসম্বাদ করা ডা আর উপায় নেই নিজেকে বড় বলে? পরিচয় দেবার মায়া আমর! ছাড়তে পারিনে ব্য়স্থ' বলেন আমি বড়, বৈদ্য বলেন আমি বড়। শাস্ত্রে যখ ী্া,সুনির নানা মত, তখন সথশ্ম বিচার করে? এ বিষরে ঠিকট সব (করা প্রায় অসম্ভব । বৈদ্যের ব্যবসায় চিকিৎসা »প্রাণ- ই ফরা। ক্ষত্রিয়ের ব্যবসায় 'প্রাণবধ করা,_-অতএব ক্ষত্রিয় নিঃসন্দেহ বৈদ্য অপেক্ষ। জেট! সুতরাং বৈচ্য অপেক্ষা বড হতে গেলে ক্ষত্রিয় হওয়া আবশ্তক, এই মনে করে” জনকতক শয়স্গ-স্মাজের দলপতি ক্ষত্রিয় হবার জন্য বদ্ধপরিধর হয়েছিলেন এ শুভসংবাদ শুনে” আমি একটু বিশেষ উৎ্ফুল্ হ'য়ে উঠেছিলুম ক্ষাবণ প্রথমত: আমি উন্নতির পক্ষপাতী ;_কোন লোক। (8 জাতিবিশেষ আপন চেষ্টায় আপনার অবস্থার থর "পক্ষে স্বাভাবিক। বিশেষত: বাঙ্গলার পক্ষে খন হালখাতা জিনিনটি এতটা নৃতন। নৃতনের প্রতি মন কার না৷ যায়, অন্তত: রঃ হজ জন্যও | অবনতির জন্য কাউকেই আয়াস করতে হয় পা ও একটু টিলে দিলে আপ্না হ'তেই হয়। জড়পদার্থের ঠিযীদি লক্ষণ নিশ্চেষ্টতা, আর জড়পদার্থের প্রধান ধশ্ম অধোগতি-__ চি 1:.১. সম্প্রতি প্রোফেসর জে, সি, বোস্‌ শ্তন্তে রা [রা সমাজে প্রমাণ করেছেন থে, জড়ে ও জীবে দল িদজ্ঞান শুধু ভ্রান্তিমাত্র । সেত্রান্তির মূল, আমাদের চমু ৃষ্টি। তিনি ইলেক্টি সিটির আলোকের সাহায্যে খত দিরেছেন যে, অবস্থ। অনুসারে জড়পদার্থের ভাবভঙ্গী ঠিক্ষ সজীব পদার্থের অুব্ূপ । প্রোফেসর বোস্‌ নিজে বলেন ই-ভারতবাসীর পক্ষে এ কিছু নতুন সত্য বা তথ্য নয়, এ সত্য খাদের পূর্বপুরুষদের কাছে বহুপূর্ধ্বে ধরা পড়েছিল, তাদের দিবা ক্ষ এড়িয়ে যেতে পারেনি; এক কথায় এটা আমাদের পধানদানী সত্য । আমি বলি, তার আর সন্দেহ কি? এ সত্যের শর্ীখের জন্য বিজ্ঞানের সাহায্যও আবশ্যক নয়, এবং আমাদের লির7র কাছেও যাবার দরকার নেই । আমরা প্রতিদিনের করজ়াজীলনের কাজে নিত্য প্রমাণ দিচ্চি যে, আমাদের জে কোন প্রভেদ নেই | স্থৃতরাং কেউ যদি কার্যতঃ প্রমাণ করতে উদ্ঘত হয়, তা হলে নৃতন জীবনের... ৰ ই আভাস পাওয়া যায় । . ১২৯ দের বাঙ্গালী জাতির চিরলজ্জার কথা আমাদের দেশে টি বেটা এর জন্য আমরা অপর বীরজাতির ধিক্কার, ৩ হু বীরবলের হালখাতা লাঞ্ছনা, গঞ্জনা চিরকাল নীরবে সহা করে” আস্ছি। ঘোষ, বোস, মিত্র, দে, দর্ত, গুহ প্রভৃতিরা যে আমাদের এই চিরদিনের লজ্জা দূর, এই চিরদিনের অভাব মোচন কর্বার জন্য কোমর বেধেছিলেন, তার জন্য তারা স্বদেশহিতৈষী ও শ্বজাতিপ্রিয় লোকমাত্রেরই কলৃতজ্ঞতাভাজন হয়েছেন । ছুঃখের বিষয় এই যে, কায়স্থবের! ক্ষত্রিয় হবার জন্য ঠিক পথটা অবলম্বন করেন নি, কাজেই অকুতকাধ্য হয়েছেন । তাদের প্রথম ভুল, শাস্ত্রের প্রমাণের উপর নির্ভর করতে যাওয়া । কি ছিলুম সেইটে স্থির করতে হ'লে, পুরাণে। পাজিপুখি খুলে” বসা আবশ্যক, কিন্তু কি হব.তা স্থির করতে হ'লে ইতিহাসের সাহাধ্য অনাবশ্তক | ভবিষ্যতের বিষয় অতীত কি সাক্ষী দেবে? বিশেষতঃ বিষয়ট। হচ্চে যখন ক্ষত্রির হওয়া, তখন গায়ের জোরই যথেষ্ট । কিন্ত আমাদের এমনি অভ্যাস খারাপ হয়েছে যে, আমরা শাস্ত্রের দোহাই না দিয়ে একপদও অগ্রসর হ'তে পারিনে। পৃথিবীতে মানুষের উপর মান্থুষ অত্যাচার করুবার জন্য ছুটি মারাত্মক জিনিসের স্থষ্টি করেছে, অস্ত্রশস্ত্র ও শান্ত্র। আমরা অত্যন্ত নিরীহ, কারও সঙ্গে মুখে ছাড়া ঝগড়৷ বিবাদ করিনে, যেখানে লড়াই হচ্চে সে পাড়। দিয়ে হাটিনে ;__এই উপায়ে যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্রকে বেবাক্‌ ফাঁকি দিয়েছি । যা কিছু বাকি আছে ডাক্তারের হাতে । আমর চিররুগ্র, স্থতরাৎ ডাক্তারকে ছেড়ে আমরা ঘর করতে পারিনে,_এই' উভয় সন্কটে আমরা হোমিও- প্যাথি ও কবিরাজীর শরণাপন্ন হ'য়ে সে অস্ত্রশস্তেরও সংস্পর্শ ৪ হালখাতা এড়িয়েছি। আমাদের যখন এত বুদ্ধি, তখন শাস্ত্রের হাত থেবে উদ্ধার পাই, এমন কি কিছু উপায় বা”র করতে পারিনে ? কিন্তু ক্ষত্রিয় হওয়া কায়স্থের কপালে ঘট্ল না । রাজ বিনয়কুষ্ণ দেব একে কায়স্থের দলপতি, তার উপর আবা; গোষ্ঠীপতি, সৃতরাং তিনি যখন এ ব্যাপারে বিরোধী হলেন তখন অপর পক্ষ ভয়ে নিরস্ত হলেন । ধার! ক্ষত্রিয় হতে উদ্যত তাদের ভয় জিনিসটা যে আগে হ'তেই ত্যাগ করা নিতান্ত আবশ্যক, এ কথা বোঝা উচিত ছিল । ভীরুতা ও ক্ষাত্রধশ্ ফ২ একসঙ্গে থাকৃতে পারে না, এ কথা বোধ হয় তারা অবগত ছিলেন না । তবে হয়ত মনে করেছিলেন, যখন মূর্থ ব্রাহ্মণ দেশ ছেয়ে গেছে, তখন ভীরু ক্ষত্রিয়ে আপত্তি কি? জড়পদার্থেরও একটা অস্তনিহিত শক্তি আছে, তার কার্ধ্য হচ্চে চলৎশক্তি রহিত কর! । আমাদের সমাকে যে নাড়ানো যায় না, তার কারণ এই ই £ড়শক্তিই আমাদের সমীজে সর্বজরী শক্তি । রাজ! বিনয়রৃষ্জ যে কারস্থমমাজের সংস্কারের উদ্যোগে গা দিয়েছেন, শুধু তাই নয়,তিনি এবার সমগ্র ভারতবর্ষের দীক্ডায় সমাজ-সংস্কার-মহাসভার সভাপতির আসন থেকে এই মত বাক্ত করেছেন ষে, হিন্দুদমাজে অনেক দোষ থাকতে পারে, এবং সে দোষ না থাকৃলে সমাজের উপকার হ'তে পারে, অতএব সমাজসংস্কারের চেষ্টা করা অকর্তব্য। স্মাজের স্থষ্টি ও গঠন অতীতে, স্থতরাৎ তার সঙ্্কার ও পরিবর্তন হবে । বর্তমানের কোনও কর্তব্য. নেই, কোনও দায়িত্ব নেই । ৫ সমাজ গড়ে মানুষে, ইচ্ছে করুলে ভাঙতে পারে মান্ুষে”-অতএব মানষে তার সংস্কার করুতে পারে না, সে ভার সময়ের হাতে, অন্ধ গ্রকৃতির হাতে । এ মত যে অস্বীকার করে, সে 80715 পড়েনি । আজকাল এক শ্রেণীর লোক আছেন ধারা সমাজের অবস্থা, দেশের অবস্থা, নিজেদের অবস্থা, এই সব বিষয়েই একটু আধ্টু চিন্তা করে” থাকেন, এবং শেষে এই সিদ্ধান্তে উপস্থিত হন যে, সাবধানের মার নেই । এঁর! সব জিনিসই ধীরে স্বৃস্থে ঠাণ্ডাভাবে কর্বার পক্ষপাতী । এরা রোখ্‌ করে” স্মুখে এগোতে চান না বলে” কেউ যেন মনে না ভাবেন যে, এরা পিছনে ফিরতে চান । যেখানে আছি সেখানে থাকাই এর! বুদ্ধির কাজ মনে করেন । বরং একটু অগ্রসর হওয়াই এরা অনুমোদন করেন, কিন্তু সে বড় আস্তে, বড় সন্তর্পণে। যে হাড়-বাঙ্গালী ভাব অধিকাংশ লোকের ভিতর অব্যক্তভাবে আছে, এ 2 কেউ পরিষ্কার স্থন্দর ইংরাজীতে তা ব্যক্ত করেন টি +-সংক্ষেপে এদের বক্তব্য এই যে, জীবনের গাধাবোট উন্নতির ক্ষীণ শ্রোতে ভাসাও, সে একটু একটু করে” অগ্রসর হবে, যদিচ চোখে দেখতে মনে হবে চল্ছে না। কিন্ত খবরদার লগি মেরো নী, দাড় ফেলো! না, গুণ টেনো না, পাল খাটিয়ো না,-_শুধু চুপটি করে? হালটি ধ'রে বসে, থেকো । এই মতের নাম হচ্চে বিজ্ঞতা |] বিজ্ঞতার আমাদের দেশে বড় আদর, বড় মান্য । গাধাবোর্ট চলে না দেখে লোকে মনে করে, না-জানি তাতে কত অগাধ মাল বোঝাই আছে! ৬ হালখাতা বিজ্ঞতা জিনিসটা আমাদের বর্তমান অবস্থায় একটা ফল মাত্র । এ অবস্থাকে ইংরেজীতে বলে 75075161010 7591100১ অর্থাৎ এখন আমাদের জাতির বয়ঃসন্ধি উপস্থিত। বিগ্যাপতি ঠাকুর বয়ঃসন্ধির এই বলে" বর্ণনা করেছেন যে “লখইতে না পার জেঠ কি কনেঠ,৮--এ জোষ্ঠ কি কনিষ্ঠ চেনা যায় না । কাজেই আমরা! কাজে ও কথায় পরিচয় দিই হয় ছেলেমীর, নয় জ্যাঠামীর, ন1 হয় এক সঙ্গে দুয়ের । এই জ্যাঠাছেলের ভাবটা আমাদের বিশেষ মনংপৃত। ছোট ছেলের ছুরস্ত ভাব আমর! মোটেই ভালবাসিনে । তার মুখে পাক! পাকা কথা শোনাই আমাদের পছন্দসই । এই জ্যাঠামীরই ভদ্র নাম বিজ্ঞতা । ধরাকে সরা জ্ঞান করা আমরা সকলেই উপহাসের বিষয় মনে করি, কিন্তু সরাকে ধর! জ্ঞান করা আমাদের কাছে একটা মহৎ জিনিস। কারণ ও মনোভাবটি না থাক্‌লে বিজ্ঞ হওয়া যায় না। 89109. ঘা91801) 5৬০1০6০-প বিপুল রাজ্য বিপ্লবের সমালোচনাস্থত্রে যে মতামত ব্যক্ত করেছেন, সেই মতামত বালবিধবাকে জোর ক'রে বিধব! রাখ্বার স্বপক্ষে, ও কৌলিন্তপ্রথা বজায় রাখবার স্বপক্ষে প্রয়োগ করুলে যে আর পাঁচজনের হাসি পাবে না কেন, তা বুব্তে পারিনে। আমাদের সমাজ ও সামাজিক নিয়ম বহুকাল হ'তে চলে, আস্ছে, আচারে ব্যবহারে আমরা অভ্যাসের দাস । আমাদের শিক্ষা নূতন, সে শিক্ষায় আমাদের মনের বদল হয়েছে। আমাদের সামাজিক ব্যবহারে ও আমাদের মনের ভাবে মিল ৭ বীরবলের হালখাতা নেই। ধীর! মনকে মান্গষের সর্বশ্রেষ্ঠ অংশ বলে" বিশ্বাস করেন, তাঁদের সহজেই ইচ্ছা হয় যে ব্যবহার মনের অন্থরূপ করে আনি। অপর পক্ষে ধার! ছুর্ববল, ভীরু ও অক্ষম, অথচ বুদ্ধিমান-ত্ীরা চেষ্টা করেন তর্কযুক্তির সাহায্যে মনকে ব্যবহারের অনুরূপ করে” আনি । এই উদ্দেশ্টে যে তর্কযুক্তি খুজে পেতে বা'র করা হয়, তারি নাম বিজ্ঞভাব! আমরা বাঙ্গালীজাতি সহজেই দূর্বল, ভীরু ও অক্ষম, সুতরাং স্বভাবের বলে আমরা না ভেবে চিন্তে বিজ্ঞের পদানত হই,_-এই হচ্ছে লার কথা । বৈশাখ, ১৩০৯ কথার কথা সম্প্রতি বাঙ্গল৷ ব্যাকরণ নিয়ে আমাদের ক্ষুত্র সাহিত্য-সমাজে একটা বড় রকম বিবাদের স্থত্রপাত হয়েছে । আমি বৈয়াকরণ নই, হবারও কোন ইচ্ছে নেই। আলেক্জান্দ্রিয়ার বিখ্যাত লাইব্রেরী মুসলমানরা ভম্মসাৎ করেছে বলে" সাধারণতঃ লোকে ছুঃখ করে? থাকে, কিন্ত প্রসিদ্ধ ফরাসী লেখক 11006215175 এর মনোভাব এই যে, ও ছাই গেছে বাচা গেছে! কেন না, সেখানে অভিধান ও ব্যাকরণের এক লক্ষ গ্রন্থ ছিল। “বাব! শুধু কথার উপর এত কথা! আমিও 1100651879এর মতে সায় দিই। যেহেতু আমি ব্যাকরণের কোন ধার ধারিনে, স্থতরা কোন খধিখণমুক্ত হবার জন্য এ বিচারে আমার . যোগ দেবার কোন আবশ্তক ছিল না। কিন্তু তর্ক জিনিসট! আমাদের দেশে তরল পদার্থ, দেখতে না দেখতে বিষয় হ'তে বিষয়ান্তরে অবলীলাক্রমে গড়িয়ে যাওয়াটাই তার স্বভাব। তর্কটা সুরু হয়েছিল ব্যাকরণ নিয়ে, এখন মাঝামাঝি অবস্থায় অলঙ্কার শাস্ত্রে এসে পৌচেছে, শেষ হবে বোধ হয় বৈরাগ্যে। সে যাই হোক্‌, পণ্ডিত শরচ্চন্দ্র শাস্ত্রী মহাশয় এই মত প্রচার করছেন যে, আমর! লেখায় যত অধিক সংস্কৃত শব আমদানি কর্ব, ততই আমাদের সাহিত্যের মঙ্গল । আমার ইচ্ছে বাঙ্গল! ৪ বীরবলের হালখাতা সাহিত্য বাঙ্গলা ভাষাতেই লেখা হয়। ছুর্ববলের স্বভাব, নিজের পায়ের উপর ভর দিয়ে দাড়াতে পারে না। বাইরের একটা আশ্রয় আাক্ড়ে ধরে, রাখতে চায়। আমর! নিজের উন্নতির জন্যে পরের উপর নির্ভর করি। স্বদেশের উন্নতির জন্যে আমরা বিদেশীর মুখাপেক্ষী হয়ে রয়েছি, এবং একই কারণে নিজভাষার শ্রীবৃদ্ধির জন্যে অপর ভাষার সাহাষা ভিক্ষা করি। অপর ভাষা যতই শ্রেষ্ঠ হোক না কেন, তার অঞ্চল ধরে" বেড়ানোটা কি মনুষ্যত্বের পরিচয় দেয়? আমি বলি আমরা নিজেকে একবার পরীক্ষা করে; দেখি না কেন? ফল কি হবে কেউ বল্তে পারে না, কারণ কোন সন্দেহ নেই যে, সে পরীক্ষা আমরা পূর্বে কখনও করিনি । যাক্‌ ওসব বাজে কথা । আমি বাঙ্গালাভাষ। ভালবাসি, সংস্কৃতকে ভক্তি করি। কিন্তু এ শাস্ত্র মানিনে যে, যাকে শ্রদ্ধা করি তারই শ্রাদ্ধ করতে হবে। আমার মত ঠিক, কিম্বা শাস্ত্রী মহাশয়ের মত ঠিক, সে বিচার আমি করুতে বসিনি। শুধু তিনি যে যুক্তি দ্বারা নিজের মত সমর্থন কর্‌তে উদ্যত হয়েছেন, তাই আমি যাচিয়ে দেখতে চাই | (২) কেউ হয়ত প্রথমেই জিজ্ঞাসা কর্তে পারেন, বাঙ্গলাভাষা কাকে বলে? বাঙ্গালীর মুখে এ প্রশ্থ শোভা পায় না! এ প্রশ্নের সহজ উত্তর কি এই নয় যে, যে ভাষা আমরা সকলে জানি, শুনি, বুঝি; যে ভাষায় আমরা ভাবনা, চিন্তা, স্থখ, ছুংখ বিন। ৯ ০ কথার কথা আয়াসে বিন! ক্লেশে বহুকাল হ'তে প্রকাশ করে, আস্ছি, এবং সম্ভবতঃ আরও বহুকাল পধ্যস্ত প্রকাশ করুব, সেই ভাষাই বাঙ্গলাভাষ। ? বাঙ্গলাভাষার অস্তিত্ব প্রকতিবাদ অভিধানের ভিতর নয়, বাঙ্গালীর মুখে । কিন্তু অনেকে দেখতে পাই এই অতি সহজ কথাটা স্বীকার কর্তে নিতান্ত কুষ্ঠিত। শুনতে পাই কোন কোন শাস্ত্রজ্ঞ মৌলবী বলে” থাকেন যে, দিল্লীর বাদসাহ যখন উর্দ্,ভাষ। সুষ্টি করতে বস্লেন, তখন তার অভি- প্রার ছিল একেবারে খাটি ফার্সীভাষা তৈয়ারী করা, কিন্তু বেচারা হিন্দুদের কান্রীকাটিতে রুপা-পরবশ হ'য়ে হিন্দীভাষার কতকগুলি কথা উদ্দতে ঢুকৃতে দিয়েছিলেন! আমাদের মধ্যেও হয়ত . শান্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতদের বিশ্বাস যে, আছিশ্রের আদিপুরুষ যখন গৌড়ভাষা স্থষ্টি করতে উদ্যত হলেন, তখন তার স্বল্প ছিল যে ভাষাটাকে বিলকুল সংস্কৃত ভাষা! করে” তোলেন, শুধু গৌড়বাসীদের প্রতি পরম অন্গৃকম্পাবশতঃ তাদের ভাষার গুটিকতক কথা বাঙ্গলাভাষায় ব্যবহার করুতে অনুমতি দিয়ে- ছিলেন। এখন ধারা সংস্কৃত-ব্ুল ভাষ। ব্যবহার কর্বার পক্ষপাতী, তারা এ ঘে গোড়ায় গলদ হয়েছিল তাই শুধরে নেবার জন্যে উতৎ্কন্টিত হয়েছেন । আমাদের ভাষায় অনেক অবিকৃত স্কৃত শব আছে, সেইগুলিকেই ভাষার গোড়াপত্তন ধরে? নিয়ে, তার উপর যত পারো আরও সংস্কৃত শব্ধ চাপাও--কালক্রমে বাঙ্গলায় ও সংস্কৃতে দ্ৈতভাব থাকৃবে না।_আসলে জ্ঞানী- লোকের কাছে এখনো নেই । মাহা এর, বলে” বীরবলের হালখাতা আমরা সংস্কৃত বাঙ্গলায় অদবৈতবাদী হয়ে উঠতে পার্ছিনে। বাঙ্গলায় ফার্সী কথার সংখ্যাও বড় কম নয়, ভাগ্যক্রমে ফাসীপড়। বাঙ্গালীর সংখ্যা বড় কম। ৫নলে সম্ভবতঃ তারা বল্তেন বাঙ্গলাকে ফার্সীবহুল করে” তোল । মধ্যে থেকে আমাদের ম৷ সরন্বতী, কাশী যাই কি মক্কা যাই, এই ভেবে আকুল হতেন। এক একবার মনে হয় ও উভয় সঙ্কট ছিল ভাল, কারণ একেবারে পণ্ডিতমগ্ডলীর হাতে পড়ে” মার আশু কাশীপ্রাপ্তি হবারই অধিক সম্ভাবনা । ৪] এই প্রসঙ্গে পগ্ডিতপ্রবর সভীশচন্দ্র বিদ্যাভূষণ মহাশয়ের প্রথম বক্তব্য এই যে, সাহিত্যের উৎপত্তি মান্গষের অমর হবার ইচ্ছায়। যা কিছু বর্তমান আছে, তার কুলুজি লিখ্তে গেলেই, গোড়ার দিকটে গোঁজামিল দিয়ে সাবৃতে হয়। বড় বড় দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক, যথা শঙ্কর 5796750891 প্রভৃতিও এঁ উপায় অবলম্বন করেছেন । স্থতরাৎ কোনও জিনিসের উৎপত্তির মূল নির্ণয় কর্তে যাওয়াট। বৃথা পরিশ্রম । কিন্তু এ কথ নির্ভয়ে বলা যেতে পারে যে, আর যা হ'তেই হোক্‌, অমর হবার ইচ্ছে থেকে সাহিত্যের উত্পত্তি হয়নি । প্রথমতঃ অমরত্বের ঝুঁকি আমরা সকলে সামলাতে পারিনে, কিন্তু কলম চালাবার জন্য আমাদের অনেকেরই আঞ্গুল নিস্পিস্‌ করে। যদি ভাল মন্দ মাঝারি আমাদের প্রতি কথা, প্রতি কাজ চিরস্থায়ী হবার তিলমাত্র . ১২ কথার কথ। সম্ভাবনা থাকৃত, তাহ'লে মনে করে” দেখুন ত আমরা ক'জনে মুখ খুলতে কিম্বা হাত তুল্‌্তে সাহসী হতুম? অমরত্বের বিভীষিকা চোখের উপর থাকলে, আমরা যা 2:5০ তা ব্যতীত কিছু বল্‌্তে কিন্বা কর্‌তে রাজি হতুম না। আর আমরা সকলেই মনে মনে জানি যে, আমাদের অতি ভাল কাজ, অতি ভাল কথাও 7975০0০এর অনেক নীচে । আসল কা, মৃত্যু আছে বলে' বেঁচে স্থখ। পুণ্যক্ষ হবার পর আবার মন্ত্যলোকে ফিরে আসবার সম্ভাবনা আছে বলে"ই দেবতার! অমরপুরীতে ক্ফৃর্তিতে বাস করেন, তা নাহলে স্বর্গও তাদের অসহা হ'ত। সেযাই হোক্‌, আমরা মানুষ, দেবতা নই,__ স্থতরাং আমাদের মুখের কথা দৈববাণী হবে, এ ইচ্ছা! আমাদের মনে স্বাভাবিক নয়। দ্বিতীয়তঃ, যদি কেউ শুধু অমর হবার জন্যে লিখব, এই কঠিন পণ করে” বসেন,__ তাহ'লে সে ইচ্ছা! সফল হবার আশা কত কম বুঝতে পারলে, তিনি যদি বুদ্ধিমান হন তাহ”লে লেখা হ'তে নিশ্চয়ই নিবৃত্ত হবেন। কারণ সকলেই জানি যে, হাজারে নখ নিরনব্বই জনের সরস্বতী সৃতবৎসা । তা ছাড়া সাহিত্যজগতে মড়ক অষ্টপ্রহর লেগে রয়েচে। লাখে এক বাঁচে, বাদবাকির প্রাণ দু'দণ্ডের জন্যও নয়। চরক পরামর্শ দিয়েছেন, যে দেশে মহামারীর প্রকোপ, সে দেশ ছেড়ে পলায়ন করাই কর্তব্য | অমর হবার ইচ্ছায় ও আশায়, কে সে রাজ্যে প্রবেশ কর্‌তে চায়? ১৩ বীরবলের হালখাতা (৪ ) বিছ্ভাভূষণ মহাশয়ের আরও বক্তব্য এই যে, জীয়স্ত ভাষার ব্যাকরণ করতে নেই, তাহলেই নির্াত মরণ। সংস্কৃত মৃতভাষা, কারণ ব্যাকরণের নাগপাশে বদ্ধ হ+য়ে সংস্কৃত প্রাণত্যাগ করেছে । আরও বক্তব্য এই যে, মুখের ভাষার ব্যাকরণ নেই, কিন্ত লিখিত ভাষার ব্যাকরণ নইলে চলে না। প্রমাণ_সংস্কৃত শুধু অমরত্ব লাভ করেছে, পালি প্রভৃতি প্রারুত ভাষা! একেবারে চিরকালের জন্য মরে? গেছে । অর্থাৎ, এক কথায় বল্তে গেলে, যে কোন ভাষারই হোক্‌ না কেন, চিরকালের জন্য বাচতে হলে আগে মর! দরকার । তাই যদি হয়, তাহ'লে বাঙ্গল৷ যদি ব্যাকরণের দড়ি গলায় দিয়ে আত্মহত্যা কর্‌তে চায়, তাতে বিষ্াভৃষণ মহাশয়ের আপত্তি কি? তার মতান্থসারে ত মের ছুয়োর দিয়ে অমরপুরীতে ঢুকৃতে হয়! তিনি আরও বলেন যে, পালি প্রভৃতি প্রাকৃত ভাষায় হাজার হাজার গ্রন্থ রচিত হয়েছে, কিন্তু প্রাকৃত সংস্কৃত নয় বলে” পালি প্রস্তুতি ভাষা লুপ্ত হ'য়ে গেছে । অতএব, বাঙ্গলা যতটা সংস্কৃতের কাছাকাছি নিয়ে আস্তে পারো, ততই তার মঙ্গল। যদি বিদ্যাভৃষণ মহাশয়ের মত সত্য হয়, তাহ'লে -স্কৃতবহুল বাঙ্গলায় লেখা কেন, একেবারে সংস্কৃত ভাষাতেই ত আমাদের লেখ কর্তব্য । কারণ তাহ'লে অমর হবার বিষয় আর কোনও স্দেহ থাকে না। কিন্তু একটা কথা আমি ভাল বুঝ তে পার্ছিনে ; পালি প্রভৃতি ভাষা মৃত সত্য, কিন্তু সংস্কতও কি মৃত নয়? ও দেবভাষা অমর হ'তে পারে, কিন্ত ১৪ কথার কথা ইহলোকে নয়। এ সংসারে মৃত্যুর হাত কেউ এড়াইতে পারে না। পালিও পারে নি, সংস্কৃতও পারে নি, আমাদের মাতৃভাষাও পারুবে না। তবে ষে ক'দিন বেঁচে আছে, সে ক'দিন সংক্কতের মৃতদেহ স্বন্ধে নিয়ে বেড়াতে হবে, বাঙ্গলার উপর এ কঠিন পরিশ্রমের বিধান কেন? বাঙ্গলার প্রাণ একটুখানি, অতথানি চাপ সইবে না। (৫ ) এ বিষয়ে শাস্ত্রী মহাশয়ের বক্তব্য যদি ভূল না বুঝে" থাকি, তাহ'লে তার মত সংক্ষেপে এই দাড়ায় যে, বাঙ্গলাকে প্রায় সংস্কত করে আন্লে, আসামী হিন্দুস্থানী প্রভৃতি বিদেশী লোকদের পক্ষে বঙ্গভাষা শিক্ষাটা! অতি সহজপাধ্য ব্যাপার হয়ে উঠ্বে। দ্বিতীয়তঃ, অন্য ভাষার যে স্থবিধাটুকু নেই, বাঙ্গলার তা আছে যেকোন সংস্কৃত কথা যেখানে হোক্‌ লেখায় বসিষে দিলে বাঙ্গল। ভাষার বাগলাত্ব নষ্ট হয় না। অর্থাৎ ধারা আমাদের ভাষা জানেন না, তারা যাতে সহজে বুঝতে পারেন সেই উদ্দেস্টে, সাধারণ বাঙ্গালীরপক্ষে আমাদের লিখিত ভাষ৷ হুর্ববোধ ক'রে তুলতে হবে! কথাটা এতই অন্ভুত যে, এর কি উত্তর দেবো ভেবে পাওয়া যায় না। হ্তরাং তার অপর মতটি ঠিক কিন। দেখা যাক়। আমাদের দেশে ছোট ছেলেদের বিশ্বাস যে, বাঙ্গলা কথার পিছনে অন্ুম্বর জুড়ে দিলে সংস্কৃত হয়, আর প্রাপ্তবয়স্ক লোকদের মত যে, সংস্কৃত কথার অন্গস্বর ১৫ বীরবলের হালখাত। বিসর্গ ছে'টে দিলেই বাঙ্গলা হয়। ছুটো বিশ্বাসই সমান সত্য। বাদরের ল্যাজ কেটে দিলেই কি মানুষ হয়? শাস্ত্রী মহাশয় উদাহরণ স্বরূপে বলেছেন, হিন্দীতে “ঘর্মে যায়গা” চলে, কিন্ত “গৃহমে যায়গা” চলে না,_-ওটা তুল হিন্দী হয়। কিন্তু বাঙ্গলায় ঘরের বদলে গৃহ যেখানে সেখানে ব্যবহার কর! যায়। অর্থাৎ সকল ভাষার একটা নিয়ম আছে, শুধু বাঙ্গল! ভাষার নেই। যার যা খুসী লিখতে পারি, ভাষ। বাঙ্গলা হতেই বাধ্য । বাঙ্গলা ভাষার প্রধান গুণ যে, বাঙ্গালী কথায় লেখায় যথেচ্ছাচারী হতে পারে! শাস্ত্রী মহাশয়ের নির্বাচিত কথ! দিয়েই তার ও তুল ভাঙ্গিয়ে দেওয়া যায়। “ঘরের ছেলে ঘরে যাও, ঘরের ভাত বেশী করে” খেয়ো” এই বাক্যটি হতে কোথাও “ঘর” তুলে দিয়ে 'গৃহ' স্থাপনা করে" দেখুন ত কানেই বা কেমন শোনায়, আর মানেই বা কত পরিষ্কার হয়? ( ৬) আসল কথাটা কি এই নয় যে লিখিত ভাষায় আর মুখের ভাষায় মূলে কোন প্রভেদ নেই? ভাষা ছুয়েরই এক, শুধু প্রকাশের উপায় ভিন্ন। একদিকে স্বরের সাহায্যে, অপর দিকে অক্ষরের সাহায্যে । বাণীর বসতি রসনায়। শুধু মুখের কথাই জীবস্ত। ফতদুর পারা যায়, যে ভাষায় কথা কই সেই ভাষায় লিখৃতে পার্লেই লেখা প্রাণ পায়। আমাদের প্রধান চেষ্টার বিষয় হওয়া উচিত কথায় ও লেখায় এক্য রক্ষা করা, ১৬ কথার কথ! এঁক্য নষ্ট কর! নয়! ভাষা মানুষের মুখ হ'তে কলমের মুখে আসে, কলমের মুখ হ'তে মানুষের মুখে নয়। উল্টোটা চেষ্টা কর্তে গেলে মুখে শুধু কালি পড়ে। কেউ কেউ বলেন যে, আমাদের ভাবের এশ্বধ্য এতটা! বেড়ে গেছে যে বাপ ঠাকুরদাদার ভাষার ভিতর তা আর ধরে” রাখা যায় না । কথাটা! ঠিক হ'তে পারে, কিন্তু বাঙ্গল! সাহিত্যে তার বড় একট! প্রমাণ পাওয়া যায় না। কনাদের মতে “অভাব, একটা পদার্থ। আমি হিন্দুস্তান, কাজেই আমাকে বৈশেষিক দর্শন মান্তে হয়; সেই কারণেই আমি স্বীকার কর্তে বাধ্য যে, প্রচলিত বাঙ্গল। সাহিত্যেও অনেকটা পদার্থ আছে। ইংরেজী সাহিত্যের ভাব» সংস্কৃত ভাষার শব্ধ, ও বাঙ্গল! ভাষার ব্যাকরণ,_-এই তিন চিজ, মিলিয়ে যে খিচুড়ি ত 'যের করি, তাকেই আমরা বাজলা সাহিত্য বলে” থাকি । বলা বাহুল্য ইংরেজী না জান্লে তার ভাব বোঝা যায় না। আমার এক এক সময়ে সন্দেহ হয় যে, হয়ত বিদেশের ভাব ও পুরাকালের ভাষা, এই ছুয়ের আওতার ভিতর পড়ে? বাঙ্গলা সাহিত্য ফুটে” উঠতে পারছে না। এ কথা আমি অবশ্ত মানি যে, আমাদের ভাষায় কতক পরিমাণে নৃতন কথা আন্বার দরকার আছে। যার জীবন আছে, তারই প্রতিদিন খোরাক যোগাতে হবে। আর আমাদের ভাষার দেহপুই করুতে হ'লে প্রধানতঃ অমরকোষ থেকেই নৃতন কথা টেনে মান্তে হবে। কিন্তু যিনি নৃতন সংস্কৃত কথা ব্যবহার ক্র্বেন, চার এইটি মনে রাখা উচিত যে, তাঁর আবার নৃতন করে, ৮৫ ১৭ বীরবলের হালখাতা প্রতি কথাটির প্রাণ-প্রতিষ্টা করৃতে হবে; তা ঘদি না পারেন তাহ'লে ব সরস্বতীর কানে শ্বধু পরের সোন! পরানো হবে। বিচার না করে” একরাশ সংস্কৃত শব্দ জড় করলেই, ভাষারও শ্রীবৃদ্ধি হবে না, সাহিত্যেরও গৌরব বাড়বে না, মনোভাবও পরিষ্কার করে" ব্যক্ত করা হবে না। ভাষার এখন শানিক়ে ধার বা”র করা আবশ্যক, ভার বাড়ানো নয়। যে কথাটা নিতান্ত না হ'লে নয়, সেটি যেখান থেকে পারো নিয়ে এসো, যদি নিজের ভাষার ভিতর তাকে খাপ, খাওয়াতে পারো । কিন্তু তার বেশী ভিক্ষে, ধার, কিন্বা চুরি করে এনো না। ভগবান পবননন্দন বিশল্যকরণী আন্তে গিয়ে আন্ত গন্ধমাদন ষে সমূলে উত্পাটন করে এনেছিলেন, তাতে তার অসাধারণ ক্ষমতার পরিচয় বদয়েছেন__কিন্ত বুদ্ধির পরিচয় দেন নি। জ্যৈষ্ঠ, ১৩০৯ ৬৮ আমরা ও তোমর! (১) তোমরা ও আমরা বিভিন্ন। কারণ তোমরা তোমরা, এবং আমরা আমরা! তা যদি ন! হ'ত, তা হলে ইউরোপ ও এসিয়। এ ছুই, ছুই হ'ত না”_এক হ'্ত। আমি ও তুমির প্রভেদ থাকৃত না। আমর! ও তোমরা উভয়ে মিলে, হয় শুধু আমরা হতুম, না হয় শ্বধু তোমরা হ'তে । 6২) আমরা পূর্ব, তোমরা পশ্চিম। আমরা আরম্ত, তোমরা শেষ। আমাদের দেশ মানব-সভ্যতার স্যতিকা গৃহ, তোমাদের দেশ মানব-সভ্যতার শ্বশুন।. আমরা উষা, তোমরা গোধূলি । আমাদের অন্ধকার হ'তে উদয়, তোমাদের অন্ধকারের ভিতর বিলয়। | ( ৩) | আমাদের রং কালো, তোমাদের রং সার্দা। আমাদের বসন সাদা, তোমাদের বসন কালো । তোমরা! শ্বেতাঙ্গ ঢেকে রাখো, আমরা কৃষ্ণদেহ খুলে রাখি। আমরা খাই সাদ! জল, তোমরা খাও লাল পানি। আমাদের আকাশ আগুন, তোমাদের আকাশ ধোয়া। নীল তোমাদের স্ত্রীলোকের চোখে, সোনা তোমাদের স্ত্রীলোকের মাথায়; নীল আম্মাকে “শত্রে*এমান। ১৯ আমাদের মাটির নীচে। তোমাদের ও আমাদের অনেক বর্ণভেদ। ভূলে" যেন না যাই যে, তোমাদের দেশ ও আমাদের দেশের মধ্যে কালাপানির ব্যবধান। কালাপানি পার হ'লে আমাদের জাত যায়, না হ'লে তোমাদের জাত থাকে না। | (৪ ) তোমরা দ্ধ, আমর! প্রস্থ । আমরা নিশ্চল, তোমরা চঞ্চল। আমর! ওজনে ভারি, তোমরা দামে চড়া । অপরকে বশীভূত কবুবার তোমাদের মতে একমাত্র উপায়__গায়ের জোর, আমাদের মতে একমাত্র উপায়--মনের নরম ভাব। তোমাদের পুরুষের হাতে ইস্পাৎ্, আমাদের মেয়েদের হাতে লোহ!। আমর! বাচাল, তোমর! বধির । আমাদের বুদ্ধি স্ুপ্ম্র--এত সক্ষম যে, আছে কি ন। বোঝা কঠিন । তোমাদের বুদ্ধি স্থল, এত স্থল যে, কতখানি আছে তা বোঝা কঠিন। আমাদের কাছে যা সত্য, তোমাদের কাছে তা কল্পনা,-আর তোমাদের কাছে যা সত্য, আমাদের কাছে তা স্বপ্র। (৫ ) তোমরা বিদেশে ছুটে বেড়াও, আমরা ঘরে শুয়ে থাকি। আমাদের সমাজ স্থাবর, তোমাদের সমাজ জঙ্গম। তোমাদের আদর্শ জানোয়ার, আমাদের আদর্শ উদ্ভিদ । তোমাদের নেশা ম্দ, আমাদের নেশা! আফিং। তোমাদের স্থখ ছট্ফটানিতে, আমাদের সখ ঝিমুনিতে। স্থুখ তোমাদের 10581, দুঃখ আমাদের 7521. তোমরা চাও দুনিয়াকে জয় কব্বার বল, ২০ আমরা ও তোমরা আমরা চাই ছুনিয়াকে ফাকি দেবার ছল। তোমাদের লক্ষ্য আরাম, আমাদের লক্ষ্য বিরাম। তোমাদের নীতির শেষ কথা শ্রম, আমাদের আশ্রম । ( ৬) তোমাদের মেয়ে প্রায় পুরুষ, আমাদের পুরুষ প্রায় মেয়ে । বুড়ো হ'লেও তোমাদের ছেলেমি যায় না, _ছেলেবেলাও আমরা! বুড়োমিতে পরিপূর্ণ । আমরা বিয়ে করি যৌবন না আস্তে, তোমরা বিয়ে কর যৌবন গত হ'লে । তোমরা যখন সবে গৃহপ্রবেশ কর, আমর! তখন বনে যাই । 3 তোমাদের আগে ভালবাসা, পরে বিবাহ,_আমাদের আগে বিবাহ, পরে ভালবাসা । আমাদের বিবাহ হয়, তোমরা বিবাহ “কর? । আমাদের ভাষায় মুখ্য ধাতু “ভূ, তোমাদের ভাষায় “কক*। তোমাদের রম্ণীদের রূপের আদর আছে, আমাদের রমশীদের গুণের কদর নেই। তোমাদের স্বামীদের পাণ্ডিত্য চাই অর্থশান্পে, আমাদের স্বামীদের পাগ্ডিত্য চাই ' অলঙ্কারশান্ত্রে । (৮) অর্থাৎ এক কথায়, তোমরা যা চাও আমরা তা চাইনে, আমরা যা চাই তোমরা তা! চাঁও না,__তোমরা যা পাও আমরা তা পাইনে, আমরা যা পাই তোমরা এক, তোমরা চাও অনেক । ২১ পর্ন উিধ পার্থানদকাডান্বীম্ীভাইলাইত্রের কানু পাই” 9 ন৯$৮--াশিশ বীরবলের হালখাতা তোমরা অনেকের বদলে পাও একের পিঠে অনেক শৃন্য। তোমাদের দার্শনিক চায় যুক্তি, আমাদের দার্শনিক চায় মুক্তি। তোমরা চাও বাহির, আমর! চাই ভিতর । তোমাদের পুরুষের জীবন বাড়ীর বাহিরে, আমাদের পুরুষের মরণ বাড়ীর ভিতর । আমাদের গান, আমাদের বাজন৷ তোমাদের মতে শুধু বিলাপ; তোমাদের গান, তোমাদের বাজনা আমাদের মতে শুধু প্রলাপ । তোমাদের বিজ্ঞানের উদ্দেস্ত সব জেনে কিছু না জানা, আমাদের জ্ঞানের উদ্দেন্ঠ কিছু না জেনে সৃব জানা ।. তোমাদের পরলোক এশা স্বর্গ” আমাদের ইহলোক নরক । কাজেই পরলোক তোমাদের গম্য, ইহলোক আমাদের ত্যাজয। তোমাদের ধশ্মমতে আত্মা অনাদি নয় কিন্তু অনন্ত, আমাদের ধর্মমতে আত্ম অনাদি কিন্ত অনন্ত নয়”-তার শেষ নির্বাণ। পূর্তেই বলেছি প্রাচী ও প্রতীচী পৃথক। আমরাও ভাল, তোমরাও ভাল,-শুধু তোমাদের ভাল আমাদের মন্দ; ও আমাদের ভাল তোমাদের মন্দ। স্থৃতরাং অতীতের আমরা ও বর্তমানের তোমরা, এই ছুয়ে মিলে যে ভবিষ্যতের তারা হবে--তাও অসম্ভব । শ্রাবণ, ১৩০৯ ১৬ শ্রীমতী ভারতী-সম্পাদিকা! নৃতন বৎসরের প্রথম দিন হ'তে ভারতীর জন্য একটা খেয়াল খাতা! খুল্বেন। এই অভিপ্রায়ে ধারা লেখেন, কিন্বা লিখতে পারেন, কিন্বা ধাদের লেখা! উচিত, কিম্বা লিখতে পার! উচিত,_-এমন অনেক লোকের কাছে ছু' এক কলম লেখার নিমন্ত্রণ পাঠিয়েছেন । উপরোক্ত চারটি দলের মধ্যে আমি যে ঠিক কোথায় জাছি, তা জানিনে। তবুও ভারতী-সম্পাদিকার সাদর নিমন্ত্রণ রক্ষা! কর। কর্তব্য বিবেচনায়, ছু"চার ছত্র রচনা করতে উদ্যত হরেছি। ভারতী-সম্পাদিকা ভরসা দিয়েছেন যে, যা” খুসী লিখলেই হবেকোন বিশেষ বিষয়ের অবতারণ| কিম্বা আলোচনা কর্বার দরকার নেই । এ প্রস্তাবে অপরের কি হয় বল্তে পারিনে, আমার ত ভরসার চাইতে ভয় বেশী হয়। আমাদের মন সহজে এবং শিক্ষার গুণে এতটা বৈষয়িক যে, বিষয়ের অবলম্বন ছেড়ে দিলে আমাদের মানের ক্রিয়া বন্ধ হয়, বল্বার কথা আর কিছু থাকে না। হাওয়ার উপর চল! যত সহজ, ফ্লাকার উপর লেখাও তত সহজ । গণিতশান্ত্রে যাই হোক্‌, সাহিত্যে শৃন্যের উপর শুন্য চাপিয়ে কোন কথার গুণবৃদ্ধি করা যায় না। বিনিস্ৃতার মাল! ফ্রমাস দেওয়া যত সহজ, গাথা তত সহজ নয়। ও বিদ্যের ৮৯৬ বীরবলের হালখাতা সন্ধান শতেকে জনেক জানে । আসল কথা, আমর। সকলেই গভীর নিজ্রামগ্র, শুধু কেউ কেউ ন্বপ্র দেখি। ভারতী- সম্পাদিকার ইচ্ছা এই শেষোক্ত দলের একটু বক্বার স্থবিথে করে? দেওয়া । (৮1 2 এ খেয়াল খাতা ভারতীর টাদার খাতা । স্বেচ্ছায় স্বচ্ছন্দ- চিত্তে যিনি যা” দেবেন, তা” সাদরে গ্রহণ কর! হবে। আধুলি সিকি ছুয়ানি কিছুই ফেরৎ যাবে না, শুধু ঘসা পয়সা ও মেকি চল্বে না। কথা যতই ছোট হোক, খাটি হওয়া চাই,তার উপর চকৃচকে হলে ত কথাই নেই। যে ভাব হাজার হাতে ফিরেছে, যার চেহারা বলে? জিনিসটা লুপ্রপ্রায় হয়েছে, অতি পরিচিত বলে” যা আর কারো নজরে পড়ে না, সে ভাব এ খেয়াল খাতায় স্থান পাবে না। নিতান্ত পুরাণো চিন্তা, পুরাণো ভাবের প্রকাশের জন্য স্বতন্ত্র ব্যবস্থা আছে,_-আর্টিকেল লেখা । আমাদের কাজের কথায় যখন কোন ফল ধরে না, তখন বাজে কথার ফুলের চাষ কবৃলে হানি কি? যখন আমাদের ক্ষধা নিবৃত্তি করবার কোন উপায় করতে পার্ছিনে, তখন দিন থাকৃতে সখ মিটিয়ে নেবার চেষ্ট! করাটা আবশ্যক । আর এ কথা বলা বাহুল্য, ধেখানে কেনা-বেচার কোন সম্বন্ধ নেই,_ব্যাপারটা হচ্ছে শুধু দান ও গ্রহণের,__সে স্থলে কোন ভদ্রসন্তান মসিজীবী হলেও, যে-কথা নিজে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করেন না কিন্বা ঝুটো বলে" জানেন, তা” চালা ভ্ুচেষ্টা করুবেন না। আমরা কাধ্য- ২৪ খেয়াল খাতা জগতে যখন সাচ্চা হ'তে পারিনে, তখন আশা করা যায় কল্পনা- জগতে অলীকতার চচ্চা করব না। এই কারণেই বল্ছি ঘসা পয়সা ও মেকি চল্বে ন1। (৩) খেয়ালী লেখ। বড় দুশ্রাপ্য জিনিস। কারণ সংসারে বদ. পন এ ০৭ বা উপরও খেয়ালী লো লোকের রকিছুব কমৃতি নেই, কিন্ত খেয়ালী লোকের বড়ই বড়ই, অভাব, 1 ব। অধিকাঁশ মা মানুষ যা করে, তা আয়াসসাধ্য | পঁধারণ লোকের পক্ষে একটুখানি ভাব, অনেকখানি ভাবনার ফল। মান্ষের পক্ষে চেষ্ট। করাটাই স্বাভাবিক, স্থৃতরাৎ সহজ | স্বতঃ- উচ্ছৃসিত চিন্ত। কিম্বা ভাঁব শুধু ছু'এক জনের নিজ প্রকৃতিগুণে হয়। যা” আপনি হয়, তা” এতই শ্রেষ্ঠ ও এতই আশ্চর্যজনক যে, তার মূলে আমরা দৈবশক্তি আরোপ করি। এ জগত-সষ্টি ভগবানের লীল। বলেই এত প্রশন্ত, এবং আমাদের হাতে গড় জিনিস কষ্টসাধ্য বলেই এত সঙ্কীর্ণ। তবে আমাদের সকলেরই মনে বিনা ইচ্ছাতেও যে নানাপ্রকার ভাবনা-চিস্তার উদয় হয়, এ কথ। অস্বীকার কর্বার জে! নেই। কিন্তু সে ভাবনা-চিন্তার কারণ স্পষ্ট এবং রূপ অস্পষ্ট । রোগ শোক দারিত্র্য প্রভৃতি নানা স্পষ্ট সাংসারিক কারণে আমাদের ভাবনা হয়, কিন্তু সে ভাবনা এতই এলোমেলে! যে, অন্যে পরে কা কথা, আমর! নিজেরাই তার খেই খুঁজে” পাইনে । যা নিজে ধর্‌তে পারিনে, তা অন্তের কাছে ধরে? দেওয়। অসম্ভব; যে ভাব আমর! প্রকাশ করতে পারিনে, তাকে খেযাদ? বলা যায় না। খেয়াল ২৫ বীরবলের হালখাতা! অনির্দিষ্ট কারণে মনের মধ্যে দিব্য একটি স্থস্পষ্ট স্থসম্বদ্ধ চেহার নিয়ে উপস্থিত হয়। খেয়াল রূপবিশিষ্ট, দুশ্চিন্তা তা নয়। (৪ ) খেয়াল অভ্যাস কর্বার পূর্বে খেয়ালের রূপনির্ণয় করাটা আবশ্যক, কারণ স্বরূপ জান্লে অনধিকারীরা এ বিষয়ের বৃথা চচ্চ! করবেন না। আমাদের লিখিত শাস্ত্রে খেয়ালের বড় উদাহরণ পাওয়া যায় না, স্বতরাৎ সঙ্গীতশাস্ত্র হ'তে এর আদর্শ নিতে হবে। এক কথায় বলতে গেলে, প্ুপদের অধীনতা হ'তে মুক্ত হবার বাসনাই খেয়ালের উৎপত্তির কারণ। এ্রুপদের ধীর, গম্ভীর, শুদ্ধ, শান্ত রূপ ছাড়াও, পৃথিবীতে ভাবের অন্য অনেক রূপ আছে। বিলম্বিত লয়ের সাহায্যে মনের সকল স্ফরপ্ডি, সকল আক্ষেপ প্রকাশ করা যায় শা । স্ৃতরাং প্ুপদের কড়া শাসনের মধ্যে যার স্থান নেই,_যথা তান, গিটুকিরি ইত্যাদি,_তাই নিয়েই খেয়ালের আসল কারবার । কিন্তু খেয়ালের স্বাধীন ভাব উচ্ছজ্ঘখল হ'লেও, যথেচ্ছাচারী নয়। খেয়ালী যতই কার্দানী করুন না কেন, তালচ্যুত কিনব! রাগত্রষ্ট হবার অধিকার তার নেই। জড় যেমন চৈতন্যের আধার, দেহ যেমন রূপের আশ্রয়- ভূমি, রাগও তেমনি খেয়ালের অবলম্বন । বর্ণ ও অলঙ্কার বিন্তাসের উদ্দেশ্য রূপ ফুটিয়ে তোলা, লুকিয়ে ফেলা নয়। খেয়ালের চাল ধ্ুপদের মত সরল নয় বলে” মাতালের মৃত আকাবাকা নয়,_নর্তকীর মত বিচিত্র। খেয়াল ঞ্পদের বন্ধন যতই ছাড়িয়ে যাক না কেন, স্থরের বন্ধন ছাড়ায় না; তার ন৬ খেয়াল খাতা! গতি সময়ে সময়ে অতিশয় দ্রুতলঘু হ'লেও, ছন্দঃপতন হয় ন|। গানও যে নিয়মাধীন, লেখাও সেই নিয়মাধীন। ধার মন সিধে পথ ভিন্ন চল্তে জানে না, ধার কল্পনা আপনা হতেই খেলে না, ঘিনি আপনাকে সম্পূর্ণ ছেড়ে দিতে পারেন না, অথবা ছেড়ে দিলে আর নিজবশে রাখতে পারেন না”_তীর খেয়াল লেখার চেষ্টা! ন৷ করাই ভাল। তাতে তীর শুধু গৌরবের লাঘব হবে। কূশদেহ পুষ্ট কর্বার চেষ্টা অনেক সময়ে ব্যর্থ হ'লেও, কখনই ক্ষতিকর নয়,-_কিন্তু স্থলদেহকে সুঙ্্ম করবার চেষ্টায় প্রাণসংশয় উপস্থিত হয়। ইঙ্গিতজ্ঞ লোকমাত্রেই উপরোক্ত কথা কটি সার্থকতা বুঝতে পার্বেন। 106) আমার কথার ভাবেই বুঝতে পারছেন যে, আমি খেয়াল বিষয়ে একটু হাক্ক! অঙ্গের জিনিসের পক্ষপাতী । চুট্ুকিও আমার অতি আদরের সামগ্রী, যদি স্থর খাঁটি থাকে ও ঢং ওস্তাদী হয়। আমার বিশ্বাস, আমাদের দেশের আজকাল প্রধান অভাব গুণপনাযুক্ত ছিব্লেমী। এ সম্বন্ধে কৈফিয়ৎ স্বরূপে দু'এক কথা বল! প্রয়োজন । কোন ব্যক্তি কিম্বা জাতিবিশেষ যখন অবস্থা- বিপধ্যয়ে সকল অধিকার হ'তে বিচ্যুত হয়, তখন তার ছু'টি অধিকার অবশিষ্ট থাকে,_কাদ্বার ও হাস্বার। আমর! আমাদের সেই কাদ্বার অধিকার যোল-আনা বুঝে নিয়েছি, এবং নিত্য কাজে লাগাচ্ছি। আমরা কাদতে পেলে যত খুসী থাকি, এমন আর কিছুতেই নয় । আমর! লেখায় কাঁদি, বক্তৃতায় বণ বীরবলের হালখাতা কাদি। আমরা দেশে কেঁদেই সন্তুষ্ট থাকিনে, টাদা তুলে বিদেশে গিয়ে কাদি। আমাদের ত্বজাতির মধ্যে ধারা স্থানে, অস্থানে, এমন কি অরণ্যে পধ্যন্ত রোদন কর্‌তে শিক্ষা দেন, তারাই দেশের জ্ঞানী গুণী বুদ্ধিমীন ও প্রধান লোক বলে" গণ্য এবং মান্য । যেখানে ফোমস্‌ করা উচিত, সেখানে ফোস্‌ ফৌস্‌ করলেই আমরা বলিহারি যাই। আমাদের এই কান্না দেখে কারও মন ভেজে না, অনেকের মন চটে । (আমাদের নতুন সভ্যযুগের অপূর্ব স্থষ্টি স্যাসন্যাল কংগ্রেস, অপর সগ্ভজাত শিশুর মত ভূমিষ্ঠ হয়েই কান্না স্বর করে” দিলেন । আর যদিও তা”র সাবালক হবার বয়স উত্তীর্ণ হয়েছে, তবুও বৎসরের ৩৬২ দিন কুস্তকর্ণের মত নিদ্রা দিয়ে, তারপর জেগে উঠেই তিন দিন ধরে' কোকিয়ে কান্না সমান চল্ছে। যদি কেউ বলে,ছি। অত কাদ কেন, একটু কাজ কর না,তা হ'লে তার উপর আবার চোখ রাডিয়ে ওঠে) বয়সের গুণে শুধু এটুকু উন্নতি হয়েছে। মনের দুঃখের কান্নাও অতিরিক্ত হ'লে কারও মায়া হয় না। কিন্তু কানন! ব্যাপারটাকে 'একটা! কর্তব্যকম্ম করে” তোলা শুধু আমাদের দেশেই সম্ভব হয়েছে । আমরা সমস্ত দিন গৃহকর্ম করে”, বিকেলে গ! ধুয়ে, চুল বেঁধে, পা ছড়িয়ে যখন পুরাতন মাতৃবিয়োগের জন্য নিয়মিত এক ঘণ্টা ধরে” ইনিয়ে বিনিয়ে কাদতে থাকি, তখন পৃথিবীর পুরুষমান্ষদের হাসিও পায়, রাগও ধরে। সকলেই জানেন বে, কানা ব্যাপারটারও নানা পদ্ধতি আছে,__যথা, রোল কান্না, মড়া কান্না, ফুপিয়ে কান্না, ফুলে ফুলে কান্ন। ইত্যাদি,_ ন্হ৮ খেয়াল খাতা কিন্ত আমরা শুধু অভ্যাস করেছি নাকে কান্না! এবং এ কথাও বোধ হয় সকলেই জানেন যে, সদারঙ্গ বলে* গেছেন খেয়ালে সব স্থর লাগে, শুধু নাকি স্থুর লাগে না। এই সব কারণেই আমার মতে এখন সাহিত্যের সর ব্দলানো প্রয়োজন । করুণরসে ভারতবর্ষ স্যাত্সেতে হয়ে উঠেছে; আমাদের স্থখের জন্য না হোক্‌, স্বাস্থ্যের জন্যও হান্যরসের আলোক দেশম্য ছড়িয়ে দেওয়! নিতান্ত আবশ্যক হ'য়ে পড়েছে । যদি কেউ বলে, আমাদের এই ছুদ্দিনে হাসি কি শোভ| পায়? তার উত্তর--ঘোর মেঘাচ্ছন্ন অমাবন্যার রাত্রিতেও কি বিদ্যুৎ দেখা! দেয় না, কিম্বা শোভা! পায় না? আমাদের এই অবিরত-ধারা অশ্রবৃষ্টির মধ্যে কেহ কেহ যদি বিদ্যুৎ স্থষ্টি করুতে পারেন, তা হ'লে আমাদের ভাগ্যাকাশ পরিষ্কার হবার একট] সম্ভাবনা হয়। বৈশাখ, ১৩১২ ২৯ মলাট-সমালোচন' 'সাহিত্য”-মম্পাদক মহাশয় সমীপেধু £-- “বারে হাত কাকুড়ের তেরো হাত বীচি” জিনিসটা এ দেশে একটা মস্ত ঠাট্রার সামগ্রী। কিন্তু বারে পাত বইয়ের তেরে পাত। সমালোচনা দেখে কারোই হাসি পায় না। অথচ বীজ পরিমাণে এক হাত কমই হোক আর এক হাত বেশীই হোক্‌, তার থেকে নতুন ফল জন্মায়; কিন্তু এরূপ সমালোচনায় সাহিত্যের কিংবা সমাজের কি ফললাভ হয়। বলা কঠিন। সেকালে যখন স্থএ আকারে মূল গ্রন্থ রচনা করবার পদ্ধতি প্রচলিত ছিল, তখন ভান্তে টাকায় কারিকায় তার বিস্তৃত ব্যাখ্যার আবশ্তকতা! ছিল। কিন্তু একালে যখন, যে কথা ছু কথায় বলা যায়, তাই ছু'শো কথায় লেখা হয়, তখন সমীলোচক- দের ভাস্তকার না হয়ে স্থত্রকার হওয়াই সঙ্গত। তারা যদি কোন নব্য গ্রস্থের খেই ধরিয়ে দেন, তা! হ*লেই আমরা পাঠকবর্গ, যথেষ্ট মনে করি। কিন্তু এরূপ করতে 'গেলে তাদের ব্যবসা মারা যায়। সুতরাং তারা যে সমালোচনার রীতি পরিবর্তন কবৃবেন, এরূপ আশ! করা নিক্ষল। শ্রীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অতুযুক্তির প্রতিবাদ করে? একটি প্রবন্ধ লেখেন। আমার ঠিক মনে নেই যে, তিনি সাহিত্যেও অত্যুক্তি যে নিন্দনীয়, এ কথাটা বলেছেন কি না। সে যাই হোক, ৩৩ মলাট-সমালোচন৷। রবীন্দ্রবাবুর সেই তীব্র প্রতিবাদে বিশেষ কোন স্থৃফল হয়েছে বলে” মনে হয় না। বরং দেখতে পাই যে, অততযুক্তির মাত্রা ক্রমে সপ্তমে চড়ে” গেছে। সমালোচকদের অতুযুক্তিট! প্রায় প্রশংসা কর্বার সময়েই দেখা যায়। বোধ হয় তাদের বিশ্বাস যে, নিন্দা জিনিসটা সোজা! কথাতেই করা চলে, কিন্ত প্রশংসাকে ডালপাল৷ দিয়ে পত্রে পুষ্পে সাজিয়ে বা'র করা উচিত। কেন-ন৷ নিন্দুকের চাইতে সমাজে চাটুকারের মধ্যাদা অনেক বেশী। কিন্ত আসলে অতি-নিন্দা এবং অতি-প্রশৎসা উভয়ই সমান জঘন্ কারণ, অত্যুক্তির “অতি', শুধু স্থরুচি এবং ভন্্রতা নয়, সত্যেরও সীমা অতিক্রম করে” যায়। এক কথায়, অত্যুক্তি, মিথ্যোক্তি। মিছা! কথ! মানুষে বিনা কারণে বলে না। হয় ভয়ে, না হয় কোন স্বার্থসিদ্ধির জন্যই লোকে সত্যের অপলাপ করে। সম্ভবতঃ অভ্যাসবশতঃ মিখ্যাকে সত্যের অপেক্ষা অধিকমাত্রীয় কেউ চচ্চা করে। কোন বিশেষ উদ্দেশে মিথ্যা কথা বল! চর্চ। কর্‌লে, ক্রমে তা উদ্দেশ্টবিহীন অভ্যাসে পরিণত হয়। বাঙ্গলা-সাহিত্যে আজকাল যেরূপ নির্লজ্জ অতি-প্রশংসার বাড়াবাড়ি দেখতে পাওয়! যায়, তা”তে মনে হয় যে, তার মূলে উদ্দেশ্য এবং অভ্যাস ছুই জিনিসই আছে। এক একটি ক্ষুদ্র পুস্তকের যে-সকল বিশেষণে স্ততিবাদ করা হয়ে থাকে, সেগুলি বোধ হয় শেক্সপীয়র কিংবা কালিদাসের সম্বন্ধে প্রয়োগ করলেও একটু বেশী হ'য়ে পড়ে। সমালোচনা এখন বিজ্ঞাপনের মৃদ্তি ধারণ করেছে । তার থেকে বোঝ! যায় যে, যাতে বাজারে ৩০ বইয়ের ভালরকম কাট্শস্ত' কয, সেই উদ্দেশে আজকাঙ্গ সমীলোচন। লেখা হয়ে থাকে । যে উপায়ে পেটেণ্ট ড্ষধ বিক্রী রুরা হয়, সেই উপায়েই সাহিত্যও বাজারে বিক্রী করা হয়। ৯ লেখক সমালোচক হয় একই ব্যক্তি, নয় পরস্পর্ধজে একই কারবারের অংশীদার । আমার মাল তুমি যাচাই করে” পয়লা নম্বরের বলে” দাও, তোমার মাল আমি যাচাই করে” পয়ল! নম্বরের বলে? দেবো,_এই রকম একটা বন্দোবস্ত পেশাদার লেখকদের মধ্যে যে আছে, এ কথা সহজেই মনে উদয় হয়। এই কারণেই, পেটেন্ট উষধের মতই, একলের“ছেঁণট গল্প কিং! ছে্টি কবিতার বই,_/মধা, হী, ধাঁ, শ্রী প্রভৃতির বদ্ধক, এবং নৈতিক-বলকারক ব্লে"_উল্লিখিত হয়ে থাকে । কিদ্তু এরূপ কথায় বিশ্বাস স্থাপন বরে” পাঠক নিত্যই প্রতারিত এবং প্রবঞ্চিত হয় । যা" চ্যবন- প্রাশ বলে? কিনে আনা যায়, তা দেখা যায়»-প্রায়ই অকাল- কুম্মাগুখণ্ডমাত্র । | অতি বিজ্ঞাপিত জিনিসের প্রতি আমার শ্রদ্ধা অতি কম। কারণ, মানবহ্ৃদয়ের স্বাভাবিক দুর্বলতার উপর বিজ্ঞাপনের . বল, এবং আ্ানবমনের সরল বিশ্বাসের উপর বিজ্ঞাপনের ছল প্রতিষ্ঠিত। যখন আমাদের এক মাথা চুল থাকে, তখন আমরা কেশ-বদ্ধক তলের বড় একটা সন্ধান রাখিনে । কিন্তু মাথায় যখন টাক চকু চকু করে” ওঠে, তখনই আমরা কুস্তলবৃষ্যের শরণ গ্রহণ করে” নিজেদের অবিমৃত্যকারিতার পরিচয় পাই, এবং দিই। কারণ, তাতে টাকের প্রসার ক্রমশ:ই বৃদ্ধি পায়, এবং ৩২. সেই সঙ্গে টাকাও নষ্ট হয়। বিজ্ঞাপনের উদ্দেশ্ঠ আমাদের মন ও নয়ন আকর্ষণ" করা । বিজ্ঞাপন প্রতি ছত্রের শেষে প্রশ্ন _মিনোযোগ করছেন ত? আমাদের চিত্ত আকর্ষণ করতে না পারুলেও, বিজ্ঞাপন চব্বিশ ঘণ্টা আমাদের নয়ন আকর্ষণ করে” থাকে । ও জিনিস চোখ এড়িয়ে যাবার জো নেই। কারণ, এ যুগে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন প্রবন্ধের গা ঘেঁসে থাকে, মাসিক পত্রিকার শিরোভূষণ হ'য়ে দেখা দেয়, এক কথায় সাহিত্য-জগতে যেখানেই একটু ফাঁক দেখে, সেইখানেই এসে জুড়ে” বসে । ইংরেজী ভাষায় একটি প্রবচন আছে যে, প্রাচীরের কান আছে। . এদেশে সে বধির কি না'জানিনে, কিন্তু বিজ্ঞা- পনের দৌলতে মৃক নয়। রাজপথের উভয় পার্থর প্রাচীর মিথ্যা কথা তারম্বরে চীৎকার করে বলে। তাই আজকাল পৃথিবীতে চোখকান না বুজে চল্লে, বিজ্ঞাপন কারো ইন্দরিয়ের অগোচর থাকে না। যদি চোখকান বুজে চল, তা হলেও বিজ্ঞাপনের হাত থেকে নিস্তার নেই। কারণ, পদব্রজেই চল, আর গাড়ীতেই যাও, রাস্তার লোকে তোমাকে বিজ্ঞাপন ছুড়ে মারে । এতে আশ্চর্য্য হবার কোনও কথা নেই । ছুঁড়ে" মারাই বিজ্ঞাপনের ধর্্ম। তার রং ছুঁড়ে” মারে, তার ভাষা ছুঁড়ে” মারে, তার ভাব ছুড়ে” _মারে। সুতরাং বিজ্ঞাপিত জিনিসের সঙ্গে আমার আত্মীক্তা না থাকৃলেও, তার মোড়কের সঙ্গে এবং মলাটের সঙ্গে আমার চাক্ষ্ষ পরিচয় আছে। আমি বহু ওষধের এবং বহু গ্রস্থের কেবলমাত্র মুখ চিলি: ৃ ৩ ৩৩ 1. ৩ রী 27228 ০ 0. রা মু টি ডি | ৮৫ বীরবলের হালখাতা যা জানি, তারই সমালোচন। করা সম্ভব। স্থতরাং আমি মলাটের সমালোচনা কর্তে উদ্যত হয়েছি । অন্ততঃ মুখপাত- টুকু দোরস্ত করে” দিতে পার্‌লে, আপাততঃ বঙ্গ-সাহিত্যের মুখ- রক্ষা হয়। আমি পূর্বেই বলেছি যে, নব্য বঙ্গ-সাহিত্যের কেবলমাত্র নাম-রূপের সঙ্গে আমার পরিচয় আছে। প্রধানতঃ সেই নাম জিনিসটার সমালোচনা করাই আমার উদ্দেশ্ট । কিন্ত রূপ জিনিসটা একেবারে ছেঁটে দেওয়া চলে না! বলে” সে সম্বন্ধে ছুই একট! কথা বল্তে চাই । ডাক্তারখানার ..আলো যেমন লাল নীল সবুজ বেগুনে প্রভৃতি নানারূপ কীচের আবরণের মধ্য দিয়ে গ্রকাশ পায়, তেমনই পুন্তকের দোকানে এ কালের পুস্তক পুস্তিকাগুলি নানারূপ বর্ণচ্ছটায় নিজেদের প্রকাশ করে। স্থতরাং নব্য সাহিত্যের বর্ণপরিচয় যে আমার হয়নি, এ কথা বল্তে পারিনে। কবিতা আজকাল গোধুলিতে গা-ঢাক। দিয়ে, লজ্জা-নআঅ নববধূ সম”. আমাদের কাছে এসে উপস্থিত হয় ন|। কিন্তু গালে আল্তা৷ মেখে রাজপথের মুখে বাতায়নে এসে দেখা দেয়। বর্ণেরও একটা আভিজাত্য আছে। তার স্থসংযত ভাবের উপরেই তার গাস্তীধ্য ও সৌন্দর্য্য নির্ভর করে। বাড়া- বাড়ি জিনিসটা! সব ক্ষেত্রেই ইতরতার পরিচায়ক । আমার মতে, পূজার বাজারের নানারূপ রঙ্চঙে পোষাক পরে, প্রাপ্চবয়স্ক সাহিত্যের সমাজে বা*র হওয়া উচিত নয়। তবে পুজার উপহার স্বরূপে যদি তার চলন হয়, তা৷ হ'লে অবশ্য কিছু বলা চলে না। ৩৪ মলাট-সমালোচনা সাহিত্য যখন কুস্তলীন, তাম্থুলীন এবং তরল আল্তার সঙ্গে একশ্রেণীভুক্ত হয়, তখন পুরুষের পক্ষে পরুষ বাক্য ছাড়া তার সম্বন্ধে অন্য কোন ভাষা ব্যবহার কর! চলে না। তবে এই কথা জিজ্ঞাসা করি যে, এতে ঘে আত্মমর্ধ্যাদার লাঘব হয়, এ সহজ কথাটা কি গ্রস্থকারেরা! বুঝতে পারেন না? কবি কিচান যে, তার হৃদয়রক্ত তরল আল্তার সামিল হয়? চিস্তাশীল লেখক কি এই কথা মনে করে” স্বখী হন যে, তাঁর মন্তিফ লোকে স্থবাসিত নারিকেল তৈল হিসাবে দেখবে? এবং বাণী কি রসনা-নিঃস্ছত পানের পিকের সঙ্গে জড়িত হতে লজ্জা বোধ করেন না? আশা করি বে, বইয়ের মলাটের এই অতিরঞ্জিত রূপ শীপ্রই সকলের পক্ষেই অরুচিকর হয়ে উঠবে । অ্যান্সীক কাগজে ছাপানো, এবৎ চকচকে, ঝকৃঝকে, তকৃতকে করে; বাধানে! পুস্তকে আমার কৌন আপত্তি নেই। দপ্তরীকে আসল গ্রন্থকার বলে” ভুল না করলেই আমি খুষ্টু৫ই । আমরা যেন ভূলে” না যাই যে, লেখকের কৃতিত্ব মলাটে শুধু ঢাক! পড়ে। জীর্ণ কাগজে, শীর্ণ অক্ষরে, ক্ষীণ কালীতে ছাপানো একখানি “পদ কল্পতরু” যে শত শত তকৃতকে ঝকৃঝকে চক্চকে :গ্রস্থের চাইতে শতগুণে আদরের সামক্জী ! এখন সমালোচনা স্বর করে” দেবার পূর্বেই কথাটার একটু আলোচন| করা দরকার । কারণ, এ শব্দটি আমর! ঠিক অর্থে ব্যবহার করি কি না, সেবিষয়ে আমার একটু সন্দেহ আছে । প্রথমেই, “সম” উপসর্গটির যে বিশেষ কোন সার্থকতা আছে, ৩৫ বীরবলের হালখাত। এরূপ আমার বিশ্বাস নয়। শব্দ অতিকায় হ'লে যে তার গৌরব-বৃদ্ধি হয়, এ কথা আমি মানি; কিন্তু, দেহভারের সঙ্গে সঙ্গে যে বাক্যের অর্থভার বেড়ে যায়, তার কোন বিশেষ প্রমাণ পাওয়া যায় না। এ যুগের লেখকেরা মাতৃভাষায় লিখেই সন্ত থাকেন না, কিন্তু সেই সঙ্গে মায়ের দেহপুষ্টি করাও তাদের কর্তব্য বলে মনে করেন। কিন্তু সে পুষ্টিসাধনের জন্য বহুসংখ্যক অর্থপূর্ণ ছোট ছোট কথা চাই, ঘা সহজেই বঙ্গভাষার অঙ্গীভূত হ'তে পারে। স্বপ্পসংখ্যক এবং কতকাংশে নিরর্থক বড় বড় কথার সাহায্যে সে উদ্দেশ্যসিদ্ধি হবে না। সংস্কৃত ভাষার সঙ্গে আমার পরিচয় অতি সামান্য; কিন্তু সেই স্বল্প পরিচয়েই "আমার এইটুকু জ্ঞান জন্মেছে যে, সে ভাষার বাক্যাবলী আয়ত্ত করা নিতাস্ত কঠিন। সংস্কতের উপর হস্তক্ষেপ কর্বা মাত্রই মতা আমাদের হন্তগত হয় না। বরং আমাদের অশিক্ষিত হাতে. পড়ে” প্রায়ই তারঞ্ অর্থবিকূৃতি ঘটে । সংস্কৃত সাহিত্যে গৌজামিল দেওয়া জিনিসটা একেবারেই প্রচলিত ছিল না। কবি হোন্‌, দার্শনিক হোন্‌, আমাদের পূর্ববপুরুষরা প্রত্যেক কথাটি ওজন করে” ব্যবহার কর্তেন। শব্ধের কোনরূপ অসঙ্গত প্রয়োগ সেকালে অমীঞ্জনীয় দৌষ বলে গণ্য হ'ত। কিন্ত একালে আমরা কথার সংখ্যা নিয়েই ব্যস্ত, তার ওজনের ধার বড় একট ধারিনে। নিজের ভাষাই যখন আমরা সু অর্থ বিচার করে" ব্যবহার করিনে, তখন স্বপ্প-পরিচিত এবং অনায়ত্ত সংস্কৃত শব্দের অর্থ বিচার করে” ব্যবহার কর্‌তে গেলে, ৩৬ মলাট-সমালোচনা সে ব্যবহার যে বন্ধ হবার উপক্রম হয়, তা আমি জানি। তবুও একেবারে বেপরোয়াভাবে সংস্কত শব্দের অতিরিক্ত ব্যবহারের আমি পক্ষপাতী নই। তাতে মনোভাবও স্পষ্ট করে; ব্যক্ত করা যায় না, এবং ভাষাও ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে । উদাহরণ- স্বরূপে দ্রেখানো যেতে পারে, এই “সমালোচনা” কথাটা আমরা যে অর্থে ব্যবহার করি, তার আসল অর্থ ঠিক তা নয়। আমরা কথায় বলি “লেখাপড়া” শিখি; কিন্তু আসলে আমরা অধিকাংশ শিক্ষিত লোক শুধু পড়তেই শিখি, লিখতে শিখিনে । পাঠক- মাত্রেরই পাঠ্য কিন্বা অপাঠ্য পুস্তক সম্বন্ধে মতামত গড়ে, তোল্বার ক্ষমতা! থাক্‌ আর না থাক্‌, মতামত ব্যক্ত করুবার অধিকার আছে; বিশেষতঃ সে কাধ্যের উদ্দেশ্য যখন আর পাঁচ জনকে বই পড়ানো, লেখানো নয় । স্থতরাং সমালোচিতব্য বিষয়ের বাঙ্গলা-সাহিত্যে অভাব থাকলেও, সমালোচনার কোন অভাব নেই। এই সমালোচনা-বন্তার ভিতর থেকে একখানি- মাত্র বই উপরে ভেসে উঠেছে। সে হচ্ছে শ্রীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “আলোচনা” । তিনি যদি উক্ত নামের পরিবর্তে তার “সমালোচনা” নাম দিতেন, তা হ'লে আমার বিশ্বাস, বৃথা বাগাড়ম্বরে “আলোচনার, ক্ষুদ্র দেহ আয়তনে বৃদ্ধিপ্রার্ধ হয়ে এত গুরুভার হ+য়ে উঠত যে, উক্ত শ্রেণীর আর পাঁচখানা বইয়ের মত এখানিও বিস্বৃতির অতল জলে ডুবে যেত। এই ছুটি শব্দের মধ্যে যদি একটি রাখতেই হয়, তা হলে “সম্‌্” বাদ দিয়ে “আলোচনা রক্ষা! করাই শ্রেয় । যদিচ ও কথাটিকে আমি ইংরেজী ০1161015107 ৩৭ বীরবলের হালখাতা। শব্দের ঠিক প্রতিবাক্য বলে মনে করিনে । আলোচনা মানে “আ” অর্থাৎ বিশেষরূপে, “লোচন”, অর্থাৎ ঈক্ষণ। যে বিষয়ে সন্দেহ হয়, তার সন্দেহভগ্জন করবার জন্য বিশেষরূপে সেটিকে লক্ষ্য করে? দেখবার নামই আলোচন। । তর্কবিতর্ক, বাকৃবিতপ্তা, আন্দোলন আলোড়ন প্রভৃতি অর্থেও এ কথাটি আজকালকার বাঙ্গল! ভাষায় ব্যবহৃত হ'য়ে থাকে । কিন্তু ও কথায় তার কোন অর্থই বোঝায় না। “আলোচনা; ইংরাজী 50109017152 শব্ের যথার্থ প্রতিবাঁক্য”। 001601577 শবের ঠিক প্রতিবাক্য বাঙ্গলা কিংবা সংস্কৃত ভাষায় না থাকলেও, পবিচার” শব্টি অনেক- পরিমাণে সেই অর্থ প্রকাশ করে। কিন্তু সমালোচনা”র পরিবর্তে “বিচার+ যে বাঙ্গালী সমালোচকদের কাছে গ্রাহা হবে, এ আশা আমি রাখিনে। কারণ, এদের উদ্দেশ্য বিচার করা নয়, প্রচার _করা। তা ছাড়া যে কথাটা একবার সাহিত্যে চলে গেছে, তাকে অচল কর্বার প্রস্তাব অনেকে হয় ত ছুঃসাহসিকতার পরিচয় বলে” মনে কর্ুবেন। তার উত্তরে আমার বক্তব্য এই যে, পূর্বে যখন আমর! নির্বিচারে বহুসংখ্যক সংস্কৃত শব্দকে বঙ্গ-সাহিত্যের কারাগারে প্রবেশ করিয়েছি, এখন আবার স্থবিচার করে? তার গুটিকতককে মুক্তি দেওয়াটা বোধ হয় অন্তায় কার্ধ্য হবেনা । আর এক কথা । যদি 08610157)? অর্থেই আমর! আলোচনা শব্ধ ব্যবহার করি, তা হ'লে 55000010156) অর্থে আমরা কি শব্দ ব্যবহার কর্ব? স্ত্বরাং, যে উপায়ে আমর! মাতৃভাষার দেহপু্ট করতে চাই, তা”তে ফলে ধু তার অঙ্গহানি ৩৮ হয়। শব্দ সম্বন্ধে যদি আমরা একটু শুচি-বাতিকগ্রস্ত হ'তে পারি, তা হ'লে আমার বিশ্বাস, বঙ্গভাষার নিম্মলতা অনেক পরিমাণে রক্ষিত হ'তে পারে । অনাবশ্কে যদি আমরা সংস্কৃত ভাষার উপর হস্তক্ষেপ কর্তে সঙ্কুচিত হই, তা'তে সংস্কৃত ভাষার উপর অবজ্ঞা দেখানো হবে না, বরং তার প্রতি যথার্থ ভক্তিই দেখানো হবে। শব্বগৌরবে সংস্কৃত ভাষা অতুলনীয়। কিন্তু তাই বলে, তার ধ্বনিতে মুগ্ধ হয়ে আমরা যে শুধু তার সাহায্যে বাঙ্গলা- সাহিত্যে ফাক! আওয়াজ কর্ব, তাও ঠিক নয়। বাণী কেবলমাত্র ধ্বনি নয়। আমি বহুদিন থেকে এই মত প্রচার করে, আস্ছি, কিন্ত আমার কথায় কেউ কর্ণপাত করেন না। সাহিত্য জগতে এক শ্রেণীর জীব বিচরণ করে, যাদের প্রাণের চাইতে কান বড়। সঙ্গীতচচ্চার লোভ তার! কিছুতেই সংবরণ করুতে পারে না, এবং সে ব্যাপার থেকে তাদের নিরস্ত করবার ক্ষমতাও কারো নেই। প্রতিবাদ করায় বিশেষ কোন ফল নেই জেনেও, আমি প্রতিবাদ 'করি; কারণ, আজকালকার মতে, আপত্তি নিশ্চিত অগ্রাহ হবে জেনেও, আপত্তি করে, আপত্তিকর জিনিসটি সম্পূর্ণ গ্রাহ করে? নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাধ্য বলে বিবেচিত হয়। এখানে বলে” রাখা আবশ্যক যে, কোন বিশেষ লেখকের বা লেখার প্রতি কটাক্ষ করে আমি এ সব কথা বল্ছিনে। বাঙ্গলা- সাহিত্যের একটা প্রচলিত ধরণ, ফ্যাসান, এবং ঢং্এর সন্বন্ষেই আমার আপত্তি, এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাই আমার ৩৯ বীরবলের হালখাতা উদ্দেশ্য । সমাজের কোন চল্তি স্রোতে গা ঢেলে দিয়ে যে আমরা কোন নিদ্দিষ্ট গন্তব্য স্থানে পৌছতে পারি, এমন অন্যায় ভরসা আমি র্লাখিনে। সকল উন্নতির মূলে থামা জিনিসটা বিদ্যমান। এ পৃথিবীতে এমন কোন সিঁড়ি নেই, যার ধাপে ধাপে পা ফেলে আমরা অবলীলাক্রমে স্বর্গে গিয়৷ উপস্থিত হ'তে পারি। মনোজগতে প্রচলিত পথ ক্রমে সঙ্কীর্ণ হ'তে সঙ্কীর্ণতর হয়ে শেষে চোরা গলিতে পরিণত হয়, এবং মানুষের গতি আটকে দেয়। বিজ্ঞানে যাকে ৪৮০19110. বলে, এক কথায় তার পদ্ধতি এই যে, জীব একটা প্রচলিত পথে চল্তে চল্তে হঠাৎ এক জায়গায় থমকে ঈাড়িয়ে, ডাইনে কি বায়ে একটা নৃতন পথ আবিষ্কার করে, এবং সাহস করে? সেই পথে চল্তে আরম্ভ করে। এই নৃতন পথ বা”র করা, এবং সেই পথ ধরে* চলার উপরেই জীবের জীবন এবং মানুষের মন্গস্তত্ব নির্ভর করে। মুক্তির জন্তে, হয় দক্ষিণ নয় বাম মার্গ ষে অবলম্বন করতেই হবে, এ কথা এ দেশে খধিমুনিরা বহুকাল পূর্বে বলে” গেছেন অতএব একেলে বিজ্ঞান এবং সেকেলে দর্শন উভয়ই এই শিক্ষ দেয় যে, সিধে পথটাই মৃত্যুর পথ। স্থৃতরাং বাল! লেখার প্রচলিত পথটা ছাড় তে পরামর্শ দিয়ে আমি কাউকে বিপথে নিয়ে যাবার চেষ্টা করিনে। আমার বিশ্বাস যে, সংস্কৃত ছেড়ে যদি "আমরা দেশী পথে চল্তে শিখি, তা”্তে বাঙ্গলা-সাহিত্যের লাভ-ৰই .লাকসান নেই। এঁ পথটাই ত স্বাধীনতার পথ, এবং; কারণেই উন্নতির পথ,--এই ধারণাটি মনে এসে ৪০ মলাট-সমালোচনা যাওয়াতেও আমাদের অনেক উপকার আছে । আমি জানি যে, সাহিত্যে কিংবা ধন্মে একট নৃতন পথ আবিষ্কার কর্বার ক্ষমতা কেবলমাত্র ছু'চারজন মহাজনেরই থাকে, বাদবাকী চলতে পারুলেই আমাদের জীবন সার্থক হয়। গড্ডলিকা- প্রবাহ হ্ায়ের অবলম্বন কর! জনসাধারণের পক্ষে স্বাভাবিকও, বটে, কর্তব্যও বটে; কেন না, পৃথিবীর সকল ভেড়াই যদি মেড়া হ'য়ে ওঠে ত ঢুঁ-মারামারি করে'ই মেষ-বংশ নির্ববংশ হবে ! উক্ত কারণেই আমি লিখ্বার একটা প্রচলিত ধরণের বিরোধী হ'লেও, প্রচলিত ভাষা ব্যবহারের বিরোধী নই । আমরা কেউ ভাষা জিনিসটা! তৈরি করিনে, সকলেই তৈরি ভাষা ব্যবহার করি। ভাষা জিনিসটা কোন একটি বিশেষ ব্যক্তির মনগড়া নয়, যুগযুগান্তর ধরে একটি জাতির হাতে গড়া। কেবলমান্ত মনোমত কথা বেছে নেবার, এবং ব্যাকরণের নিয়মরক্ষা করে” সেই বাছাই কথাগুলিকে নিজের পছন্দমত পাশাপাশি সাজিয়ে রাখবার স্বাধীনতাই আমাদের আছে। আমাদের মধ্যে ধারা জহুরী, তারা এই চল্তি কথার মধ্যেই রত্ব আবিষ্কার করেন, এবং শিল্পগুণে গ্রথিত করে” দিব্য হার রচনা করেন। নিজের রচনাশক্তির দারিজ্র্যের চেহারাই আমরা মাতৃভাষার মুখে দেখতে পাই, এবং রাগ করে? সেই আয়নাখানিকে নষ্ট কর্‌তৈ উদ্যত হই, ও পূর্বপুরুষদের সংস্কত দর্পণের সাহাছে -/ুখরক্ষা করুবার জন্ত ব্যস্ত হ'য়ে উঠি। একরকম কাচ আদ যাতে ৪১ বীরবলের হালখাতা মুখ মন্ত দেখায়__কিস্তু সেই সঙ্গে চেহারা অপরিচিত বিকটাকার ধারণ করে । আমাদের নিজেকে বড় দেখাতে গিয়ে যে আমরা কিস্তৃতকিমাকার রূপ ধারণ করি, তাতে আমাদের কোন্‌ লজ্জাবোধ হয় না। এখানে কেউ প্রশ্ন করৃতে পারেন যে, প্রচলিত ভাষা কাকে বলে? তার উত্তরে আমি বলি, থে ভাষা! আমাদের সুপরিচিত, সম্পূর্ণ আয়ত্ত, এবং যা আমরা নিত্য ব্যবহার করে” থাকি । তা খাটা বাঙ্গলাও নয়, খাঁটী সংস্কৃতও নয়, কিংবা উভয়ে মিলিত কোনরূপ খিচুড়িও নয়। যে সংস্কৃত- শব্দ প্রকৃত কিংবা বিকৃতরূপে বাশ্গলা কথার সঙ্গে মিলে মিশে রয়েছে, সে শব্কে আমি বাঙ্গলা বলে'ই জানি এবং মানি। কিন্তু কেবলমাত্র নৃতনত্বের লোভে নতুন করে” যে সকল সংস্কৃত শব্দকে কোন লেখক জোর করে" বাঙ্গলা ভাষার ভিতর প্রবেশ করিয়েছেন, অথচ খাপ খাওয়াতে পারেন নি, সেই সকল শব্দকে ছুঁতে আমি ভয় পাই। এবং ঘে সকল সংস্কৃত শব স্পষ্টতঃ ভুল অর্থে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেই সকল শব্ধ যাতে ঠিক অর্থে ব্যবহৃত হয়, সে বিষয়ে আমি লেখকদের সতর্ক হতে বলি। নইলে বঙ্গভাষার বনলতা যে সংস্কৃত ভাষার উদ্যানলত্তাকে তিরস্কত করবে, এমন ছুরাশা আমার মনে স্থান পার না। শব্ধকল্পক্রম থেকে আপনা হ'তে খসে” যা আমাদের কোলে এসে পড়েছে, তা মুখে তুলে নেবার পক্ষে আমার কোনও আপত্তি নেই । তলার কুড়োও, কিন্তু সেই সঙ্গে গাছেরও পেড়ে। না। তাতে যে পরিমাণ পরিশ্রম হবে, তার অনুরূপ ফললাভ হবে না। ৪ শুধু গাছ থেকে পাড়া নর, একেবারে তার আগ ডাল থেকে পাঁড়া গুটিকতক শব্দের পরিচয় আমি সম্প্রতি বইয়ের মলাটে পেয়েছি । এবং সে সম্বদ্ধে আমার দু'একটি কথা বক্তব্য আছে। ধারা 'শব্দাধিক্যাৎ অর্থাধিক্যং-_মীমাংসার এই নিয়ম মাঁনেন না, বরং তার পরিবর্তে সংস্কৃত শব্দ সম্বন্ধে অধিকন্ত ন দোষায়” এই উদ্ভট বচন অন্সারে কার্ধযান্গবর্তী হয়ে থাকেন, তারাও একট! গণ্ডীর ভিতর থেকে বেরিয়ে যেতে সাহসী হন না। এমন সাহিত্য-বীর বোধ হয় বাঙ্গলা দেশে খুব কম আছে, যারা বঙ্গরম্ণীর মাথায় “ধন্মিল্ল” চাপিয়ে দিতে সম্কুচিত না হয়, যদিচ সে বেচারারা নীরবে পুরুষের সব অত্যাচারই সহা করে” থাকে! বঙ্ষিমী যুগে সংস্কৃত শবের ব্যবহার কিছু কম ছিল না। অথচ স্বপ্ং বঙ্কিমচন্দ্র “প্রাড়বিবাক্‌* বাক্যটি “মলিঙ্ুচের+ ন্যায় কটু ভাষার হিসাবে গণ্য করে”, চোর এবং বিচারপতিকে একই আসনে বসিয়ে দিয়েছিলেন। প্প্রাড়বিবাকৃ” বেচারা বাঙ্গালী জাতির নিকট এতই অপরিচিত ছিল যে, বঙ্কিমচন্দ্রের হাতে তার এরূপ লাঞ্চনাতে কেউ আপত্তি করেনি । কিন্তু আজকাল ওর চাইতেও অপরিচিত শব্দও, নতুন গ্রন্থের বক্ষে কৌস্তভ মণির মত বিরাজ করুতে দেখা যায়। দৃষ্টান্তস্ব্ূপ আমি ছু, একটির উল্লেখ কর্ব। শ্রীযুক্ত অক্ষয়কুমার বড়াল জাতকবি।--তার ভাল মন্দ মাঝারি সকল কবিতাতেই তাঁর কবির জাতির পরিচয় পাওয়া যায়। বোধহয় তার রচিত এমন একটি কবিতাও নেই, যার ৪৩ বীরবলের হালখাতা অন্ততঃ একটি চরণে ও ধ্বজবজ্াঙ্কশের চিহ্ন না লক্ষিত নয়। সত্যের অনুরোধে এ কথা আমি স্বীকার করতে বাধ্য যে, তার নতুন পুস্তকের নামটিতে আমার একটু খটকা লেগেছিল । “এষা” শবের সঙ্গে আমার ইতিপূর্বে কখনও দেখাসাক্ষাৎ্ হয় নি, এবং তার নামও. আমি পূর্বে কখন শুনিনি । কাজেই আমার প্রথমেই মনে হয়েছিল যে, হয় ত “আয়েষা", নয় ত “এসিয়া”» কোনরূপ ছাপার ভূলে এষা রূপ ধারণ করেছে। আমার এরূপ সন্দেহ হবার কারণও সম্পূর্ণ স্বাভাবিক । বহ্ধিম- চন্দ্র যখন “আয়েষা'কে নিয়ে নভেল লিখেছেন, তখন তাকে নিয়ে অক্ষয়কুমার যে কবিতা রচনা করবেন, এতে আর আশ্চধ্য হবার কারণ কি থাকৃতে পারে? “আবার বলি ওস্মান ! এই বন্দী আমার প্রীণেশ্বর'"_এই পদটির উপর রমণীহদয়ের সপ্তকাণ্ড রামায়ণ খাড়া করা কিছু কঠিন নয়। তারপর “এসিয়া” ; প্রাচীর এই নবজাগরণের দিনে তার প্রাচীন নিজ্রা- ভঙ্গ কর্বার জন্য যে কবি উৎস্থৃক হ*য়ে উঠ্বেন, এও ত স্বাভাবিক। যার ঘুম সহজে ভাঙ্গে না, তার ঘুম ভাঙ্গাবার 'ছুটিমান্্র উপায় আছে,-_হয় টেনে হিচড়ে, নয় ডেকে । এসিয়ার ভাগ্যে টান৷ হেচ.ড়ানে! ব্যাপারটা ত পুরো দমে চলছে, কিন্ত তাতেও যখন তার চৈতন্য হ'ল না, তখন ডাক! ছাড়া আর কি উপায় আছে? আমাদের পূর্ববপুরুষেরা এসিয়াকে কাব্যে দর্শনে নানারূপ ঘুমপাড়ানী মাসীপিসীর গান গেয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখে গেছেন । এখন আবার জাগাতে হ'লে এ যুগের কবিরা! ৪88 মলাট-সমালোচন। _ 'জাগর” গান গেয়েই তাকে জাগাতে পার্বেন। সে গান অনেক কবিন্ুরে বেস্ুরে গাইতেও স্থুকু করে” দিয়েছেন। স্থতরাং আমার সহজেই মনে হয়েছিল যে, অক্ষয়কুমার বড়ালও সেই কার্যে ব্রতী হয়েছেন। কিন্তু এখন শুন্ছি যে, ও ছাপার ভুল নয়,_-আমারই ভূল | প্রাচীন গাথার ভাষায় নাকি “এষা,র অর্থ অন্বেষণ। একালের লেখকেরা যদি শব্ষের অন্বেষণে সংস্কৃত যুগ ডিঙ্গিয়ে একেবারে প্রাচীন গাথা-যুগে গিয়ে উপস্থিত হন, তা হ'লে একেলে বঙ্গ-পাঠকদের উপর একটু অত্যাচার করা হয়; কারণ, সেই শব্দের অর্থ-অন্বেষণে পাঠক যে কোন্দিকে যাবে, তা স্থির করতে পারে না। আজকালকার বাঙ্গল৷ বুঝ্তে অমরের সাহায্য আবশ্যক, তারপর যদি আবার যাস্ক চর্চা করতে হয়, তা হ'লে বাঙ্গলা-সাহিত্য পড়বার অবসর আমরা কখন্‌ পাব? যাস্কের সাহায্যেও যদি তার অর্থবোধ না হয়, তা হ'লে বাঙ্গলা-সাহিত্যের চচ্চা ঘে আমরা ত্যাগ কর্ব, তাতে আর সন্দেহ কি? অর্থবোধ হয় না বলে" যখন আমরা আমাদের পরকালের সদগতির একমান্জ সহায় যে সন্ধ্যা, তারি পাঠ বন্ধ করেছি,_-তখন ইহকালের ক্ষণিক স্থুখের লোভে যে আমরা গাথার শব্ষে রচিত বাঙ্গলা-সাহিত্য পড়ব, এ আশা কর! যেতে পারে না। তা” ছাড়া বৈদিক এবং অতি- বৈদিক ভাষা! থেকে যদি আমরা বাক্যসংগ্রহ করতে আরম্ত করি, তা৷ হ'লে তান্ত্রিক ভাষাকেই বা ছাড়ব কেন? আমার লিখিত নতুন বইখানির নাম যদি আমি “ফেতকারিণী”, ৪8৫ বীরবলের হালখাতা “ডামর” কিংবা! “উড্ডীশ+ দিই, তা! হ*লে কি পাঠকসম্প্রদায় খুব খুসী হবেন? শ্রীযুক্ত স্থধীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার পুস্তিকাগুলির নামকরণ বিষয়ে যে অপূর্বতা দেখিয়ে থাকেন, তা আমাকে ভীত না করুক, বিশ্মিত করে। আমি সাহিত্যের বাজারে মাল যাচাই কর্বার জন্য কষ্িপাথর হাতে নিয়ে ব্যবসা খুলে” বসিনি। স্থৃতরাং স্থধীন্দ্র বাবুর রচনার দোষগুণ দেখানো আমার কর্তব্যের মধ্যে নয়। একমাত্র মলাটে তার লেখা যেটুকু আত্মপরিচয় দেয়, সেইটুকু আমার বিচারাধীন । এমঞ্জুষা”, “করঙ্ক' প্রভৃতি শব্দের সঙ্গে যে আমাদের একেবারে মুখ-দেখাদেখি নেই, এ কথা বল্তে পারিনে। তা হলেও স্বীকার কর্তে হবে যে, অস্ততঃ পাঠিকা- দের নিকট ও পদার্থগ্ুলি যত স্থপরিচিত, ও নামগ্তলি তাদৃশ নয়। তা ছাড়া এরূপ নামের যে বিশেষ কোন সার্থকতা আছে, তাও আমার মনে হয় না। আমাদের কল্পনাজাত বস্ত আমরা প্যাট্রায় পূরে সাধারণের কাছে দিইনে, বরং সত্য কথা৷ বল্‌তে গেলে, মনের প্যাট্রা থেকে সেগুলি বা”র করে” জনসাধা- রণের চোখের সমুখে সাজিয়ে রাখি । করক্কের কথা শুন্লেই তান্থুলের কথা মনে হয়। পানের খিলির সঙ্গে স্থধীন্দ্র বাবুর ছোট গল্পগুলির কি সাদৃশ্য আছে জানিনে। করুণরস এবং পানের রস এক জিনিস নয়। আর একটি কথা। তাশ্থুলের সঙ্গে সঙ্গে চর্ব্বিতচর্ববণের ভাবটা মানুষের মনে সহজেই আসে। মে যাই হোক্‌, আমি লজ্জার সঙ্গে ্বীকার কর্ছি যে, স্থুধীন্রর ৪৬ মলাট-সমালোচন। । বাবুর আবিষ্কৃত “বৈতানিক' শব্দ, আমি বৈতালিক শবের ছাপাস্তর মনে করেছিলুম। হাজারে ন” শে! নিরনব্বই জন বাঙ্গালী পাঠক যে ও-শব্দের অর্থ জানেন না, এ কথা! বোধ হয় সথধীন্দ্র বাবু অস্বীকার কর্বেন না । আমার যতদূর মনে পড়ে, তাতে কেবলমাত্র ভূগুপ্রোক্ত মানব-ধর্মশাস্ত্রে এক স্থলে এ শব্টির ব্যবহার দেখেছি । কিন্তু তার অর্থ জানা! আবশ্তক মনে করিনি। এইরূপ নামে বইয়ের পরিচয় দেওয়া! হয় না, বরং তার পরিচয় গোপন করাই হয়। বাঙ্গল! সরন্বতীকে ছদ্মবেশ ন| পরাঁলে যে তাকে সমাজে বা"র করা চলে না, এ কথ! আমি মানিনে | এই নামের উদাহরণ ক”টি টেনে আন্বার উদ্দেশ, আমার সেই প্রথম কথার প্রমাণ দেওয়।। সে কথা এই যে, বঙ্গ- সাহিত্যের ভিতর সমালোচনার মত নামকরণেও বিজ্ঞাপনের ছাপ দেখতে পাওয়া যায়।' বিজ্ঞাপনের আর পাঁচটা দোষের ভিতর একটা হচ্ছে তার ন্যাকামী । হ্যাকামীর উদ্দেশ্ঠ হচ্ছে সহজে লোকপ্রিয় হওয়া, এবং তার লক্ষণ হচ্ছে ভাবে এবং ভাষায় মাধুর্য্যের ভাণ এবং ভঙ্গী। বঙ্গসাহিত্যে ক্রমে যে তাই প্রশ্রয় পাচ্ছে, সেইটে দেখিয়ে দেবার জন্তে আমার এত কথা বল! । আমরা এতটাই কোমলের ভক্ত হ'য়ে পড়েছি যে, শুদ্ধ স্বরকেও কোমল কর্তে গিয়ে বিকৃত করতে আমরা তিলমাত্র ছিধ! করিনে। কথায় বলে, “যত চিনি দেবে ততই মিঠি হবে? । কিন্তু শর্করার ভাগ অতিরিক্ত হ'লে মিষ্টান্গও যখন অথাগ্ হ'য়ে ওঠে, তখন এ ৪8৭ বীরবলের হালখাতা। পদ্ধতিতে রচিত সাহিত্যও যে অরুচিকর হ'য়ে উঠ্বে, তাতে আর সন্দেহ কি? লেখকেরা যদি ভাষাকে স্থকুমার কর্বার 'চেষ্ট! ছেড়ে দিয়ে, তাকে স্থস্থ এবং সবল কর্বার চেষ্টা করেন, তা হ'লে বঙ্গসাহিত্যে আবার প্রাণ দেখা দেবে । ভাষা যদি প্রসন্ন হয়, তা হ'লে তার কর্কশতাও সহা হয়। এ এতই সোজা কথা যে, এও যেআবার লোককে বোঝাতে হয়, এই ম্হাঁ আপশোষের বিষয় । যখন বঙ্গসাহিত্যে অন্ধকার আর “বিরাজ, কর্বে না, তখন এ বিষয়ে আর কারও “মনোযোগ আকর্ষণ কর্বার দরকারও হবে না। অগ্রহায়ণ, ১৩১৯ ৪৮ পা £ শি $&/ ৮ ডি) বগি জা ১7 ন্‌ 448 | রি ২... ভাপা শি রা ক ক রে, ্ এ টি 87381 সাহিত্যে চাবুক (১) সেদিন ষ্টার থিয়েটারে “আনন্দ-বিদায়ের অভিনয় শেষে দক্ষযজ্ঞের অভিনয়ে পরিণত হয়েছিল শুনে দুঃখিত এবং লঙ্জিত হলুম। *তার প্রথম কারণ এই যে, শ্রীযুক্ত দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের মত লোককে দর্শকমগ্ডলী লাঞ্কিত করেছেন; এবং তার দ্বিতীয় কারণ এই যে, শ্রীযুক্ত ছিজেন্দ্রলাল রায়, শ্রীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে প্রকাস্তটে লাঞ্ছনা দেবার উদ্দেশ্তেই রঙ্গমঞ্চে আনন্দ-বিদায়ের অবতারণ! করেছিলেন । দ্বিজেন্্র বাবু লিখেছেন যে, তিনি সকল রকম “মি'র বিপক্ষে । ন্যাকামি, জ্যাঠামি, ভগ্ডামি, বোকামি প্রভৃতি যে- সকল “মি”ভাগান্ত পদার্থের তিনি উল্লেখ করেছেন, সেগুলির যে কোন ভদ্রলোকেই পক্ষপাতী, এরূপ আমার বিশ্বাস নয় ; অন্ততঃ পক্ষপাতী হ'লেও, সে কথা কেউ মুখে স্বীকার কর্বেন না। কিন্ত সমাজে থাকৃতে হ*লেই পাঁচটি “মি” নিয়েই আমাদের ঘর করুতে হয়, এবং সেই কারণেই স্থপরিচিত “মিগুলি সাহিত্যে না হোক্‌, জীবনে আমাদের সকলেরই অনেকটা সওয়া আছে। কিন্তু যা আছে, তার উপর যদি একটা নতুন “মি এসে আমাদের ঘাড়ে চাপে, তা হলে সেটা নিতাস্ত ভয়ের বিষয় হয়ে ওঠে। ৪. ৪৯ বীরবলের হালখাতা আমরা এতদিন নিরীহ প্রকৃতির লোক বলে'ই পরিচিত ছিলুম। কিছুদিন থেকে ষণ্ডামি নামে একটা নতুন ণমি” আমাদের সমাজে প্রবেশ লাভ করেছে । এতদিন রাজনীতির রঙ্গভূমিতেই আমরা তার পরিচয় পেয়েছি । স্থ্রাট কংগ্রেসে সেই “মির তাণ্ডব নৃত্যের অভিনয় হয়েছিল । আমার বিশ্বাস ছিল যে, স্থুরাটে যে যবনিকাঁ-পতন হয়েছে, তা আর সহসা উঠবে না। কিন্ত এখন দেখতে পাচ্ছি যে, রাজনীতিতে প্রশ্রম় পেয়ে ষণ্ডামি ক্রমশঃ সমাজের অপর সকল দেশও অধিকার করে? নিয়েছে । যণ্তামি জিনিসটার আর যে ক্ষেত্রেই সার্থকতা থাক, সাহিত্যে নেই,_- কেন না সাহিত্যে বাহুবলের কোন স্থান নেই ।-্টার থিয়েটারের ৪০, হ+তে শ্রীযুক্ত দ্বিজেন্দ্রলাল রায়কে গায়ের জোরে নামানো সহজ, কিন্ত তিনি বঙ্গসাহিত্যে যে উচ্চ আসন লাভ করেছেন, বাহুবলে তাঁকে সেখান থেকে নামানো অসম্ভব । লেখকমাত্রেই নিন্দা-প্রশংস! সম্বন্ধে পরাধীন। সমালোচকদের চোখরাঙ্গানি সহ কর্‌ৃতে লেখকমাজ্রেরই প্রস্তত হওয়া আবশ্যক | কিন্ত সাহিত্যজগতে টিলটা মারলে ঘে, জড়জগতের পাটকেলটা আমাদের খেতে হবে, এমন কোন কথা নেই। ওরকম একটা নিয়ম প্রচলিত হ'লে .সাহিত্যরাজ্যে আমাদের বাস করা চল্বে না। কারণ এ কথা সর্ধবাদীসম্মত যে, বুদ্ধির জোর গায়ের জোরের কাছে বরাবরই হার মানে। এই কারণেই শ্রীযুক্ত ছিজেন্্রলাল রায় যে-ভাবে লাঞ্চিত হয়েছিলেন, তার জন্য আমি বিশেষ ছুঃখিত এবং লঙ্জিত। ৫০৩ সাহিত্যে চাবুক (২) কিন্ত শ্রীযুক্ত দ্বিজেন্দ্রলাল রায় যে, এ যুগের সাহিত্যে আবার “কবির লড়াই, ফিরে আন্বার প্রয়াস পেয়েছেন, তার জন্য আমি আরও বেশী ছুরখিত। ও কাজ একবার আরম্ভ করুলে, শেষটা খেউড় ধরতেই হবে। দ্বিজেন্দ্র বাবু বোধ হয় এ কথ অস্বীকার করবেন না! যে সেটি নিতান্ত অবাঞ্নীয় | এ পৃথিবীতে মানগষে আসলে খালি ছুটি কাধ্যই করৃতে জানে; সে হচ্ছে হাসতে এবং কাদতে । আমরা সকলেই নিজে হাস্তেও জানি, কীাদ্তেও জানি; কিন্ত সকলেরই কিছু আর অপরকে হাসাবার কিংবা কাদাবার শক্তি নেই। অব্ঠ অপরকে চপেটাঘাত করে, কাদানো কিংবা! কাতুকৃতু দিয়ে. হাসানো, আমাদের সবারই আয়ত্ত,_-কিস্তু সরম্বতীর বীণার সাহায্যে কেবল ছুটি চারটি লোকই এ কার্য করুতে পারেন। ধাদের সে ভগবতদত্ত ক্ষমতা আছে, তীাদেরি আমরা কবি বলে, মেনে নিই। বাদবাকী সব বাজে লেখক। কাব্যে, আমার মতে, শুধু তিনটিমাত্র রস আছে; করুণ রস, হাস্য রস, আর হাসিকারা-মিশ্রিত মধুর রস। যে লেখায় এর একটি না একটি রস আছে, তাই কাব্য; বাদবাকী সব নীরস লেখা, দর্শন, বিজ্ঞান ইত্যাদি যা খুসী তা হ'তে পারে,-কিন্ত কাব্য নয়। বাঙ্গল! সাহিত্যে হাস্যরসে শ্রীযুক্ত দিজেন্দ্রলাল রায় অদ্বিতীয়। তার গানে হাস্যরস, ভাবে কথায় স্থরে তালে লয়ে পঞ্চীকৃত হ)য়ে মুদ্তিমান হ'য়ে উঠেছে। হাসির গান তার সঙ্গে জুড়ীতে ৫১ বীরবলের হালখাত। গাইতে পারে, বঙ্গমাহিত্যের আসরে এমন গুণী আর একটিও নেই। কাঙ্গার মত হাসিরও নানাপ্রকার বিভিন্ন দপ আছে, এবং দ্বিজেন্দ্র বাবুর মুখে হাসি নানা আকারেই প্রকাশ পেয়েছে । সাহিত্যে কেবল আমাদের মিষ্টি হাসিই হাস্তে হবে, এ কথ আমি মানি নে। স্থৃতরাং দ্বিজেন্দ্র বাবু যে বলেছেন যে, কাব্যে বিদ্রপের হাসিরও ন্যাষ্য স্থান আছে, সে কথা সম্পূর্ণ সত্য । কিন্ত উপহাস জিনিসটার প্রাণই হচ্ছে হাসি। হাসি বাদ দিলে শুধু তার উপটুকু থাকে, কিন্তু তার রূপটুকু থাকে না । হাস্তে হলেই আমরা অল্পবিস্তর দস্তবিকাশ করতে বাধ্য হই। কিন্ত দস্তবিকাশ করলেই যে সে ব্যাপারটা হাসি হয়ে ওঠে, তা নয়, _র্দাতখিচুনী বলেও পৃথিবীতে একটা জিনিস আছে। সে ক্রিয়াটি যে ঠিক হাসি নয়, বরং তার উল্টে জীবজগতে তার প্রকষ্ট প্রমাণ আছে। সুতরাং উপহাস জিনিসটা সাহিত্যে . চল্লেও, কেবলমাত্র তার মুখভঙ্গীটি সাহিত্যে চলে ন!। কোন জিনিস দেখে যদি আমাদের হাসি পায়, তাহলেই আমরা অপরকে হাসাতে পারি। কিন্তু কেবলমাত্র যদি রাগই হয়, তাহ'লে দে মনোভাবকে হাসির ছদ্মবেশ পরিয়ে প্রকাশ কর্‌লে, দর্শকমণ্ুলীকে শুধু রাগাতেই পারি। দ্বিজেন্ত্র বাবু এই কথাটি মনে রাখলে লোককে হাসাতে গিয়ে রাগাতেন না। (৩) ছ্িজেন্দ্র বাবু বলেছেন যে, নাটকাকারে 02:০9 কোন ভাষাতেই নেই। যা কোন দেশে কোন ভাষাতেই ইতিপূর্বে ৫২ সাহিত্যে .চাবুক রচিত হয় নি, তাই স্থষ্টি করৃতে গিয়ে তিনি একটি অদ্ভূত পদার্থের স্থট্টি করেছেন। বিশ্বামিত্রের তপোব্ল আমাদের কারও নেই; স্থতরাং বিশ্বামিত্রও যখন নৃতন স্থষ্টি করতে গিয়ে অকৃতকাধ্য হয়েছিলেন, তখন আমরা যে হব, এ ত নিশ্চিত। মানুষে মুখ ভেংচালে দর্শকমাত্রই হেসে থাকে । কেন যে সে কাজ করে, তার বিচার অনাবশ্যক; কিন্তু ঘটনা হচ্ছে এই যে, ওরূপ মুখভঙ্গী দেখলে মান্থষের হাসি পায়। 787005 হচ্ছে সাহিত্যে মুখ ভেংচানো । ৪:০৫ নিয়ে যে নাটক হয় না, তার কারণ ছু ঘণ্টা ধরে” লোকে একটানা মুখ ভেংচে যেতে পারে না; আর যদিও কেউ পারে ত, দর্শকের পক্ষে তা! অসহা হয়ে ওঠে । হঠাৎ এক মুহূর্তের জন্য দেখা দেয় বলে?ই, এবং তার কোন মানেমোদ্দী নেই বলে"ই, মানুষের মুখ-ভেংচানি দেখে হাসি পায়। স্ৃতরাং ভেংচানির মধ্যে দর্শন, বিজ্ঞান, স্থনীতি, স্থরুচি প্রভৃতি ভীষণ জিনিস সব পুরে* দিতে গেলে, ব্যাপারটা মাছষের পক্ষে রুচিকর হয় না। এরূপ করাতে ভেংচানির শুধু ধর্মনষ্ই হয়। শিক্ষাপ্রদ ভেংচানির স্থষ্টি কর্তে গিয়ে দ্বিজেন্দ্র বাবু রসজ্জানের পরিচয় দেন নি।--যদি 09:০৫) র মধ্যে কোনরূপ দর্শন থাকে ত সে দস্তের দর্শন। (৪ ) দ্বিজেন্্ বাবু তার “আনন্দ-বিদায়ে'র ভূমিকায় প্রকারাস্তরে স্বীকারই করেছেন যে, লোক হাসানো নয়, লোকশিক্ষা! দেওয়াই তার মনোগত অভিগ্রায়। প্রহসন শুধু অছিল! মাত্র। বেত ৫৩ বীরবলের হালখাতা হাতে গুরুমশাইগিরি করা, এ যুগের সাহিত্যে কোন লোকের পক্ষেই শোভা পায় না। পরিজ্রাণায় সাধুনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্‌, ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে এ কথা শুধু অবতীর্ণ ভগবানের মুখেই সাজে, সামান্য মানবের মুখে সাজে না। লেখকেরা যদি নিজেদের এক একটি ক্ষুদ্র অবতারস্বরূপ মনে করেন, কিংবা যদি তারা সকলে কেষ্ট বিষ্ট, হয়ে ওঠেন, তাহলে পৃথিবীর সাধুদেরও পরিত্রাণ হবে না, এবং দুষ্টদেরও শাসন হবে না; লাভের মধ্যে লেখকেরা পরম্পর শুধু কলমের খোচা-খঁচি কর্বেন। দ্বিজেন্দ্র বাবুর ইচ্ছাও যে তাই হয়। এবং তিনি এরূপ খোঁচা-খুঁচি হওয়াটা যে উচিত, তাই প্রমাণ করবার জন্য বিলেতী নজির দেখিয়েছেন। তিনি বলেন যে, ড/০:০5৮/০:৮)কে [:0/2010£ চাব্কেছিলেন, এবং ৮ ০:০5- ৮০16), 5102) এবৎ 91)91165%কে চাব্কেছিলেন। বিলেতের কবিরা যে অহরহ পরস্পরকে চাব্কা-চাব্কি করে” থাকেন, এ জ্ঞান আমার ছিল না। 3105/01175) ড/০705/010) সম্বন্ধে 205 16806 নামে যে একটি ক্ষুত্র কবিত। রচনা করেন, সেটিকে কোন হিসাবেই চাবুক বলা যায় না । কবিসমাজের সর্ধমান্য এবং পৃজ্য দলপতি, দলত্যাগ করে” অপর-দলভুক্ত হওয়াতে কবিসমাজ যে গভীর বেদনা অন্গভব করেছিলেন, এ কবিতাতে /:3:0%/70175 সেই দুঃখই প্রকাশ করেছেন । ৬/০:510101 যে 8510 এবং 317০11৩যকে চাবৃকেছিলেন, এ কথা আমি জানতুম না । ৫8 সাহিত্যে চাবুক 07) অবশ্য তার সমসাময়িক কবি এবং সমালোচকদের প্রতি দু'হাতে ঘুষো চালিয়েছিলেন, কিন্তু সে আত্মরক্ষার্থ। অহিংসা পরমধশ্ম হ'লেও, আততায়ীবধে পাপ নেই। দ্বিজেন্দ্র বাবু যে নজির দেখিয়েছেন, সেই নজিরের বলেই প্রমাণ করা যায় যে, চাবুক পদার্থটার বিলেতী কবিসমাজে চলন থাকলেও, তার ব্যবহারে যে সাহিত্যের কোন ক্ষতিবুৃদ্ধি হয়েছে, তা নয়। ৬৮০075৮৮০0১ 91১6116%, 757০2 প্রভৃতি কোন কবিই কোন প্রতিদ্ন্ীর তাড়নার ভয়ে নিজের পথ ছাড়েননি, কিংব! সাহিত্য- রাজ্যে পাশ কাটিয়ে যাবারও চেষ্টা করেন নি। কবিমান্রেরই মত যে “ম্বধশ্মে নিধনং শ্রেয়; পরঃধন্মো ভয়াবহ ।, চাবুকের ভয় কেবলমাত্র তারাই করে, যাদের “ন্বধর্ম্ম” বলে জিনিসটা আদপেই নেই, এবং সাহিত্যে পরমুখাপেক্ষী হওয়। ছাড়া যাদের গত্যস্তর নেই। এ শ্রেণীর লেখকেরা কি লেখেন, আর না লেখেন, তাতে সমাজের কিংবা! সাহিত্যের বড় কিছু আসে যায়গা । একথা আমি অস্বীকার করিনে যে, সাহিত্যে চাবুকের সার্থকতা আছে । হাসিতে রস এবং কষ ছুই-ই আছে । এবং ঠিক মাত্রা অস্থসারে কষের খাদ দিতে পারুলে হান্তরসে জমাট বাধে । কিন্ত তাই বলে” পকষে"র মাত্রা এত অধিক বাড়ানো উচিত নয় যে, তাতে হাসি জিনিসটা ক্রমে অস্তহিত হঃয়ে, যা খাটী মাল বাকী থাকে, তাতে শুধু “কশাঘাত' করা চলে। সাহিত্যেও অপরের গায়ে 21৮10 ৪০10 ঢেলে দেওয়াটা বীরত্বের পরিচয় নয়। দ্বিজেন্্র বাবু “কফাঘাত”কে “কশাঘাত' বলে সুল ৫৫ বীরবলের হালখাতা করে” যত্ব-ণত্ব জ্ঞানের পরিচয় দেন নি। সাহিত্যে কোন ব্যক্তি- বিশেষের উপর চাবুক প্রয়োগ করাটা অনাচার । সমগ্র সমাজের পৃষ্টেই ওর প্রয়োগটা সনাতন প্রথা । মিথ্যা যখন সমাজে আস্বারা পেয়ে সত্যের সিংহাসন অধিকার করে? বসে, এবং রীতি যখন নীতি বলে” সম্মান লাভ করে ও সমগ্র সমাজের উপর নিজের শাসন বিস্তার করে, তখনই বিদ্রপের দিন আসে। পৃথিবীতে সব চাপা যায়, কিন্তু হাসি চাপা যায় না। ব্যক্তি- বিশেষের প্রতি চাবুকের প্রয়োগ চলে না। কোন লেখক যদি নিতান্ত অপদার্থ হয়, তাহলে তার উপর কশাঘাত করাটা কেবল নিষ্্রতা ; কেন না, গাধা পিটে ঘোড়া হয় না। অপর পক্ষে যদি কোন লেখক সত্য সত্যই সরস্বতীর বরপুত্র হন, তা হ'লে তার লেখার কোন বিশেষ অংশ কিংবা ধরণ মনোমত না হ'লেও, সেই বিশেষ ধরণের প্রতি যেরূপ বিদ্রুপ সঙ্গত, সেরূপ বিদ্রপকে আর যে নামেই অভিহিত কর, “চাবুক” বল! চলে না। কারণ, ওরূপ ক্ষেজে কবির মধ্যাদা' রক্ষা না করে” বিদ্রুপ করলে সমালোচকেরও আত্মমধ্যাদা রক্ষিত হয় না। কোন ফাক পেলেই, কলি যে ভাবে নলের দেহে প্রবেশ করেছিলেন, সমালোচকের পক্ষে সেই ভাবে কবির দেহে প্রবেশ কর! শোভনও নয়, সঙ্গতও নয় । (৫ ) চাবুক ব্যবহার করবার আর একটি বিশেষ দোষ আছে। ও কাজ করতে কর্‌তে মান্ষের খুন চড়ে” যায়। দ্বিজেন্্র বাবুরও ৫৬ সাহিত্যে চাবুক তাই হয়েছে । তিনি একমাত্র “াবুকে? সন্ধষ্ট না থেকে, ক্রমে “ঝাঁটিকা” "টিকা; প্রভৃতি পদার্থেরও প্রয়োগ কর্বার চেষ্টা করেছেন। আমি বাঙ্গলায় অনাবশ্তকে কা" প্রত্যয়ের বিরোধী । স্থতরাং আমি নির্ভয়ে দ্বিজেন্্র বাবুকে এই প্রশ্ন করুতে পারি যে, ষ্ঠাটিকা*র “ইকা” বাদ দিয়ে যা অবশিষ্ট থাকে, সে জিনিসটা মারাতে কি কোন লেখকের পদমর্যাদা বৃদ্ধি পায়? “ঝাঁটা” সম্বন্ধে আমার বক্তব্য এই যে, সম্মার্জনীর উদ্দেশ্য ধুলো ঝাড়া, গায়ের ঝালঝাড়া নয়। বিলেতী সরস্বতী মাঝে মাঝে রণচণ্তী মুন্তি ধারণ করলেও, বঙ্গসরম্বতীর পক্ষে ঝাটা উচিয়ে রঙ্গভূমিতে অবতীর্ণ হওয়াটা যে নিতাস্ত অবাঞ্থনীয়। ( ৬ ) শ্রীযুক্ত দ্বিজেন্দ্রলাল রায় নিজে মার-মুত্তি ধারণ কর্বার ষে কারণ দেখিয়েছেন, আমার কাছে সেটি সব চেয়ে অদ্ভুত লাগল। : দ্বিজেন্দ্র বাবুর মতে, “যদি কোন কবি কোন কাব্যকে সাহিত্যের পক্ষে অম্জলকর বিবেচনা করেন, তাহা হইলে সেরূপ কাব্যকে সাহিত্যক্ষেত্র হইতে চাবকাইয়া দেওয়া তাহার কর্তব্য ।' এক কথায়, সাহিত্যের মঙ্গলের জন্য নৈতিক চাবুক মারাই দ্বিজেন্দ্র বাবুর অভিপ্রায় । পৃথিবীতে অনেক লোকের ধারণা যে, কাউকে ধশ্মাচরণ শেখাতে হ'লে মৃত্যুর মত তার চুল চেপে ধরাটাই তার সর্ধশ্রেষ্ঠ উপায়, এবং সেই জন্য কর্তব্য । স্কুলে, জেলখানায়, এ সমাজের মঙ্গলের জন্যই বেত মারবার নিয়ম প্রচলিত ছিল। কিন্তু আজকাল অনেকেরই এ জ্ঞান জন্মেছে ৫৭ বীরবলের হালখাতা! -যে, ও পদ্ধতিতে সমাজের কোন মঙ্গলই সাধিত হয় না, লাভের মধ্যে শুধু, যে বেত মারে এবং যাকে মারা হয়, উভয়েই তার ফলে মনুষ্যত্ব হারিয়ে পশুত্ব লাভ করে। অপরের উপর অত্যাচার কর্বার জন্য শারীরিক বলের প্রয়োগটা যে বর্ধবরতা, এ কথা সকলেই মানেন,কিস্তু একই উদ্দেশ্যে নৈতিক বলের প্রয়োগটাও যে বর্বরতামাত্র, এ সত্য আজও সকলের মনে বসে” যায় নি। কঠিন শান্তি দেবার প্রবৃত্তিটি আসলে রূপাস্তরে প্রতিহিংসা-প্রবৃত্তি। ও জিনিসটিকে সমাজের মঙ্গলজনক মনে করা শুধু নিজের মনভোলানো মাত্র। নীতিরও একটা বোকামি, গোৌড়ামি এবং গুগডামি আছে। নিত্যই দেখতে পাওয়া যায়, একরকম প্রকৃতির লোকের হাতে নীতি পদার্থ টা পরের উপরে অত্যাচার কর্বার একটা অন্ত্রমাত্র। ধন্ম এবং নীতির নামে মাচ্ষকে মানুষ যত কষ্ট দিয়েছে, যত গহিত কাধ্য করেছে, এমন বোধ হয় আর কিছুরই সাহায্যে করেনি ।__ আশা! করি, ছিজেন্দ্রবাবু সে শ্রেণীর লোক নন, ধাদের মতে, স্থনীতির নামে সাত খুন মাপ হয়।-ইতিহাসে এর ধারাবাহিক প্রমাণ আছে যে, নীতির বোকামি, গৌড়ামি এবং গুগামির অত্যাচার সাহিত্যকে পৃরোমাত্রায় সহ কর্তে হয়েছে । কারণ, সাহিত্য সকল দেশে সকল যুগেই বোকামি, গৌড়ামি এবং গুপ্ডামির বিপক্ষ, এবং প্রবল শক্র। নীতি অর্থাৎ যুগবিশেষে প্রচলিত রীতির ধর্মই হচ্ছে মাঙ্যকে বাধা; কিন্তু সাহিত্যের ধন্ম হচ্ছে মানুষকে মুক্তি ৫৮ সাহিত্যে চাবুক দেওয়া । কাজেই পরস্পরের সঙ্গে দা-কুম্ড়োর সম্পর্ক। ধশ্ম এবং নীতির দোহাই দিয়েই মুসলমানেরা আলেক্জগ্ডয়ার লাইব্রেরী ভস্মসাৎ করেছিল । এ যুগে অবশ্য নীতি-বীরদের বাহুবলের এক্তিয়ার হ'তে আমর! বেরিয়ে গেছি, কিন্তু স্ষণীতির গোয়েন্দা আজও সাহিত্যকে চোখে চোখে রাখেন, এবং কারও লেখায় কোন ছিন্র পেলেই স্মাজের কাছে লেখককে ধরিয়ে দিতে উৎস্থক হন। কাব্যাম্ৃতরসান্বাদ করা এক, কাব্যের ছিন্দ্রান্বেষণ করা আর। শ্রী্চের বাশী কবিতার রূপকমান্্র। কারণ, সে বাশীর ধর্খুই এই যে, তা “মনের আকুতি বেকত করিতে কত ন। সন্ধান জানে” ছিন্রান্বেধী নীতিৎম্্ীদের হাত পড়লে সে বাশীর ফুটোগুলে। যেত্ারা বুজিয়ে দিতে চেষ্ট! করুবেনঃ তাতে আর সন্দেহ কি? এক শ্রেণীর লোক চিরকালই এই. চেষ্টা করে; অরুতকাধ্য হয়েছেন ; কারণ, সে ছিত্্র স্বয়ং ভগবানের হাতে- করা বিধ$ তাকে নিরেট করে? দেবার ক্ষমতা! মানুষের হাতে নেই। “মি জিনিসটিই খারাপ, কিন্তু আমাদের শান্ত্রমতে, মান্ষের পক্ষে সব চাইতে সর্বনেশে “মি” হচ্ছে “আমি” । কারণ, ও পদ্ার্থটির আধিক্য থাকলে আমাদের বিদ্যাবুদ্ধি কাগুজ্ঞান সবই লুপ্ত হ'য়ে আসে। অন্যান্ত সকল “মি” এ “আমি'কে আশ্রয় করে'ই থাকে । কিন্তু “আমি; এত অব্যক্তভাবে আমাদের সমস্ত মনটায় ব্যাপ্ত হয়ে পড়ে যে, আমরা নিজেও বুঝতে পারিনে যে, তারই তাড়নায় আমরা পরের উপর কুব্যবহার করতে উদ্যত ৫৯ বীরবলের হালখাতা হই,সমাজ কিংব! সাহিত্য কারও মঙ্গলের জন্য নয়। এই কথাটা স্পষ্ট বুঝতে পারুলে আমরা পরের উপর নৈতিক চাবুক প্রয়োগ করতে কুষ্ঠিত হই। এই কারণেই, যদি একজন কবি অপর একজন সমসাময়িক কবির সমালোচক হ'য়ে দাড়ান, তাহ'লে তার নিকট কবি এবং কাব্যের ভেদবুদ্ধিটি নষ্ট হওয়া অতি সহজ । ৬ দ্বিজেন্ত্র বাবু শ্রীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা হ'তে ছুনীতির যে প্রমাণ সংগ্রহ করেছেন, তা হাস্তরপাত্মক না হোক্‌ঃ হাস্যকর বটে। “কেন যামিনী না যেতে জাগালে না”-এ কথাটা ভারতবাসীর পক্ষে যে অগ্রীতিকর, তা আমি স্বীকার করতে বাধ্য-_কেন না, যামিনী গেলেও আমরা জাগবার বিপক্ষে ।__ আমরা শুধু রাতে নয়, অষ্টপ্রহ্র ঘুমতে চাই । স্থতরাং যদি কেউ অন্ধকারের মধ্যেই চোখ. থোল্বার পক্ষপাতী হন, তাহ'লে তার উপর বিরক্ত হওয়া আমাদের পক্ষে স্বাভাবিক !-_সে যাই হোক্‌, ও গানটিতে বঙ্গসাহিত্যের যে কি অমঙ্গল ঘটেছে, তা আমি বুঝতে পারলুম না। এ দেশের কাব্যরাজ্যে অভিসার বহুকাল হ'তে প্রচলিত আছে। রাধিকার নামে বেনামী করুলে, €ও কবিতাটি সম্বন্ধে ছ্বিজেন্্র বাবুর বোধ হয় আর কোনও আপত্তি থাকৃত না। আমরা যে নাম জিনিসটির এতটা অধীন হ,য়ে পড়েছি, সেটা আমাদের পক্ষে মোটেই ঙ্লীঘার বিষয় নয়। আর যদি দ্বিজেন্ত্র বাবুর মতে ও গানটি ভন্তরসমাজে অশ্রাব্য হয়, তাহলে সেটির 08:০0 করে' তিনি কি তাকে এতই সৃশ্রাব্য ৬০ সাহিত্যে চাবুক করে” তুলেছেন যে, সেটি রঙ্গালয়ে চীৎকার করে না গাইলে আর সমাজ উদ্ধার হয় না? দ্িজেন্দ্র বাবু যেমন বিলেতী নজিরের বলে” চাব্কাঁচাবৃকি বঙ্গসাহিত্যে প্রচলিত করৃতে চেয়েছেন, তেমনি তিনি আমাদের সাহিত্যে বিলেতী 701165- 0197)এর ভূত নামাতে চান। ভারতব্ষীয় সাহিত্যের অনেক ক্রটী আছে-কিস্ত 03116901510 নামক ন্যাকামি এবং গৌঁড়ামি হ'তে এ দেশীয় সাহিত্য চিরকালই মুক্ত ছিল। দ্বিজেন্দ্র বাবুর মত যদি আমাদের গ্রাহা কর্‌ৃতে হয়, তাহ'লে অশ্থঘোষের “বুদ্ধচরিত” থেকে স্থরু করে জয়দেবের গীতগোবিন্দ” পধ্্যস্ত, অন্ততঃ হাজার বংসরের সংস্কত কাব্য সকল আমাদের অগ্রাহ কর্তে হবে ।1-একখানিও টি'ক্বে না। তারপর বিদ্যাপতি চণ্তীদাস থেকে আরম্ভ করে” ভারতচন্দ্র পর্য্য্ত, সকল কবির সকল গ্রশ্থই আমাদের অস্পৃশ্য হয়ে উঠবে। একখানিও বাদ যাবে না। ধারা রবীন্দ্র বাবুর সরস্বতীর গাত্রে কোথায় কি তিল আছে, তাই খুঁজে” বেড়ান, _ত্বারা যে ভারতবর্ষের পূর্বব- কবিদের সরম্বতীকে কি করে তুষারগৌরী-রূপে দেখেন, তা আমার পক্ষে একেবারেই ছূর্ববোধ্য ।-_-শেষ কথা, 7011621719- এর হিসেব থেকে স্বয়ং দ্বিজেন্্র বাবুও কিছু কম অপরাধী নন। তার প্রমাণ ত হাতে হাতেই রয়েছে ।_আনন্দ-বিদায়' 00012] (৪3:00০0%. বলে' গ্রাহ হবে, এ আশ! যদি তিনি করে, থাকেন, তাহ,লে সে আশা! সফল হবে না। মাঘ, ১৩১৯ ৬১ আমরা ইংরাজ জাতিকে কতক্টা জানি, এবং আমাদের বিশ্বাস যে, প্রাচীন হিন্দু জাতিকে তার চাইতেও বেশী জানি; আমরা চিনিনে শুধু নিজেদের । আমরা নিজেদের চেন্বার কোন চেষ্টাও করিনে, কারণ আমাদের বিশ্বাস যে, মে জানার কোন ফল নেই; তা ছাড়া নিজেদের ভিতর জান্বার মত কোন পদার্থ আছে কিনা, সে বিষয়েও অনেকের সন্দেহ আছে। বাঙ্গালীর নিজন্ব বলে" মনে কিম্বা চরিত্রে যদি কোন পদার্থ থাকে, তাকে আমরা ভরাই,--তাই চোখের আড়াল করে রাখতে চাই। আমাদের ধারণা যে বাঙ্গালী তার বাঙ্গালীত্ব না হারালে আর মানুষ হয় না। অবশ্য অপরের কাছে তিরস্কৃত হলে আমরা রাগ করে" ঘরের ভাত, (যদি থাকে ত) বেশী করে? খাই; কিন্তু উপেক্ষিত হলেই আমরা! বিশেষ ক্ষুপ্ণ হই। মাঁন এবং অভিমান এক জিনিস নয়। প্রথমটির অভাব ইডি ঘিতীয়টি জন্মলাভ করে। আমরা যে নিজেদের মান্য করিনে, তার স্পষ্ট প্রমাণ এই যে, আমরা উন্নতি অর্থে বুঝি,-_হয় বর্তমান ইউরোপের দিকে এগোনো, নয় অতীত ভারতবর্ষের দিকে পিছোনো। আমরা _ নিজের পথ জানিনে বলে', আজও মনঃস্থির করে? উঠ্‌তে পারিনি ৬ তরজমা যে, পূর্ব এবং পশ্চিম এই ছুইটির মধ্যে কোন্‌ দিক অবলম্বন করলে আমরা ঠিক গন্তব্য স্থানে গিয়ে পৌছব। কাজেই আমরা ইউরোপীয় সভ্যতার দিকে তিন পা এগিয়ে, অবার ভারতবর্ষের. দিকে.ছু'পা পিছিয়ে আসি-__আবার অগ্রসর হই, আবার.পিছু হটি। এই কুণিস করাটাই আমাদের নব-সভ্যতার ধম্ম ও কম্ম। উক্ত ক্রিয়াটি আমাদের পক্ষে বিশেষ গৌরব-সুচক না৷ হ'লেও, মেনে নিতে হবে। যা মনে সভ্য বলে জানি, সে সম্বন্ধে মনকে চোখ ঠেরে কোন লাভ নেই! আমরা দোটানার ভিতর পড়েছি-_এই সত্যটি সহজে স্বীকার করে, নিলে, আমাদের উন্নতির পথ পরিষ্কার হ'য়ে আস্বে। যা আজ উভয়-সঙ্কট বলে” মনে হচ্ছে, তাই আমাদের উন্নতির ল্লোতকে একটি নির্দিষ্ট পথে বদ্ধ রাখবার উভয় কুল বলে” বুঝতে পার্ব। আমরা! যদি চল্‌্তে চাই ত, আমাদের একুল ওকুল দুকুল রক্ষা করেই চলতে হবে। ও আমরা স্পষ্ট জানি আর না জানি, আমরা এই উভয় কুল অবলম্বন করে, চল্বার চেষ্টা কর্ছি। সকল দেশেরই সকল যুগের একটি বিশেষ ধন্দ আছে। সেই যুগধ্শ অঙ্থসারে চল্তে পারলেই মান্য সার্থকতা লাভ করে। আমাদের এ যুগ সত্যযুগও নয়, কলিষুগও নয়,--শুধু তর্জমার যুগ । "আমরা! শুধু কথায় নয়, কাজেও, একেলে বিদেশী এবং সেকেলে স্বদেশী সভ্যতার. অন্গুবাদ করে'ই দিন কাটাই। আমাদের মুখের ৬৩ বীরবলের হালখাতা প্রতিবাদও এ একই লক্ষণাক্রান্ত। আমরা সংস্কৃতের অক্কবাদ করে” নৃতনের প্রতিবাদ করি, এবং ইংরেজীর অস্গুবাদ করে” পুরাতনের প্রতিবাদ করি। আসলে রাজনীতি, সমাজনীতি, ধন্ম, শিক্ষা, সাহিত্য,সকল ক্ষেত্রেই তঙ্জমা করা ছাড়া আমাদের উপায়াস্তর নেই। স্থতরা আমাদের বর্তমান যুগটি তজ্জমার যুগ বলে, গ্রাহ করে? নিয়ে, এ অন্গবাদ কাধ্যটি যোলআন ভালরকম করার উপর আমাদের পুরুষার্থ এবং কতিত্ব নির্ভর কর্ছে। | পরের জিনিসকে আপনার করে” নেবার নামই তজ্জমা। স্থতরাং ও কাধ্য করাতে আমাদের কোন ক্ষতি নেই, এবং নিজেদের দৈন্্যের পরিচয় দেওয়া হয় মনে করে*ও লজ্জিত হবার কারণ নেই । কেনন। নিজের এশ্বর্ধয না থাকলে লোকে যেমন দান কর্তে পারে না, তেমনি, নেবার যথেষ্ট ক্ষমতা না থাকৃলে লোকে গ্রহণও করতে পারে না। স্বৃতির মতে, দাতা এবং গ্রহীতার পরস্পর যোগ না হ'লে দানক্রিয়া সম্পন্ন হয় না । এ কথা সম্পূর্ণ সত্য ৷ মৃত ব্যক্তি দাঁতাও হ'তে পারে না গ্রহীতাও হ'তে পারে না; কারণ দান এবং গ্রহণ উভয়ই জীবনের ধশ্ম । বুদ্ধদেব, যিশুধুষ্ট, মহম্মদ প্রভৃতি মহাপুরুষদের নিকট কোটি কোটি মানব ধর্মের জন্য খণী। কিন্তু তাদের দত্ত অমূল্য রত তাদের হাত থেকে গ্রহণ কর্বার ক্ষমতা কেবলমাজ্ম তাদের সমকালবর্তী জনকতক মহাপুরুষেই ছিল। এবং শিষ্- পরম্পরায় তাদের মত আজ লক্ষ লক্ষ লোকের ঘরের সামগ্রী ৬৪ ভর্জমা হ'য়ে উঠেছে। পৃথিবীতে গুরু হওয়া বেশী শক্ত, কিন্বা শিশ্ক হওয়! বেশী শক্ত, বলা কঠিন। যাদের বেদাস্ত শাস্ত্রের সঙ্গে স্ল্লমাত্রও পরিচয় আছে, তারাই জানেন যে, পুরাকালে গুরুরা কাউকে ব্রদ্ষবিদ্যা দান কর্বার পূর্বে, শিক্কের সে বিদ্যা গ্রহণ কর্বার উপযোগিতা সন্বদ্ধে কিরূপ কঠিন পরীক্ষা কর্তেন। উপনিষদকে গ্হ্শাস্ত্র করে” রাখ্বার উদ্দেশ্যই এই যে, যাদের শিশ্ত হবার সামর্থ্য নেই, এমন লোকেরা ব্রহ্ষবিদ্যা নিযে বিদ্যে ফলাতে না পারে। এ কথা সম্পূর্ণ সত্য যে, শক্তিমান গুরু হবার একমাত্র উপাক্--পূর্ব্বে ভক্তিমান শিশ্ত হওয়া । বর্তমান যুগে আমরা ভক্তি পদার্থটি ভূলে” গেছি, আমাদের মনে আছে শুধু অভক্তি ও অতিভক্তি। এ ছু*য়ের একটিও সাধুতার লক্ষণ নয়, তাই ইংরেজী-শিক্ষিত লোকের পক্ষে অপর কাউকে শিক্ষা দেওয়া অসম্ভব | আমরা কথায় বলি, জ্ঞানলাভ করি; নার উত্তরাধিকারীসত্বে কিন্বা প্রসাদস্বরূপে লাভ কর্বার পদার্থ নয়। আমরা সঙ্ঞানে জন্মলাভ করিনে, কেবল জ্ঞান অর্জন কর্বার ক্ষমতামাত্র নিয়ে ভূমিষ্ঠ হই । জানা ব্যাপারটি মানসিক চেষ্টার অধীন, জ্ঞান একাটি মানসিক ক্রিয়া! মাত্র, এবং সে ক্রিয়া ইচ্ছাশক্তির একটি বিশেষ বিকাশ । মনু. পদার্থটি একটি বেওয়ারিশ ঙ্লেট নয়, যার. উপর বাহৃজগত্রপ পেন্সিল শধু হিজিবিজি কেটে যায়; অথবা ফোটোগ্রাফিক প্রেটও নয়, যা | োন আত রানা এর বার বাহনগন না রঃ ৫ ৬৫. বীরবলের হালখাতা ধরে" রাখে । যে প্রক্রিয়ার বলে আমরা জ্ঞাতব্য বিষয়কে নিজের ইচ্ছা এবং ক্ষমতা অনুসারে নিজের অস্তরভূতি করে” নিতে পারি,_তারি নাম জ্ঞান। আমরা মনে মনে যা তজ্জমা করে, নিতে পারি, তাই আমরা যথার্থ জানি; যা পারিনে, তার শুধু নামমাত্রের সঙ্গে আমাদের পরিচয় । এ তঞ্জম! করার শক্তির উপরই মানুষের মনুষ্যত্ব নির্ভর করে । স্থৃতরাং একাগ্রভাবে তঙ্জমা কার্যে ব্রতী হওয়াতে আমাদের পুরুষকার বৃদ্ধি পাবে বই ক্ষীণ হবে না। আমি পূর্বে বলেছি যে, আমরা সকলে মিলে জীবনের সকল ক্ষেত্রেই, হয় ইউরোপীয় নয় আধ্য-সভ্যতার তঙ্জম। কর্বার চেষ্টা কর্ছি, কিন্তু ফলে আমরা তজ্জমা না করে? শুধু নকলই কর্ছি। নকল করার মধ্যে কোনরূপ গৌরব বা মন্ুস্তত্ব নেই । মানসিক শক্তির অভাববশতঃই মানুষে যখন কোনও জিনিস রূপান্তরিত করে” নিজের জীবনের উপযোগী করে” নিতে পারে না, অথচ লোভবশতঃ লাভ কর্‌তে চায়, তখন তার নকল করে। নকলে বাইরের পদার্থ বাইরেই থাকে, আম্মাদের অন্তভূর্তি হয় না, তার দ্বারা আমাদের মনের এবং চরিত্রের কাস্তি পুষ্ট হয় না, ফলে মানসিক শক্তির যথেষ্ট চচ্চার অভাববশতঃ দিন দিন সে শক্তি ত্রাস হ'তে থাকে । ইউরোপীয় সভ্যতা আমরা নিজেদের চারিপাশে জড় করে”ও সেটিকে অন্তরঙ্গ করতে পারিনি, তার স্পষ্ট প্রমাণ এই যে, আমরা মাঝে মাঝে সেটিকে ঝেড়ে ফেল্বার জন্য ছটফট করি । মাস্ষে যা আত্মসাৎ করতে | ৫ তরজমা পারে না তাই ভশ্মসাৎ কর্‌তে চায়। আমরা মুখে যাই বলিনে কেন, কাজে, পূর্ব সভ্যত। নয়, পশ্চিম সভ্যতারই নকল করি; তার কারণ ইউরোপীয় সভ্যতা আমাদের চোখের স্ুমুখে নশরীরে বর্তমান, অপর পক্ষে আধ্য-সভ্যতার প্রেতাতআ্ামাত্ অবশিষ্ট । প্রেতাত্মাকে আয়ন্ত কর্তৈ হলে বহু সাধনার আবশ্ক। ত। ছাড়! প্রেতাত্স। নিয়ে ধারা কারবার করেন তার! সকলেই জানেন যে, দেহমুস্ত আত্মার সম্পর্কে আস্তে হলে অপর একটি দেহতে তাকে আশ্রয় দেওয়া চাই; একটি প্রাণীর মধাস্থতা ব্যতীত প্রেতাত্ম। আমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন না। আমাদের সমাজের প্রাচীন দেহ আছে বটে, কিন্ত প্রাণ নাই । শব প্রেতাত্মা কর্তৃক আবিষ্ট হ'লে মানুষ হয় না, বেতাল হয়। বেতাল-সিদ্ধ হবার দুরাশ! খুব কম লোকেই রাখে, কাজেই শুধু মন নয়, পঞ্জেন্ট্রিয় দ্বারা গ্রাহা যে ইউরোপীয় সভ্যতা আমাদের প্রতাক্ষ রয়েছে, সাধারণতঃ লোকে তারই অনুকরণ করে। অনুকরণ ভ্যাগ করে? যদি আমর! এই নব-সভ্যতার অনুবাদ কর্তে পারি, তা হ'লেই সে সভাতা নিজস্ব হয়ে উঠ্বে, এবং এ ক্রিয়ার সাহায্যেই আমরা নিজেদের প্রাণের পরিচয় পাব, এবং বাঙ্গালীর বাঙ্গালীত্ব ফুটিয়ে তুল্ব। তঞ্জমার আবশ্তকত্ব স্থাপনা করে” এখন কি উপায়ে আমরা সে বিষয়ে রুতকাধ্য হব, সে সম্বন্ধে আমার ছু'চারটি কথা বল্বার আছে। সাধারণতঃ লোকের বিশ্বাস যে, কথার চাইতে কাজ শ্রেষ্ঠ । ৬৭ বীরবলের হালখাতা এ বিশ্বাস বৈষয়িক হিসেবে সত্য, এবং আধ্যাত্মিক হিসেবে মিথ্যা। মাক্ষ্ষমাত্রেই নৈসর্গিক প্রবৃত্তির বলে সংসার-যাত্রার উপযোগী সকল কাধ্য কর্তে পারে; কিন্তু তার অতিরিক্ত কম্ম, যার ফল একে নয়, দশে লাভ করে, তা' কব্বার জন্য মনোবল আবশ্যক । সমাজে, সাহিত্যে যা কিছু মহত্কাধ্য অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার মূলে মন পদার্থটি বিদ্যমান। যা মনে ধরা পড়ে তাই প্রথমে কথায় প্রকাশ পায়, সেই কথা অবশেষে কাধ্যরূপে পরিণত হয়; কথার স্ক্্শরীর কার্য্যরূপ স্থুলদেহ ধারণ করে! আগে দেহটি গড়ে" নিয়ে, পরে তার প্রাণপ্রতিষ্ঠা কর্বার চেষ্টাটি একেবারেই বৃথা । কিন্তু আমরা রাজনীতি, সমাজনীতি, ধর্ম, সাহিত্য, সকল ক্ষেত্রেই ইউরোপীয় সভ্যতার প্রাণের সন্ধান না করে" শুধু তার দেহটি আয়ত্ত কর্বার চেষ্টা করায় নিত্যই ইতোন্টম্ততোত্রষ্ট হচ্ছি। প্রাণ নিজের দেহ, নিজের রূপ নিজেই গড়ে নেয় । নিজের অন্তনিহিত প্রাণশক্তির বলেই বীজ ক্রমে বৃক্ষরূপ ধারণ করে। স্থতরাং আমরা যদি ইউরোপীর সভ্যতার প্রাণে প্রাণবন্ত হ'য়ে উঠ্তে পারি, তাহলেই আমাদের সমাজ নব কলেবর ধারণ করবে । এই নব-সভ্যতাকে মনে সম্পূর্ণরূপ পরিপাক করতে পারুলেই আমাদের কান্তি পুষ্ট হবে। কিন্ত যতদিন সে সভ্যতা আমাদের মুখস্থ থাকৃবে কিন্তু উদরশ্থ হবে না, ততদিন তার কোন অংশই আমর! জীর্ণ করুতে পার্ব না। আমরা যে ইউরোপীয় সভ্যত। কথাতেও তঙ্জমা কর্তে পারিনি, তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ এই যে, আমাদের নৃতন শিক্ষালৰ ৬৮ তঙ্জমা ননৌভাবসকল শিক্ষিত লোকদেরই রসনা আশ্রয় করে” রয়েছে, সমগ্রজাতির মনে স্থান পারনি । আমর! ইংরেজীভাব ভাষায় তঙ্জম1 কর্‌তে পারিনে বলে'ই আমাদের কথা দেশের লোকে বোঝে না,_-বোঝে শুধু ইংরেজী-শিক্ষিত লোকে । এ দেশের জনসাধারণের নেবার ক্ষমতা কিছু কম নয়, কিন্তু আমাদের কাছ থেকে তারা যে কিছু পার না, তার একমাত্র কারণ আমাদের অন্যকে দেবার মত কিছু নেই--আমাদের নিজন্ব বলে কোন পদার্থ নেই--আমরা পরের সোনা কানে দিয়ে অহঙ্কারে মাটিতে প| দিইনে। অপরপক্ষে আমাদের পূর্বপুরুষদের দেবার মত ধন ছিল, তাই তাদের মনোভাব নিয়ে আজ সমগ্র জাতি ধনী হ'য়ে আছে। খধিবাক্যসকল লোকমুখে এমনি সুন্দর ভাবে তঙ্জম। হয়ে গেছে যে, তা আর তজ্জমা বলে' কেড বুঝতে পারেন না। এদেশের অশিক্ষিত লোকের রচিত বাউলের গান কাউকে আর উপনিষদের ভাষায় অন্গবাদ করে” বোঝাতে হয় না, অথচ একই মনোভাব ভাষাস্তরে বাউলের গানে এবং উপনিষদে দেখ! দেয়! আত্ম। যেমন এক দেহ ত্যাগ করে' অপর দেহ গ্রহণ করুলে পূর্বদেহের স্থৃতিমাত্রও রক্ষা করে না, মনোভাবও যদি তেমনি এক ভাষার দেহত্যাগ করে” অপর একটি ভাষার দেহ অবলঘ্বন করে, তা৷ হলেই সেটি ষথার্থ অনূদিত হয়। উপঘুক্ত তঞ্জমার গুণেই বৈদাস্তিক মনৌভাবসকল হিন্দু. সম্তানমাত্রেরই মনে অল্লবিষ্তর জড়িয়ে আছে। এদেশে এমন লোক ধোধ হয় নেই, যার মনটিকে নিংড়ে নিলে অন্ততঃ এক ৬৯ 4 বীরবলের হালখাতা ' ফোটাও গৈরিক রঙ না পাওয়া যায়। আধ্য-সভ্যতার প্রেতাত্মা উদ্ধার কর্বার চেষ্টাটা একেবারেই অনর্থক, কারণ তার আত্মাটি আমাদের দেহাভ্যস্তরে স্বযুপ্ত অবস্থায় রয়েছে_যদি আবশ্যক হয় ত সেটিকে সহজেই জাগিয়ে নেওয়া ঘেতে পারে । ঠিক কথাটি বল্তে পারলে অপরের মনের দ্বার, আরব্য-উপন্যাসের দস্থ্যদের ধনভাগ্ারের দ্বারের মত, আপনি খুলে যায় । আমরা ইংরেজী-শিক্ষিত লোকেরা জনসাধারণের মনের দ্বার খোল্বার সঙ্কেত জানিনে, কারণ আমরা ত। জান্বার চেষ্টাও করিনে। যে সকল কথা আমাদের মুখের উপর আল্গা হয়ে রয়েছে, কিন্তু মনে প্রবেশ করেনি, সেগুলি আমাদের মুখ থেকে খসে? পড়লেই যে অপরের অন্তরে প্রবেশ লাভ কর্বে-_-এ আশা বৃথা । আমরা যে আমাদের শিক্ষালন্ ভাবগুলি তঙ্জমা .কর্‌তে অকুতকার্ধ্য হয়েছি, তার প্রমাণ ত সাহিত্যে এবং রাজনীতিতে দু'বেলাই পাওয়া যায় । যেমন সংস্কৃত নাটকের প্রাকৃত, সংস্কৃত ছায়ার” সাহায্য ব্যতীত বুঝতে পারা যায় না, তেষনি আমাদের নব-সাহিত্যের কৃত্রিম প্রাকৃত, ইংরেজী ছায়ার সাহায্য ব্যতীত বোবা যায় না। সমাজে না হোক্‌, সাহিত্যে “চুরি বিদ্যে বড় বিদ্ে যদি না পড়ে ধরা।” কিন্তু আমাদের নব- _ সাহিত্যের বস্ত যে চোরাই মাল, তা ইংরেজী-সাহিত্যের পাঠক- মাত্রেরই কাছে ধরা পড়ে। আমরা ইংরেজী-সাহিত্যের সোনা রূপো যা চুরি করি, তা গলিয়ে নিতেও শিখিনি। এইত গেল সাহিত্যের কথা । রাজনীতি বিষয়ে আমাদের সকল ব্যাপার ৭০ তর্জম। যে আগাগোড়াই নকল, এ বিষয়ে বোধ হয় আর ছু"'মত নেই, স্বতরাং সে সম্বন্ধে বেশী কিছু বলা নিতান্তই নিশ্প্রয়োজন । আমাদের মনে মনে বিশ্বাস যে, ধর্শ এবং দর্শন এই ছুটি জিনিস আমাদের একচেটে, এবং অন্ত কোন বিষয়ে না হোক্‌, এই দুই বিষয়ে আমাদের সহজ কৃতিত্ব কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। ইংরেজী-শিক্ষিত ভারতবাসীদের এ বিশ্বাস যে সম্পূণ অমূলক, তার প্রমাণন্বরূপ দেখানো যেতে পারে যে, এ শ্রেণীর লোকের হাতে মন্ুর ধশ্ব "6112100 হয়ে উঠেছে। অর্থাৎ ভূল ভতঙ্জমার বলে ব্যবহার-শাস্ত্র আধ্যাত্মিক ব্যাপার হয়ে উঠেছে । ধরন্মশাস্ত্র এবং মোক্ষশাস্ত্রের ভেদজ্ঞান আমাদের লুপ্ত হয়েছে । ধন্মের অর্থ ধরে” রাখা, এবং মোক্ষের অর্থ ছেড়ে দেওয়া, স্বতরাং এ ছুয়ের কাজ যে এক নয়, তা শুধু ইংরেজী- নবিস আধ্য-সম্তানরাই বুঝ তে পারেন না। গীতা আমাদের হাতে পড়বামাত্র তার হরিভত্তি উড়ে” ঘায়। সেই কারণে শ্রীযুক্ত হীরেন্দ্রনাথ দত্ত “গীতায় ঈশ্বরবাদের” প্রতিষ্ঠ। করতে গিয়ে নব্য পণ্ডিতসমাজে শুধু বিবাদ-বিসম্বাদের স্ষ্টি করেছিলেন । তারপর গীতার “কশ্ম” ইংরাজী ৮০] রূপ ধারণ করে” আমাদের কাছে গ্রাহা হয়েছে; অর্থাৎ কর্মকাণ্ডের কন্ম কাগুহীন হয়েই আমাদের কাছে উচ্চ বলে গণ্য হয়েছে। এই ভূল তঞ্জমার প্রসাদেই, যে কর্মের উদ্দেশ্য পরের হিত এবং নিজের আত্মার উন্নতি সাধন-_পরলোকের অত্যুদয়ও নয়__সেই কশ্শ আজকাল ইহলোকের অত্যদয়ের জন্য ধন্ম বলে" গ্রাহ্ ৭৯ বীরবলের হালখাতা হয়েছে । যে কাজ মানুষে পেটের দায়ে নিত্য করে” থাকে, ৷ করা কর্তব্য এইটুকু শেখাবার জন্ত, ভগবানের যে ভোগায়তন দেহ ধারণ করে” পৃথিবীতে অবতীর্ণ হবার আবশ্যকত! ছিল না-এ সোজ! কথাটাও আমরা বুঝতে পারিনে। ফলে আমাদের কৃত গীতার অন্রবাদ বক্ততাতেই চলে, জীবনে কোন কাজে লাগে না। একদিকে আমর! এ দেশের প্রাচীন মতগুলিকে যেমন ইংরেজী পোষাক পরিয়ে তার চেহারা বিল্কুল্‌ বদলে দিই, তেমনি অপর দিকে, ইউরোপীয় দর্শন বিজ্ঞানকেও আমর! সংস্কৃত ভাষার ছদ্মবেশ পরিয়ে লোকসমার্জে বার করি। নিত্যই দেখছে পাই যে, খাঁটি জন্মান মাল স্বদেশী বলে? পাচজনে সাহিত্যের বাজারে কাটাতে চেষ্টা করছে । হেগেলের দর্শন শঙ্করের নামে বেনামি করে" অনেকে কতক পরিমাণে অজ্ঞ লোকদের কাছে চালিয়েও দিয়েছেনএ, আমাদের মুক্তির জন্য হেগেলেরও। আবশ্যক আছে, শঙ্করেরও আবশ্তক আছে ; কিন্তু তাই বলে” হের্গেলের মস্তক মুণ্ডন করে? তাঁকে আমাদের ' বহস্তরচিত শতগ্রস্থিময় কষা পরিয়ে শঙ্কর বলে” সাহিত্য-সমাজে _. পরিচিত করে” দেওয়াতে কৌন. লাভ নেই। হেগেলকে ককির না করে যদি শঙ্করকে গৃহস্থ করুতে . পারি, তাতে আমাদের উপকার বেশী। | বিজ্ঞান সম্ন্ধেও এরূপ তুল তক্জমা অনেক 'অনর্থ ঘটিয়েছে ! ্ উদাহরণ স্বরূপ 7%০101০7এর কথাটা ধরা যাক্‌। ইভলিউসনের প্‌ তঙ্জমা দোহাই না দিয়ে আমরা আজকাল কথাই কইতে পারিনে। প্রকার শীলই এ ইভলিউসন আশ্রয় করে” রয়েছে । স্থৃতরাং ইভলিউসনের যদি আমর! ভুল অর্থ বুঝি তা হ'লে, আমাদের সকল কাধ্যই যে আরম্তে পধ্যবসিত হবে সে ত ধরা কথা । বাঙ্গলায় আমর! ইভলিউসন “ক্রম-বিকাশবাদ) “ক্রমোন্নতিবাদ' ইত্যাদি শব্দে তঞ্জমা করে থাকি। এরূপ তঙ্জমার ফলে, আমাদের মনে এই ধারণ জন্মে গেছে যে, মাসিক পত্রের গল্পের মত, জগত পদার্থটি ক্রমশঃ প্রকাশ্ত । কুষ্টির বইখানি আগ্যোপাস্ত লেখা হয়ে গেছে, শুধু প্ররুতির ছাপাখান! থেকে অল্প অল্প করে, বেরচ্চে, এবং যে অংশটুকু বেরিয়েছে তার ণথকেই তার রচনা- প্রণালীর ধরণ আমরা জান্তে পেরেছি। সে প্রণালী হচ্ছে ক্রমোন্নতি ; অর্থাৎ যত দিন যাবে, তত সমস্ত গতের, এবং তার অন্তভূতি জীবজগতের এবং তার অস্তভূত মাঁনবসমাজের, এবং তার অস্তভূতি প্রতি মানবের, উন্নতি অনি 'ধ্য। প্রকৃতির : ধর্মই হচ্ছে আমাদের উন্নতি সাধন কর! । স্বতরাং আমাদের তার জন্য নিজের কোনও চেষ্টার আবশ্তক নেই । আমরা শুয়েই থাকি আর ঘুমিয়েই থাকি, জাগতিক নিয়মের বলে আমাদের উন্নতি হবেই। এই কারণেই এই ক্রমোন্নতিবাদ-আকারে ইভলিউসন আমাদের স্থ ভাবিক জড়তা এবং নিশ্চেষ্টতার অন্নকুল মত হ'য়ে ঈাড়িয়েছে। তা ছাড়। এই “ক্রম” শব্দটি আমাদের মনের উপর এমনি আধিপত্য স্থাপন করেছে যে, ৭৩ বীরবলের হালখাতা সেটিকে অতিক্রম কর! পাপের মধ্যে গণ্য হয়ে পড়েছে । তাই আমর! নানা কাজের উপক্রমণিকা করে"ই সন্ধষ্ট থাকি, কোন বিষয়েরই উপসংহার করাটা কর্তব্যের মধ্যে গণ্য করিনে ; প্রস্তাবনাতেই আমাদের জীবন-নাটকের অভিনয় শেষ হ'য়ে যায়। কিন্তু আসলে ইতলিউসন ক্রম-বিকাশও নয়, ব্রনোন্রতিও নয় । কোনও পদার্থকে প্রকাশ কর্বার শক্তি জড়প্ররুতির নেই, এবং তার প্রধান কাজই হচ্ছে সকল উন্নতির পথে বাধ দেওয়া । ইভলিউসন জড়জগতের নিয়ম নয়, জীবজগতের ধর্ম । ইভলিউসনের মধ্যে শুধু ইচ্ছাশক্তিরই বিকাশ পরিস্ফুট | ইভলিউসন অর্থে দৈব নয়,_পুরুষকার। তাই ইভলিউসনের জ্ঞান মানুষকে অলস হ'তে শিক্ষা দেয় না, সচেষ্ট হ'তে শিক্ষা দেয়? আমরা তুল তঙ্জমা করে” ইভলিউসনকে আমাদের চরিত্রহীনতার সহায় করে” এনেছি । _ ইউরোপীয় সভাতার হর আমর| তঙ্জমা করতে রুতকাধ্য হচ্ছি নে, নয় ভূল তত্জমা করুছি, তাই আমাদের সামাজি জীবনে শিক্ষিত সম্প্রদায়ের শক্তির পরিচয় পাওয়া যায় না, বরং অপচয়ের প্রমাণ পাওয়! যায়। অথচ আমাদের বিশ্বাস যে, আমর! ছু'পাতা৷ ইংরেজী পড়ে” নব্যত্রাক্ষণ সম্প্রদায় হ'য়ে উঠেছি । তাই আমরা নিজেদের শিক্ষার দৌড় কত সে বিষয়ে লক্ষ্য না করে” জনসাধারণকে শিক্ষা দিবার জন্য ব্যস্ত হ'য়ে উঠেছি। এ সত্য আমরা ভূলে ঘাই যে, ইউরোপীয় সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান থেকে যদি আমরা নতুন প্রাণ লাভ করে থাক্তুম, তা! হ'লে ৭8 তর্জম। জনসাধারণের মধ্যে আমরা নব প্রাণের সঞ্চারও করতে পার্তুম । আমরা অধ্যয়ন করে” যা লাভ করেছি, তা! অধ্যাপনার দ্বারা দেশশুদ্ধ লোককে দিতে পার্তুম। আমরা আমাদের ০0910075কে 17901091721156 করুতে পারিনি বলেই, গবর্ণমেণ্টকে পরামর্শ দিচ্ছি যে, আইনের দ্বারা বাধ্য করে” জনসাধারণকে শিক্ষ! দেওয়া হোক্‌। মান্যবর শ্রীযুক্ত গোপালকরুষ্খ গোখলে যে হুজুগটির মুখপাত্র হয়েছেন, তার মূলে ইউরোপের নকল ছাড়। আর কোনও মনোভাব নেই । তাই গবর্ণমেপ্টকে ভজী- বার জন্য, দিবারাত্রি খালি বিলেতী নজিরই দেখানো হচ্ছে। শিক্ষা! শব্দের অর্থ শুধু লিখতে ও পড়তে শেখা হয়ে দাড়িয়েছে । গবর্ণমেপ্টই স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠা করে আমাদের লিখতে পড়তে শিখিয়েছেন। স্তরাং গবর্ণমেণ্টকেই গ্রামে গ্রামে ্কু স্থাপন করে" রাজ্যিস্তদ্ধ ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখাতেই হবে, এই হচ্ছে আমাদের হাল রাজনৈতিক আবদার । যতদিন পর্যস্ত আমরা আমাদের নব-শিক্ষা মজ্জাগত করুতে না পার্ব, ততদিন জনসাধারণকে পড়তে শিখিয়ে তাদের যে কি বিশেষ উপকার করা হবে, তা ঠিক বোঝা! যায় না। আমরা আজ পর্য্যন্ত ছোট ছেলেদের উপযুক্ত একখানিও পাঠ্য পুস্তক রচন! কর্‌তে পারিনি । পড়তে শিখ লে, এবং পড়বার অবসর থাকলে এবং বই কেন্বার সঙ্গতি থাক্‌লে, প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষা প্রাপ্ত চাষার ছেলেরা সেই রামায়ণ মহাভারতই পড়বে, আমাদের নব-শিক্ষার ভাগ তারা কিছু পাবে না । রামায়ণ মহাভারতের ৭৫ কথা যে বইয়ে পড়ার চাইতে মুখে শোন! অনেক বেশী শিক্ষা- প্রদ, তা নব্য-শিক্ষিত ভ ভারতবাসী ছাড়া আর কেউ অস্বীকার কর্বেন ন।। মুখের বাক্যে প্রাণ আছে, লেখার ধ্বনিহীন বাক্য আধমরা। সে ঘাই হোই, আমাদের দেশের লৌকিক শিক্ষার জ্ঞান যদি আমাদের থাকৃত, এবং সেই শিক্ষার প্রতি অযথা! অবজ্ঞ। যদি শমাদের মনে না স্থান পেত, তা হলে, না ভেবে চিন্তে, লো. "শিক্ষার দোহাই দিয়ে, সেই চিরাগত লৌকিক শিক্ষা নষ্ট কর্ণৃতে আমরা উদ্যত হতুষ নাঁ। সংস্কত-সাহিত্যের সঙ্গে যার পরিচয় আছে তিনিই জানেন যে, আমাদের পূর্বব- পুরুষে । লোকাচার, লৌকিক ধর্ম, লৌকিক স্তায় এবং লৌকিক বিদ্কাকে কিরূপ মান্য কর্তেন। কেবলমাত্র বর্ণপরিচয় হখলেই লোকে শিক্ষিত হয় না; কিন্ত এ পরিচয় লাভ করতে গিয়ে যে বর্ণধশ্ম হারানো অসম্ভব নয়, তা সকলেই জানেন। মাসিক পাচটাকা বেতনের গুরু নামক গক্ুর দ্বারা তাড়িত না অপেক্ষা চাষার ছেলের পক্ষে গরু তাড়ানে! শ্রেয়ঃ | / ৭. 54 যে কোন লোকের পক্ষেই গোমাংস হওয়া চিপ এ খা আমরা সকলেই যানি, কিন্তু “ক' অক্ষর যে আমাদের রক্তমাহসা; ওয়া উচিত, এ ধারণা সকলের নেই। _ একবল স্থাক্ষর কর্তে -শৈধার চাইতে নিরক্ষর থাকাও ভাল, _ কারণ পৃথিবীতে আক্ুলের সত য় রেখে যাওয়াতেই মানবজীবনের সার্থকতা । আমাদের আহার, পরিচ্ছদ, গৃহ, মন্দির, সব _ জিনিসেই আমাদের নিরক্ষর লোকদের আঙ্গুলের ছাপ রয়েছে। ৭৬ তর্জম। শুধু আমর! শিক্ষিত সম্প্রদ্ধায়ই ভারত-মাতাকে পরিষ্কার বৃদ্ধাষ্ট দেখিয়ে যাচ্ছি । পতিতের উদ্ধার কাধ্যটি খুব ভাল; ওর একমাত্র দোষ এই যে, ধারা প্রকে উদ্ধার করুবার জন্য ব্যস্ত, তারা নিজেদের উদ্ধার সম্ব7 সম্পূর্ণ: উদাসীন । আমরা যত- দিন শুধু ইংরেজীর নীচে স্বাক্ষর দিয়েই ক্ষান্ত থাকৃব, কিন্তু সাহিত্যে আমাদের আঙ্গুলের ছাপ ফুটবে না, তত দিন আমরা নিজেরাই যথার্থ শিক্ষিত হব না, পরকে শিক্গ দেওয়া ত দূরের কথা । আমি জানি যে আমাদের জাতিকে খ ছা কর্বার জন্য অসংখ্য সংস্কারের দরকার আছে। কিন্তু আর' যে কোন স্করণের আবশ্ঠক থাক্‌ ন| কেন, শিক্ষিত সম্প্রদা্দে- হাজার হাজার বটতলার সংস্করণের আবশ্যক নেই । মাঘ, ১৩১৯ ৭৭ বইয়ের ব্যবসা সাধারণতঃ লোকের একটা বিশ্বাস আছে যে, বই জিনিসটা পড়! সহজ, কিন্তু লেখ! কঠিন। অপর দেশে যাই হোক্‌, এ দেশে কিন্ত নিজে বই লেখার চাইতে অপরকে পড়ানো ঢের বেশী শক্ত। ুন্তে পাই যে, কোন বইয়ের এক হাজার কপি . ছাপালে, এক বৎসরে তার একশ'ও বিক্রী হয় না। সাধারণ লেখকের কথ৷ ছেড়ে দিলেও, নামজাদা লেখকদেরও বই বাজারে কাটে কম, কাটে বেশী পোকায়। বাঙ্গলাদেশে লেখকের নখখ্য। বেশী কিংবা পাঠকের সংখ্য। বেশী, বলা কঠিন। এ বিষয়ে যখন কোন 58050105 পাওয়া যায় ন।) তখন 'ধরে' নেওয়। যেতে পারে যে মোটামুটি ছুই সমান। কেউ কেউ এমন কথাও বলে” থাকেন, যে লেখা ও পড়া এ ছুটি কাজ অনেক স্থালে একই লোকে করে থাকেন। এ কথ! যদি সত্য হয়, তা হ'লে অধিকাংশ লেখকের পক্ষে নিজের লেখ! নিজে পড়া ছাড়া উপায়ান্তর নেই । কেনন! পরের বই কিনতে পয়সা লাগে, কিন্ত নিজের বই বিনে পয়সায় পাওয়! যায়। অবশ্ত কখন কখন কোনও কোনও বই উপহারস্বরূপে পাওয়! যায়, কি সে _ সৰ বই প্রায়ই অপাঠ্য। এরূপ অবস্থায় বঙ্গ-সাহিত্যের কৃতি হওয়া প্রায় একরূপ অসম্ভব। কারণ, সাহিত্য পদার্থট যাই এহোক্‌ না কেন, বই হচ্ছে শুধু বেচাকেনার জিনিস, একেবারে ৭৮ _ বইয়ের ব্যবসা! কাচামাল । ও মাল ধরে” রাখা চলে নী। গাছের পাতার নত বইয়ের পাতাও বেশী দিন টে'কে না, এবং একবার ঝরে” গেলে উন্ন ধরানো ছাড়া অন্য কোনও কাজে লাগে না। এ অবস্থা যে সাহিত্যের পক্ষে শোচনীয় সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু কার দোষে যে এরূপ অবস্থা ঘটেছে, লেখকের কি পাঠকের, সে কথ| বল। কঠিন। অবশ্য লেখকের পক্ষে এই বল্বার আছে যে, এক টাকা দিয়ে একখানি বই কেনার চাইতে, একশ” টাক! দিয়ে একখানি বই ছাপানো ঢের বেশী কষ্টসাধ্য । অপর পক্ষে পাঠক বল্তে পারেন যে, একশটি টাকা অন্ততঃ ধার করেও যে-সে বাঙ্গাল! বই ছাপানো যেতে পারে, কিন্তু নিজের বুদ্ধি অপরকে ধার না দিয়ে ঘে-সে বাঙলা বই পড়া যেতে পারে ন।। অর্থকষ্টের চাইতে মনঃকষ্ট অধিক ৷ অসহা। আমার মতে দু'পক্ষের মত এক হিসেবে সত্য হ'লেও আর এক হিসেবে মিথ্যা । বই লিখলেই যে ছাপাতে হবে, এইটি হচ্ছে লেখকদের ভুল; আর বই কিন্লেই যে পড়তে হবে, এইটি হচ্ছে পাঠকদের ভুল । বই লেখা জিনিসটা একটা সখ মাত্র হওয়। উচিত নয়,_-কিস্তু বই কেনাটা সখ ছাড়া আর কিছু হওয়া উচিত নয়। বাঙ্গল। দেশে বাঙ্গলা-সাহিত্যের শ্রীবৃদ্ধি হওয়৷ উচিত কি না, সে বিষয়ে আমি কোন আলোচন! করতে চাইনে। কারণ, সাহিত্য শব্দ উচ্চারণ কর্বামান্ত্র নান! তর্কবিতর্ক উপস্থিত হয়। অমনি চারধার থেকে এই দার্শনিক প্রশ্ন ওঠে, স্রহত্য কাকে ৭৯ বীরবলের হালখাতা বলে? সাহিত্যে কার কি ক্ষতি হয় এবং কার কি উপকার হয়? তারপর সাহিত্যকে সমাজের শাসনাধীন করে” তার শান্তির জন্য সমালোচনার দণ্ডবিধি আইন গড়বার কথা হয়। সমালোচকেরা একধারে ফরিয়াদি, উকিল, বিচারক এবং জল্লাদ হ'য়ে ওঠেন। স্থতরাৎ কথাটা দ্রাড়াচ্ছে এই যে, সাহিতা যে কি, সে সম্বন্ধে যখন এখনও একটা জাতীয় ধারণ! জন্মে যায়নি, তখন এ বিষয়ে এক কথা বল্লে হাজার কথা শুনতে হয়। কিন্তু বই জিনিসটা কি, তা সকলেই জানেন। এবং বাঙ্গল! বই থে বাজায়ে চলা উচিত সে বিষয়ে বোধ হয়-_ছু'মত নেই, কারণ ও জিনিসটা স্বদেশী শিল্প । যদি কারও এ বিষয়ে সন্দেহ থাকে, তা হ'লে তা৷ ভাঙ্কাবার জন্যে দেখিয়ে দেওয়া যেতে পারে ঘে, নব্য স্বদেশী শিল্পের যে দুটি প্রধান লক্ষণ, সে ছুটিই এতে বর্তমান । প্রথমতঃ নব্য-সাহিত্য পদার্থটা স্বদেশী নয়, দ্বিতীয়তঃ তাতে শিল্পের কোন পরিচয় নেই । | লেখা ব্যাপারটা যতদিন আমরা! মান্তষের একটা প্রধান কাজ হিসেবে না দেখে, বাজে সথ হিসেবে দেখব, ততদিন বইয়ের ব্যবসা ভাল করে” চল্বে না। স্থতরাং বঙ্গ-সাহিত্যের উন্নতি অর্থাৎ বিস্তার করতে হলে, আমাদের স্বীকার করতে হবে যে এ যুগে সাহিত্য প্রধানতঃ লেখা পড়ার জিনিস নয়, কেনা বেচার জিনিস। কোন রচনাকে ঘর্দি অপরে অমূল্য বলে, তা হ'লে রচয়িতার রাগ করা উচিত, কারণ যে পদার্থের স্ক্য নেই, তা ঘত্র করে? গড়া সকলের পক্ষে সম্ভব নয়। ৮০ বইয়ের ব্যবসা ব্যবসার ছুটি দিক আছে,_প্রথম 7:০00610 ( তৈরি করা ) দ্বিতীয়তঃ 15019096107 (কাটানো )। মানবজীবনের এবং মালের জীবনের একই ইতিহাস, তার একটা আরম্ভ আছে, একটা শেষ আছে। যে তৈরি করে তার হাতে মালের জন্ম এবং যে কেনে তার হাতে তার ম্ৃত্যু। জন্ম-মৃত্যু পথ্যস্ত কোন একটি মালকে দশ হাত ফিরিয়ে নিযে বেড়ানোর নাম হচ্ছে 01501036107. সুতরাং বইয়ের জন্ম-বুত্তাস্ত এবং ভ্রম্ণ-বৃত্তাস্ত, ছুটির প্রতিই আমাদের সমান লক্ষ্য রাখতে হবে। | এ স্থলে বলে' রাখা আবশ্যক যে, আমি সাহিত্য-ব্যবসাযী নই । অর্থাৎ অগ্যাবধি বই আমি কিনেই আস্ছি, কখনও বেচিনি। স্থতরাৎ কিকি উপায় অবলম্বন কর্‌লে বই বাজারে কাটানো যেতে পারে, সে বিষয়ে আমি ক্রেতার দিক্‌ থেকে যা বল্বার আছে, তাই বল্‌্তে পারি, বিক্রেতা হিসেবে কোন কথাই বল্তে পারি নে। সচরাচর দেখতে পাই যে, বই বিক্রী কর্বার জন্য, বিজ্ঞাপন দেওয়া, অর্ধমূল্যে কিন্বা লিকিমূল্যে 'বিক্রী করা, ফাউ দেওয়া এবং উপহার দেওয়া প্রভৃতি উপায় অবলম্বন করা হ'য়ে থাকে । এ সকল উপায়ে যে বইয়ের কাটৃতির কতকটা সাহায্য করে, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ 'নেই, কিন্তু সেই সঙ্গে বাধাও. যে দেয়, সে ধারণাটি বোধ হয় বিক্রেতাদের মনে তত স্পষ্ট নয়। ৬ ৮১ প্রথমতঃ বিশখানি বইয়ের যদি এক সঙ্গে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়, এবং তার প্রতিখানিকেই ষদি সর্বশ্রেষ্ঠ বল! হয়, তা হ'লে তার মধ্যে কোন্থখানি যে কেনা উচিত, সে বিষয়ে অধিকাংশ পাঠক মন স্থির করে? উঠতে পারে না। অপরাপর মালের একটি স্থনিদ্িিষ্ট. শ্রেণীবিভাগ. আছে । বিজ্ঞাপনেই আমাদের জানিয়ে দেয় যে, তার মধ্যে কোন্টি পয়লা নম্বরের, কোন্টি . দোসরা নম্বরের, কোন্টি তেসরা নম্বরের ইত্যাদি ; এবং সেই ইতরবিশেষ অন্থসারে দামেরও তারতম্য হ'য়ে থাকে । স্থতরাং সে সব মাল কিনতে ক্রেতাকে বাশবনে ডভোমকান! হ'তে হয় না, প্রত্যেকে নিজের অবস্থা এবং রুচি অনুসারে নিজের আবশ্তকীয় জিনিস কিনতে পারে। কিন্তু বই সম্বন্ধে এরূপ শ্রেণীবিভাগ করে? বিজ্ঞাপন দেওয়। সম্ভব নয় ; কেন না, যদিচ সাহিত্যে ভালমন্দের তারতম্য অগাধ, তবুও কোনও লেখক, তার লেখা যে প্রথম শ্রেণীর নয়, এ কথা নিজমুখে সমাজের _ কাছে জাহির করুবেন না। স্থতরাং বিজ্ঞাপনের উপর আস্থা স্থাপন করে” হয় আমাদের বিশখানি বই একসঙ্গে কিনতে হয়, নয় কেনা থেকে নিরম্ত থাকৃতে হয়। ফলে দ্রাড়ায় এই যে, বই বিক্রী হয় না,_কেনন! ধার বিশখানি বই কেন্বার সঙ্গতি আছে, তার বিশ্বাস যে সাহিত্য নিয়ে কারবার করে শুধু লক্ষী- ছাড়ার দল। _. অর্ধমূল্যে এবং সিকিমূল্যে বিক্রী কর্বার দোষ যে, লোকের সহজেই সন্দেহ হয় যে, বস্তাপচ! সাহিত্যই শুধু এ উপায়ে বেড়ে ৮২ বইয়ের ব্যবসা ফেলা হয়। পয়সা! খরচ করে” গোলামচোর হ'তে লোকের বড় একটা উত্সাহ হয় না । কোন বই' ফাউ হিসেবে দেবার আমি সম্পূর্ণ বিপক্ষে । আর পাঁচজনের বই লোকে পয়সা দিয়ে কিন্বে, এবং আমার বইখানি সেই সঙ্গে বিনে পয়সায়.পাবে, এ কথ! ভাবতে গেলেও লেখকের দোয়াতের কালি জল হ'য়ে আসে। লেখকদের এইরূপ প্রকাশ্তটে অপমান করে” সাহিত্যের মান কিন্বা পরিমাণ দুয়ের কোনটিই বাড়ানো যায় না। যদি কোন বই বিনামূল্যে বিতরণ করতেই হয়, ত প্রথম থেকে প্রথম সংস্করণ এইবপ বিতরণ করা উচিত) যাতে করে” পাঠকদের সঙ্গে সহজে সে বইটির পরিচয় করিয়ে দেওয়া যায়। উক্ত উপায়ে 72 সিগারেট এদেশে চালানো! হয়েছে । প্রথমে কিছুদিন বিলিয়ে দিয়ে, তারপর দ্বিগুণ দাম চড়িয়ে সে সিগারেট আজকাল বাজারে বিক্রী করা হচ্ছে, এবং এত বিক্রী বোধ হয় অন্য কোনও সিগারেটের নেই । বই জিনিসটিকে ধৃমপত্রের সঙ্গে. তুলনা করাটাও অসঙ্গত নয়। কারণ অধিকাংশ বই, কাগজে- মোড়া ধোয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। সে যাই হোক্‌, আসল কথা হচ্ছে এই যে, বিজ্ঞাপনাদির দ্বারা লোকের মনে শুধু কেন্বার লৌভ জন্মে দেওয়া যায়, কিন্তু কেনানো যায় না। কোন জিনিস কাউকে কেনাতে হ'লে, সেটি প্রথমতঃ তার হাতের গোড়ায় এগিয়ে দেওয়া চাই, তারপর সেটি তাকে গতিয়ে দেওয়া চাই। এ ছুই বিষয়ে যে পুশ্তক-বিক্রেতারা ৮৩ বীরবলের হালখাতা বিশেষ কোন যত্ব করেছেন, তার প্রমাণ পাওয়া যায় না । আমার বিশ্বাস যে, নতুন বাঙ্গলা বই যদি ঘরে ঘরে ফেরি করে” বিক্রী হয়, তা হ'লে বঙ্গ-সাহিত্যের প্রতি লক্ষ্মীর দৃষ্টি পড়বে। সাহিত্যে 0:00906০70 জন্বদ্ধে আমার বক্তব্য এই যে, 062790-এর প্রতি লক্ষ্য রেখে সাহিত্য 54015 করতে হবে। যে বই লোকে পড় তে:চায় না, সে বই অপর যে-কোন উদ্দেস্তেই লেখা হোক না কেন, বেচবার উদ্দেশ্তে লেখা চলে না। এবং কি ধরণের বই লোকে পড়তে চায়, সে বিষয়ে একটা সাধারণ কথা বলা যেতে পারে। এটি একটি প্রত্যক্ষ সত্য যে, সাধারণ পাঠক-সমাজ ছুই শ্রেণীর বই পছন্দ করে ন1)_ এক হচ্ছে ভাল, আর এক হচ্ছে মন্দ। যে বই ভালও নয় মন্দও নয়, অমনি একরকম মাঝামীঝি গোছের,_সেই বই মানুষে পড়তে ভালবাসে, এবং সেইজন্য কেনে । প্রতি দেশে প্রতি যুগে প্রতি জাতির একটি বিশেষ সামাজিক বুদ্ধি থাকে । সে বুদ্ধির প্রধান উদ্দেশ্ট হচ্ছে সংসারযাত্রা নির্বাহ করা, এবং সামাজিক জীবনের কাজেতেই সে বুদ্ধির সার্থকতা । কিন্তু সচরাচর লোকে সেই বুদ্ধির মাপকাটিতেই দর্শন, বিজ্ঞান, সাহিত্য, আর্ট প্রভৃতি মনোজগতের পদার্থগুলোও মেপে নেয়। দে মাপে যে পদার্থটি ছোট সাব্যস্ত হয়, সেটিও যেমন গ্রাহা হয় না, তেমনি যেটি বড় সাব্যস্ত হয়, সেটিও গ্রাহা হয় না। সামাজিক বুদ্ধির সঙ্গে যর্দি কোন বিশেষ ব্যক্তির বুদ্ধি খাপে খাপে না মিলে যায়, তা হ'লে হয় তা অতিবুদ্ধি, নয় নির্বুদ্ধি এবং ৮৪ বইয়ের ব্যবস। এই উভয় শ্রেণীর বুদ্ধির সহিত সামাজিক মানব পারৎপক্ষে কোনরূপ সম্পর্ক রাখতে চায় না। এই কারণেই সাধারণতঃ লোকে নির্ব,দ্ধিতার প্রতি অবজ্ঞা এবং অতিবুদ্ধির প্রতি বিদ্বেষ- ভাব ধারণ করে। উচুদরের « লেখক এবং নীচুদরের লেখক সমসাময়িক পাঠক-সমাজের কাছে সমান অনাদর পায়। কারণ, বৃদ্ধি চরিত্র প্রভৃতি সম্বন্ধে লোক-সমাজ উচুতেও উঠতে চায় না, নীচুতেও নামতে চায় না,_যেখানে আছে সেইখানেই থাকৃতে চায়। কেননা ওঠা এবং নামা! ছুটি ক্রিয়াই বিপজ্জনক। সমাজ “বিষয়-বালিশে আলিস্‌্, রেখে, নাটক নভেলের দর্পণে নিজের পোষাকী চেহারা দেখতে চায়, কবির মুখে নিজের স্ততি স্তনতে ভার্লধাসে, এবং যে গুরুর কাছ থেকে নিজ খ্মতের ভাষ্য লাভ করে, তাঁকেই দার্শনিক বলে" মান্য করে । প্রমাণ স্বরূপ দেখানে! ঘেতে পারে, :920:86 [1:51৮,এর অপেক্ষা 712736 €০:911)র নভেলের হাজার গুণ কাট্তি বেশী। এবং যে কবি সমাজের স্থুমনোভাব ব্যক্ত করেন, তাঁর চাইতে,__-ধিনি সমাজের কুমনোভাব ব্যক্ত করেন, তার আদর কিছু কম নয়। 10101708- এর বই 757755097এর বইএর চাইতে কম পয়সায় বিক্রী হয় না। স্থতরাং সাহিত্য-ব্যবসায়ীদের পক্ষে ভাল বই লিখ্বার চেষ্টা করবার কোন দরকার নেই”-বই যাতে খারাপ না হয়, এই চেষ্টাটুকু করলেই কার্যোদ্ধার হবে। এবং কি ভাল আর কি মন্দ, তা নির্ণয় করুতে সমাজের গ্রচলিত মতামতগ্তলি আয়ত্ব করতে হবে। এক কথায়, ব্যবসা ৮৫ ্‌ চালাতে হলে, যে রকমের সাহিত্য সমাজ চায়, তাই আমাদের যোগাতে হবে। “নিত্য তৃমি খেল যাহা, নিত্য ভাল নহে তাহা, ভারত যেমত চাহে, সেই খেলা খেল হে এন্ধপ অনুরোধ করে” যে কোন ফল নেই, তা স্বয়ং ভারত- চন্দ্র টের পেয়েছিলেন, আমরা ত কোন্‌ ছার। বাঙগলাদেশে কি রকমের বইয়ের সব চাইতে বেশী কাটৃতি, সেইটি জান্তে পারুলে, বাঙ্গালীজাতির মানসিক খোরাক যোগানো৷ আমাদের পক্ষে কঠিন হবে না। শুন্তে পাই, বাজারে শুধু রূপকথা, রামায়ণ মহাভারতের আখ্যান, এবং গল্পের বই কাটে। এ কথা যদি সত্য হয় ত, আমাদের স্বীকার করতেই হবে যে, বালবৃদ্ধবনিতাতেই বাঙ্গলা বইয়ের ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছে। আর এ কথা যে সত্য, সে বিষয়ে সন্দেহ কর্বার কোন কারণ নেই, কেননা মানুষ সব চাইতে ভালবাসে গল্প । আমাদের অধিকাংশ লোকের জীবনের ইতিহাস সম্পূর্ণ ঘটনাশৃন্, অর্থাৎ আমাদের বাহিক কিন্বা মানসিক জীবনে কিছু ঘটে না। দিনের পর দিন আসে, দিন যায়। আর সে সব দিনও একটি অপরটির যমজ ভ্রাতার ন্যায় । বিশেষতঃ এ দেশে যেমন রাম না জন্মাতে রামায়ণ লেখা হয়েছিল, তেমনি আমরা না জন্মাতেই আমাদের জ্বনের ইতিহাস সমাজ কর্তৃক লিখিত হ'য়ে থাকে । _আমরা শুধু চিরজীবন তার পপ ওখানে তুলত্রাসতিটুকুতেই পরস্পরের ভিতর হা! টরচিত্া | কিন্ত ৬ 3 বইয়ের ব্যবস৷ যন্ত্রবৎ চালিত হ*লেও, মানুষ এ কথা একেবারে ভূলে” যায় না যে, তারা কলের পুতুল নয়,_ইচ্ছাশক্তিবিশিষ্ট স্বাধীন জীব। তাই নিজের জীবন ঘটনাশৃন্ত হ'লেও, অপর লোকের ঘটনাপূর্ণ জীবনের ইতিহাস চচ্চা করে? মানুষ সুখ পায়। অন্যরূপ অবস্থায় পড়লে নিজের জীবনও নিতান্ত একঘেয়ে না হয়ে অপূর্ব বৈচিত্র্যপূর্ণ হ'তে পার্ত-_এই মনে করে আনন্দ অনুভব করে। মানুষের উপবাসী হৃদয়ের ক্ষুধা! মেটাবার প্রধান সামগ্রী হচ্ছে গল্প,_তা! সত্যই হোক আর মিথ্যাই হোঁক্‌। স্ত্রী সংগ্রহ করবার জন্য আমাদের ধন্ুর্তঙ্গও করতে হয় না, লক্ষ্যতভেদও করুতে হয় না_সেই জন্যই আমরা ভ্রৌপদীর স্বয়ংবর এবং রামচন্দ্রের বিবাহের কথা শুন্তে ভালবাসি । আমাদের বাড়ীর ভিতর ককুন্দ+ও ফোটে না, এবং বাড়ীর বাহিরে “রোহিণী”ও জোটে না,_তাই আমরা “বিষবৃক্ষ” ও “ভ্রমর একবার পড়ি, দুবার পড়ি, তিনবার পড়ি । আমরা দশটায় আপিস যাই, এবং পাচটায় ঠিক সেই একই পথ দিয়ে হয় গাড়ীতে, নয় ট্রামে, নয় পদব্রজে বাড়ী ফিরে আসি; তাই আমরা কল্পনায় সিন্ধবাদের সঙ্গে দেশবিদেশে ঘুরে” বেড়াতে ভালবাসি । তা হ'লে স্থির হল এই যে, আমাদের প্রধান কাধ্য হবে গল্প বলা,__শুধু নভেল-নাটকে নয়, সকল বিষে । ধর্ম্মনীতি, দর্শন, বিজ্ঞান, ইতিহাস,_যত উপন্যাসের মত হবে, ততই লোকের মনঃপৃত হবে। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে এই যে, গল্প যত পুরোনো হয়, ততই সমাজের প্রিয় হ'য়ে ওঠে । প্রমাণ, রূপকথা এবং ৮৭ বীরবলের হালখাতা রামায়ণ মহাভারতের কথা । ' এর কারণও স্পষ্ট । পুরোনোর প্রধান গুণ যে তা নতুন নয়, অর্থাৎ অপরিচিত নয়। নতুনের প্রধান দোষ যে, তা পরীক্ষিত নয়; স্থতরাৎ তা সত্য কি মিথ্যা, উলন্ভাব্না কি আবিষ্কার, মান্ছষের পক্ষে শ্রেয় কি হেয় ত। একনজর দেখে কেউ বল্তে পারেন না। তা ছাড়া নতুন কথা যদ্দি সত্যও হয়, তা হ'লেও বিনা ওজরে গ্রাহ্ কর! চলে না । মাহ্ছষের মন একটি হ'লেও, মনোভাব অসংখ্য । এবং সে মন যতই ছোট হোক্‌ না কেন, একাধিক মনোভাব তাতে বাস করে। একত্রে বাস করতে হ'লে পরস্পর দিবারাত্র কলহ করা চলে না। তাই যে-সকল মনোভাব বনছকাল থেকে আমাদের মন অধিকার করে” বসে, আছে, তারা এ সহবাসের গুণেই পরস্পর একটা সম্পর্ক পাতিয়ে নেয়, এবং স্থখে না হোক্‌ শান্তিতে ঘর করে। কিন্তু নতুন সত্যের ধর্মই হচ্ছে, মানুষের মনের শাস্তিভঙ্গ করা। নতুন সত্য প্রবেশ করে'ই আমাদের মনের পাতা-ঘরকন্না কতকটা এলো- মেলো করে' দেয়। সুতরাং ও-পদার্থ মনের ভিতর ঢুকলেই আমাদের মনের ঘর নতুন করে গোছাতে হয়, যে-সব মনো- ভাব তার সঙ্গে একত্র থাকতে পারে না, তাদের বহিষ্কত করে; দিতে হয়, এবং বাদবাকীগুলিকে একটু বদ্‌লে সদলে নিয়ে তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে দিতে হয়। তা ছাড়া, নতুন সত্য মনে উদয় হ'য়ে অনেক নতুন কর্তব্যবুদ্ধির উদ্রেক করে । আমর! চির- পরিচিত কর্তব্যগুলির দাবীই রক্ষে কর্তে হিম্সিম্‌ খেয়ে যাই, ৮৮ বইয়ের ব্যবসা তারপর আবার যদি নিত্যনতুন কর্তব্য এসে নতুন নতুন দাবী করতে আরম্ভ করে, তা হ'লে জীবন যে অতিষ্ঠ হ'য়ে ওঠে, তার আর সন্দেহ কি? মান্ষে সখ পায় না, তাই সোয়াস্তি চায়। ধে লেখক পাঠকের মনের সেই সোয়ান্তিটুকু নষ্ট কর্তে ব্রতী হবেন, তীর প্রতি অধিকাংশ লোক বিমুখ ও বিরক্ত হবেন। স্থতরাং “সাবধানের মার নেই» এই স্থত্রের বলে যে লেখক, যে কথা সকলে জানে, সেই কথা গগ্ভেপছ্যে অনর্গল বলে” যাবেন, বাজারে তার কথার মূল্য হবে। উপরে যা বলা গেল, তার নির্গলিতার্থ দাড়ায় এই যে, ব্যবসার হিসেবে সাহিত্যে গল্প বলা এবং পুরোনো গল্প বলাই শ্রেয়। সাহিত্যের অবশ্য 0907870 না বাড়লে 58715 বাড়বে না। স্থতরাং সাহিত্যের ব্যবসার শ্রীবুদ্ধি অনেক পরিমাণে পাঠকের মজ্জির উপর নির্ভর করে, লেখকের কৃতিত্বের উপর নয়। এ দেশের শিক্ষিত লোকদের বই পড়া জিনিসটা বড় একটা অভ্যেস নেই । সাহিত্য-চচ্চা করাটা,_নিত্য নৈমিত্তিক কিম্বা কাম্য কোনরূপ কর্মের মধ্যেই গণ্য নয়। এর বহুতর কারণ আছে, থা,_অবসরের অভাব, অর্থের অভাব, এবং ফয়দার অভাব; কারণ সাহিত্য-চ্চা কর্বার লাভটি কেউ টাকায় কষে” বার করে? দিতে পারেন না। যে বিদ্যে বাজারে ভাঙ্গানো যায় না, তার যে মুল্য থাকৃতে পারে-_এ বিশ্বীস সকলের নেই। কিন্তু ক্কুলকলেজের বাইরে যে আমরা কোন বই পড়ি না, তার প্রধান কারণ__স্থুলপাঠ্যপুস্তক পাঠ্য-পুস্তকের প্রধান শক্র। বছর বছর ৮৯ বীরবলের হালখাতা ধরে, স্কুল-পাঠ্য গ্রস্থাবলী গলাধঃকরণ করে, যার মানসিক মন্দাগ্ি না জন্মায়। এমন লোক নিতান্ত বিরল। স্বতরাং শিক্ষিত সম্প্রদায়কে সাহিত্য-চষ্চা করবার উপদেশ দিয়ে কোনও লাভ নেই। কিন্তু বই কেনাটা যে একটি সখমাত্র হ'তে পারে, এবং হওয়া উচিত,__এই ধারণাটি আমি স্বদেশী সমাজের মনে জন্মিয়ে দিতে চাই । বই গৃহসঙ্জার একটি প্রধান উপকরণ, এবং সেই কারণে শুধু ঘর সাজাবার জন্যে আমাদের বই কেনা উচিত। আমরা যেহিসেবে ছবি কিনি এবং ঘরে টাঙ্গিয়ে রাখি, সেই একই হিসেবে বই কেন। এবং ঘরে সাজিয়ে রাখ! আমাদের কর্তব্য । আমরা ছবি পড়িনে বলে” ছবি কেনাট! যে অন্যায়, একথা! কেউ * বলেন না”স্ৃতরাং বই পড়িনে বলে” যে কিন্ব না, এরূপ মনোভাব অসঙ্গত। এ স্থলে বলে” রাখা আবশ্যক যে, বইয়ের মত ছবিও একটা পড়বার জিনিস। ছবিরও একট! অর্থ আছে, একটা বক্তব্য কথা আছে। বইয়ের সঙ্গে ছবির একমাত্র তফাৎ হচ্ছে যে, উভয়ের ভাষা স্বতত্ত্র। যা একজন কালি ও কলমের সাহায্যে ব্যক্ত করেন, তাই অপর একজন রং ও তুলির সাহায্যে প্রকাশ করেন । তা ছাড়া, বাঙ্গলা বইয়ের সপক্ষে বিশেষ করে” এই বল্বার আছে যে, বাঙ্গালী ক্রেতা ইচ্ছে.করুলে তা পড় তে পারেন,_কিস্তু ছবি জিনিসটা ইচ্ছে কর্লেও পড়তে পারেন না । সচরাচর লোকে ঘর সাজায়, গৃহের শোভা বৃদ্ধি কর্বার জন্ত নয়,-কিস্তু নিজের ধন এবং স্থরুচির পরিচয় দেবার জন্য । ৪9৩ বইয়ের ব্যবসা শেষোক্ত হিসেব থেকে দেখলেও দেখা যায় যে, বৈঠকখানার দেয়ালে হাজার টাকার একখানি নোট না ঝুলিয়ে, হাজার টাকা দামের একখানি ছবি ঝোলানতে যেমন অধিক স্থরুচির পরিচয় দেয়, তেমনি নানা আকারের নানা বর্ণের রাশি রাশি বই সারি সারি সাজিয়ে রাখাতে প্রমাণ হয় যে, গৃহকর্ভী একাধারে ধনী এবং গুণী । পূর্বোক্ত কারণে আমি এদেশের ধনী লোকেদের বই কিন্তে অনুরোধ করি,--গিল্তে নয়। তারা যদি এবিষয়ে একবার পথ দেখান, তা হ'লে তাদের দৃষ্টান্ত সদ ষ্টান্ত হিসেবে বুলোকে অন্থসরণ কর্বে। যতদিন না বাঙ্গালী সমাজ নিজেদের পাঠক হিসেবে না দেখে, পুস্তকক্রেতা হিসেবে দেখতে শিখবেন, ততদিন বঙ্গ-সাহিত্যের ভাগ্য স্ুপ্রসন্গ হবে না। ্‌ আমার শেষ কথা এই যে, গ্রস্থক্রেত! যে শুধু নিংস্বার্থ পরোপকার করেন, তা নয়। চারিদিকে বইয়ের দ্বারা পরিবৃত হয়ে থাকাতে একটা উপকার আছে । বই' চব্বিশ ঘণ্টা চোখের সম্মুখে থেকে এই সত্যটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় ষে, এ পৃথিবীতে চামড়ায়-ঢাকা মন নামক একটি পদার্থ আছে। বৈশাখ, ১৩২০ ৪১ বঙ্গসাহিত্যের নবধুগ নানারপ গগ্পদ্চ লিখ্বার এবং ছাপ্বার যতটা প্রবল কোক যত বেশী লোকের মধ্যে আজকাল এদেশে দেখা যায়, তা পূর্বে কখনো দেখা যায় নি। এমন মাস যায় না, যাতে অন্ততঃ একখানি মাসিক পত্রের না আবির্ভাব হয়। এবং সে সকল মাসিক পত্রে সাহিত্যের সকলরকম মালমসলার কিছু না কিছু নমুনা থাকেই থাকে। স্কৃতরাং এ কথা অস্বীকার কর্বার যো নেই যে, বঙ্গ-সাহিত্যের একটি নতুন যুগের ্ত্রপাত হয়েছে। এই নবযুগের শিশু-সাহিত্য আাতুড়েই মব্বে, কিস্বা তার একশ” বৎসর পরমায়ু হবেসে কথা বল্‌তে আমি অপারগ । আমার এমন কোনও বিদ্ে নেই, যার জোরে আমি পরের কুষ্টি কাটতে পারি। আমরা সমুদ্রপার হ'তে যে-সকল বিদ্যার আমদানি করেছি, সামুদ্রিক বিদ্যা তার ভিতর পড়ে না। কিন্তু এই নব-সাহিত্যের বিশেষ লক্ষণগুলির বিষয় যদি আমাদের স্পষ্ট ধারণা জন্মায়, তা হ'লে যুগধর্খাস্থ্যায়ী সাহিত্য রচন কারণে, নব্য লেখকের! তীদের লেখায় যে হাত দেখাচ্ছেন, সেই হাত তৌথ্বার চেষ্টা করাটা একেবারে নিক্ষল না-ও হ'তে পারে। প্রথমেই চোখে পড়ে যে, এই নব-সাহিত্য রাজধর্্ম ত্যাগ করে গণধর্ম অবলম্বন কর্ছে। অতীতে অন্য দেশের ন্যায় এদেশের ৯২ বঙ্গসাহিত্যের নবধুগ সাহিত্য-জগৎ যখন ছু"্চার জন লোকের দখলে ছিল, যখন লেখা দূরে থাক্‌, পড়বার অধিকারও ছিল না,-তখন সাহিত্য- রাজ্যে রাজ সামস্ত প্রভৃতি বিরাজ কর্তেন। এবং তাঁরা কাব্য দর্শন ও ইতিহাঁসের ক্ষেত্রে, মন্দির, অর্টীলিকা, স্তপ, স্তস্ত, গুহা প্রভৃতি আকারে বহু চিরস্থায়ী কীন্তি রেখে গেছেন। কিন্তু বর্তমান যুগে আমাদের দ্বারা কোনরূপ প্রকাণ্ড কাণ্ড করে' তোল! অসম্ভব, এই জ্ঞানটুকু জন্মালে, আমাদের কারও আর সাহিত্যে রাজা হবার লোভ থাকবে না, এবং শব্দের কীতিম্তস্ত গড়বার বৃথা চেষ্টায় আমর! দিন ও শরীর পাত কর্ব না এর জন্য আমাদের কোনরূপ ছুঃখ করবার আবশ্তক নেই। বস্তজগতের ন্যায়, সাহিত্য-জগতেরও প্রাচীন কীত্তিগুলি দূর থেকে দেখতে ভাল-_কিস্ত নিত্যব্যবহাধ্য নয়। দর্শনের কু [রে চড়লে আমাদের মাথা. ঘোরে, কাব্যের ভাঞ্জমহলে রাত্রিবাস্‌ করা চলে না,কেননা অত সৌন্দর্য্যের বুকে ঘুমিয়ে পড়!_ কঠিন. ধর্দের রবতগহার অভ্যন্তরে, হাতে বেড়ালেই ৫ যে কোন ন অমূল্য? উাগ নারারর ঠেকৃতে বাধ্য,--এ । বিশ্বাসও আমাদের চলে” গ্ছে।, পুরাকালে মানুষে যা-কিছু গড়ে” গেছে, তার উদ্দেশ্ঠ হচ্ছে মানুষকে সমাজ হতে আল্গ! করা, ছু'চারজনকে বনুলোক হ'তে বিচ্ছিন্ন করা । অপরপক্ষে নবযুগের ধশ্ম হচ্ছে, মানুষের সঙ্গে মানুষের মিলন করা, সমগ্র সমাজকে ভ্রাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ কুরা,-কাউকেও ৯৩ বীরবলের হালখাতা ছাড়া নয়, কাউকেও ছাড়তে দেওয়া নয়। এ পৃথিবীতে বৃহৎ না হলে ষে কোনও জিনিস মহৎ হয় না, এরূপ ধারণ। আমাদের নেই ; স্থতরাং প্রাচীন সাহিত্যের কীত্তির তুলনায় নবীন সাহিত্যের কীর্তিগুলি আকারে ছোট হয়ে আস্বে, কিন্তু প্রকারে বেড়ে যাবে; আকাশ আক্রমণ না করে” মাটির উপর অধিকার বিস্তার কর্বে। অর্থাৎ ভবিষ্যতে কাব্যদর্শনাদি আর গাছের মত উচুর দিকে ঠেলে উঠবে না, ঘাসের মত চারিদিকে চারিয়ে যাবে। এক কথায় বহুশক্তিশালী স্বল্পসংখ্যক লেখকের দিন চলে গিয়ে, স্বল্পশক্তিশালী বহু সংখ্যক লেখকের দিন আস্ছে। আমাদের মনোজগতে যে নবনুর্ধ্য উদয়োন্মুখ, তার সহস্র রশ্মি অবলম্বন করে? অন্ততঃ যষ্ঠি সহশ্র বালখিল্য লেখক এই ভূভারতে অবতীর্ণ হবেন। এরূপ হবার কারণও নুম্পষ্ট। আজকাল আমাদের ভাববার সময় নেই, ভাববার অবসর থাকলেও লিখ্বার যথেষ্ট সময় নেই, লিখ্বার অবসর থাকলেও লিখতে শিখ্বার অবসর নেই; অথচ আমাদের লিখ্তেই হবে,__নচেৎ মাসিক পত্র চলে না। এ যুগের লেখকেরা যেহেতু গ্রন্থকার নন, শুধু মাসিক পত্রের পৃষ্টাপোষক, তখন তাদের ঘোড়ায় চড়ে লিখতে না হ'লেও ঘড়ির উপর লিখতে হয়ঃ কেননা মাসিক পত্রের প্রধান কর্তব্য হচ্ছে, পয়লা বেরনো)_ কি যে বেরলো তাতে বেশী কিছু আসে যায় না। তা ছাড়া, আমাদের সকলকেই সকল বিষয়ে লিখতে হয়। নীতির জুতো- ূ টাচ থেকে ধর্মের চণ্ডিপাঠ পর্য্স্ত-_সকল রি? আমাদের ৯৪. বঙ্গসাহিতেচর নবষুগ | সমান অধিকারতৃক্ত। আমাদের নব-সাহিত্যে কোনরূপ 'শ্ম- বিভাগ” নেই-_তার কারণ যে-ক্ষেত্রে "শ্রম" নামক মূল পদার্থেরই অভাব, সেস্থলে তার বিভাগ আর কি করে” হ'তে পারে? তাই আমাদের হাতে জন্মলাভ করে শুধু ছোট গল্প, খণ্ডকাব্য, সরল বিজ্ঞান ও তরল দর্শন। “দেশকালপাত্রের সমবায়ে সাহিত্য যে ক্ষুদ্রধশ্মাবলস্বী হ*য়ে উঠেছে, তার জন্য আমার কোনও খেদ নেই। এ কালের রচন। ক্ষুদ্র বলে আমি ছুঃংখ করিনে, আমার ছুঃখ যে তা যথেষ্ট ক্ষুদ্র নয়। একে হ্বল্লায়তন, তার উপর লেখাটি যদি ফীপা হয়,__- তাহলে সে জিনিসের আদর কর! শক্ত। [ঝাল! গালাভরা. হ'লেও চলে;__কিন্তু আর্ট নিরেট হওয়া চাই-। লেখকেরা এই_ সত্যটি মনে রাখ্লে, গল্প স্বল্প হয়ে আস্বে, শোক শ্লোক্রূপ .. ধারণ কর্‌ কর্বে, বিজ্ঞান বামনরূপ ধারণ করে”ও ত্রিলোক অধিকার করে, রে” থাক্বে,, এবং দর্শন নখদর্পণে পরিণত হব্রে। ধারা মানসিক আরামের চর্চা না করে ব্যায়ামের চষ্চা করেছেন, তাঁরা সকলেই জানেন যে, যে-সাহিত্যে দম নেই, তাতে অস্ততঃ কস (৪1) থাকা আবশ্যক | | খ্‌ বর্তমান ইউরোপের সম্যক্‌ পরিচয়ে এই জ্ঞান লাভ করা | যায় যে, গণধর্মের 57 এবং রর ভয়াবহ হ+য়ে ওঠে । আমাদের এই আস্মা-সর্ধস্ব দেশে লেখকেরা যে বৈশ্বৃত্তি অবলম্বন করবেন না, একথাও জোর করে” বল। চলে না। লক্ষীলাভের আশায় সরম্বতীর কপট সেবা করতে অনেকে প্রস্তুত, তার প্রমাণ “ভ্যালুপেয়েব্ল পোষ্ট” নিত্য ঘরে ঘরে দিচ্ছে। আমাদের নব-সাহিত্যের যেন-তেন-প্রকারেণ বিকিয়ে যাবার প্রবৃত্তিটি যদি দমন করতে না পারা যায়, তাহ্‌*লে বঙ্গসরস্বতীকে যে পথে দাড়াতে হবে, সে বিষয়ে তিলমাত্রও সন্দেহ নেই। কোন শান্ত্েই একথা বলে না যে, “বাণিজ্যে বসতি সরম্বতী” ৷ সাহিত্যসমাজে ত্রাঙ্মণত্ব লাভ কর্বার ইচ্ছে থাকূলে-_দারিদ্র্যকে ভয় পেলে সে আশা সফল হবে না। সাহিত্যের বাজার-দর সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান যত বাড়বে, সেই সঙ্গে তার মূল্য সম্বন্ধে জ্ঞান আমাদের লোপ পেয়ে আস্বে। স্থৃতরাৎ আমাদের নব-সাহিত্যে লোভ নামক রিপুর অস্তিত্বের লক্ষণ আছে কি-না, সে বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি থাকা আবহ্যক,_কেনন। শাস্ত্রে বলে “লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু? । ৩ এ যুগের মাসিক পত্রসকল যে সচিত্র হ'য়ে উঠেছে, সেটি যেমন আনন্দের কথা, তেমনি আশঙ্কারও কথা ছবির প্রতি গণসমাজের যে একটি নাঁড়ীর টান আছে, তার প্রচলিত প্রমাণ হচ্ছে, মাঞ্কিণ সিগারেট | এ চিত্রের সাহচধ্যেই যত অচল সিগারেট বাজারে চলে" যাচ্ছে। এবং আমরা চিত্রমুগ্ধ হয়ে | ৯৬ বঙ্গসাহিত্যের নবযুগ মহানন্দে তাত্রকুট জ্ঞানে খড়ের ধূম পান করুছি। ছবি ফাউ দিয়ে মেকি মাল বাজারে কাটিয়ে দেওয়াটা আধুনিক ব্যবসার একটা প্রধান অঙ্গ হে দীড়িয়েছে। এদেশে শিশুপাঠ্য ্রস্থাবলীতেই চিত্রের প্রথম আবির্ভাব । পুস্তিকায় এবং পত্রিকায় ছেলে-ভুলোনে। ছবির বহুল প্রচারে চিত্রকলার যে কোন উন্নতি হবে, সে বিষয়ে বিশেষ সন্দেহ আছে,_কেননা সমাজে গোলাম পাশ করে” দেওয়াতেই বণিকবুদ্ধির সার্থকতা ; কিন্তু সাহিত্যের যে অবনতি হবে, সে বিষয়ে আর কোনও সন্দেহ নেই। নর্তকীর পশ্চাৎ্ৎ পশ্চাৎ সারঙ্গীর মত, চিত্রকলার পশ্চাৎ পশ্চাৎ কাব্যকলার অন্গধাবন করাতে তার পদমধ্যাদ1! বাড়ে না। একজন যা করে, অপরে তার দৌষগুণ বিচার করে,--এই হচ্ছে সংসারের নিয়ম । সুতরাং ছবির পাশাপাশি তার সমালোচনাও সাহিত্যে দেখা দিতে বাধ্য। এই কারণেই, যেদিন থেকে বাঙ্গলাদেশে চিত্রকলা! আবার নব কলেবর ধারণ করেছে, তার পরদিন থেকেই তার অঙ্গকুল এবং প্রতিকূল সমালোচনা স্থরু হয়েছে । এবং. এই মতদ্বৈধ থেকে, সাহিত্যসমাজে একটি দলাদলির স্য্টি হবার উপক্রম হয়েছে । এই তর্কযুদ্ধে আমার কোন পক্ষ অবলম্বন কর্বার সাহস নেই। আমার বিশ্বাস, এদেশে একালের শিক্ষিত লোকদের মধ্যে চিত্রবিদ্ায় টৈদগ্ধ্য এবং আলেখ্যব্যাখ্যানে নিপুণতা৷ অতিশয় বিরল,_কারণ এ যুগের বিদ্যার মন্দিরে সুন্দরের প্রবেশ নিষেধ । তবে বঙ্গদেশের নব্যচিন্ত্র সম্বন্ধে সচরাচর যেসকল আপত্তি উত্থাপন করা হয়ে ৭ | ৯৭ বীরবলের হালখাতা থাকে, সেগুলি সঙ্গত কি অসঙ্গত তা বুচার কর্বার অধিকার সকলেরই আছে; কেননা সে সকল আপত্তি কলাজ্ঞান নয়, সাধারণ জ্ঞানের উপর প্রতিষ্ঠিত। যতদূর আমি জানি, নব্য- চিত্রকরদের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ এই যে, তাদের রচনায় বর্ণে বর্ণে বানান-ভুল এবং রেখায় রেখায় ব্যাকরণ-তুল দৃষ্ট হয়। এ কথা সত্য কি মিথ্যা শুধু তারাই বলতে পারেন, বাদের চিত্রকর্ম্ের ভাষার উপর সম্পূর্ণ অধিকার জন্মেছে; কিস্তু সে ভাষায় স্ুুপপ্তিত ব্যক্তি বাঙ্গলাদেশের রাস্তাঘাটে দেখতে পাওয়া যায় না, যদিচ ও-সকল স্থানে সমালোচকের দর্শন পাওয়। ছুল্পভি নয়। আসল কথা হচ্ছে, এ শ্রেণীর চিত্র- সমালোচকেরা অনুকরণ অর্থে ব্যাকরণ শব্দ ব্যবহার করেন । এঁদের মতে ইউরোপীয় চিত্রকরেরা প্রকৃতির অঙ্ককরণ করেন, স্থতরাং সেই অন্নুকরণের অনুকরণ করাটাই এদেশের চিত্র- শিল্পীদের কর্তব্য । প্রকৃতি নামক বিরাট পদার্থ এবং তার অংশভূত ইউরোপ নামক ভূভাগ, এ উভয়ের প্রতি আমার যথোচিত ভক্তি-শ্রদ্ধা আছে, কিন্তু তাই বলে” তার অক্ককরণ করাটাই যে পরম-পুরুষার্থ, এ কথা আমি কিছুতেই স্বীকার কর্তে পারি নে। প্ররুতির বিরৃতি ঘটানে! কিম্বা তার প্রাতি- কৃতি গড়া কলাবিগ্ভার কাধ্য নরকিস্ত তাকে আকুতি দেওয়াটাই হচ্ছে আর্টের ধর্ম । পুরুষের মন প্ররুতি-নর্তকীর মুখ দেখবার আয়না নয়। আর্টের ক্রিয়া অন্থৃকরণ নয়,_- স্ষ্টি। সুতরাং বাহ্বস্তর মাপজোকের সঙ্গে, আমাদের মানস- ৪৮৮ বঙ্গসাহিত্যের নবযুগ জাত বস্তর মাপজোক যে হুবাহুব মিলে যেতেই হবে, এমন . কোন নিয়মে আর্টকে আবদ্ধ করার অর্থ হচ্ছে প্রতিভার চরণে শিকলি পরানো । আর্টে অবশ্ত যথেচ্ছাচারিতার কোনও অবসর নেই। শিল্পীরা কলাবিষ্যার অনন্-স্মান্য কঠিন বিধিনিষেধ মান্তে বাধ্য,__কিন্ত জ্যামিতি কিন্বা গণিতশান্ত্ে শাসন নয়। একটি উদ্বাহরণের সাহায্যে আমার পূর্বোক্ত মতের যাথাথ্যের প্রমাণ অতি সহজেই দেওয়া যেতে পারে। একে একে যে ছুই হয়, এবং একের পিঠে এক দিলে. যে. এগারো! হর. বৈজ্ঞানিক জানিক হিসেবে এ এর চাইতে খাটি সত্য পৃথিবীতে আর হি তে অথচ একে একে ছুই না হয়েও, এবং একের পিঠে একে এগারে! না হ হয়েও, ; এরূপ যোগাযোগে. যে বিচিত্র নন হ'তে পারে, তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ নীচে দেওয়া যাচ্ছে। হলাম সাথি িতৈনৈকিতৈতৈতৈ সম্ভবতঃ আমার প্রদর্শিত যুক্তির বিরুদ্ধে কেউ এ কথা বলতে পারেন যে, “চিত্রে আমরা গণিতশান্ত্রের সত্য চাইনে, কিন্তু প্রত্যক্ষ জানের সত্য দেখতে চাই ।” প্রত্যক্ষ সত্য নিয়ে ৪১৯১ বীরবলের হালখাতা মানুষে মানুষে মতভেদ এবং এ যে আলম, কাল চলে" মনের টি সম্পর্ক আছে, তিনি শাডিতি সমগ্র সত্য বলে' ভুল করেন। সত্যভ্রষ্ট হ'লে বিজ্ঞানও হয় না, আর্টও হর ন1,-কিন্ত বিজ্ঞানের সত্য এক, আটের সত্য অপর। কোন হ্ন্দরীর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং ওজনও যেমন এক হিসেবে সত্য, তার সৌন্দধ্যও তেমনি আর এক হিসেবে সত্য । কিন্তু সৌন্দধ্য নামক সত্যটি তেমন ধরা্োওয়ার মত পদার্থ নয় বলে” সে সম্বন্ধে কোনরূপ অকাট্য বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দেওয়া যায় না। এই সত্যটি আমরা মনে রাখলে, নব্যশিল্পীর কৃশাঙ্গী মানসী- কন্াদের ভাক্তার দিয়ে পরীক্ষা কুরিয়ে নেবার জন্য অত ব্যগ্র হতুম না; এবং চিত্রের ঘোড়া ঠিক ঘোড়ার মত নয়, এ আপত্তিও উত্থাপন করুতুম না। এ কথা বলার অর্থ,--তার অস্থিসংস্থান, পেশীর বন্ধন প্রভৃতি প্রকৃত ঘোড়ার অন্থরূপ নয় । 40260007 অর্থাৎ অস্থিবিদ্যার সাহায্যে দেখানো যেতে পারে যে, চিত্রের ঘোটক, গঠনে ঠিক আমাদের শকটবাহী ঘোটকের সহোদর নয়, এবং উভয়কে একজ্রে জুড়িতে যোতা যায় না। এ সম্বন্ধে আমার প্রথম বক্তব্য এই যে, অস্থিবিদ্যা কস্কালের জ্ঞানের উপর নির্ভর করে, প্রত্যক্ষ জ্ঞানের উপর নয়। কঙ্কালের সঙ্গে সাধারণ লোকের চাক্ষুষ পরিচয় নেই ; কারণ দেহ-তাত্বিকের জ্ঞাননেত্রে যাই হোক, আমাদের চোখে প্রাণীজগৎ কঙ্কালসার ১০০ বঙ্গসাহিত্যের নবধযুগ পরিচয় ক: ঘি না।_ দ্বিতীয় কথা ন্‌ যে, কি মানুষ কি পশ্তু, ন্ভিগতিগ দেহযন্ত্রঠনের একমাত্র কারণ হচ্ছে উক্ত বন্ত্রের সাহাধ্যে কতকগুলি ক্রিয়া সম্পাদন করা । গঠন যে ক্রিয়াসাপেক্ষ, এই হচ্ছে দেহ-বিজ্ঞানের মূল তত্ব। ঘোড়ার দেহের বিশেষ গঠনের কারণ হচ্ছে, ঘোড়া তুরঙ্গম । যে ঘোড়া! দৌড়বে না, তার 27960170% ঠিক জীবন্ত ঘোড়ার মত হবার কোন বৈধ কারণ নেই। পটস্থ ঘোড়া যে তটস্থ, এ বিষয়ে বোধ হয় কোন মতভেদ নেই । চিত্রাপিত অশ্বের 2:08.60079 ঠিক চড়বার কিম্বা হাকাবার ঘোড়ার অনুরূপ করাতেই বস্ত- জ্ঞানের অভাবের পরিচয় দেওয়া হয়। চলৎ-শক্তিরহিত অশ্ব, _-অর্থাৎ যাকে চাবুক মার্লে ছি ড়বে কিন্তু নড়বে না, এহেন ঘোটক,__অর্থহীন অন্নুকরণের প্রসাদেই জীবন্ত ঘোটকের অবিকল আকার ধারণ করে" চিত্রকশ্মে জন্মলাভ করে । এই পঞ্চভৃতাত্মক পরিদৃশ্যমান জগতের অন্তরে একটি মানস-প্রস্থত দৃশ্তজগৎ স্থষ্তি করাই চিত্রকলার উদ্দেশ্ঠ, স্থতরাং এ উভয়ের রচনার নিয়মের বৈচিত্র্য থাকা অবশ্স্তাবী। তথাকথিত নব্যচিত্র যে নির্দোষ কিন্বা নিভূল, এমন কথা আমি বলি না। . যে বিদ্যা কাল জন্মগ্রহণ করেছে, আজ যে তার অনপ্রত্যঙ- সকল সম্পূর্ণ আত্মবশে আস্বে, এপ আশা! করাও বৃথা । শিল্প হিসেবে তার নানা ক্রটি থাক! কিছুই আশ্চর্যের বিষয় ১০৯ বীরবলের হালখাতা নয়। কোথায় কলার নিয়মের ব্যভিচার ঘটছে, সমালোচকদের দেখিয়ে দেওয়! কর্তব্য । অস্থি নয়, বর্ণের সংস্থানে, পেশী নয়, রেখার বন্ধনে, যেখানে অসঙ্গতি এবং শিথিলতা! দেখা যায়, সেই স্থলেই সমালোচনার সার্থকতা আছে। অধ্যবসায়ীর অযথা নিন্দায় চিত্রশিল্পীদের মনে শুধু বিক্রোহীভাবের উদ্দ্রেক করে, এবং ফলে তারা নিজেদের দোষগুলিকেই গুণ ভ্রমে বুকে আকৃড়ে ধরে” রাখতে চান। | আমার আলোচ্য বিষয় হচ্ছে সাহিত্য, চিত্র নয়। যেহেতু এ যুগের সাহিত্য চিত্রসনাথ হয়ে উঠেছে, সেই কারণেই চিত্র- কলার বিষয় উল্লেখ কর্তে বাধ্য হয়েছি। আমার ও-প্রসঙ্গ উত্থাপন কর্বার অপর একটি কারণ হচ্ছে এইটি দেখিয়ে দেওয়। যে, য! চিত্রকলাঁয় দৌব বলে গণ্য, তাই আবার আজকাল . এদেশে কাব্যকলায় গুণ বলে? মান্য । প্রকৃতির সহিত লেখকের যদি কোনরূপ পরিচয় থাকৃত, তাহ'লে শুধু বর্ণের সঙ্গে বর্ণের যোজনা! করলেই যে বর্ণনা হয়, এ বিশ্বাস তাদের মনে জন্মাত না,_এবং যে বস্ত কখনও তাদের চণ্্চক্ষুর পথে উদয় হয়নি, তা অপরের মনশ্চক্ষুর স্থমুখে খাড়া করে” দেবার চেষ্টারূপ পগুশ্রম তারা কর্তেন না। সম্ভবতঃ এ যুগের লেখকদের বিশ্বাস যে, ছবির বিষয় হচ্ছে দৃশ্বস্ত, আর লেখার বিষয় হচ্ছে অদৃশ্য মন__হ্ৃতরাং বাস্তবিকতা চিত্র- কলায় অঞ্জনীয় এবং কাব্যকলায় বজ্জনীয়। সাহিত্যে সেহাই- কলমের কাজ কর্তে গিয়ে ধারা শুধু কলমের কালি ঝাড়েন-_ ৯০২ বঙ্গসাহিত্যের নবধুগ তারাই কেবল নিজের মনকে প্রবোধ দেবার জন্য পূর্ববোক্ত মিথ্যাটিকে সত্য বলে, গ্রাহ করেন। ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষ জ্ঞানই হচ্ছে সকল জ্ঞানের মূল। বাহৃজ্ঞানশৃন্ততা অস্তর্দ্্টির পরিচায়ক নয়। দৃরদৃষ্টি লাভ করার অর্থ চোখে চাল্শে-ধরা নয়। দেহের নবদ্বার বন্ধ করে" দ্রিলে, মনের ঘর অলৌকিক আলোকে কিন্বা পারলৌকিক অন্ধকারে পূর্ণ হয়ে উঠবে-বল! কঠিন । কিন্ত সর্বলোকবিদিত সহজ সত্য এই যে, ধার ইন্দ্রিয় সচেতন এবং সজাগ নয়--কাব্যে কৃতিত্ব লাভ করা তার পক্ষে অসম্ভব । জ্ঞানাঞ্জন-শলাকার অপপ্রয়োগে ধাদের চক্ষু উন্মীলিত না হ'য়ে কানা হয়েছে, তারাই কেবল এ সত্য মান্তে নারাজ হবেন। প্রকৃতিদত্ত উপাদান নিয়েই মন বাক্যচিত্র রচনা করে। সেই উপাদান সংগ্রহ কর্বার, বাছাই করুবার, এবং ভাষায় সাকার করে” তোল্বার ক্ষমতার নামই কবিত্বশক্তি। বস্তজ্ঞানের অটল ভিত্তির উপরেই কবিকল্পনা প্রতিষ্ঠিত। মহাকবি ভাস বলেছেন যে, “স্নিবিষ্ট লোকের রূপ বিপধ্যয়” করা অন্ধকারের ধর্ম । সাহিত্যে ওরূ'প করাতে প্রতিভার পরিচয় দেওয়! হয় না, কারণ প্রতিভার ধশ্ম হচ্ছে প্রকাশ করা, অগ্রত্যক্ষকে প্রত্যক্ষ করা, প্রত্যক্ষকে অপ্রত্যক্ষ করা নয়। অলঙ্কার শাস্ত্রে বলে অপ্রকৃত, অতিপ্রক্কত এবং ' লৌকিক জ্ঞানবিরুদ্ধ বর্ণনা, কাব্যে দোষ হিসেবে গণ্য । অবশ্য পৃথিবীতে যা সত্যই ঘটে” থাকে, তার যথাযথ বর্ণনাও সব সময়ে কাব্য নয়। আলঙ্কারিকেরা উদাহরণ স্বরূপ দেখান যে, “গে তৃণৎ আত্তি” কথাটা সত্য হ'লেও, ও কথা ১০৩৩ বীরবলের হালখাতা বলায় কবিত্ব শক্তির বিশেষ পরিচয় দেওয়া হয় নাঁ। তাই বলে, গরুরা ফুলে ফুলে মধুপান করছে” এরূপ কথা বলাতে, কি বস্তজ্ঞান কি রসজ্ঞান, কোনরূপ জ্ঞানের পরিচয় দেওয়া হয় না। এস্বলে বলে রাখ। আবশ্যক যে, নিজেদের সকলপ্রকার ত্রুটির জন্য আমাদের পূর্বপুরুষদের দায়ী করা, বর্তমান ভারতবাসীদের একটা রোগের মধ্যে হ'য়ে পড়েছে । আমাদের বিশ্বাস, এ বিশ্ব নশ্বর এবং মায়াময় বলে", আমাদের পূর্বপুরুষের! বাহা-জগত্র কোনরূপ খোঁজখবর রাখতেন না। কিন্তু একথা জোর করে, বলা যেতে পারে যে, তারা কম্মিনকালেও অবিগ্ভাকে পরাবিষ্ধা! বলে? ভুল করেন নি, কিম্বা একলম্ফে যে মনের পূর্বোক্ত প্রথম অবস্থা হসতে দ্বিতীয় অবস্থায় উত্তীর্ণ হওয়া যায়__এরূপ মত্তও প্রকাশ করেন নি। বরং শাস্ত্র এই সত্যেরই পরিচয় দেয় যে, অপরাবিষ্যা' সম্পূর্ণ আয়ত্ব না হ'লে, কারও পক্ষে পরাবিদ্থা লাভের অধিকার জন্মায় না, কেননা বিরাটের জ্ঞানের ক্ষেত্রেই স্বরাটের জ্ঞান অঙ্কুরিত হয়। আসল কথা হচ্ছে, মানসিক আলম্তবশতঃই আমর! সাহিত্যে সত্যের ছাপ দিতে অসমর্থ । আমরা যে কথায় ছবি আকৃতে পারিনে, তার একমাত্র কারণ আমাদের চোখ ফোট্বার আগে মুখ ফোটে । একদিকে আমরা বাহা বস্তর প্রতি যেমন বিরক্ত, অপর দিকে অহংয়ের প্রতি ঠিক তেমনি অঙ্থরক্ত ; আমাদের বিশ্বাস যে, আমাদের মনে যে সকল চিস্তা ও ভাবের উদয় হয়, তা এতই _ অপূর্ব্ব এবং মহার্ঘ্য যে, শ্বজাতিকে তার ভাগ না দিলে ভারত- ১০৪ বঙ্গসাহিত্যের নবযুগ বর্ধের আর দৈন্য ঘুচরে না। তাই আমরা অহনিশি কাব্যে ভাবপ্রকাশ করুতে প্রস্তুত) এ ভাবপ্রকাশের অদম্য প্রবৃতিটিই আমাদের সাহিত্যে সকল অনর্থের মূল হ'য়ে ঈাড়িয়েছে। আমার মনোভাবের মূল্য আমার কাছে যতই বেশী হোক্‌ না, অপরের কাছে তার যা কিছু মূল্য, সে তার প্রকাশের ক্ষমতার উপর নির্ভর করে । 8 অনেকখানি ভাব মরে” একটুখানি ভাষায় পরিণত ০১২2 ধারণাটি যদি আমাদের মনে স্থান পেত, তাহ'লে আমরা সিকি পয়সার ভাবে আত্মহারা হয়ে কলার অমূল্য আত্মসংঘম হ'তে ্রষ্ট হতুম না । মানুষ মাত্রেরই মনে দিবারাত্র নানারূপ ভাকের উদয় এবং বিলয় হয়__-এই অস্থির ভাবকে ভাষায় স্থির কর্বার নামই হচ্ছে রচনাশক্তি। প্কাব্যের উদ্দেস্ত, ভাব্প্রকাশ করা! নয়, ভাব উদ্রেক করা । কবি যদি নিজেকে বীণা হিসেবে না-দৈথে”বর্দির্ক বহসেবে দেখেন,__-তাহ”লে পরের মনের উপর আধিপত্য লাভ কর্বার সম্ভাবনা তার অনেক বেড়ে যায়। এবং যে মুহূর্ত থেকে কবির! নিজেদের পরের মনোবীণার বাদক হিসেবে দেখতে "শিখবেন, সেই মুহূর্ত থেকে তারা বস্তজ্ঞানের এবং কলার নিয়মের একাস্ত শাসনাধীন হবার সার্থকতা বুঝতে পারুবেন। তখন আর নিজের ভাববস্তকে এমন দিব্যরত্ব মনে করুবেন না যে, সেটিকে আকার দেবার পরিশ্রম থেকে বিমুখ হবেন। অবলীলাক্রমে রচনা করা আর অবহেলাক্রমে রচনা করা যে এক জিনিস নয়, একথা গণধর্মাবলম্বীরা সহজে মান্তে চান ১০৫ না,_এই কারণেই এত কথা বলা। আমার শেষ বক্তব্য এই যে, ক্ষুত্রত্বের মধ্যেও যে মহত্ব আছে, আমাদের নিত্যপরিচিত লৌকিক পদার্থের ভিতরেও যে অলৌকিকতা প্রচ্ছন্ন হ'য়ে রয়েছে, তার উদ্ধার সাধন করতে হ”লে, অব্যক্তকে ব্যক্ত করতে হ'লে, সাধনার আবশ্তক$ এবং সে সাধনার প্রক্রিয়া হচ্ছে, দেহমনকে বাহা-জগৎ এবং অস্তর্জগতের নিয়মাধীন কর! ধার টো লই ই লহ হলের ১১১১০ নব্য লেখকদের নিকট আমার বিরতি প্রার্ঘা এইযে ভীরা যেন দেশী বিলেতি কোনরূপ বুলির বশবর্তী না! হয়ে, নিজের অন্তনিহিত শক্তির পরিচয় লাভ কর্বার জন্ত ব্রতী হন। তাতে পরের না হোক্‌, অন্ততঃ নিজের উপকার করা হবে। আশ্বিন, ১৩২০ ১০৩ পট লী পিছে সরি পি ছ, টি ৮২ . ন্ট, জী 788: নন 3 বি ০... হি ৮৭ 1 08858 সূ পেরি গর 11 $- নচিৎ 64: 0351৯, রা উড বক খল ৫ খপ দ্র আটা নোবেল প্রাইজ সব জিনিসেরই ছুটি দিক আছে-_একটি সদর, আর একটি মফঃস্বল। শ্রীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 2০091 ১1125 পেয়েছেন বলে” বহুলোক ষে খুসি হয়েছেন, তার প্রমাণ ত হাতে হাতেই পাওয়া যাচ্ছে ; কিন্ত সকলে যে সমান খুসি হন্নি, এ সত্যটি তেমন প্রকাশ হ'য়ে পড়েনি। এই বাঙ্গলাদেশের একদল লোকের, অর্থাৎ লেখকসম্প্রদায়ের, এ ঘটনায় হরিষে বিষাদ ঘটেছে । আমি একজন লেখক, স্থৃতরাং কি কারণে ব্যাপারটি আমাদের কাছে গুরুতর বলে, মনে হচ্ছে, সেই কথা আপনাদের কাছে নিবেদন কবরৃতে ইচ্ছা করি । | | প্রথমতঃ, খন একজন বাঙ্গালী লেখক এই পুরস্কার লাভ করেছেন, তখন আর একজনও যে পেতে পারে,_ এই ধারণ! আমাদের মনে এমনি বদ্ধমূল হয়েছে যে, তা উপড়ে ফেল্তে গেলে; আমাদের বুক ফেটে যাবে । অবশ্য আমরা কেউ রবীন্ত্র- নাথের সমকক্ষ নই, বড় জোর তার স্বপক্ষ কিন্বা বিপক্ষ,-_তাই বলে" পড় তাটা ঘখন এদিকে পড়েছে, তখন আমরা যে ০১৪1 ৮25 পাব না-_-এ হ'তে পারে না। সাহিত্যের রাজটাকা লাভ করা যায়_-কপালে। তাই বল্ছি আশার আকাশে দোছুল্যমান ১৩৭ 15 ক খানা পি বীরবলের হালখাতা এই টাকার থলিটি চোখের সমুখে থাকাতে, লেখা জিনিসটা আমাদের কাছে অতি স্থকঠিন হ'য়ে উঠেছে। গ্র-যদি অকম্মাৎ, প্রত্যক্ষ হয়, আর তার লাভের সম্ভাবনা নিকট হৃ'য়ে আসে, 4১০৫ টি এএলব 1৯৮ পায়ে পায়ে ঠেলি | তেমনি ই রন লেখী সঙ্ন্ধে দারিত্জ্ঞান আমীদের এত বেড়ে গেছে যে, আমরা আর আর হাল্কাভাবে কলম ধরতে গ পারি নে। এখন থেকে আমরা প্রতি ছত্র 5,619; 4১০55 মুখ চেয়ে লিখতে বাধ্য । অথচ যে দেশে ছ"মাস দিন আর ছ"মাস রাত, সে দেশের লোকের মন যে কি করে” পাব, তাও বুঝতে পারি নে। এইটুকু মাত্র জানি যে, আমাদের রচনায় অর্জেক আলো আর অর্ধেক ছায়া! দিতে হবে, কিন্তু কোথায় এবং কি ভাবে, তার হিসেব কে বলে দেয়? ৪৮/9060 যদি বারোমাস রাতের দেশ হত, তাহলে আমরা নির্ভয়ে কাগজের উপর কালির পৌচড়া দিয়ে যেতে পার্তুম ; আর যদি বারো- মাস দিনের দেশ হত, তাহ'লেও নয় ভরস। করে” সাদা কাগজ পাঠাতে পার্তুম। কিন্তু অবস্থা অন্যরূপ হওয়াতেই « আমরা! উভয় সন্কটে পড়েছি । দ্বিতীয় মুক্কিলের কথা এই যে, অস্তাবধি বাঙ্গলা আর বাঙ্গালী ভাবে লেখা চল্বে না । ভবিস্ততে ইংরেজি তরজমার ১০৮ দ্রিকে এক নজর রেখে,-এক নজর কেন, পুরে! নজর রেখেই-_ আমাদের বাঙ্গলা-সাহিত্য গড়তে হবে। অবশ্ত আমরা সকলেই দৌভাষী, আর আমাদের নিত্য কাঁজই হচ্ছে তরজম! করা। কিন্তু সব্যসাচী হ'লেও, এক তীরে দুই পাখী মেরে উঠতে পারি নে। আমরা যখন বাঙ্গলা লিখি, তখন ইংরেজির তরজমা করি,__কিস্ত সেনা জেনে; আর যখন ইংরেজি লিখি, তখন বাঙ্গলার তরজমা করি,_সেও না জেনে । কিন্ত এখন থেকে এঁ কাজই আমাদের সঙ্ঞানে করতে হবে-মুদ্ষিল ত এখানেই । মনোভাবকে প্রথমে বাঙ্গল! ভাষার কাপড় পরাতে হবে, এই মনে রেখে যে আবার তাকে সে কাপড় ছাড়িয়ে ইংরেজি পোষাক পরিয়ে 3%/9015 4১0৪950)9র সুমুখে উপস্থিত কর্‌তে হবে। এবং এর দরুণ মনোভাবটার চেহারাও: এমনি তয়ের করতে হবে যে, শাড়ীতৈও মানায়, £০্হএও মানায়। . | | এক ভাষাতে চিন্তা করাই কঠিন, কিন্তু একসঙ্গে, যুগপৎ, ছুটি ভাষাতে চিন্তা করাটা অসম্ভব বল্লেও অত্যুক্তি হয় না। কিন্তু কায়ক্রেশে আমাদের সেই. অসাধ্য সাধন কর্‌তেই হবে। একটি বাঙ্গালী আর একটি বিলেতি-_এই ছুটি স্ত্রী নিয়ে সংসার পাত যে আরামের নয়, ত৷ ধার! ভুক্তভোগী নন তারাও জানেন। তা ছাড়া, এ উভয়ের প্রতি সমান আসক্তি 'না থাকলে, এ দুই সংসার করাও মিছে। সর্ধভূতে সমদৃষ্টি চাই কি _ মাহষের হতেও পারে, কিন্তু দুটি পত্বীতে সমান অন্রাগ হওয়া ১০৪) বীরবলের হালখাতা অসম্ভব, কেননা মানুষের চোখ ছুটি হ'লেও, হৃদয় শুধু একটি। স্তরে হ'তে হলে একটিমাত্র স্ত্রী চাই। এমন কি, ছুই দেবীকে পূজা করতে হ'লেও, পালা করে” ছাড়া উপায়ান্তর নেই। অতএব দ্রীড়াল এই যে, বছরে অর্ধেক সময় আমাদের বাঙ্গল। লিখতে হবে, আর অর্ধেক সময় ইংরেজিতে তার তরজমা! করতে হবে। ফিরেফিরৃতি সেই 5516997এর কথাই এল। অর্থাৎ আমাদের চিদাকাশে ছ'মাস রাত আর ছ"মাস দিনের স্যষ্টি করতে হবে, অথচ দৈবশক্তি আমাদের কারও নেই । তৃতীয় মুফ্ধিল এই যে, সে তরজমার ভাষা! চল্তি হলে চল্বে না। সে ভাষা ইংরেজি হওয়া চাই, অথচ ইংরেজের ইংরেজি হ'লেও হবে না। দেশী আত্মা এমনিভাবে বিলেতি দেহে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া চাই, যাতে তার পূর্বজন্মের সংস্কারটুকু বজায় থাকে । ফুল ফোটাতে হবে বিলেতি, কিন্ত তার গায়ে গন্ধ থাকা চাই দেশী কুঁড়ির। প্রজাপতি ওড়াতে হবে বিলেতি, কিন্ত তার গায়ে রং থাকা চাই দেশী পোকার । এক কথায়, আমাদের পূর্যের সুর্য পশ্চিমে ওঠাতে হবে। এহেন অঘটন-ঘটন-পটিয়সী বিদ্া অবশ্ঠ আমাদের নেই। কাজেই যে কাধ্য আমরা একদিন বাঙ্গলায় কর্‌তে চেষ্টা করে” অকৃতকাধ্য হয়েছি-_রবীন্দ্রনাথের লেখার অন্ুকরণ-_ তাই আবার দ্বোকর করে” ইংরেজিতে কর্তে হবে। ইউরোপে আসল জিনিসটি গ্রাহ হচ্ছে বলে নকল জিনিসটিও যে গ্রাহু হবে, সে আশ! ছুরাশা মাত্র। ইউরোপ এদেশে মেকি চালায় ১১০ নোবেল প্রাইজ বলে”, আমরাও যে সে দেশে মেকি চালাতে পার্ব--এমন ভরসা আমার নেই । ফলে আমরা সাদাকে 'কালো, আর কালোকে সাদা যতই কেন করি নে,--আমাদের পক্ষে ০১০] 77125 ছিকেয় তোলা রইল। কিন্তু যদি পাই? বিড়ালের ভাগ্যে সে ছিকে যদি ছেড়ে! সেও আবার বিপদের কথা হবে। 0১91 [7725 পাওয়ার অর্থ শুধু অনেকট। টাকা পাওয়! নয়, সেই সঙ্গে অনেক খানি সন্মান পাওয়া । অনর্থ এ ক্ষেত্রে অর্থ নয়, কিন্তু তৎ- সংস্থষ্ট গৌরবটুকু। বাঙ্গলা লিখে আমর! কি অর্থকি গৌরব, কিছুই পাই নে। বাঙগলা-সাহিত্যে আমরা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াই, এবং পুরফ্ষারের মধ্যে লাভ করি তার চাট টুকৃ। ব্বদেশীর শুভ-ইচ্ছার ফুলচন্দন কালেভদ্রেও আমাদের কপালে জোটে না বলে', ইউরোপ যদি উপযাচী হয়ে আমাদের মাথায় সাহিত্যের ভাইফোটা দেয়, তাহ'লে তার ফলে আমাদের আফুর্বদ্ধি না হ'য়ে হ্রাস হবারই সম্ভাবন৷ বেড়ে যায়।, প্রথমেই দেখুন ষে, [২০৮০1 7£15এর তারের সঙ্গে সঙ্গেই আমর! শত শত চিঠি পাব। এবং এই অসংখ্য চিঠি পড়তে এবং তার উত্তর দিতেই আমাদের দিন কেটে যাবে,_সাহিত্য পড়বার কিম্বা গড়বার অবসর আর আমাদের থাক্‌বে না। এই কারণেই বোধহয় লোকে বলে যে, ০৪] 7725 লাভ _ করার অর্থ হচ্ছে সাহিত্যজীবনের মোক্ষলাভ কর! । ৯১৯ বীরবলের হালখাতা আর এক কথা, টাকাটা অবশ্য ঘরে তোল! যায় এবং দিব্য আরামে উপভোগ করা যায়, কিন্তু গৌরব জিনিসটা ওভাবে আত্মসাৎ করা চলে না। দেশশুদ্ধ লোক সে গৌরবে গৌরবা- স্থিত হ'তে অধিকারী । শাস্ত্রে বলে “গৌরবে বহুবচন ।, কিন্ত তার কত অংশ নিজের প্রাপ্য, আর কত অংশ অপরের প্রাপ্য,_ সে সম্বন্ধে কোন একটা নজির নেই বলে", এই গৌরব-দায়ের ভাগ নিয়ে স্বজাতির সঙ্গে একটা জ্ঞাতিবিরোধের সৃষ্টি হওরা আশ্চর্য্য নয়। অপরপক্ষে যদ্দি একের সম্মানে সকলে সমান সম্মানিত জ্ঞান করেন, এবং সকলের মনে কবির প্রতি অকুত্রিম ভ্রাতৃভাব জেগে ওঠে--তাতেও কবির বিপদ আছে । ত্রিশ দিন যদ্দি বিজয়াদশমী হয়, এবং ভ্রিশকোটা লোক যদি আত্মীয় হয়ে ওঠেন, তাহলে নররূপধারী একাধারে তেত্রিশকোটি দেবতা ছাড়া আর কারও পক্ষে অজন্তর কোলাকুলিরু বেগ ধারণ করা অসম্ভব । ও অবস্থায় রক্তমাংসের দেহের মুখ থেকে সহজেই এই কথা বেরিয়ে যায় যে "ছেড়ে দে মা কেদে বাচি। এবং ও-কথা একবার মুখ ফুষ্কে বেরিয়ে গেলে, তার ফলে কবিকে কেঁদে মর্তে হবে । ৃ তাই বলি, আমাদের বাঙ্গালী লেখকদের পক্ষে ০৮০1 চ755 হচ্ছে দিল্লীর লাড্ড-যো খায় ওভি পস্তায়া, যো না খায়! ওভি পন্তায়া ! মাঘ, ১৩২০ ১১২ সবুজ পত্র বাঙ্গল দেশ যে সবুজ, এ কথা বোধ হয় বাহজ্ঞানশূন্ত লোকেও অস্বীকার কর্বেন না। মা"র শন্তশ্তামলরূপ বাঙ্গলার এত গদ্যেপদ্যে এতটা পল্লবিত হয়ে উঠেছে যে, সে বর্ণনার বাথার্থ্য বিশ্বাস কর্বার জন্য চোখে দেখবারও 'আবশ্তক নেই । পুনরুক্তির গুণে এটি সেই শ্রেণীর সত্য হ'য়ে দাড়িয়েছে, যার সপ্ন্ধে চক্ষুকর্ণের যে বিবাদ হ'তে পারে, এরূপ সন্দেহ আমাদের . মনে মুহূর্তের জন্ও স্থান পায় না। এ ক্ষেত্রে সৌভাগ্যবশতঃ নান ও রূপের বাস্তবিকই কোন বিরোধ নেই। একবার চোখ তাকিয়ে দেখলেই দেখা যায় যে, তরাই হ'তে স্থন্দরবন পর্যন্ত, এক ঢালা সবুজবর্ণ দেশটিকে আদ্যোপান্ত ছেয়ে রেখেছে। কোথাও তার বিচ্ছেদ নেই, কোথাও তার বিরাম নেই /- শুধু তাই নয়, সেই রং বাঙ্গলার সীমানা অতিক্রম করে”, উত্তরে হিমালয়ের উপরে ছাপিয়ে উঠেছে, ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের ভিতর চারিয়ে গেছে। | সবুজ, বাঙ্গলার শুধু দেশজোড়া রং নয়»-বারোমেসে রং। আমাদের দেশে প্রকৃতি বহুরূপী নয়, এবং খতুর সে সঙ্গে বেশ পরিবর্তন করে না। বসন্তে বিয়ের কনের মত ফুলের জহরতে আপাদমন্তক সালঙ্কারা হ'য়ে দেখা দেয় না) বর্ধার জলে চিন্নাডা হ'য়ে শরতের পুজার তসর ধারণ করে? আসে না, ূ | শীতে বিধবার মত সাদা শাড়ীও পরে না। মাধব হতে মধু পর্যন্ত এ সবুজের টানা স্থর চলে ; খতুর প্রভাবে সে স্থরের যে রূপান্তর হয়, সে শুধু কড়ি কোমলে। আমাদের দেশে অবশ্য বর্ণের বৈচিত্র্যের অভাব নেই । আকাশে ও জলে, ফুলে ও ফলে, আমরা বর্ণগ্রামের সকল স্থরেরই খেল! দেখতে পাই। কিন্ত মেঘের রং ও ফুলের রং ক্ষণস্থায়ী ; প্রকৃতির ও-সকল রাগরঙ্গ তার বিভাব ও অন্ুুভাব মাত্র। তার স্থায়ী ভাবের, তার মূল রসের পরিচয় শুধু সবুজে । পীঁচরঙা ব্যভিচারী- ভাবসকলের সার্থকতা হচ্ছে বঙ্গদেশের এই অখগ্ড-হরিৎ স্থায়ী- ভাবটিকে ফুটিয়ে তোলা । | এরূপ হবার অবশ্ঠ একটা অর্থ আছে। বর্ণমাত্রেই ব্যঞ্জন বর্ণ”_অর্থাৎ বর্ণের উদ্দেস্ত শুধু বাহ-বস্তকে লক্ষণান্বিত করা নয়, কিন্তু সেই সুযোগে নিজেকেও ব্যক্ত করা । যা! স্বপ্রকাশ নয়, তা অপর কিছুই প্রকাশ করতে পারে না। তাই রং রূপও বটে, রূপকও বটে। যতক্ষণ আমাদের বিভিন্ন বর্ণের বিশেষ ব্যক্তিত্বের জ্ঞান 'না জন্মায়, ততক্ষণ আমাদের প্রকৃতির বর্ণপরিচয় হয় না, এবং আমরা তার বক্তব্য কথা বুঝ্তে পারিনে। বাঙ্গলার সবুজ পত্রে যে স্থসমাচার লেখা আছে, তা পড়বার জন্থ প্রত্বতাত্বিক হবার আবশ্তক নেই-_কারণ সে লেখার ভাষ। বাঙ্গলার প্রাকৃত । তবে আমরা সকলে যে তার অর্থ বুঝতে পারিনে, তার কারণ হচ্ছে যিনি গুপ্ত জিনিস আবিষ্কার করুতে ব্যস্ত, ব্যক্ত জিনিস ভার চোখে পড়ে না। ১১৪ সবুজ পত্র ধার ইন্দ্র সঙ্গে চাক্ষুষ পরিচয় আছে আর তার জন্ম- কথা জান! আছে, তিনিই জানেন যে, স্ুধ্যকিরণ নানা বর্ণের একটি সমষ্টি মাত্র, এবং শুধু সিধে পথেই সে সাদা ভাবে চল্তে পারে। কিন্তু তার সরল গতিতে বাঁধা পড়লেই, সে সমষ্টি ব্যস্ত হ*য়ে পড়ে, বক্র হয়ে বিচিত্র ভঙ্গী ধারণ করে, এবং তার বর্ণ- সকল পাঁচ বর্গে বিভক্ত হয়ে যায়। সবুজ হচ্ছে এই বর্ণমালার মধ্যমণি । এবং নিজগুণেই সে বর্ণরাজ্যের কেন্দ্রস্থল অধিকার করে” থাকে । বেগুনী কিশলয়ের রং--জীবনের পূর্ব্বরাগের রং। লাল রক্তের রং_-জীবনের পূর্ণরাগের রং। নীল আকাশের রং-অনস্তের রং। পীত শ্বফপত্রের রংমৃত্যুর রং। কিন্তু সবুজ হচ্ছে নবীন পত্রের রং._রসের ও প্রাণের যুগপৎ লক্ষণ ও বাক্তি। তার দক্ষিণে নীল আর বামে পীত, তার পূর্ব সীমায় বেগুনী আর পশ্চিম সীমায় লাল। অন্ত ও অনন্তের মধ্যে, পূর্ব্ব ও পশ্চিমের মধ্যে, স্থৃতি ও আশার মধ্যে মধ্যস্থতা করাই হচ্ছে সবুজের, অর্থাৎ সরস প্রাণের স্বধর্্ম। যে বর্ণ বাঙ্গলার ওষধিতে ও বনম্পতিতে নিত্য বিকশিত . হয়ে উঠ্‌্ছে, নিশ্চয় সেই একই বর্ণ আমাদের হৃদয় মনকেও রঙ্গিয়ে রেখেছে । আমাদের বাহিরের প্রকৃতির যে রং, আমাদের অন্তরের পুরুষেরও সেই রং। একথা যদি সত্য হয় তাহ'লে, সজীবতা ও সরসতাই হচ্ছে বাঙ্গালীর মনের নৈসর্গিক ধম্ম। প্রমাণ স্বরূপে দেখানো যেতে পারে যে, আমাদের দেবতা হয় শ্যাম নয় শ্যামা। আমাদের হৃদয়মন্দিরে রজত- ১৯৫ গিরিসন্লিভ কিন্বা জবাকুস্থমসন্কাশ দেবতার স্থান নেই; আমরা শৈবও নই, সৌরও নই । আমর! হয় বৈষ্ণব, নয় শাক্ত। এ উভয়ের মধ্যে বাশি ও অসির যা প্রভেদ, সেই পার্থক্য বিদ্যমান,_তবুও বর্ণসামান্যতার গুণে শ্যাম ও শ্যামা আমাদের মনের ঘরে নির্ব্বিবাদে পাশা- পাঁশি অবস্থিতি করে। তবে বঙ্গ-সরম্বতীর তুর্ববাদলশ্যামরূপ আমাদের চোঁখে ঘে পড়ে না, তার জন্য দোষী আমরা নই, দোষী আমাদের শিক্ষা । একালের বাণীর মন্দির হচ্ছে বিদ্যালয় । সেখানে আমাদের গুরুর! এবং গুরুজনেরা ঘে জড় ও কঠিন শ্বেতাঙ্গী ও শ্বেতবসন! পাষাণমৃত্তির প্রতিষ্ঠা করেছেন, আমাদের মন তার কায়িক এবং বাঁচিক সেবায়, দ্রিন দিন নীরল ও নিজ্জীব হ”য়ে পড়ছে । আমরা যে নিজের আত্মার সাক্ষাৎকার লাভ করিনে, তার কারণ আমাদের নিজের সঙ্গে আমাদের কেউ পরিচয় করিয়ে দেয় না। আমাদের সমাজ ও শিক্ষা ছুই আমা- দের ব্যক্তিত্বের বিরোধী । সমাজ শুধু একজনকে আর-পাচ- জনের মত হস্তে বলে, ভূলেও কখনও আর-পচজনকে এক- জনের মত হ'তে বলে না। সমাজের ধশ্ম হচ্ছে প্রত্যেকের স্বধ্্ম নষ্ট করা। সমাজের যা মন্ত্র তারি সাধন-পদ্ধতির নাম শিক্ষা। তাই শিক্ষার বিধি হচ্ছে “অপরের মত হওঃ আর তার নিষেধ হচ্ছে "নিজের মত হ"য়ো না এই শিক্ষার কপায় আমাদের মূনে এই অদ্ভুত সংস্কার বদ্ধমূল হয়ে গেছে যে, আমাদের স্বধন্ম এতই ভয়াবহ যে তার চাইতে পরধর্টে নিধনও 2 সবুজ পত্র, শ্রেয়। সুতরাং কাজে ও কথায়, লেখায় ও পড়ায়, আমরা আমাদের মনের সরস সতেজ ভাবটি নষ্ট করতে সদাই উতৎ্স্ৃক। এর কারণও স্পষ্ট_সবুজ রং, ভালমন্দ ছুই অর্থেই কাচা। তাই আমাদের কর্্মযোগীরা আর জ্ঞানযোগীরা,__অর্থাৎ্, শাস্ত্ীর দল”__আমাদের মনটিকে রাতারাতি পাকা করে” তুল্‌তে চান। তাদের বিশ্বাস যে, কোনরূপ কম্ম কিন্ব! জ্ঞানের চাপে আমাদের হৃদয়ের রসটুকু নিংড়ে ফেল্তে পারুলেই-_আমাদের মনের রং পেকে উঠ্‌বে। তাদের রাগ এই যে, সবুজ বর্ণমালার অস্তস্থ বর্ণ নয়, এবং ও রং কিছুরই অস্তে আসে না,_-জীবনেরও নয়, বেদেরও নয়, কন্মেরও নয়, জ্ঞানেরও নয়। এদের চোখে সবুজ- মনের প্রধান দোষ যে, সে মন পূর্বমীমাংসার অধিকার ছাড়িয়ে এসেছে, এবং উত্তরমীমাংসার দেশে গিয়ে পৌছয় নি। এঁরা তুলে” যান্‌ যে, জোর করে পাকাতে গিয়ে আমর! শুধু হরিৎকে পীতের ঘরে টেনে আনি, প্রাণকে মৃত্যুর দ্বারস্থ করি। অপর দিকে এদেশের ভক্তিযোগীরা, _অর্থাৎ কবির দল,_-কীাচাকে কচি করুতে চান। এরা চান যে আমরা শুধু গদগদ ভাবে আধ আধ কথা কই। এদের রাগ সবুজের সৃজীবতার উপর। এদের ইচ্ছা সবুজের তেজটুকু বহিষ্কৃত করে, দিয়ে, ছাকা৷ রসটুকু রাখেন। এরা ভুলে যান যে, পাতা কখনও.আর কিশলয়ে ফিরে যেতে পারে না। প্রাণ পশ্চাৎপদ হ'তে জানে না”_তার ধর্ম হচ্ছে এগোনো, তার লক্ষ্য হচ্ছে হয় অস্তৃতত্ব নয় মৃত্যু । যেমন একবার কর্মের তেজ ও জ্ঞানের ব্যোমের পরিচয় লাভ ১১৭, রর বীরবলের হালখাত৷ করেছে, সে এ উভয়কে অন্তরঙ্গ কর্বেই,__কেবলমাত্র ভক্তির শাস্তি- জলে সে তার সমস্ত হ্ৃদয় পূর্ণ করে” রাখ্তে পারে না। আসল কথা হচ্ছে, তারিখ এগিয়ে কিম্বা পিছিয়ে দিয়ে যৌবনকে ফাঁকি দেওয়া যায় না। এ উভয়ের সমবেত চেষ্টার ফল ফ্রাড়িয়েছে এই যে, বাঙ্গালীর মন এখন অর্ধেক অকাল-পক্ক, এবং অর্ধেক অথা- কচি। আমাদের আশা আছে যে, সবুজ ক্রমে পেকে লাল হ'য়ে উঠ্বে। কিন্তু আমাদের অন্তরের আজকের সবুজরস কালকের লালরক্তে তবেই পরিণত হবে, যদি আমরা স্বধম্মের পরিচয় পাই, এবং প্রাণপণে তার চ্চা করি । আমরা তাই দেশী কি বিলেতী পাথরে গড়া সরন্বতীর মৃত্তির পরিবর্তে, বাঙ্গলার কাব্যমন্দিরে দেশের মাটির ঘটস্থাপনা করে» তার মধ্যে সবুজ পত্রের প্রতিষ্ঠা করতে চাই ; কিন্তু এ মন্দিরের কোনও গর্ভ-মন্দির থাকৃবে না, কারণ সবুজের পূর্ণ অভিব্যক্তির জন্য আলো! চাই, আর বাতাস চাই। অন্ধকারে সবুজ ভয়ে নীল হয়ে যায়। বন্ধ ঘরে সবুজ ছুঃখে পাু হ'য়ে যায়। আমাদের নব-মন্দিরের চারিদিকের অবারিত ঘবার দিয়ে প্রাণবায়ুর সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের যত আলো! অবাধে প্রবেশ কর্তে পার্বে। শুধু তাই নয়, এ মন্দিরে সকল বর্ণের প্রবেশের ' সমান অধিকার থাকৃবে। উষার গোলাপী, আকাঁশের নীল, সন্ধ্যার লাল, মেঘের নীল-লোহিত, বিরোধালঙ্কারস্বরূপে সবুজ পত্রের গাত্রে সংলগ্ন হ'য়ে তার মরকতদ্যুতি কখনও উজ্জ্বল, কখনও কোমল করে” তুল্বে। 'সে মন্দিরে স্থান হবে না! কেবল শুষ্ক পত্রের । বৈশাখ, ১৩২১ ১১৮ বীরবলের চিঠি মহারাজা শ্রীযুক্ত জগদিন্ত্রনীথ রায়, “মানসী? সম্পাদক মহাশয় করকমলেযু-_ “মানসী” যে সম্পাদক-সঙ্ঘের হাত থেকে উদ্ধার লাভ করে" অতঃপর রাজ-আশ্রয় গ্রহণ করেছে, এতে আমি খুসি; কেননা, এ দেশে পুরাকালে কি হ'ত তা পুরাতত্ববিদেরা বল্‌তে পারেন, কিন্তু একালে যে সব জিনিসই পঞ্চায়তের হাতে পর্চত্ লাভ করে, সে বিষয়ে আর কোনও সন্দেহ নেই । আমার খুসি হবার একটি বিশেষ কারণ এই যে--আমার জন্য “মানসী” যা করেছেন, অন্ত কোনও পত্রিকা তা করেন নি। অপরে আমার লেখা ছাপাঁন, "মানসী, আমার ছবিও ছাপিয়ে- ছেন। লেখা নিজে লিখতে হয়, ছবি অন্যে তুলে নেয়। প্রথমটির জন্য নিজের পরিশ্রম চাই, ছবি সম্বন্ধে কষ্ট অপরের, ধিনি আকেন ও যিনি দেখেন। এই আপনি ঘ্মানসী'র সম্পাদকীয় ভার নেওয়াতে আমি যোল-আনা খুমি হতুম,যদি আপনি ছাপাবার জন্য আমার কাছে লেখা ন| চেয়ে আলেখ্য চাইতেন। এর কারণ পূর্বেই উল্লেখ করেছি। রাজাজ্ঞ! সর্ব শিরোধাধ্য হ'লেও, সর্বদা পালন করা সম্ভব নয়। রাজার আদেশে মুখ বন্ধ করা সহজ, খোলা ১১৪৯ বীরবলের হালখাতা কঠিন ।-_পৃথিবীতে সাহিত্য কেন, সকল ক্ষেত্রেই নিষেধ মান্য করা বিধি অনুসরণ করার চাইতে অনেক সহজসাধ্য । “এর ওর হাতে জল খেয়ো না”__-এই নিষেধ প্রতিপালন করেই ব্রা্ষণজাতি আজও টি'কে আছেন,__বেদ-অধ্যয়নের বিধি পালন করতে বাধ্য হ'লে কবে.মারা যেতেন । সে যাই হোক, একথা সত্য যে, আমার মত লেখকের সাহায্যে সাহিত্যজগতের কোন কাজ কিম্বা কাগজ সম্পাদন করা যায় না, কেননা আমি সরম্বতীর মন্দিরের পূজারি নই,_ স্বেচ্ছাসেবক । স্বেচ্ছা-সেবার ষতই কেন গুণ থাকুক না, তার মহাদদোব এই যে, সে সেবার উপর বারো মাস নির্ভর করা চলে না। আর মাসিক পত্রিকা নামে মাসিক হলেও, আসলে বারোমেসে। তাছাড়া পত্রের প্রত্যাশায় কেউ শিমূলগাছের কাছে ধেঁসে না, এবং আমি যে সাহিত্য-উদ্ভানের একটি শাল্সলী- তরু, তার প্রমাণ আমার গগ্যপদ্যেই পাওয়া যায়। লোকে বলে আমার লেখার গায়ে কাটা, আর মাথায় মধুহীন গন্ধহীন ফুল। আর একটি কথা। সম্প্রতি কোনও বিশেষ কারণে প্রতিদিন আমার কাছে শ্রীপঞ্চমী হয়ে উঠেছে; মনে হয় কলম না! ছোয়াটাই.সরম্বতীপুজার প্রুষ্ট উপায় । এর কারণ নিয়ে বিশদ- ভাবে ব্যাখ্যা কর্ছি। | আপনি জানেন যে, লেখকমাত্রেরই একটি বিশেষ ধরণ আছে, সেই নিজন্ব ধরণে রচনা করাই তার পক্ষে স্বাভাবিক এবং কর্তব্য । পরের ঢঙের নকল করে শুধু সঙ। যা লিখতে আমি ১২০ আনন্দ.লাভ করিনে,তা পড়তে যে পাঠক আনন্দ লাভ কর্বেন _ষে লেখায় আমার শিক্ষা নেই, সে লেখায় যে পাঠকের শিক্ষা হবে, এত বড় মিথ্যা কথাতে আমি বিশ্বাস করি নে। আমার দেহ মনের ভঙ্গীটি আমার চিরসঙ্গী-_-সেটিকে ত্যাগ করা অসম্ভব বল্‌্লেও অত্যুক্তি হবে না। সমালোচকদের তাড়নায় লেখার ভঙ্গীটি ছাড়ার চাইতে লেখা ছাড়া ঢের সহজ্‌,__অথচ সমাঁ- লোচকদের মনোরঞ্জন করতে হলে; হয়ত আমার লেখার ঢঙ বদলাতে হবে। আমার কলমের মুখে অক্ষরগুলে! সহজেই একটু বাঁকা হয়ে বেরোয়। আমি সেগুলি সিধে কর্তে চেষ্টা না করে, যেদিকে তাদ্দের সহজ গতি, সেই দিকেই ঝৌঁক দিই । কিন্তু এর দরুণ আমার লেখা এত বঙ্কিম হয়ে উঠেছে যে, তা ফার্সি বলে' কারও ভ্রম হ'তে পারে,_এ সন্দেহ আমার মনে কখনও উদয় হয় নি। অথচ আমার বাঙ্গলা যে কারও কারও কাছে ফাসি কিম্বা আরবি হ'য়ে উঠেছে, তার প্রমাণ “মানসী'তেই পাওয়া যায়। আমি “নোবেল প্রাইজ নিয়ে যে একটু রসিকতা কর্বার প্রয়াস পেয়েছিলুম, “মানসী'র সমালোচক তা! তত্বকথ! হিসেবে অগ্রাহ্হ করেছেন। যদি কেউ রসিকতাকে রসিকতা বলে না বোঝেন, তাহ'লে আমি নিরুপায়; কারণ তর্ক করে” তা বোঝানো যায় না। যে কথা একবার জমিয়ে বলা গেছে, তাঁর আর ফেনিয়ে ব্যাখ্যা করা চলে না। এ অবহায় যদ্দি ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি বে, আমার ১২১ বীরবলের হালখাতা কপালে অরসিকে রস-নিবেদন “মা! লিখ, মা লিখ, মা লিখ», তা হ'লে সমালোচকেরাও আমাকে বলবেন, “মা লিখ, মা লিখ, মা লিখ। এদের উপদেশ অনুসারে রসিকতা করার অভ্যাসটা ত্যাগ কর্‌তে রাজি আছি, যদি কেউ আমাকে এ ভরসা দ্রিতে পারেন যে, সত্য কথা বল্লে এরা তা রসিকতা! মনে কর্বেন না। সে ভরসা! কি আপনি দিতে পারেন? .. লোকে বলে সাহিত্যের উদ্দেশ্য, হয় লোকের মনোরঞ্জন করা, নয় শিক্ষা দেওয়া । আমার বিশ্বাস সাহিত্যের উদ্দেশ্য ছুই নয়,-এক। এক্ষেত্রে উপায়ে ও উদ্দেশ্যে কোনও প্রভেদ নেই। এই শিক্ষার কথাটাই ধরা যাক্‌। সাহিত্যের শিক্ষা ও স্কুলের শিক্ষা এক নয়। সাহিত্যে লেখক ও পাঠকের সম্বন্ধ গুরুশিষ্ঠের সম্বন্ধ নয়,বয়স্তের সম্বন্ধ। স্তরাং সাহিত্যে নিরানন্দ শিক্ষার স্থান নেই। অপর দিকে, যে কথার ভিতর সত্য নেই, তা ছেলের মন ভোলাতে পারে, কিন্তু মানুষের মনোরগুন কর্তে পারে না। রহস্য করে” ধাদের মনোরঞ্তন কর্তে পারলুম না, স্পষ্ট কথ! বলে" যে তাদের মনোরঞ্জন করতে পাবর্ব,-এ হচ্ছে আশা ছেড়ে আশ! রাখা । আর কথায় যদি মানুষের মনই ন। পাওয়া যায়, তাহ'লে সে কথা বলা বিড়ম্বনা মাত্র। ভদ্র» ত এখানেই । সত্য কথা সুস্থ মনের পক্ষে আহার,__রুচিকরও বটে, পুর্টিকরও বটে; কিন্তু রুগ্ন মনের পক্ষে তা ওঁষধ। তাতে উপকার যা” তা” পরে হবে, পেটে গেলে,_তাও আবার যদি ১২২ বীরবলের চিঠি লাগে ;+_ কিন্ত গলাধঃকরণ কর্বার সময় তা কটুকষায়। বাঙ্গলার মনোরাজ্যেও ম্যালেরিয়া যে মোটেই নেই, এবূপ আমার ধারণা নয়। স্তরাং সাদ! ভাবে সিধে কথা বল্তে আমি ভয় পাই। রসিকতা ছাড়লে আমাকে “চিস্তাশীল” লেখক হতে হবে-_- অর্থাৎ অতি গম্ভীরভাবে অতি সাধুভাষায় বারবার হয়কে নয় এবং নয়কে হয় বল্তে হবে। কারণ, যা প্রত্যক্ষ তাকেই যদি সত্য বলি, -তীহলে আর গবেষণার কি পরিচয় দিলুম ? কিন্ত আমার পক্ষে ওরূপ কর! সহজ নয়। . ভগবান, আমার বিশ্বাস, মানুষকে চোখ দিয়েছেন চেয়ে দেখবার জন্ত”_তাতে ঠুলি পর্বার জন্য নয়। সে ঠুলির নাম দর্শন দিলেও তা অগ্রাহ্য । শুন্তে পাই, চোখে ঠুলি না দিলে গরুতে ঘানি ঘোরায় না । এ কথা যদি সত্য হয়, তাহলে ধারা সংসারের ঘানি ঘোরাবার জন্য ব্যস্ত, লেখকেরা তাঁদের জন্য সাহিত্যের ঠুলি প্রস্তুত কর্তে পারেন-_কিস্ত আমি তা পার্ব না। কেননা, আমিও ঘানিতে নিজেকেও যুতে দিতে চাইনে,_অপর কাউকেও নয়। আমি চাই অপরের চোখের সে ঠুলি খুলে দিতে ; শুধু শিং বাকানোগ' ভয়ে নিরন্ত হই । ফলে দীড়ালে। এই যে, রসিকতা করা৷ নিরাপদ নয়, আর সত্য কথা বলাতে বিপদ আছে। ছুটি একটি উদাহরণ দিলেই বুঝ্‌তে পার্বেন ধে, আমি ঠিক কথা বল্ছি। - বাঙ্গালী যুবকের পক্ষে সমুদ্রযাত্রার পথে প্রৃতি- বন্ধক যে ধর্ম নয়কিস্ত অর্থ, এ প্রত্যক্ষ সত্য; কারণ তাদের কাছে ধর্মের তত্ব গুহায় নিহিত, এবং অর্ণবধানেরা যে পথে ১২৩ বীরবলের হালখাতা যাতায়াত করে_-স এব পন্থা । অথচ এই কথ! বল্তে গেলে, সমগ্র ব্রাহ্মণ-মহাসভ1 এসে আমার স্কন্ধে ভর কর্বেন। স্নেহলতা যেচিতায় নিজের দেহ ভম্মসাৎ করেছেন, সে-চিতার আগুনের আচ যে সমগ্র সম]জের গায়ে অল্পবিস্তর লেগেছে, সে বিষয়ে আর সন্দেহ নেই। কারণ কুমারীদাহ ব্যাপারটি এ দেশে নতুন, ও-উপলক্ষ্যে এখনও আমরা ঢাকঢোল বাজাতে শিখি নি। কিস্তু তাই বলে" ধাদের দেখা যাচ্ছে অত্যন্ত গাত্রজ্বাল! হয়েছে, তীরাও যে সেই চিতাভন্ম গায়ে মেখে বিবাগী হয়ে যাবেন, এরূপ বিশ্বাস আমার নয়। যে আগুন আজ সমীজের মনে জলে? উঠেছে, সে হচ্ছে খড়ের আগুন, দপ. করে” জলে” উঠে», আবার অমনি নিভে যাবে । আজ কোৌঁকের মাথায় মনে মনে যিনি যতই কঠিন পণ করুন না কেন, তার একটিও টি কৃবে না__থাকৃবে শুধু বরপণ |. যতদিন সমাজ বাল্য- বিবাহকে বৈধ এবং অসবর্ণ-বিবাহকে নিষিদ্ধ বলে” মেনে নেবেন, ততদিন মাঙ্গষকে বাধ্য হয়ে বরপণ দিতেও হবে এবং নিতেও হবে। বিবাহাদি সম্বন্ধে অত সঙ্কীর্ণ জাতিধশ্ম রাখতে হ'লে ব্যক্তিগত অর্থ থাকা চাই। এ সত্য অঙ্ক কসে' প্রমাণ করা যায়। মূল কথা এই যে, সনাতন প্রথা বর্তমানে সংসার-যাত্রার পক্ষে অচল। এবং অচলের চলন করতে গিয়েই আমাদের ছুর্গতি। কিন্তু এই কথা বল্লে সমাজ হয় ত আমার জন্য তুষানলের ব্যবস্থা কর্বেন। মোদ্দা কথ! এই যে, বাজে কথা শুন্লে লোকে মুখ অন্ধকার ১২৪ বীরবলের চিঠি করে; এবং কাজের কথা শুনলে চোখ লাল করে। এ অবস্থায় “বোবার শক্র নেই, এই শাক্বচন অনুসারে চুপ করে? থাকাই শ্রে়। সম্ভবত: ভারতবর্ষে পুরাকালের অবস্থা এই একই রকমেরই ছিল, এবং সেই জন্যই সেকালে জ্ঞানীর। মুনি হ'তেন। বৈশাখ, ১৩২১ ১২৫ “যৌবনে দাও রাজটাকা” গত মাসের সবুজ পত্রে শ্রীযুক্ত সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত যৌবনকে রাজটাকা দেবার প্রস্তাব করেছেন। আমার কোনও টাকা- কার বন্ধু এই প্রস্তাবের বক্ষ্যমাণরূপ ব্যাখ্য। করেছেন £-- “যৌবনকে টীকা দেওয়া অবশ্ঠকর্তব্য,_-তাহাকে বসন্তের হস্ত হইতে রক্ষা করিবার জন্ত । এস্থলে রাঁজটাকা অর্থ__রাজা অর্থাৎ যৌবনের শাসনকর্তাকতুক তাহার উপকারার্থে দত্ত থে টাকা-_সেই টাকা। উক্তপদ তৃতীয়াতৎপুরুষ সমাসে সিদ্ধ হইয়াছে ।” উল্লিখিত ভাষ্য আমি রহস্য বলে” মনে কর্তৃম, যদি না আমার জান! থাকৃত যে, এদেশে জ্ঞানীব্যক্তিদিগের মতে মনের বসস্ত-ধতু ও প্ররুতির যৌবনকাল-_ছুই অসায়েন্তা, অতএব শাসনযোগ্য । এ উভয়কে জুড়ীতে যুত্লে আর বাগ মানানো যায় না;_-অতএব এদের প্রথমে পৃথক করে পরে পরাজিত কর্তে হয়। বসন্তের স্পর্শে ধরণীর সর্ধ্বাঙ্গ শিউরে ওঠে )--অবশ্ঠ তাই বলে” পৃথিবী তার আলিঙ্গন হ*তে মুক্তিলাভ কর্বার চেষ্টা করে না, এবং পোষমাসকেও বারোমাস পুষে” রাখে না । শীতকে ১২৬ «যৌবনে দাও রাজটাকা” অতিক্রম করে” বসস্তের কাছে আত্মসমর্পণ করায় প্রকৃতি যে অর্ধবাচীনতার পরিচয় দেয় না, তার পরিচয় ফলে। প্রকৃতির যৌবন শীসনযোগ্য হ'লেও, তাকে শাসন কর্বার ক্ষমতা মানুষের হাতে নেই ; কেনন! প্ররুতির ধশ্ম মানবধশ্ম- শান্ত্রবহিভূত। সেই কারণে জ্ঞানীব্যক্তিরা আমাদের প্ররুতির দৃষ্টান্ত অনুসরণ করতে বারণ করেন, এবং নিত্যই আমাদের প্রকৃতির উন্টো টান টান্তে পরামর্শ দেন; এই কারণেই মান্থুষের যৌবনকে বসন্তের প্রভাব হ'তে দূরে রাখা আবশ্তক। অন্তথা, যৌবন ও বসন্ত এ ছু”য়ের আবির্ভাব যে একই দৈবী- শক্তির লীলা--এইরূপ একটি বিশ্বাস আমাদের মনে স্থানলাভ করতে পারে। এদেশে লোকে যে যৌবনের কপালে রাজটাকার পরিবর্তে তার পৃষ্ঠে রাজদগড প্রয়োগ করুতে সদাই প্রস্তত, সে বিষয়ে আর কোন সন্দেহ নেই। এর কারণ হচ্ছে যে, আমাদের বিশ্বাস মানবজীবনে যৌবন একটা মন্ত ফাঁড়া-_ কোনরকমে সেটি কাটিয়ে উঠতে পারলেই বাঁচা যায়। এ অবস্থায় কি জ্ঞানী, কি অজ্ঞানী সকলেই চান যে, একলম্ফে বাল্য হ'তে বার্ধক্যে উত্তীর্ণ হন। যৌবনের নামে আমর! ভয় পাই, কেননা! তার অস্তরে শক্তি আছে। অপরপক্ষে বালকের মনে শক্তি নেই; বালকের জ্ঞান নেই, বৃদ্ধের প্রাণ নেই। ভাই আমা- দের নিয়ত চেষ্টা হচ্ছে, দেহের জড়তার সঙ্গে মনের জড়তার . মিলন করা, অজ্ঞতার সঙ্গে বিজ্ঞতার সন্ধিস্থাপন করা। তাই ১৯২৭ আমাদের শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য হচ্ছে ইচড়ে পাকানো, আর আমাদের সমাজনীতির উদ্দেশ্য হচ্ছে জাগ দিয়ে পাকানো । আমাদের উপরোক্ত চেষ্টা যে ব্যর্থ হয় নি, তার প্রমাণ আমাদের সামাজিক জীবন । আজকের দিনে এদেশে রাজ- নীতির ক্ষেত্রে এক দিকে বালক, অপর দিকে বৃদ্ধ; সাহিত্য- ক্ষেত্রে একদিকে 'স্কলবয়, অপর দিকে স্কুলমাষ্টার ; সমাজে এক দিকে বাল্যবিবাহ, অপর দিকে অকালমৃত্যু ; ধন্মক্ষেত্রে এক দিকে শুধু “ইতি? ইতি” অপর দিকে শুধু “মতি “নেতি” ৮ অর্থাৎ একদিকে লোই্রকাষ্ঠও দেবতা, অপর দিকে ঈশ্বরও ব্রহ্ম নন। অর্থাৎ আমাদের জীবনগ্রস্থে প্রথমে ভূমিকা আছে, শেষে উপসংহার আছে »৮_-ভিতরে কিছু নেই । এ বিশ্বের জীবনের আদি নেই, অন্ত নেই, শুধু মধ্য আছে; কিস্ত তারি অংশভৃত আমাদের জীবনের আদি' আছে অস্ত আছে /_শুধু মধ্য নেই। | বার্ধক্যকে বাল্যের পাশে এনে ঘফেল্লেও, আমরা তার মিলন সাধন কর্তে পারি নি; কারণ ক্রিয়া বাদ দিয়ে ছুটি পদকে জুড়ে এক করা যায় না। তা ছাড়া যা আছে, তা! নেই বল্লেও, তার অস্তিত্ব লোপ হ'য়ে যায় না। এ বিশ্বকে মায়া বল্লেও তা অস্পৃশ্ঠ হ"য়ে যায় না, এবং আত্মাকে ছায়! বল্লেও তা অদৃষ্ত হ'য়ে যায় না। বরং কোনও কোনও সত্যের দিকে পিঠ ফেরালে তা অনেক সময়ে আমাদের ঘাড়ে চড়ে” বসে। থে যৌবনকে আমরা সমাজে স্থান দিইনি তা, এখন নানা ১২৮ «যৌবনে দাও রাজটীকা” বিকৃতরূপে নানা ব্যক্তির দেহ অবলম্বন করে? রয়েছে । ধারা সমাজের স্ুমুখে জীবনের শুধু নান্দী ও ভরতবচন পাঠ করেন, তাদের জীবনের অভিনয়টা যবনিকার অন্তরালেই হ'য়ে থাকে। রুদ্ধ ও বদ্ধ করে” রাখলে পদার্থমাত্রই আলোর ও বায়ুর সম্পর্ক হারায়, এবং সেই জন্য তার গায়ে কলঙ্ক ধরাও অনিবাধ্য । গ্রপ্ত জির্নিসের পক্ষে দুষ্ট হওয়া স্বাভাবিক । আমরা যে যৌবনকে গোপন করে” রাখ্তে চাই,_-তার জন্য আমাদের প্রাচীন সাহিত্য অনেক পরিমাণে দায়ী। কোনও বিখ্যাত ইংরাজ লেখক বলেন যে, [16515 605 হচ্ছে ০1010157 )11697_-ইংরেজি সাহিত্য জীবনের সমালোচনা হ'তে পারে, কিন্তু সংস্কৃত সাহিত্য হচ্ছে যৌবনের আলোচনা । সংস্কৃত সাহিত্যে যুবকযুবতী ব্যতীত আর কারও স্থান নেই । আমাদের কাব্যরাজ্য হচ্ছে স্ধ্যবংশের শেষ নৃপতি অগ্রিবর্ণের রাজ্য, এবং সে দেশ হচ্ছে অষ্টাদশবর্ষদেশীঘাদের ব্বদেশ। যৌবনের যে ছবি সংস্কৃত দৃশ্ঠকাব্যে ফুটে” উঠেছে, সে হচ্ছে ভোগবিলাসের চিত্র। সংস্কৃত কাব্যজগৎ্ মাল্যচন্দনবনিতা 'দিয়ে গঠিত-_-এবং সে জগতের বনিতাই হচ্ছে স্বর্গ, ও মাল্য- চন্দন তার উপসর্গ। এ কাব্যজগতের অর্টা কিবা দ্রষ্টা কবিদের মতে, প্রকৃতির কাজ হচ্ছে শুধু রমণীদেহের উপমা যোগানো, এবং পুরুষের কাজ শুধু রমণীর মন যোগানো। হিন্দুযুগের শেষ কবি জয়দেব নিজের কাব্যসম্বন্ধে স্পষ্টাক্ষরে যে কথা বলেছেন, তর পূর্ববর্তী কবিরাও ইজিতে সেই একই কথা ৯ . ১২৯ বীরবলের হালখাতা বলেছেন। সে কথা এই যে--“যদি বিলান-কলায় কুতৃহলী হও ত আমার কোমলকাস্ত পদাবলী শ্রবণ করো | এক কথায়, যে-যৌবন যষাতি নিজের পুত্রদের কাছে ভিক্ষা করে- ছিলেন, সংস্কৃত কবির! সেই যৌবনেরই রূপগ্ণ বর্ণনা করেছেন । এ কথা যে কত সত্য, তা একটি উদাহরণের সাহায্যে প্রমাণ করা যেতে পারে। কৌশান্ির যুবরাজ উদয়ন এবং কপিলবাস্তর যুবরাজ সিদ্ধার্থ উভয়ে সমলাময়িক ছিলেন। উভয়েই পরম রূপবান্‌ এবং দিব্য শক্তিশালী যুবাপুরুষ; কিন্তু উভয়ের মধ্যে প্রভেদ এইটুকু যে, একজন হচ্ছেন ভোগের, আর একজন হচ্ছেন ত্যাগের পূর্ণ অবতার । ভগবান গৌতম-বুদ্ধের জীবনের ব্রত ছিল মানবের মোহ নাশ করে” তাকে সংসারের সকল শৃঙ্খল হ'তে মুক্ত করা) আর বৎসরাজ উদয়নের জীবনের ব্রত ছিল ঘোষবতী বীণার সাহায্যে অরণ্যের গজকামিনী এবং অন্তঃপুরের গজগামিনীদের প্রথমে মুগ্ধ করে” পরে নিজের ভোগের জন্য তাদের অবরুদ্ধ করা। অথচ সংস্কৃত কাবো বুদ্ধঃরিতের স্থান নেই, কিন্তু উদয়ন-কথায় তা পরিপূর্ণ । সংস্কৃত ভাষায় যে বুদ্ধের জীবনচরিত লেখা হয়নি, তা নয়_তবে ললিতবিস্তরকে আর কেউ কাব্য বলে" স্বীকার করবেন না; এবং অশ্বমঘোষের নাম পধ্যস্তও লুপ্ত হ'য়ে গেছে। অপর দিকে উদয়ন-বাসবদত্বার কথা অবলম্বন করে ধার! কাব্য রচনা করেছেন,-_-ষথা, ভাস, গুণাট্য, স্থবন্ধু ও শ্রীহ্র্য ইত্যাদি তীদ্দের বাদ দিলে সংস্কৃত সাহিত্যের অর্ধেক বাদ পড়ে? ষায়। ১৩০ “যৌবনে দাও রাজটীকা” কালিদাস বলেছেন যে, কৌশান্বির গ্রামবৃদ্ধেরা উদয়ন-কথা শুনতে ও বল্‌তে ভালবাসতেন; কিন্তু আমরা দেখৃতে পাচ্ছি যে, কেবল কৌশাদির গ্রামবৃদ্ধ কেন, সমগ্র ভারতবর্ষের আবালবৃদ্ধ- বনিতা সকলেই এ কথা-রসের রমসিক। সংস্কৃত সাহিত্য এ সত্যের পরিচর দেয় না যে, বুদ্ধের উপদেশের বলে জাতীয় জীবনে যৌবন এনে দিয়েছিল, এবং উদয়নের দৃষ্টাস্তের ফলে অনেকের যৌবনে অকালবাদ্ধক্য এনে দিয়েছিল। বৌদ্ধধর্মের অন্থুশীলনের ফলে-_রাজ! অশোক লাভ করেছিলেন সাম্রাজ্য ; আর উদ্য়ন-ধর্শের অনুশীলন করে, রাজা অগ্রিবর্ণ লাভ করে- ছিলেন রাজমক্ষ্া। সংস্কৃত কবিরা এ সত্যটি উপেক্ষা করেছিলেন যে, ভোগের স্তায় ত্যাগ যৌবনেরই ধর্ম । বার্ধক্য কিছু অুদ্ধিন_করুতে পারে না বলে কিছ বর্জন করুতে পারে ন!। 2১১88171544 85541 না; ছুটি কালো চোখের জন্যও নুয়, বিশকোটি কালো লোকের জন্যও নয়৷ পাছে লোকে ভুল বোঝেন বলে" এখানে আমি একটি কথা বলে? রাখতে চাই। কেউ মনে কর্বেন না যে, আমি কাউকে সংস্কৃত কাব্য “বয়কট? করতে ঘল্ছি, কিন্বা নীতি এবং রুচির দোহাই দিয়ে সে কাব্যের সংশোধিত সংস্করণ প্রকাশ কর্বার পরামর্শ দিচ্ছি। আমার মতে, যা সত্য তা গোঁপন করা স্থনীতি নয়, এবং তা প্রকাশ করাও দুর্নীতি নয়। সংস্কৃত কাব্যে যে-যৌবনধর্দের বর্ণনা আছে, তা! যে সামান্ত মানব-ধর্ম-_এ হচ্ছে ১৯৩১ বীরবলের হালখাতা অতি স্পষ্ট সত্য; এবং মানবজীবনের উপর তার প্রভাব থে অতি প্রবল-_তাও অস্বীকার কর্বার জো নেই। তবে এই একদেশদর্শিতা ও অত্যুক্তি__ভাষায় যাঁকে বলে এক-রোখামি ও বাড়াবাড়ি,_তাই হচ্ছে সংস্কত কাব্যের প্রধান দোষ। যৌবনের স্থুলশরীরকে অত আস্কার৷ দিলে তা উত্তরোত্তর স্থুল হতে স্ুলতর হ'য়ে ওঠে, এবং সেই সঙ্গে তার সু শরীরটি স্ুক্ম হ'তে এত স্ুক্মতম হ'য়ে ওঠে যে, তা খুঁজে পাওয়াই ভার হয়। সংস্কৃত সাহিত্যের অবনতির সময়, কাব্যে ,বুক্তমাংসের পরিমাণ এত €বড়ে গিয়েছিল যে, তার' ভিতর আত্মার পরিচয় দিতে হ'লে, সেই রক্তমীংসের আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা কর। ছাড়া আর আমাদের উপায় নেই। দেহকে অতটা প্রাধান্য দিলে, মন পদার্থটি বিগড়ে যায়; তার ফলে দেহ ও মন পৃথক হ”য়ে যায়, এবং উভয়ের মধ্যে আত্মীয়তার পরিবর্তে জ্ঞাতিশক্রতা জন্মায়। সম্ভবতঃ বৌদ্ধ-ধর্শমের নিরামিষের প্রতিবাদস্ব্ূপ হিন্দু কবিরা তাদের কাব্যে এতটা আমিষের আমদানী করেছিলেন। কিন্তু যে কারণেই হোক্‌, প্রাচীন ভারতবর্ষের চিন্তার রাজ্যে দেহমনের পরস্পরের যে বিচ্ছেদ ঘটেছিল, তার প্রমাণ_প্রাচীন সমাজের এক দিকে বিলাসী, অপর দিকে সন্্যাপী; এক দিকে পত্তন, অপর দ্রিকে বন; এক দিকে রঙ্গালয়, অপর দ্দিকে হিমালয় ;-এক কথায় এক দিকে কামশাস্ত্র, অপর দিকে মোক্ষশান্ত্র। মাঝামাঝি আর-কিছু, জীবনে থাকৃতে পার্ত, কিন্তু সাহিত্যে নেই |. এবং এই ছুই ১৩২ «যৌবনে দাও রাঁজটীকা” বিরুদ্ধ মনোভাবের পরস্পর মিলনের যে কোনও পন্থা ছিল ন।, সে কথা ভর্তৃহরি স্পষ্টাক্ষরে বলেছেন-_ “এক ভাষ্য] সুন্দরী বা দরী বা! !). এই হচ্ছে প্রাচীন্যুগের শেষ কথা । ধারা দরী-প্রাণ, তাদের পক্ষে যৌবনের নিন্দা কর! যেমন স্বাভাবিক,_ধার৷ স্ুন্দরী-প্রাণ, তাদের পক্ষেও তেমনি স্বাভাবিক । যতির মুখের যৌবন-নিন্দা অপেক্ষা কবির মুখের যৌবন-নিন্দার, আমার বিশ্বাস, অধিক ঝাঝ আছে। তার কারণ, ত্যাগীর অপেক্ষা ভোগীরা অভ্যাস- বশতঃ কথায় ও কাজে বেশী অসংযত। ধারা স্ত্রীজাতিকে কেবলমাত্র ভোগের সামগ্রী মনে করেন, তারাই যে স্ত্রী-নিন্দার ওস্তাদ__এর প্রমাণ জীবনে ও সাহিত্যে নিত্য পাওয়া যায়। জ্্রী-নিন্দুকের রাজা হচ্ছেন, রাজকবি ভর্ভৃহরি ও রাঁজকবি 5০107)07. চরম ভোগবিলাসে পরম চরিতার্থতা লাভ কর্তে না পেরে, এঁর! শেষবয়সে স্ত্রীজাতির উপর গায়ের ঝাল ঝেড়েছেন। যারা, বনিতাকে মাল্যচন্দন হিসেবে ব্যবহার করেন, তীরা, শুকিয়ে গেলে সেই বনিতাকে মাল্যচন্দনের মতই ভূতলে নিক্ষেপ করেন, এবং তাকে পদদলিত করতেও সঙ্কুচিত হন না। প্রথমবয়সে মধুর রস অতিমাত্রায় চ্চা করলে, শেষবয়সে জীবন ততো হয়ে ওঠে । এ শ্রেণীর লোকের হাতে শৃঙ্গার-শতকের পরেই বৈরাগ্য-শতক রচিত হয়। একই কারণে, ধীরা যৌবনকে কেবলমাত্র ভোগের উপকরণ মনে করেন, তাঁদের মুখে যৌবন-নিন্দা লেগে থাকৃবারই কথা । ১৩৩ বীরবলের হালখাতা ধারা যৌবন-জৌোয়ারে গা-ভাসিয়ে দেন, তারা! ভাটার সময় পাকে পড়ে” গত-জোয়ারের প্রতি কটুকাটব্য প্রয়োগ করেন। যৌবনের উপর তীদের রাগ এই যে, তা পালিয়ে যায় এবং একবার চলে” গেলে আর ফেরে না। যযাতি যদি পুরুর কাছে ভিক্ষা করে যৌবন ফিরে না পেতেন তাহলে তিনি যে কাব্য কিছ! ধর্মমশান্ত্র রচনা করতেন, তাতে যে কি স্থৃতীত্র যৌবন- নিন্দা থাকৃত_তা আমরা কল্পনাও কর্তে পারিনে । "পুরু যে পিতৃতক্তির পরিচয় দিয়েছিলেন, তার ভিতর পিতার প্রতি কতটা ভক্তি ছিল এবং তাতে পিতারই যে উপকার করা হয়েছিল, তা বল্তে পারিনে, _কিস্ত তাতে দেশের মহা অপকার হয়েছে; কারণ নীতির একখানা বড় গ্রস্থ মারা গেছে। যযাতি-কাজ্ফিত যৌবনের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ এই যে, তা অনিত্য। এ বিষয়ে ত্রাণ ও শ্রমণ, নগ্রক্ষপণক ও নাগরিক, সকলেই এক-মত। “যৌবন ক্ষণস্থায়ী'__-এই আক্ষেপে এদেশের কাব্য ও সঙ্গীত পরিপূর্ণ । “ফাগুন গয়ী হয়, বহুর! ফিরি আয়ী হয় গয়ে রে ষোবন, ফিরি আওত নাহি ।” এই গান আজও হিন্দস্থানের পথে ঘাটে অতি করুণ স্থরে গাওয়া হয়ে থাকে । যৌবন যে চিরদিন থাকে না, এ আপশোষ রাখবার স্থান ভারতবর্ষে নেই। যা অতি প্রিয় এবং অতি ক্ষণস্থায়ী, তার স্থায়িত্ব বাড়াবার | “যৌবনে দাও রাজটীকা” চেষ্টা মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক । সম্ভবতঃ নিজের অধিকার বিস্তার কর্বার উদ্দেস্েই, এদেশে যৌবন শৈশবের উপর আক্রমণ করেছিল । বাল্যবিবাহের মূলে হয় ত এই যৌবনের মেয়াদ বাড়াবার ইচ্ছাটাই বন্তমান। জীবনের গতিটী উল্টো দিকে ফেরাবার ভিতরও একটা মহা! আর্ট আছে। পৃথিবীর অপর সব দেশে, লোকে গাছকে কি করে” বড় করতে হয় তারই সন্ধান জানে, কিন্তু গাছকে কি করে” ছোট কর্তে হয়, সে কৌশল শুধু জাপানিরাই জানে। একটি বটগাছকে তারা চিরজীবন একটি টবের ভিতর পুরে” রেখে" দিতে পারে । শুন্তে পাই, এই সব বামন-বট হচ্ছে অক্ষয় বট। জাপানিদের বিশ্বাস যে, গাছকে হুস্ব করলে তা আর বুদ্ধ হয় না। সম্ভবতঃ আমাদেরও মন্থস্াত্বের চর্চা সম্বন্ধে এই জাপানি আর্ট জানা আছে, এবং বাল্যবিবাহ হচ্ছে সেই আর্টের একটি প্রধান অঙ্গ । এবং উক্ত কারণেই, অপর সকল প্রাচীন সমাজ উৎসন্ষে গেলেও আমাদের সমাজ আজও টিকে আছে। মনুষ্যত্ব খর্ব কুরে» মানব-সমাজটাকে টবে জিইয়ে রাখায় যে বিশেষ কিছু অহঙ্কার করুবার আছে, তা আমার মনে হয় না। সে যাই হোক্‌, এ যুগে যখন কেউ যৌবনকে রাজটাকা দেবার প্রস্তাব করেন, তখন তিনি সমাজের কথা ভাবেন--ব্যক্তিবিশেষের কথা নয় । ব্যক্তিগত হিসেবে জীবন ও যৌবন অনিত্য হ'লেও মানব- সমাজের হিসেবে ও ছুই পদার্থ নিত্য বল্‌লেও অত্যুক্তি হয় না। ১৩৫ বীরবলের হালখাতা স্থতরাং সামাজিক জীবনে যৌবনের প্রতিষ্ঠা করা মানুষের ক্ষমতার বহিভূতি না হ'লেও না হ'তে পারে। কি উপায়ে যৌবনকে সমাজের যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করা যেতে পারে, তাই হচ্ছে বিবেচ্য ও বিচাধ্য । এ বিচার কর্বার সময়, এ কথাটা মনে রাখা আবশ্যক যে, মানবজীবনের পূর্ণ অভিব্যক্তি_-যৌবন। যৌবনে মান্গষের বাহোন্দরিয়, কর্শেক্ট্িয় ও অন্তরিজ্িয় সব.. সজাগ ও সবল হ'য়ে ওঠে, এবং স্থষ্টির মূলে যে প্রেরণা আছে, "মানুষে সেই প্রেরণ। তার সকল অঙ্গে, সকল মনে অন্থভব করে। দেহ ও মনের অবিচ্ছে্ সম্বন্ধের উপর মানবজীবুন্ন প্রতিষ্ঠিত হ'লেও, দেহমনের পার্থক্যের উপরেই আমাদের চিস্তারাজা প্রতিষ্ঠিত। দেহের যৌবনের সঙ্গে, মনের যৌবনের একটা যোগাযোগ থাকৃলেও, দৈহিক যৌবন ও মানসিক যৌবন স্বতন্ত্। এই মানসিক যৌবন লাভ করতে পার্লেই আমরা তা সমাজে প্রতিষ্ঠা কর্‌তে পার্ব। দেহ সঙ্কীর্ণ ও পরিচ্ছন্ন; মন উদার ও ব্যাপক । একের দেহের যৌবন, অপরের দেহে প্রবেশ করিয়ে দেবার জো নেই ;--কিন্তু একের মনের যৌবন, লক্ষ লোকের মনে সংক্রমণ করে” দেওয়া যেতে পারে। পূর্ব্বে বলেছি খে, দেহ ও মনের সম্বন্ধ অবিচ্ছেগ্ধ। এক মাত্র প্রাণ-শক্তিই জড় ও চৈতন্যের যোগ সাধন করে । যেখানে প্রাণ নেই, সেখানে জড়ে ও চৈতন্তে মিলনও দেখা যায় না। প্রাণই আমাদের দেহ ও মনের মধ্যে মধ্যস্থৃতা কর্ছে। প্রাণের ১৩৬ “যৌবনে দাও রাজটীকা1” পায়ের নীচে হচ্ছে জড়জগৎ, আর তার মাথার উপরে মনোজগৎ্। প্রাণের ধন্ম যে, জীবনপ্রবাহ রক্ষা কর! নব নব স্যষ্টির দ্বারা স্থি রক্ষা করা,_এটি সর্বলোকবিদ্রিত.। কিন্তু প্রাণের আর একটী বিশেষ ধশ্ম আছে, বা সকলের কাছে সমান প্রত্যক্ষ নয়। সেটি হচ্ছে এই যে, প্রাণ প্রতিযুহূর্তে রূপান্তরিত, হ:. হিন্দু দর্শনের মতে, জীবের প্রীণময় কোষ, অন্নময় কোষ ও মনোঁময় : কোষের মধ্যে অবস্থিত। প্রাণের গতি উভয়মুখী। প্রাণের পক্ষে মনোময় কোষে ওঠা এবং অন্নময় কোষে নামাঁ_ছুই-ই সম্ভব। প্রাণ অধোগতি প্রাপ্ত হ'য়ে জড়জগতের অন্তভূতি হয়ে যায়; আর উন্নত রে মনোজগতের টি হয়। ম্রকে হয় না। প্রাণের স্বাভাবিক তি: হচ্ছে মনোজগতের দিকে; প্রাণের স্বাধীন, রিহির বাধা_দিলেই তা. অজ, প্রাপ্ত হয়। ১০০৮ পিস পপ আগ নি ডাকে রও রানার অধীন হয়ে পড়ে। ও পপ ০ শপ” জা পবা এক পন ০ চলি সী ষেমন প্রাীজগতের রক্ষার জন্য নিত্য নৃতন প্রাণের স্ব আবশ্যক, এবং সে-স্থষ্টির জন্য দেহের যৌবন চাই; তেমনি মনোজগতের এবং তদধীন কম্মজগতের রক্ষার জন্য সেখানেও নিত্য নব স্থষ্টির আবশ্যক, এবং সে-স্ষ্টির জন্য মনের যৌবন চাই। পুরাতনকে স্বাকৃড়ে থাকাই বার্ধক্য অর্থাৎ জড়ত৷। মানসিক যৌবন লাভের জন্য প্রথম আবশ্ক- প্রাণশক্তি যে দৈবী শক্তি__এই বিশ্বাস । ১৩৭ বীরবলের হালখাতা! এই মানসিক যৌবনই সমাজে প্রতিষ্ঠা কর! হচ্ছে আমাদের উদ্দেশ্য । এবং কি উপায়ে তা সাধিত হ'তে পারে, তাই হচ্ছে আলোচ্য । আমরা সমগ্র সমাজকে একটি ব্যক্তিহিসেবে দেখ লেও, আসাম এানব্সমাজ হচ্ছে বনুব্যক্তির সমষ্টি। যে সমাজে বহু ব্যক্তির মানসিক যৌবন আছে, সেই সমাজেরই যৌবন আছে । দেহের যৌবনের সঙ্গে সঙ্গেই মনের যৌবনের আবির্ভাব হয়। সেই মানসিক যৌবনকে স্থায়ী কর্‌তে হ'লে,__শৈশব নয়, বার্ধক্যের দেশ আক্রমণ এবং অধিকার করতে হয়। দেহের যৌবনের অস্তে, বার্ধক্যের রাজ্যে যৌবনের অধিকার বিস্তার কর্বার শক্তি আমরা সমাজ হ'তেই সংগ্রহ করতে পারি। ব্যক্তিগত জীবনে ফাল্গুন একবার চলে গেলে আবার ফিরে । আসে না; কিন্তু সমগ্র সমাজে ফাল্গুন চিরদিন বিরাজ কর্ছে। _ সমাজে নৃতন প্রাণ, নৃতন মন নিত্য জন্মলাভ কর্ছে। অর্থাৎ নৃতন স্বখছুঃখ, নৃতন আশ, নৃতন ভালবাসা, নৃতন কর্তব্য. ও নৃতন চিন্তা, নিত্য উদয় হচ্ছে। সমগ্র সমাজের এই জীবন- প্রবাহ যিনি নিজের অন্তরে টেনে নিতে পার্বেন, তার মনের যৌবনের আর ক্ষয়ের আশঙ্কা নেই। এবং তিনিই আবার কথায় ও কাজে সেই যৌবন সমাজকে ক্ষিরিয়ে দিতে পার্বেন। এ যৌবনের কপালে রাজটাীকা দিতে আপত্তি করৃবেন,_-এক জড়বাদী, আর এক মায়াবাদী; কারণ এঁরা উভয়েই একম্ত। এঁরা উভয়েই বিশ্ব হ'তে তার অস্থির প্রাণটুকু বার করে দিয়ে, ১৩৮ «যৌবনে দাও রাজটীকা” যে এক স্থিরতত্ব লাভ-করেন, তাকে জড়ই বল, আর চৈতন্তই' বল, সে বস্ত হচ্ছে এক,__প্রভেদ যা, তা নামে। জ্যৈষ্ঠ, ১৩২১ এশা ৮৮110117 তিখ " চি টি এটিও 8 ১42 প্র 1 1 উউ৬ ৩2 ৯০০ ্প্ রি ১৩৯ ইতিমধ্যে সম্পাদক মহাশয়েরা মধ্যে মধ্যে লেখকদের--ই তিমধ্যে' একট] কিছু লিখে দিতে আদেশ করেন। যদি জিজ্ঞাসা করা যায় যে, কি লিখব 1--তার উত্তরে বলেন, যাহোক একটা কিছু লেখো, কি যে লেখো তাতে কিছু আসে যায় না--কিন্তু আসল কথা হচ্ছে লেখাটা “ই তিমধ্যে” হওয়া চাই। এস্থলে ইতিমধ্যের অর্থ হচ্ছে-_ আগামী সংখ্যার কাগজ বেরবার পূর্ব্বে। সম্পাদক মহাশয়ের! যখন আমাদের এইভাবে সাহিত্যের মাম্কাবার তৈরি করতে আদেশ দেন, তখন তার! ভুলে যান যে, সাহিত্যে যারা দিন গুণে কাজ কর্বার প্রবৃত্তিটি আমরা ইংরেজের কাছে শিখেছি ।--কোন্‌ দিনে কোন্‌ ক্ষণে কোন্‌ কাধ্য আরম্ভ করতে হবে, সে বিষয়ে এদেশে খুব বাধাবাধি নিয়ম ছিল-_কিন্তু আরব্ধ কম্ম কখন যে শেষ করতে হবে, সে সম্বন্ধে কোন নিয়ম ছিল না। সেকালে কোনও জিনিস যে তামাদি হ'ত, তার প্রমাণ 'স্বৃত ব্যবহার-শাস্ত্রে পাওয়া যায় না। সেই কারণেই বোধ হয়, বহু মনোভাব ও আচারব্যবহার, যা” বহুকাল পূর্ব্বে তামাদি হওয়া উচিত ছিল, হিন্দু-সমাজের উপর আজও তাদের দাবী পুরোমাত্রায় রয়েছে । সে যাই হোক্‌, কাজের ওজনের সঙ্গে ১৪০ ইতিমধ্যে সময়ের মাপের যে একটা সম্বন্ধ থাকা উচিত-_-এ জ্ঞান আমাদের ছিল না। “কালোহয়ং নিরবধি_একথা সত্য হ'লেও সেই কালকে মান্ষের কর্মজীবনের উপযোগী করে? নিতে হ'লে, তার ঘে ঘর কেটে নেওয়া আবশ্তক,-এই সহজ সত্যটি আমরা আবিফার কর্‌তে পারিনি । একটি নির্দিষ্ট সময়ের ভিতর বিশেষ কাজ শেষ করতে হ'লে, প্রথমে কোথায় দাঁড়ি টান্তে হবে, সেটি জানা চাই; তারপরে কোথায় কমা ও কোথায় সেমিকোলন দিতে হবে, তারও হিসেব থাক। চাই। এক কথায়, সময় পদার্থটিকে 7800096০ করতে ন| শিখলে ঢ81708৪1] হওয়|! যার না। স্থৃতরাৎ আমরাও যে, ইংরেজদের মত, সময়কে টুকরো! করে" নিতে শিখ্ছিততা'তে কাজের বিশেষ সুবিধে হবে; কিন্তু সাহিত্যের স্থুবিধে হবে কি না, সে বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে। কারণ সময়ের মূল্যের জ্ঞান বড় বেশী বেড়ে গেলে, দেই সময়ে যা” করা যায়, তার মূল্যের জ্ঞান চাই-কি আমাদের কমেও যেতে পারে। রড শ্শান কবি গেটে বলেছেন যে, মানুষের চরিত্র গঠিত হয় কর্মের ভিতর, আর মূন, গঠিত হয় অবসরের ভিতর ।_ অর্থাৎ পেশি » সবল করুতে হ'লে, পু ১৫ জাপা হানা গরিলা রা রচনা করা হচ্ছে নি হা ইতি বল্তে যে অবসর বোঝায়, তার ভিতর সে রচনা করা সম্ভব কি নাঁ_তা আপনারাই বিবেচনা কর্বেন। তবে যদি কেউ ১৪১ বীরবলের হালখাতা বলেন যে, লেখার সঙ্গে মন্তিফ্ষের সম্বন্ধ থাকাই চাই, এমন কোনও নিয়ম নেই,_তাহ'লে অবশ্ত গেটের মতের মূল্য অনেকটা কমে” আসে । হাজার তাড়াহুড়ো কর্‌লেও লেখা জিনিসটা কিঞ্চিৎ সময় সাপেক্ষ, তার প্রমাণ উদাহরণের সাহায্যে দেওয়া যেতে পারে। প্রথমে কবিতার কথা ধরা যাক । লোকের বিশ্বাস যে কবিতার জন্ুস্থান হচ্ছে কবির হৃৎপিণ্ড । তাহলেও হৃদয়ের সঙ্গে কলমের এমন কোন টেলিফোনের যোগাযোগ নেই, যার দরুণ হৃদয়ের তারে কোনও কথ ধ্বনিত হ্বামাত্র কলমের মুখে তা প্রতিধ্বনিত হবে। আমার বিশ্বাস যে, যে-ভাব হৃদয়ে ফোটে তাকে মস্তিষ্কের বকযস্ত্রে না চুইয়ে নিলে, কলমের মুখ দিয়ে তা ফোটা ফোটা হয়ে পড়ে নাঁ। কলমের মুখ দিয়ে অনায়াসে মুক্ত হয় শুধু কালি, সাত রাজার ধন কালো! মাণিক নয়। অতএব কবিতা রচনা করতেও সময় চাই ।_-তারপর ছোট গল্প । মাসিকপত্রের উপযোগী গল্প লিখ্তে হ*লে, প্রথমে কোনও না! কোনও ইংরেজি বই কিন্বা মাসিকপত্র পড়া চাই। তারপর সেই পঠিত গল্পকে বাংলায় গঠিত করতে হ'লে, তাকে রূপান্তরিত ও ভাষাস্তরিত করা চাই। এর জন্যে বোধ হয় মূলগল্প লিখ্বার চাইতেও বেশী সময়ের আবশ্তক। কিছুদিন পূর্বেব ভারতবর্ষের অতীত সম্বন্ধে যা"খুসি-তাই লিখ্বার একটা সুবিধে ছিল। “একালে এদেশে কিছুই নেই, অতএব সেকালে এদেশে সব ছিল” এই কথাটা নানারকম ভাষায় ১৪২ ইতিমধ্যে ফলিয়ে ফেনিয়ে লিখলে সমাজে তা” ইতিহাস বলে” গ্রাহ হ'ত। কিন্ত সে স্বযোগ আমর! হারিয়েছি । একালে ইতিহাস কিনা প্রত্বতত্ব সম্বন্ধে লিখতে হ'লে, তার জন্য এক লাইব্রেরি বই পড়াও যথেষ্ট নয়। প্রত্বতত্ব এখন মাটি খুঁড়ে” বার করতে হয়, স্থতরাং ইতিমধ্যে? অর্থাৎ সম্পাদকীয় আদেশের তারিখ এবং সামনে মাসের পয়লার মধ্যে-_সে কাজ করা যায় না। অবশ্য ম্যালেরিয়ার বিষয় কিছুই নাজেনে অনেক কথা লেখ! যায়, কিন্তু সে লেখা সাহিত্য-পদবাচ্য কি না, সে বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে । যার একপাশে ভ্রমর-গুঞ্্ন আর অপর পাশে মধু_তাই আমরা সাহিত্য বলে" স্বীকার করি। ছুঃখের বিষয় ম্যালেরিয়ার এক পাশে মশক-গরগ্তন__আর অপরপাশে কুইনীন । ক্তরাং সাহিত্োও ম্যালেরিয়া হ'তে দূরে থাকাই শ্রেয়। বিনা চিন্তায়, বিনা পরিশ্রমে, আজকাল শুধু ছুটি বিষয়ের আলোচনা করা চলে। এক হচ্ছে উন্নতিশীল রাজনীতি, আর এক হচ্ছে স্থিতিশীল সমাজনীতি । কিন্তু এ ছুটি বিষয়ের আলোচন! সচরাচর সভাসমিতিতেই হয়ে থাকে । অতএব ও ছুই হচ্ছে বক্তাদের একচেটে । লেখকেরা যদি বক্তাদের অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ করেন, তাহ'লে বক্তারাও লিখ তে স্থরু কর্বেন_-এবং সেটা উচিত কাজ হবে না। | লিখ বার নানারূপ বিষয় এইভাবে ক্রমে বাদ পড়ে” গেলে, শেষে একটিমাত্র জিনিসে গিয়ে ঠেকে, যার বিষয় নির্ভাবনায় অনর্গল লেখনী চালনা করা চলে,_এবং সে হচ্ছে নীতি। ১৪৩ বীরবলের হালখাতা নীতির মোটা আদেশ ও উপদেশগুলি সংখ্যায় এত কম যে, তা আঙ্গুলে গোণা যায়,_-এবং সেগুলি এতই সর্বলোকবিদিত ও সর্বববাদিসম্মত যে, স্বস্থশরীরে স্বচ্ছন্দচিত্তে সে বিষয়ে এক গঙ্গা লিখে যাওয়া যায়, কেননা কেউ ঘে তার প্রতিবাদ কর্বে, সে ভয় নেই । | €& মানুষ যে দেবতা নয়, এবং মানবের পক্ষে দেবত্ব লাভের . চেষ্টা নিত্য ব্যর্থ হ'লেও যে নিয়ত কর্তব্য, সে বিষয়ে তিলমাত্র ৮১ অসি "জারা ৭৪৯ «৫ জিন নম্পালি সন্দেহ নেই। তবুও: অপূরকে নীতির উপদেশ দিতে আমার _তাদুশ উৎসাহ হয় না। তার কারণ, কারণ, মানুষ খারাপ বলে” আমি ছু খ করিনে, _ কিন্তু মানুষ দুঃখী বলে বলে" মন খারাপ করি। “অথচ মাসথষের দুর্গাতির চাইতে ছুর্নীতিটি চোখে না পড় ডূলে নীতির গুরুগিরি ব কর! চলে না। _ তা ছাড়া পরের কানে নীতির মন দেওয়া সম্বদ্ধে আমার মনে একটি সহজ অপ্রবৃত্তি আছে। যে কথা সকলে জানে, সে কথা যেআমি না বললে দেশের দেন্য ঘুচ্বে না, এমন বিশ্বাস আমি মনে পোষণ করতে পারিনে। এমন কি আমার এ সন্দেহও আছে যে, ধারা দিন নেই রাত নেই অপরকে লক্ষ্মী- ছেলে হ'তে বলেন, তারা নিজে চান শুধু লক্ষ্মীমস্ত হ'তে । ধারা পরকে বলেন “তোমরা ভাল হও, ভাল কর» তারা নিজেকে বলেন “ভাল খাও, ভাল পর | সুতরাং আমার পরামর্শ যদি কেউ জিজ্ঞাসা করেন, তাহ*লে আমি তাকে বল্ব “ভাল খাও, ভাল পর।* কারণ মান্ুষ পৃথিবীতে কেন আসে কেন যায়, সে ১৪৪ ইতিমধ্যে ' বৃহস্ত আমরা না! জান্লেও, এটি জানি যে ইতিমধ্যে তার পক্ষে খাওয়া পরাটা দরকার । “তোমরা ভাল খাও, ভাল পর, এ পরামর্শ সমাজকে দিতে অনেকে কুষ্ঠিত হবেন, কেনন! ও-কথার ভিতর এই কথাটি উহ্ থেকে যায় যে, পরামর্শদীতাকে নিজে ভাল হ'তে হবে এবং ভাল, কর্‌তে হবে । আপত্তি ত এখানেই । .. ঘিনি ভাল খান ও ভাল পরেন, সহজেই তার মূনে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের উপর বিশ্বাস জন্মে যায়, এবং সেই সঙ্গে এই ধারণাও গাও রার৮১ রর পাপ তার মনে দৃঢ় হয়ে ওঠে যে, যেখানে ইদন্য য সেইখানেই পাপ। _ দারিক্ব্ের মূল যে দরিদ্রের ছূর্নীতি, এই ধারণা এক সময়ে ইউরোপের ধনী লোকের মনে এমনি বদ্ধমূল হ'য়ে উঠেছিল যে, এই ভুলের উপর 'পলিটিক্যাল্‌ ইকনমি” নামে একটি উপ- বিজ্ঞান বেজায় মাথা-ঝাড়া দিয়ে উঠেছিল। অর্থ যে | এর প্রমাণ পৃথিবীতে এতই কম যে, আমাদের পূ্বপুরুষেরা একটি পূর্বজন্ম কল্পনা করে', সেই পূর্ববজন্মের পাপপুণপ্যের ফলন্বরূপ স্থখছুঃখ, সমাজকে মেনে নিতে শিখিয়েছিলেন। ব্যাখ্যার চাতুর্যে জিৎ অবশ্য আমাদের পূর্ববপুরুষদেরই, . কারণ বহু লোকের ছুঃখ কষ্ট যে তাদের ইহজন্মের কগ্ফলে নয়, তা প্রমাণ করা যেতে পারে ; কিন্তু সে যে পূর্ববজন্মের কর্্মফলে নয়; তা এ জন্মে অপ্রমাণ করা যেতে পারে না। : আসলে ছুজনার মুখে একই কথা । সে হচ্ছে এই যে, পরের দুঃখ যখন.তাদের নিজের দোষে, তখন তাদের শুধু ভাল হ'তে ১০ | প্র ্‌ ১৪৫ বীরবলের হালখাতা শেখাও,-_-তাদের দুঃখ দূর করার চেষ্টা করা! আমাদের কর্তব্য নয়। অতএব মানুষের দুর্গতির প্রতি করুণ হওয়া উচিত নয়, তাদের দুর্নীতির প্রতি কঠোর হওয়াই কর্তব্য । কিন্ত আজকাল কালের গুণে, শিক্ষার গুণে, আমরা পরের ছুঃখ সম্বন্ধে অতটা উদ্দাসীন হ'তে পারিনে, কম্মফলে আস্থা রেখে, নিশ্চিন্ত থাকৃতে পারিনে । তাই দীনকে নীতিকথা শোনানো অনেকে হীনতার পরিচায়ক মনে করেন ছোট ছেলে সম্বন্ধে পড়লে শুন্লে দুধু ভাত” এ সত্যের পরিবর্তে--"আগে দুধ ভাত, পরে পড়াগুনো” এই -সত্রোরে-ঠার_হতুতে চাই | এদেশের ছুর্তিক্ষ-প্রপীড়িত জনগণের জন্য আমরা শিক্ষার ব্যবস্থা কর্বার পূর্ব্বে, অন্ধের ব্যবস্থা করা শ্রেয় মনে করি। আগে অক্পপ্রাশন, পরে বিগ্যারস্ত, সংস্কারেরও এই সনাতন ব্যবস্থা বজায় পাখা আমাদের মধ্যে সঙ্গত। অথচ আমরা যে কেন ঠিক উদ্টে। পদ্ধতির পক্ষপাতী, তার অবশ্ঠ কারণ আছে। লোক-শিক্ষার নামে য়ে আমরা উত্তেজিত হ,য়ে উঠি, তার প্রথম কারণ আমরা শিক্ষিত। স্কুলে লিখে এসে যে কালি আমরা হাত আর মুখে মেখেছি, তার ভাগ আমরা দেশস্থদ্ধ লোককে দিতে চাই। যেমনি একজনে লোক-শিক্ষার সুর ধরেন, অমনি আমরা যে তার ধুয়ো ধরি, তার আর একটি কারণ এই যে, এ-কাজে আমাদের শুধু বাক্যব্যয় করতে হয়, অর্থব্যয় কর্‌তে হয় না। এ ব্যাপারে লাগে লাখ টাকা, দেবে গৌর- ১৪৬. ইতিমধ্যে | জনসাধারণের হাতেখড়ি দেবার পরিবর্তে মুখে ভাত দেবার প্রস্তাবে আমরা যে তেমন গা করিনে, তার কারণ সাংসারিক হিসেবে সকলের স্বার্থসাধন করতে গেলে, নিজের স্বার্থ কিঞ্চিৎ খর্ব কর! চাই ; ত্যাগন্বীকারের জন্ত নীতি নিজে শেখা দরকার পরকে শেখানে। দরকার নয়। ৃ আমাদের প্রত্যেকের নিজের স্বার্থ যে সমগ্র জাতির স্বার্থের . সহিত জড়িত, এ জ্ঞান যে আমাদের হয়েছে, তার প্রমাণ বাঙ্গলা- সাহিত্যের কতকগুলি নতুন কথায় পাওয়া যায়। ব্যক্তির সঙ্গে সমাজের অঙ্গাঙ্গী সম্বন্ধের কথা, জাতীয় আত্ম-জ্ঞানের কথা, আজ- কাল বক্তাদের ও লেখকদের প্রধান সম্বল। অথচ এ কথাও অস্বীকার কর্বার জে! নেই যে, এত বলা কওয়! সত্বেও, এই অঙ্গাঙ্গীভাব পরস্পরের গলাগলিভাবে পরিণত হয়নি; আর জাতীয় আত্মজ্ঞান শুধু জাতীয় অহঙ্কারে পরিণত হচ্ছে, যদিচ অহংজ্ঞানই আত্মজ্ঞানের প্রধান শক্র। জাতীয় কর্তব্যবুদ্ধি অনেকের মনে জাগ্রত হলেও, জাতীয় কর্তব্য যে সকলে করেন না, তার কারণ, পরের জন্য কিছু কর্বার দিন আমর! নিত্যই পিছিয়ে দিই। আমাদের অনেকের চেষ্টা হচ্ছে প্রথমে নিজের জন্য সব করা, পরে অপরের জন্য কিছু করা । সুতরাং জাতীয় কর্তব্যটুকু আর ইতিমধ্যে করা হয় না। ফলে আপনি বাচলে বাপের নাম” এই পুরোনো কথার উপর আমর! নিজের কর্মজীবন প্রতিষ্ঠা করি, আর “জাত বাচলে ছেলের নাম, ১৪৭ বীরবলের হালখাতা --এখন যারা ছেলে এবং পরে যার! মানুষ হবে, তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিই । | কিন্তু আসল কথা হচ্ছে যে, যা কিছু করতে হবে, তা ইতিমধ্যেই করুতে হবে। সম্পাদক মহাশয়েরা, লেখক নম পাঠকদের যদি এই সত্যটি উপলব্ধি করাতে পারেন, তাহ লে তদের সকল আজ্ঞ। আমরা পালন কবৃতে প্রস্তত আছি। ঘাগবাজার ডি: লাইব্রেরী ডাক সংখা গজ» ক 5৪৬৪৬ রি জ্যেষ্ঠ, ১৩২ পু সা ইলা? 55 (নল (গল, ৭৮ রঃ ্ 8৩০, ০ শপ লনা পি 1) পপ ॥10%3) ড4 8:012০০০ রর উকি . ্বাগবাজ্তার রুডিং জাইত্রেরী ডাক জা পরিগাহণ সংখ্য।-**৮*৮০০*৯৮তত | পরিএহণের তারিখ পপি ািটনিরাারারারারনাজাকাাাররররিরারাহনাারারারসটি